বজ্রপাতপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করতে ৮ জেলায় ‘লাইটেনিং সেন্সর’ by দীন ইসলাম
দেশের
বজ্রপাতপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করতে আট জেলায় নতুন প্রযুক্তি ‘লাইটেনিং
সেন্সর’ লাগিয়েছে সরকার। ঝড়-বৃষ্টির সময় কোনো জেলায় কখন বজ্রপাত হয়েছে বা
কতবার বিদ্যুৎ চমকিয়েছে তার হিসাব নিতে এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির লাইটেনিং
ডিটেকটিভ সেন্সর বসানো হয়েছে। বজ্রপাতপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করার পর লাগানো
হবে বজ্রপাত নিরোধক ‘লাইটেনিং অ্যারেস্টার’। অ্যারেস্টারের মাধ্যমে বজ্রপাত
টেনে মাটির নিচে পাঠিয়ে দেয়া যাবে। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে এরই
মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া, নওগাঁর বদলগাছি, ময়মনসিংহ,
সিলেট, খুলনার কয়রা এবং পটুয়াখালীতে লাইটেনিং সেন্সর লাগানো হয়েছে। আটটি
সেন্সরে পুরো দেশের চিত্র উঠে আসবে। একেকটি সেন্সরের রেঞ্জ ২৫০ কিলোমিটার।
প্রতিটি সেন্সর থেকে এক হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত মনিটরিং করা যাবে। এক
মৌসুমে (এপ্রিল থেকে জুন) দেশে কতবার বিদ্যুৎ চমকায় এবং বজ্রপাত হয় সেটি
সংরক্ষণ করা হবে। তবে এখন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ
আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রযুক্তির যাত্রা শুরু হবে। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা
গেছে রেডিও, টেলিভিশন, ওয়েবসাইটে এখনো তাঁরা বজ্রপাতের পূর্বাভাস দেন। তবে
সেটি রাডার থেকে নেয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেয়া হয়, যাতে বজ্রপাতের চিত্র
সুস্পষ্টভাবে আসে না। এ ছাড়া এখন বজ্রপাতের তথ্য দেয়া হয় জেলাওয়ারি। কিন্তু
ডিটেকটিভ সেন্সরের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট এলাকার নাম বলা যাবে। এর আগে
বজ্রপাতের প্রতি নজর ছিল কম। বর্তমানে গুরুত্ব অনুধাবন করে এখন এর প্রতি
বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে। এজন্য প্রথম ধাপে এলাকা চিহ্নিত করার কাজ শুরু
হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে ১৩টি নদীবন্দরে আবহাওয়া
পর্যবেক্ষণাগার শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের আওতায় বজ্রপাতের সংকেত ও সংখ্যা
নিরূপণের যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে
৬২ কোটি টাকা। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আটটি ডিকেটটিভ সেন্সরের যন্ত্রপাতি কেনায়
খরচ হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়
সূত্রে জানা গেছে, সারা বিশ্বে বজ্রপাতে সবচেয়ে কম লোক মারা গেছে জাপানে।
২০০৬ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে মাত্র ২৪ জন বজ্রপাতে মারা গেছে।
একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ৩১৯ জন মারা গেছে। তবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি
ব্যবহার ও সচেতনতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রেও বজ্রপাতে মৃত্যু হার কমছে।
সিঙ্গাপুর, জাপান, কানাডা এমনকি পাশের দেশ ভারতেও বজ্রপাত রোধ করতে
অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি লাগানো হয়েছে। উল্টোদিকে বাংলাদেশে প্রতি বছর
বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা বাড়ছে। এতে সরকার ২০১৬ সালে একে প্রাকৃতিক
দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা দেয়। এ বছর পহেলা বৈশাখ থেকে এখন পর্যন্ত বজ্রপাতে
১০৫ জন মারা গেছে। এর আগে ২০১৬ সালের মে মাসে বজ্রপাতে চার দিনে ৮১ জন মারা
যায়। এরপর ২০১৬ সালে ৩৮০ জন ও ২০১৭ সালে ৩০৭ জন মারা গেছে। দিন দিন
বজ্রপাতের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এটা প্রতিরোধে তৎপর হয়েছে আবহাওয়া অফিস। এজন্য
প্রথম ধাপে ‘লাইটেনিং সেন্সর’ লাগানো হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ‘লাইটেনিং
অ্যারেস্টার’ লাগানো হবে। সহসাই অ্যারেস্টার লাগানোর কাজ শুরু হবে বলে মনে
করছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
No comments