শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: ‘মোমবাতি-টর্চের আলোয় অপারেশন’ by এম ইদ্রিস আলী
২০১২
সালের ১লা ডিসেম্বর। আজ থেকে প্রায় ছয় বছর আগের কথা। সাধারণ মানুষদের কাছে
সরকারি চিকিৎসাসেবার মান আরো বৃদ্ধির লক্ষ্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এদিনই বর্তমান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫০ শয্যার নতুন ভবনের শুভ উদ্বোধন করেন। কিন্তু
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও আজো অবধি সেই সুযোগ
সুবিধার ছোঁয়া এই কমপ্লেক্সে লাগেনি। উপরন্তু ৩১ বেডের সীমিত জনবল দিয়েই
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে স্বাস্থ্যসেবা কোনো মতে চলছে।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবিদ এটিএম আনোয়ার গাজী জানান, হাসপাতালটিতে বর্তমানে ডাক্তার আছেন মোট ১৩ জন। এর মধ্যে চারজন ডাক্তার রয়েছেন ডেপুটেশনে অন্যত্র কর্মরত। এরা হলেন ডা. আহমেদ শিবলী মহিউদ্দিন। তিনি প্রেষণে রাজনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত। ডা. শুভ্রাংশু শেখর দে তিনি বড়লেখা হাসপাতালে প্রেষণে কর্মরত। ডা. মিনাক্ষী দেবনাথ তিনি মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন অফিসে (এমওসিএস) পদে কর্মরত প্রেষণে আছেন। মেডিকেল অফিসার হোমিও ডা. মঈন উদ্দিন আহমেদ মামুন ডেপুটেশনে ঢাকা মিরপুর হোমিও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫ দিন কাজ করেন। আর সপ্তাহে একদিন শুধু বৃহস্পতিবারে শ্রীমঙ্গল হাসপাতালে ডিউটি পালন করে আসছেন। তিনি আরো জানান, হাসপাতালটিতে রয়েছে-অন্তঃবিভাগ, বর্হিঃবিভাগ ও প্রসূতি বিভাগ। চিকিৎসা নিতে প্রতিদিনেই শহরের মানুষ ও চা-বাগানের শ্রমিক এবং উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের নারী, পুরুষ, প্রসূতি মা ও শিশুদের ভিড় লেগেই থাকে। এর মধ্যে মাত্র ৯ জন ডাক্তার দিয়ে হাসপাতাল চালানো হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাছাড়া প্রসূতি বিভাগে মাসে ২৫-৩০ অপারেশন হয়। এর জন্য দুজন ডাক্তারকে সেখানে সময় দিতে হয়। বৃহস্পতিবার হাসপাতালে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘হাসপাতালটিতে দীর্ঘদিন ধরে সুপেয় পানির সু-ব্যবস্থা নেই। যেটি আছে তাতে আয়রনযুক্ত। এই পানি ব্যবহারের অনুপোযোগী। নার্সিং ডরমেটরিও জরাজীর্ণ। নেই আধুনিক ওষুধ রাখার স্টোরও। পুরাতন যেটি আছে তাতে স্থান সংকুলান হয় না। আলটাসনোগ্রাফি মেশিন থাকলেও সনোলজিস্ট না থাকায় এটি ব্যবহার হচ্ছে না। ফলে মূল্যবান এ মেশিনটি অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে। এক্সরে মেশিন থাকলেও সেটি পুরোপুরি নষ্ট। সে কারণে এক্সরে টেকনোলজিস্ট আবু সাঈদ সম্প্রতি হবিগঞ্জ বদলি হয়ে চলে যান। প্রসূতি বিভাগের ওটিতে বিদ্যুৎ ও আইপিএস লাইন নেই।
সে কারণে বিদ্যুৎ চলে গেলে মোমবাতি ও চার্জারের আলোতে সিজার করতে হয়। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটায় হঠাৎ হাসপাতালের বিদ্যুত চলে যায়। আসে রাত একটায়। এ সময়ের মধ্যে হাসপাতালে আসা আমেনা, মরিয়ম ও শাহেদার প্রসব ব্যথা ওঠে। তাদের ডেলিভারি করানো হয়। রাত ১০টার পর থেকে চার্জারের আলো কমতে শুরু হলে অন্য দুই প্রসূতি ফাতেমা ও শরিফার সন্তান জন্মের জন্য মোমবাতি জ্বালিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন চিকিৎসকরা। ওই রাতে কর্তব্যরত চিকিৎসক আর এমও মোহাম্মদ মহসীন জানান, সন্ধ্যায় বিদ্যুতের চলে যাওয়ার পরই পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করেছিলাম। কিন্তু বিদ্যুৎ আসে রাত একটায়। তাই চার্জারের আলোতে ডেলিভারি করাতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে জেনারেটর ও আইপিএস থাকলেও লেবার ওয়ার্ডে সংযোগ নেই।’ এ বিষয়ে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম প্রকৌশলী শিবু লাল বসু জানান, ঝড়ে কোথায় লাইন নষ্ট হয়েছিল এটা খোঁজতে সময় লেগেছে। তবে উপজেলা পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জয়নাল আবেদীন টিটো বলেন, ‘দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ না থাকলে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। হাসপাতালে যখন কারেন্ট চলে যায় তখন মোমবাতি আর টর্চলাইট দিয়ে অপারেশন করতে হয়। ওই দিন ৪-৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। রোগীর মোমবাতির আলোয় স্যালাইন পুশ করতে গিয়ে সুই দিতে অসুবিধা হয়। রক্তনালী খোঁজে পাওয়া যায় না। তবুও আমরা সফলভাবে সিজার করতে পেরেছি। তিনি বলেন, গত বছরে প্রসূতি বিভাগে ২৯৬ জনকে সিজার করা হয়। নরমাল ডেলিভারি করানো হয় ১ হাজার ২১৫ জনকে। নতুন বিল্ডিংয়ে প্রসূতি বিভাগে আইপিএস কানেকশান নেই। জেনারেটর একটি আছে। বছরাধিকাল ধরে এটির ডায়নামা নষ্ট। তাছাড়া ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার নেই শুরু থেকেই। অন্তঃবিভাগে মেডিকেল অফিসার নেই। পর্যাপ্ত ক্লিনার নেই। যারা আছেন তারা বয়স্ক। তিনি আরো বলেন, ‘৫০ বেড এখন পর্যন্ত শুধু নামেই। সে মানদণ্ডে অন্তঃবিভাগ ও বহিঃবিভাগে ডাক্তারদের পদ সৃজন হয়নি। মানুষ এখন অনেকটা সচেতন। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা ও প্রসূতি সেবা নিতে সবসময় ভিড় লেগেই আছে। তবুও আমরা সাধ্য মতো চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি’।
শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিরাজমান সমস্যার বিষয়গুলো শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মোবাশশেরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এসব সমস্যার কথা কেউ বলে নাই। বিদ্যুৎ না থাকলে বিকল্প হিসেবে আইপিএসের জন্য আবেদন করলে ব্যবস্থা নেব’।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবিদ এটিএম আনোয়ার গাজী জানান, হাসপাতালটিতে বর্তমানে ডাক্তার আছেন মোট ১৩ জন। এর মধ্যে চারজন ডাক্তার রয়েছেন ডেপুটেশনে অন্যত্র কর্মরত। এরা হলেন ডা. আহমেদ শিবলী মহিউদ্দিন। তিনি প্রেষণে রাজনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত। ডা. শুভ্রাংশু শেখর দে তিনি বড়লেখা হাসপাতালে প্রেষণে কর্মরত। ডা. মিনাক্ষী দেবনাথ তিনি মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন অফিসে (এমওসিএস) পদে কর্মরত প্রেষণে আছেন। মেডিকেল অফিসার হোমিও ডা. মঈন উদ্দিন আহমেদ মামুন ডেপুটেশনে ঢাকা মিরপুর হোমিও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫ দিন কাজ করেন। আর সপ্তাহে একদিন শুধু বৃহস্পতিবারে শ্রীমঙ্গল হাসপাতালে ডিউটি পালন করে আসছেন। তিনি আরো জানান, হাসপাতালটিতে রয়েছে-অন্তঃবিভাগ, বর্হিঃবিভাগ ও প্রসূতি বিভাগ। চিকিৎসা নিতে প্রতিদিনেই শহরের মানুষ ও চা-বাগানের শ্রমিক এবং উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের নারী, পুরুষ, প্রসূতি মা ও শিশুদের ভিড় লেগেই থাকে। এর মধ্যে মাত্র ৯ জন ডাক্তার দিয়ে হাসপাতাল চালানো হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাছাড়া প্রসূতি বিভাগে মাসে ২৫-৩০ অপারেশন হয়। এর জন্য দুজন ডাক্তারকে সেখানে সময় দিতে হয়। বৃহস্পতিবার হাসপাতালে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘হাসপাতালটিতে দীর্ঘদিন ধরে সুপেয় পানির সু-ব্যবস্থা নেই। যেটি আছে তাতে আয়রনযুক্ত। এই পানি ব্যবহারের অনুপোযোগী। নার্সিং ডরমেটরিও জরাজীর্ণ। নেই আধুনিক ওষুধ রাখার স্টোরও। পুরাতন যেটি আছে তাতে স্থান সংকুলান হয় না। আলটাসনোগ্রাফি মেশিন থাকলেও সনোলজিস্ট না থাকায় এটি ব্যবহার হচ্ছে না। ফলে মূল্যবান এ মেশিনটি অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে। এক্সরে মেশিন থাকলেও সেটি পুরোপুরি নষ্ট। সে কারণে এক্সরে টেকনোলজিস্ট আবু সাঈদ সম্প্রতি হবিগঞ্জ বদলি হয়ে চলে যান। প্রসূতি বিভাগের ওটিতে বিদ্যুৎ ও আইপিএস লাইন নেই।
সে কারণে বিদ্যুৎ চলে গেলে মোমবাতি ও চার্জারের আলোতে সিজার করতে হয়। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটায় হঠাৎ হাসপাতালের বিদ্যুত চলে যায়। আসে রাত একটায়। এ সময়ের মধ্যে হাসপাতালে আসা আমেনা, মরিয়ম ও শাহেদার প্রসব ব্যথা ওঠে। তাদের ডেলিভারি করানো হয়। রাত ১০টার পর থেকে চার্জারের আলো কমতে শুরু হলে অন্য দুই প্রসূতি ফাতেমা ও শরিফার সন্তান জন্মের জন্য মোমবাতি জ্বালিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন চিকিৎসকরা। ওই রাতে কর্তব্যরত চিকিৎসক আর এমও মোহাম্মদ মহসীন জানান, সন্ধ্যায় বিদ্যুতের চলে যাওয়ার পরই পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করেছিলাম। কিন্তু বিদ্যুৎ আসে রাত একটায়। তাই চার্জারের আলোতে ডেলিভারি করাতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে জেনারেটর ও আইপিএস থাকলেও লেবার ওয়ার্ডে সংযোগ নেই।’ এ বিষয়ে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম প্রকৌশলী শিবু লাল বসু জানান, ঝড়ে কোথায় লাইন নষ্ট হয়েছিল এটা খোঁজতে সময় লেগেছে। তবে উপজেলা পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জয়নাল আবেদীন টিটো বলেন, ‘দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ না থাকলে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। হাসপাতালে যখন কারেন্ট চলে যায় তখন মোমবাতি আর টর্চলাইট দিয়ে অপারেশন করতে হয়। ওই দিন ৪-৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। রোগীর মোমবাতির আলোয় স্যালাইন পুশ করতে গিয়ে সুই দিতে অসুবিধা হয়। রক্তনালী খোঁজে পাওয়া যায় না। তবুও আমরা সফলভাবে সিজার করতে পেরেছি। তিনি বলেন, গত বছরে প্রসূতি বিভাগে ২৯৬ জনকে সিজার করা হয়। নরমাল ডেলিভারি করানো হয় ১ হাজার ২১৫ জনকে। নতুন বিল্ডিংয়ে প্রসূতি বিভাগে আইপিএস কানেকশান নেই। জেনারেটর একটি আছে। বছরাধিকাল ধরে এটির ডায়নামা নষ্ট। তাছাড়া ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার নেই শুরু থেকেই। অন্তঃবিভাগে মেডিকেল অফিসার নেই। পর্যাপ্ত ক্লিনার নেই। যারা আছেন তারা বয়স্ক। তিনি আরো বলেন, ‘৫০ বেড এখন পর্যন্ত শুধু নামেই। সে মানদণ্ডে অন্তঃবিভাগ ও বহিঃবিভাগে ডাক্তারদের পদ সৃজন হয়নি। মানুষ এখন অনেকটা সচেতন। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা ও প্রসূতি সেবা নিতে সবসময় ভিড় লেগেই আছে। তবুও আমরা সাধ্য মতো চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি’।
শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিরাজমান সমস্যার বিষয়গুলো শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মোবাশশেরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এসব সমস্যার কথা কেউ বলে নাই। বিদ্যুৎ না থাকলে বিকল্প হিসেবে আইপিএসের জন্য আবেদন করলে ব্যবস্থা নেব’।
No comments