রাষ্ট্র সংস্কারে রূপরেখা প্রয়োজন
অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনের কার্যক্রম প্রসঙ্গে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকার অনেক ক্ষেত্রে অত্যন্ত ইতিবাচক ও প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। অন্যদিকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আছে, যা স্বাভাবিক। যেকোনো দেশে এমন বিশাল জঞ্জাল কাটিয়ে উঠে নতুন সংস্কারের পথে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। দেশে সংস্কারের যে ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে, তার সবই সমাধানযোগ্য।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ৯ তারিখে (আগস্ট) দাবি ছিল, সরকারের উচিত হবে অর্পিত দায়িত্ব নিজেরা বিশ্লেষণ করে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার পর একটা কৌশলগত রোডম্যাপ (রূপরেখা) তৈরি করা। এটা এখনো করা হয়নি। তবে এটি অপরিহার্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখনো সময় আছে।
এক প্রশ্নের জবাবে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, শুধু একটি সরকার পরিবর্তনের জন্য ছাত্র আন্দোলন হয়নি। আন্দোলনটা হয়েছে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য, নতুন বাংলাদেশের জন্য। সেটা করতে কতোগুলো সংস্কার কমিশন হয়েছে। এই কমিশনগুলোর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বাস্তব রাষ্ট্র সংস্কার না করে অন্তত এগুলোর জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ, আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশ সৃষ্টির মতো জায়গায় না গিয়ে চট করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চেতনা অর্জনের ক্ষেত্রে অন্তরায় থেকে যাবে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যক্রম নিয়েও পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। ভারতের ভূমিকা নিয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের ইতিবাচক পরিবর্তনের পর ভারত প্রত্যাশিত ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারছে না, কারণ ভারত ইতিহাসে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও কৌশলগতভাবে সবচেয়ে বড় পরাজয় মেনে নিতে পারছে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সম্ভাব্য অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কিছু ক্ষেত্রে ভারতের গণমাধ্যম অনুঘটকের ভূমিকা পালনের জন্য এটি বিশাল ঝুঁকি তৈরি করেছে। তিনি আরও বলেন, অনেকের ধারণা ছিল ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গন, জনগণ ও গণমাধ্যমে উদার চিন্তার প্রচার হয়। আমরা মনে করি, ভারত (সেই উদার চিন্তাভাবনা থেকে) বদলে গেছে। ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশকে যেভাবে তুলে ধরছে তা অন্তত ঝুঁকিপূর্ণ এবং অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য বিরক্তির কারণ। এটা আমাদের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তবে আমরা এটাও মনে করি যে, এটি ভারতের জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর এবং লজ্জাজনক।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ইতিবাচক রাজনৈতিক চর্চার ঘাটতি দৃশ্যমান। দলবাজি, দখলবাজি ও চাঁদাবাজি নতুন করে চলছে। এটি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কারের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে আলোচনার বাইরে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজনৈতিক দল। তাদের চর্চায় যদি গণতন্ত্র না থাকে, বৈষম্যবিরোধী চেতনা না থাকে, আন্দোলনের চেতনার প্রতিফলন না হয়, তাহলে রাষ্ট্র সংস্কারের যত কথাই বলা হচ্ছে, সংস্কার প্রতিবেদনগুলো শুধু কাগজে দলিল হয়ে থাকবে।
এর আগে সরকারের ১০০ দিন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে একটি গবেষণাধর্মী প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। গবেষণার প্রধান গবেষক শাহজাদা এম আকরাম প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন। এতে বলা হয়, কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা বা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া বিতর্কিত হয়েছে। আটটি জাতীয় দিবস পালন না করার সিদ্ধান্ত সমালোচিত হয়েছে। প্রশাসন ও প্রতিষ্ঠানে কোথাও কোথাও পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। কিসের ভিত্তিতে চুক্তিতে নিয়োগ, তা পরিষ্কার নয়। নিয়োগের প্রক্রিয়ায় ক্ষেত্রবিশেষে সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড ও স্বচ্ছতার অনুপস্থিতি দেখা গেছে। রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই-বাছাইয়ের ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া বা না-দেয়ার চর্চা অব্যাহত রয়েছে।
বিএনপি’র বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, দলটির ভেতর গণতান্ত্রিক চর্চা ও প্রয়োজনীয় সংস্কারমূলক উদ্যোগের অনুপস্থিতি রয়েছে। দলের মধ্যে দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের সংস্কৃতি বিদ্যমান। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দুর্নীতি, অনিয়ম, অর্থ পাচার, মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন, বাক?স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার বা কোনো অনুশোচনা প্রকাশ করেনি দলটি।
No comments