গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরাইলের বিমান হামলায় নিহত আরও ৩৪

ফিলিস্তিনের উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া অঞ্চলের আবাসিক ভবনে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে কমপক্ষে ৩৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাতে এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়, বার্তা সংস্থা এএফপি’কে উদ্ধৃত করে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে যে, নিহতের মধ্যে বেশ কয়েকজন নারী এবং শিশুও রয়েছে। এখনও কয়েক ডজন মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। নিহতের পাশাপাশি আরও সাতজন আহত হয়েছেন। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বিভাগ বলছে উল্টো কথা। তাদের দাবি উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ার হামাসের একটি অ্যাপার্টমেন্টকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে তাদের বাহিনী। অন্যদিকে মধ্য গাজার আরও তিনটি স্থানে ইসরাইলি হামলার খবর পাওয়া গেছে। সেখানে ইসরাইল শরণার্থী শিবিরগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। যাতে ১৫ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া রাফায় ইসরাইলের ড্রোন হামলার আরও পাঁচ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমগুলো। ইসরাইলের ক্রমাগত হামলার ফলে এসব অঞ্চলে উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল। বেইত লাহিয়ার যেসব এলাকায় আবাসিক ভবনকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে সেগুলো সব ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ধ্বংস হওয়া ভবনের একটিতে এক ব্যক্তি তার পরিবার নিয়ে বাস করতেন। তবে সেসময় তারা বাইরে অবস্থান করায় মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন। এএফপি’কে ওই ব্যক্তি বলেছেন, আমরা সবাই ভাবছিলাম মৃত্যু আমাদের কত নিকটে। ইসরাইলের বোমার আঘাতে গোটা এলাকা প্রকম্পিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। ইসরাইল বলছে তারা যে অভিযান শুরু করেছে তা গাজার উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়া থেকে বেইত লাহিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। রোববার রাতভর হামাস নির্মূলের নামে এসব হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে তারা বিস্তৃত যুদ্ধাঞ্চল থেকে বেসামরিক লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু এই ঘোষণা জারি করার পরও বহু পরিবার তাদের বাসভবনে অবস্থান করায় হামলায় আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে। বেইত লাহিয়ার আবাসিক ভবনগুলোতে ছয়টি পরিবারে বসবাস ছিল বলে জানিয়েছেন বাসাল।

ভুক্তভোগী এক নারী বিবিসি’র কাছে হামলার ভয়াবহতা তুলে ধরেন। ইসরাইলিদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমরা তোমাদের কি করেছি? আমরা তোমাদের কোন ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছি। আমাদের ভুল কোথায়? আমরা আমাদের বাড়িতে অবস্থান করছি, কেন তোমরা আমাদের উচ্ছ্বেদ করতে উঠে পড়ে লেগেছ? কথাগুলো বলার সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ওই নারী। গাজায় ইসরাইলের অব্যাহত হামলার ফলে গত পাঁচ সপ্তাহে এক লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, শেষ কয়েক সপ্তাহে জাবালিয়া, বেইত লাহিয়া এবং বেইত হনউন এলাকার অন্তত ৭৫ হাজার মানুষ খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছে। গত সপ্তাহে ইসরাইলের এক বিমান হামলায় ২৫ জন মানুষ নিহত হয়েছেন যার মধ্যে ১৩ শিশুও ছিল।

উল্লেখ্য, গত ১৩ মাস ধরে হামাস-ইসরাইলের সংঘাত চলছে। এসময়ের মধ্যে ইসরাইলি হামলায় ৪৩ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ঘরবাড়ি থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.