কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট কমেছে ১৬৫৭
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে কোটি টাকার বেশি ডিপোজিট থাকা অ্যাকাউন্ট সংখ্যা কমেছে ১ হাজার ৬৫৭টি। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার অ্যাকাউন্টে। জুন প্রান্তিক শেষে এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৯ হাজার। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অর্থাৎ জুন প্রান্তিকে ব্যাংকে কোটিপতির অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়েছিল প্রায় ৩ হাজারের মতো। একইসঙ্গে এসব অ্যাকাউন্টে আমানত কমেছে ২৬ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা।
তথ্য বলছে, জুন প্রান্তিক শেষে কোটি টাকার ওপর এসব অ্যাকাউন্টে আমানতের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা, যা সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকায়।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলের পর অনেকেই তাদের অ্যাকাউন্টের টাকা তুলে নিয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকের প্রতি আস্থাহীনতা কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট কমার আরেকটি কারণ বলে মন্তব্য করেন তারা।
গত ৫ই আগস্ট সরকার পতনের পর অন্যান্য খাতের সঙ্গে ব্যাংকিং খাতেও সংস্কার শুরু হয়। কয়েকটি ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নেয় গ্রাহকরা। প্রভাবশালী কিছু ব্যবসায়ীর ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তথ্য বলছে, একক ব্যক্তিদের পাশাপাশি করপোরেটে কোটি টাকার বেশি ডিপোজিট থাকা অ্যাকাউন্টের সংখ্যা কমে এসেছে।
চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ব্যাংকখাতে একক ব্যক্তি কোটিপতিদের অ্যাকাউন্ট সংখ্যা কমেছে ৬২০টি। এ ছাড়া এসব অ্যাকাউন্টে আমানতের পরিমাণ কমেছে ৮ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা। একক ব্যক্তিদের অ্যাকাউন্ট হিসাবে চলতি বছর সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কোটিপতিদের অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৮৬১টিতে। জুন প্রান্তিক শেষে এসব অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ৩৪ হাজার ৪৮১টি। সেপ্টেম্বর শেষে এসব অ্যাকাউন্টে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৩ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা। জুন শেষে আমানতের পরিমাণ ছিল ৯২ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা।
একটি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলের পর অনেকেই তাদের অ্যাকাউন্টের টাকা তুলে নিয়েছে। কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট কমার এটি একটি বড় কারণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জুলাই-সেপ্টেম্বরে ঢাকাসহ ছয় বিভাগে আমানত কমলেও রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগে বেড়েছে। সার্বিকভাবে এই প্রান্তিকে আমানত কমেছে ১৩ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। এর আগে টানা চার প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছিল। এর মধ্যে চলতি বছরের এপ্রিল-জুনে আমানতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৪.৩৪ শতাংশ; যা জানুয়ারি-মার্চে ছিল ০.৭৫ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুনের শেষে চট্টগ্রাম বিভাগে আমানত ছিল ৩ লাখ ৮৬ হাজার ২৩০ কোটি টাকা, যা সেপ্টেম্বরে বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। একই সময়ে রাজশাহী বিভাগে আমানত ৭৪ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৭৫ হাজার ২৭৬ কোটি টাকায় ওঠে।
সর্বশেষ জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে সবচেয়ে বেশি আমানত ছিল ঢাকা বিভাগে আর সবচেয়ে কম ময়মনসিংহে। এ সময় দেশের ব্যাংক খাতের মোট আমানতের প্রায় ৬১ শতাংশই ছিল ঢাকা বিভাগে। আবার শহরাঞ্চলে যত আমানত আছে, তার ৫৫.৭৪ শতাংশই ঢাকা বিভাগের। সেপ্টেম্বরের শেষে ঢাকা বিভাগের আমানত কমে হয় ১১ লাখ ১৩ হাজার ৯৯ কোটি টাকা; যা আগের প্রান্তিকে ছিল ১১ লাখ ২৫ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ বিভাগেই আমানত কমেছে ১২ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঢাকার পর সবচেয়ে বেশি আমানত রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। দেশের মোট আমানতের ২১.২৪ শতাংশ রয়েছে এই বিভাগে। অর্থাৎ, দেশের মোট আমানতের প্রায় ৮২ শতাংশই এখন আছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে। বাকি ১৮ শতাংশ রয়েছে বাকি ছয় বিভাগে। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে দেশের মোট আমানতের সর্বনিম্ন ১.৬৩ শতাংশ ছিল ময়মনসিংহ বিভাগে, যা পরিমাণে ২৯ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা। এর আগের চার প্রান্তিকের মধ্যে তিনটিতে এই বিভাগের হিস্যা ছিল ১.৬২ শতাংশ, অন্য প্রান্তিকে ছিল ১.৬০ শতাংশ। অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে দেশের মোট আমানতের মধ্যে ৪.২৩ শতাংশ খুলনা বিভাগের; ৪.১২ শতাংশ রাজশাহী বিভাগের; ৩.৮৯ শতাংশ সিলেট বিভাগের, ১.৯৫ শতাংশ রংপুর বিভাগের এবং ১.৯৫ শতাংশ বরিশাল বিভাগের।
No comments