মিয়ানমারের মংডুতে শত শত সেনাসহ জেনারেল আটক
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) মিয়ানমারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইরাবতীর এক প্রতিবেদেনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আরাকান আর্মি জানিয়েছে, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের শেষ জান্তা ঘাঁটি রোববার দখলে নিয়েছে তারা। এ সময় কুখ্যাত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরেইন তুনসহ শত শত সেনাকে বন্দি করা হয়েছে।
গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, তারা গত ১৪ অক্টোবর মংডু শহরের বাইরে টাউনশিপের শেষ ইউনিট বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের ওপর হামলা শুরু করে। সুরক্ষিত এ ঘাঁটিটি আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (এআরএ), আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশনের (আরএসও) সশস্ত্র সেনাসহ ৭০০ জনের বেশি সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পরিচালিত হতো।
আরাকান আর্মি জানিয়েছে, জান্তার বিমান হামলার মধ্যে ৫৫ দিন সংঘর্ষের পর তারা রোববার এটির দখল নিয়েছে। এ সময় সংঘর্ষে ৪৫০ জনের বেশি সেনা নিহত হয়েছে। এ ছাড়া বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করেছে তারা।
গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, ঘাঁটি থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় সেনাসহ জান্তার মিলিটারি অপারেশন কমান্ড (এমওসি)১৫-এর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরেইন তুনকে আটক করেছে বিদ্রোহীরা। আটককৃতদের মধ্যে ৮০ জন বিদ্রোহী রোহিঙ্গা সেনা রয়েছেন।
এর আগে ইরাবতী জানায়, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের প্রায় পৌনে তিনশ কিলোমিটার সীমান্তের পুরোটাই আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ এ সীমান্ত শহরের পতন হওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছে মিয়নামারের জান্তা সরকার।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, রোববার মংডু শহর দখল করে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের ২৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আরাকান আর্মি (এএ)। সশস্ত্র এ বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, তারা জান্তার শেষ অবশিষ্ট সীমান্ত ঘাঁটি মংডু শহরের বাইরে অবস্থিত বর্ডার গার্ড পুলিশ ৫ নং ব্যাটালিয়ন বেশ কয়েক মাস লড়াইয়ের পর রোববার সকালে দখল করে।
এর আগে রোববার আরাকান আর্মি জানায়, ঘাঁটি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তারা আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (এআরএ), আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সরকার এবং সহযোগী রোহিঙ্গা মিলিশিয়াদের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে।
আরাকান আর্মি মে মাসের শেষের দিকে মংডু আক্রমণ শুরু করে। আর সীমান্তবর্তী এ শহরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পেতে ছয় মাস সময় লাগল গোষ্ঠীটির। ইরাবতি বলছে, আরাকান আর্মি এখন বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের তিনটি শহরেরই নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করছে। এগুলো হচ্ছে—রাখাইন প্রদেশের মংডু ও বুথিডাং এবং চিন প্রদেশের পালেতোয়া। পালেতোয়ার সঙ্গে ভারতের সীমান্তও রয়েছে।
রাখাইনে যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী একজন সামরিক বিশ্লেষক বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য পুনঃস্থাপন পশ্চিমাঞ্চলীয় এ প্রদেশে বসবাসকারী মানুষের দুর্দশা কমাতে সাহায্য করবে। অন্যদিকে রাখাইনে ২০ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন বলে জাতিসংঘ গত মাসে জানিয়েছে। জান্তা বাহিনী এ প্রদেশের দিকে যাওয়ার রাস্তা ও নৌপথ অবরোধ করেছে এবং আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তাসহ খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ সরবরাহেও বাধা দিয়েছে।
ওই বিশ্লেষক আরও বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার রাখাইন প্রদেশের জটিল রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করতে চাইলে জাতিগত সেনাবাহিনীর (আরাকান আর্মি) সঙ্গে অর্থপূর্ণ সংলাপে যুক্ত হতে হবে। আরাকান আর্মি এখন দক্ষিণ রাখাইনের গয়া, তাউনগুপ এবং আন শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য লড়াই করছে বলেও জানিয়েছে ইরাবতি।
বিদ্রোহীদের হাতে আটক জেনারেলসহ সেনারা। ছবি : সংগৃহীত |
No comments