ক্ষমা চাইলো র‌্যাব

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, গুম-খুন এবং অপহরণসহ র‌্যাবের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ রয়েছে। আজ পর্যন্ত যারা র‌্যাবের হাতে নির্যাতিত বা অত্যাচারিত হয়েছেন তাদের কাছে এবং নারায়ণগঞ্জের সাত খুনসহ র‌্যাবের দ্বারা অতীতে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তাদের পরিবারের কাছে আমরা দুঃখ প্রকাশ এবং ক্ষমা প্রার্থনা করছি। গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

র‌্যাব ডিজি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গুম-খুন কমিশন গঠন করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালও এসব বিষয় নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে আমরা দায়মুক্ত হতে চাই। আমি যতদিন দায়িত্ব পালন করবো, কারও নির্দেশে এসব অপরাধে র‌্যাব আর জড়িত হবে না সেটি আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি। আমার অফিসার যারা আছেন, র‌্যাব কখনো কারও নির্দেশে ভবিষ্যতে এই ধরনের অপরাধ গুম-খুন করবে না। যদি কোনো সদস্য নিজ দায়িত্বে কোনো ধরনের অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়িত হয়, তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেবো যেটা ৫ই আগস্ট পরবর্তী সময়ে আমরা নিয়ে আসছি। ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, হেলিকপ্টারের বিষয়ে হাইকোর্টে রিট আছে, ফৌজদারি মামলাও রুজু হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালও এটা অনুসন্ধান করছে। আমরা আশা করবো এসব অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য বের হয়ে আসবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সম্প্রতি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল র‌্যাব বিলুপ্তির বিষয়ে দাবি তুলেছে- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে তাই মেনে নেয়া হবে। তবে যতদিন দায়িত্বে থাকবো নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাবো। র‌্যাবের পোশাক পরিবর্তন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পোশাকের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যিনি পোশাকটি পরবেন তারা। আমরা প্রতিদিন ইউনিফর্ম পরি, আপনারা প্রতিদিন প্যান্ট শার্ট, স্যুট, পায়জামা-পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন পোশাক পরেন। একজন ভালো ব্যক্তি যে পোশাকই পরেন না কেন, তার কাছে আমরা ভালো জিনিসই পাবো। কিন্তু একজন খারাপ ব্যক্তি যে পোশাকই পরেন না কেন, আমরা ভালো জিনিস কিন্তু পাবো না। এখানে পোশাকের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ব্যক্তির মানসিকতা। তারপরও আমরা র‌্যাবের পোশাক পরিবর্তনের বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছি।

সাংবাদিকরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ে এমন প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, সাংবাদিকতা মহান পেশা। সাংবাদিকরা যদি ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে কাজ না করতে পারেন তাহলে গণতান্ত্রিক দেশে প্রশ্ন থেকে যায়। সাংবাদিক বন্ধুরা ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে পেশাগত দায়িত্ব পালন করবেন। আপনাদের নিরাপত্তার জন্য আমরা সর্বাত্মক অগ্রাধিকার দেবো। সাংবাদিক সাগর-রুনী হত্যা মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা। এই মামলার তদন্তে আশানুরূপ ফল না হওয়ার বিষয়টি আদালতকে অবহিত করেছি। আদালত এই মামলা তদন্তের জন্য একটি উচ্চতর কমিটি গঠন করে দিয়েছে। এখানে আমরা সফলতা পাবো। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে র‌্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আদালত এবং আইনের নির্দেশ মানতে সবাই বাধ্য। আমরা নিজেরাও চাইবো এই ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং বিচার হোক।

বিভিন্ন জঙ্গি অভিযানকে নাটক বলা হচ্ছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে র‌্যাব ডিজি বলেন, আমাদের দেশে জঙ্গির তৎপরতা ছিল, আমরা দেখেছি। র‌্যাবও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ভবিষ্যতেও কোনোরূপ জঙ্গি তৎপরতা যেন দেশে বিস্তার লাভ না করে সেজন্য আমরা সচেষ্ট আছি কাজ করে যাচ্ছি। র‌্যাব ডিজি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, র‌্যাবের নিজস্ব কোনো আইন নেই। পুলিশ আইনে র‌্যাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। র‌্যাবের জন্য আমরা আলাদা একটি আইন করার চিন্তা-ভাবনা করছি। এ ছাড়া আর কোন কোন বিষয় সংস্কার করা যায় সেজন্য গণমাধ্যম ও জনসাধারণের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। বর্তমানে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়েছে, তবে প্রত্যাশিত জায়গায় এখনো পৌঁছায়নি। ডিজি বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে র‌্যাব তার দায়িত্ব আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবে।

তিনি বলেন, গত ৫ই আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটে। পরে র‌্যাবের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ শুরু করে। একাজ করতে গিয়ে র‌্যাবের ১৬ জন সদস্য বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তাদের বিরুদ্ধে ডাকাতি, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসার সম্পৃক্ততা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অপরাধে এই ১৬ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে র‌্যাবের ৫৮ জন কর্মকর্তা ও ৪ হাজার ২৩৫ জন সদস্যকে বিভিন্ন অপরাধে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। ৫ই আগস্টের পর আমাদের কিছু চ্যালেঞ্জ ছিল। আনসার বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে বিদ্রোহ, গার্মেন্টস সেক্টরে অস্থিতিশীলতা, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে কর্মবিরতিসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে র‌্যাব। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৪ হাজার ৫০০ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। পাশাপাশি ২০ হাজার অস্ত্রও উদ্ধার করেছে সংস্থাটি। এসময় উপস্থিত ছিলেন র‌্যাব এডিজি (অপারেশন্স) কর্নেল ইফতেখার আহমেদ, পরিচালক কর্নেল মুনীম ফেরদৌস।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.