সরকারি স্কুলে ভর্তির বয়স নিয়ে বিপত্তি
কোনো
ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই এবার স্কুলে বয়স নির্ধারণ করে ভর্তি
নীতিমালা-২০১৭ ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রতি বছর প্রথম শ্রেণীতে
ভর্তির বয়সসীমা নির্ধারণ করা থাকে। এবার দ্বিতীয় থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত
ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর বয়সের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। নীতিমালায় বলা
হয়েছে, ‘জাতীয় শিক্ষা নীতি-২০১০ অনুযায়ী প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য
শিক্ষার্থীর বয়স ৬ + হতে হবে। সে হিসাবে দ্বিতীয় থেকে নবম শ্রেণী ভর্তির
বয়স নির্ধারিত হবে। ভর্তির বয়সের ঊর্ধ্বসীমা সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় নির্ধারণ
করবে। শিক্ষার্থীর বয়স নির্ধারণের জন্য ভর্তির আবেদন ফরমের সাথে অনলাইন
জন্মনিবন্ধন সনদের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে।’ নীতিমালার এ নির্দেশনা নিয়ে
বিপাকে পড়েছে ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণীতে ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ও তাদের
অভিভাবকেরা। আগামী জানুয়ারি মাসে ২০১৮ শিক্ষাবর্ষে সরকারি বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ
শ্রেণীতে ভর্তির জন্য বয়সসীমা নির্ধারণ হবে ১১+ বছর। অন্য দিকে পঞ্চম
শ্রেণীর প্রাথমিক সমাপনীতে অংশ নেয়া শিশুদের বয়স ১০+ বছর। এ নিয়ে অষ্টম
শ্রেণীর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় অংশ নেয়া
শিক্ষার্থীরাও সমস্যায় পড়েছে। এ অবস্থায় সন্তানের ভর্তি নিয়ে চরম
দুশ্চিন্তায় পড়েছেন লাখ লাখ অভিভাবক। বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকেরা প্রশ্ন
তুলেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে। এ নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর
(মাউশি) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা চেয়ে চিঠি দিয়েছে। রাজধানীসহ সারা
দেশে সরকারি স্কুলের মাধ্যমিক শ্রেণীতে ভর্তির জন্য মধ্যবিত্ত অভিভাবকেরাই
বেশি আগ্রহী থাকেন। এখানে শিক্ষা ব্যয় তুলনামূলকভাবে অনেক কম। এ কারণেই
অনেক অভিভাবকের প্রথম পছন্দ সরকারি স্কুল। এ ছাড়া জেলাপর্যায়ের সরকারি
স্কুলের আলাদা একটা গুরুত্ব রয়েছে অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের কাছে। অভিভাবকেরা
বলছেন, এ বছর হঠাৎ করেই ভর্তির বয়সসীমা এক বছর বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্রথম
শ্রেণীতে ভর্তির জন্য বয়স ন্যূনতম ছয় বছর (লটারি), তৃতীয় শ্রেণীর জন্য আট
বছর এবং ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তির জন্য ১১ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। বাস্তবে
তৃতীয় ও ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি ইচ্ছুক ৯৫ ভাগ শিক্ষার্থীর বয়স যথাক্রমে ৭ এবং
১০ বছরের বেশি; কিন্তু ৮ ও ১১ বছরের কম। অন্যান্য বছর ৭+ এবং ১০+ বছরের
শিক্ষার্থীরাই এ দু’টি শ্রেণীতে ভর্তি হতো। তারা বলেন, হঠাৎ বয়স বাড়ানোর এ
সিদ্ধান্তে বেশি অসুবিধায় পড়েছে পঞ্চম শ্রেণীতে সমাপনী দেয়া শিক্ষার্থীরা।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) উপপরিচালক (মাধ্যমিক) মো: মোস্তফা
কামাল বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য ন্যূনতম বয়স
নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যান্য শ্রেণীতে ভর্তির জন্য বয়সসীমা নির্ধারণ করে
দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে
চিঠি দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। নির্দেশনা পাওয়া গেলে সংশোধনী জানিয়ে দেয়া
হবে। তিনি বলেন, অন্যান্য শ্রেণীতে ভর্তির জন্য আগের নিয়ম বিদ্যমান থাকবে।
গত ১ ডিসেম্বর থেকে দেশের সরকারি স্কুলগুলোতে ভর্তি আবেদন প্রক্রিয়া শুরু
হয়েছে। রাজধানীর ৩৫টি সরকারি স্কুলে প্রথম থেকে নবম শ্রেণীতে ভর্তি করা
হবে। অনলাইনে আগামী ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। শিক্ষার্থী ও
অভিভাবকদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ল্যাবরেটরি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ,
শেরেবাংলা নগর গভর্নমেন্ট বয়েজ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল, মতিঝিল গভর্নমেন্ট
বয়েজ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শেরেবাংলা নগর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড
কলেজ এবং আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ। গতবারের মতো ২০১৮ শিক্ষাবর্ষে
ঢাকা মহানগরের সরকারি মাধ্যমিক স্কুলগুলোকে ‘এ’ ‘বি’ ও ‘সি’ এ তিন
ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ১৩টি, ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ১২টি ও
‘সি’ ক্যাটাগরিতে ১২টি স্কুল রয়েছে। লটারির মাধ্যমে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি
করা হবে। আগামী ২৬ ডিসেম্বর লটারি অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণী
পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষা নেয়া হবে। ‘এ’ ক্যাটাগরির ভর্তি পরীক্ষা ১৯
ডিসেম্বর, ‘বি’ ক্যাটাগরির ২০ ডিসেম্বর এবং ‘সি’ ক্যাটাগরির ২১ ডিসেম্বর
অনুষ্ঠিত হবে। সব পরীক্ষার ফল ৩০ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হবে। আগামী ১
জানুয়ারি থেকে ক্লাস শুরু হবে।
‘এ’ গ্র“পের স্কুল হচ্ছে গভর্নমেন্ট
ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, তেজগাঁও সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, মতিঝিল সরকারি বালিকা
উচ্চবিদ্যালয়, খিলগাঁও সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, নিউ গভর্নমেন্ট গার্লস
হাইস্কুল, নবাবপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, ইসলামিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়,
ধানমন্ডি কামরুন্নেসা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, রূপনগর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়,
আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উত্তরখান সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়,
শেখ জামাল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়
(ফিডার শাখা)। ‘বি’ গ্র“পের স্কুলগুলো হচ্ছে- মতিঝিল সরকারি বালক
উচ্চবিদ্যালয়, নারিন্দা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, গভর্নমেন্ট মুসলিম হাইস্কুল,
বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, শেরেবাংলা নগর সরকারি বালক
উচ্চবিদ্যালয়, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ সংযুক্ত হাইস্কুল, ধানমন্ডি সরকারি
বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, হাজী এম এ গফুর
সরকারি মাধ্যমিক স্কুল, বঙ্গমাতা শেখ ফাজিলাতুন্নেছা মুজিব সরকারি মাধ্যমিক
বিদ্যালয়, জুরাইন শেখ কামাল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, দারুস সালাম সরকারি
মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট বয়েজ হাইস্কুল (ফিডার শাখা)। ‘সি’
গ্র“পের স্কুলগুলো হচ্ছে- ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট বয়েজ হাইস্কুল, আরমানিটোলা
সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, টিকাটুলী
কামরুন্নেসা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, তেজগাঁও সরকারি বালিকা
উচ্চবিদ্যালয়, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল ও গণভবন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, মিরপুর
সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, শহীদ শেখ রাসেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, ভাসানটেক সরকারি
মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট সরকারি মাধ্যমিক
স্কুল, খিলগাঁও সরকারি উচ্চবিদ্যালয় (ফিডার শাখা)।
No comments