মাতৃমৃত্যুর তথ্য
জাতীয়
জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (নিপোর্ট) মাতৃমৃত্যু বৃদ্ধির
তথ্য সরকার যে কায়দায় বাতিল করে দিতে চেয়েছে, তা সত্যিই বিস্ময়কর। কোনো
পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে, সেটার ত্রুটি–বিচ্যুতি থাকলে তা খুঁজে
বের করার চেষ্টা থাকতে পারে, কিন্তু নিপোর্টের নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে
মাতৃমৃত্যু–সংক্রান্ত জরিপের প্রতিবেদন সরিয়ে নেওয়াটা কি আদৌ বিবেচনাসম্মত
হলো? নিপোর্টের মাতৃস্বাস্থ্য জরিপ প্রতিবেদন ২০১৬ অনুযায়ী, বাংলাদেশে
বর্তমানে মাতৃমৃত্যুর হার লাখে ১৯৬। অর্থাৎ এক লাখ জীবিত শিশুর জন্ম দিতে
গিয়ে ১৯৬ জন মায়ের মৃত্যু হচ্ছে। ২০১০ সালে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল ১৯৪।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে তা কমে দাঁড়ায় লাখে ১৭৬ জনে। এর মানে
হচ্ছে মাতৃমৃত্যুর হার আগের তুলনায় বেড়েছে। কিন্তু এই তথ্য মানতে নারাজ
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
তাঁদের মতে, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো থেকে পাওয়া তথ্য এবং বাংলাদেশ
পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনের তথ্যের সঙ্গে নিপোর্টের তথ্য মিলছে না।
নিরপেক্ষ কাউকে দিয়ে এই জরিপ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করানো এবং কী পদ্ধতিতে
এই জরিপ চালানো হয়েছে, তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে বলে তাঁরা মনে করেন। এখন
প্রশ্ন হচ্ছে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা না মানলে আর ওয়েবসাইট থেকে মাতৃমৃত্যুর
প্রতিবেদন সরিয়ে ফেললেই কি আসল পরিস্থিতি বদলে যাবে? সরকার বেশ কয়েক বছর
ধরে মাতৃমৃত্যু রোধে তাদের সাফল্যের কথা প্রচার করে আসছে। এখন প্রচারের
সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হলো না বলে তথ্য মেনে না নেওয়ার মানসিকতা বিপজ্জনক। কোনো
তথ্য না মানলে সেটা যে মিথ্যা হয়ে যায় না, এটা সরকার কবে বুঝবে? সরকারের
বরং উচিত হবে জরিপের ফলাফল প্রত্যাখ্যান না করে একে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া।
জরিপে উঠে আসা তথ্য থেকে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচিতে কোথায় কী
সীমাবদ্ধতা আছে, তা চিহ্নিত করে সেই সব সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া। সহস্রাব্দ
উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অনুযায়ী দেশে মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৪৩
জনে নামিয়ে আনার কথা ছিল সরকারের, কিন্তু তা হয়নি। এটা পরিষ্কার যে এই
লক্ষ্য অর্জনে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া সরকারের তরফে উচিত ছিল তা যথাযথভাবে
নেওয়া হয়নি। বেশির ভাগ মাকে জীবন রক্ষাকারী কর্মসূচির আওতায় আনা সম্ভব
হয়নি। সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে মাতৃ স্বাস্থ্যসেবার মান যথাযথ নয়,
কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশ করুণ। সারা দেশে শুধু ৩ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা
কেন্দ্র স্বাভাবিক প্রসবের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম মানদণ্ড পূরণ করে।
বাড়িতে সন্তান জন্ম দেওয়া মায়েদের মাত্র ৩ শতাংশ প্রশিক্ষিত ধাত্রীর সেবা
পাচ্ছেন। রয়েছে আরও অনেক সমস্যা। সরকারকে এখন এসব সমস্যার দিকে নজর দিতে
হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
No comments