গাজায় আবারো ইসরাইলের ট্যাঙ্ক ও বিমান হামলা
ইসরাইলি
সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা গাজা উপত্যকার হামাসের বিভিন্ন অবস্থান
লক্ষ্য করে ট্যাঙ্ক ও বিমান হামলা চালিয়েছে। সোমবার ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে
ফিলিস্তিনীদের রকেট হামলার পর তারা পাল্টা এ হামলা চালায়। সামরিক বাহিনী
জানায়, গাজা উপত্যকা থেকে কমপক্ষে দুটি রকেট ছোড়া হয় এবং এর দ্বিতীয়টি
ইসরাইলের আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিহত করে। প্রথম
দফা রকেট হামলার পর সামরিক বাহিনী বিবৃতি জারি করে এর জবাব দেয়ার কথা
জানায়। এরপরই গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের সামরিক চৌকিগুলো লক্ষ্য
করে ইসরাইলি বাহিনী ট্যাঙ্ক ও বিমান হামলা চালায়। প্রথম দফার রকেট হামলায়
কেউ হতাহত হয়েছে কিনা সেব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। গাজা থেকেও ইসরাইলি
বাহিনীর হামলায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে
জেরুসালেমকে স্বীকৃতি দিয়ে বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের
বিবৃতির পর এটি ছিলো সর্বশেষ পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা।
ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের পরিণতি মারাত্মক হতে পারে
জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বীকৃতি এমুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঘটনা। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর ফিলিস্তিনে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং শেষ হয়ে যেতে পারে মধ্যপ্রাচ্য শান্তিপ্রক্রিয়া। জেরুসালেম নিয়ে কেন এই বিতর্ক এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মূল সমস্যা কোথায়?
ফিলিস্তিন ও ইসরাইল উভয় রাষ্ট্রই জেরুসালেমকে তাদের নিজ নিজ রাজধানী ও পবিত্র নগরী মনে করে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড হলেও শহরটি বর্তমানে ইসরাইলের দখলে। এই সমস্যার সমাধানে প্রয়োজন শান্তিচুক্তি। ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর থেকেই নগরীটির মর্যাদা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। এই যুদ্ধের আগে জেরুসালেমকে নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক এলাকা ঘোষণা করেছিল জাতিসঙ্ঘ; কিন্তু সেসবের তোয়াক্কা না করে যুদ্ধে ইসরাইল নগরীর পশ্চিম অর্ধেক দখল করে নেয়। আর ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে দখল করে নেয় বাকি অর্ধেক। বেশির ভাগ মানুষেরই প্রত্যাশা ছিল, একটি শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পশ্চিম জেরুসালেম ইসরাইলকে ও পূর্ব জেরুসালেম ফিলিস্তিনকে দেয়া হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই জেরুসালেমকে একটি সঙ্কট হিসেবে দেখেছে এবং এর সমাধানের জন্য ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের জনগণকে তাগিদ দিয়েছে। দেশটি সব সময় নিজেদের এই সঙ্কটের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে উপস্থাপন করত। কিন্তু সেই ঐতিহাসিক নিরপেক্ষতা ভঙ্গ করেছেন ট্রাম্প। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, জেরুসালেমের যেকোনো অংশে রাজধানী স্থাপন করতে রাজি নয় ইসরাইল। তারা চায় পুরোটা। ১৯৮০ সালে ইসরাইল জেরুসালেমকে তাদের চিরন্তন রাজধানী ঘোষণা করে আর তখনই মূলত পূর্ব জেরুসালেমের দখলকে আনুষ্ঠানিকতায় রূপ দেয় দখলদার ইহুদি দেশটি। ট্রাম্প জেরুসালেমকে ইসরাইলের ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন সেটিই শুধু নয়, তিনি ইসরাইলের এই অযৌক্তিক দাবি প্রত্যাখ্যান করতে এবং জেরুসালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হওয়া উচিত, এই সত্য কথাটুকু বলতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। এর অর্থ যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইসরাইলের দখলদারিত্বকেই সমর্থন দিচ্ছে, তাই এই সিদ্ধান্ত যেকোনো সম্ভাব্য শান্তি প্রক্রিয়ার মৃত্যু ঘটাতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষপাতিত্ব
যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দশক ধরেই ইসরাইল-ফিলিস্তিন সঙ্কটের প্রধান মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা রেখেছে। উভয় দলের আস্থা অর্জন ও তাদের আলোচনার টেবিলে রাখার জন্য মধ্যস্থতাকারীর নিরপেক্ষতা খুবই জরুরি। যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকেরাও তাদের এই মধ্যস্থতা প্রক্রিয়ার প্রধান নীতি হিসেবে নিরপেক্ষতাকে সব সময়ই ধারণ করতে চান, তাই ট্রাম্পের এই ঘোষণাকে তারা মনে করেন হুঁশিয়ারি সঙ্কেত হিসেবে। তবে নিরপেক্ষতার সেই নীতি বিতর্কিত হয়েছে গত শতাব্দীর আশির দশক থেকে। এটি আরো জোরদার হয়েছে খ্রিষ্টধর্মীয় বিষয়গুলো যখন রাজনৈতিকভাবে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে। খ্রিষ্টান ধর্মপ্রচারকেরা সরাসরি মার্কিন ইহুদিদের সাথে সুর মিলিয়েছেন, আর অন্যরা বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত এই ঘটনায় ইসরাইলকে সমর্থন করা। এই শতাব্দীর শুরুর দিকে দ্বিতীয় ইন্তিফাদার পর থেকে এই অবস্থান আরো জোরদার হয়েছে। এই বিতর্ক সব সময়ই জোরালো হয়েছে জেরুসালেম বিষয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থীরাও তেলআবিব থেকে জেরুসালেমে দূতাবাস স্থানান্তরের অঙ্গীকার করে আসছেন। তবে নির্বাচিত হওয়ার পর অতীতে কেউ এটি বাস্তবায়ন করেননি। তাদের যুক্তি ছিল, শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা সৃষ্টি করা। কিন্তু ট্রাম্প কোনো রাখঢাক ছাড়াই সরাসরি ইসরাইলের পক্ষে অবস্থান নিলেন। পরবর্তী পরিণতি
ট্রাম্পের ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছে বিক্ষোভ, যা প্রায়ই রূপ নিচ্ছে সহিংসতায়। ফিলিস্তিনিদের বক্তব্য হলো ইসরাইলকে বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চি ভূখণ্ডও দখল করতে দেবো না। আর সমগ্র আরব বিশ্বের প্রসঙ্গে বলা যায়- এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র জনপ্রিয় ও বিশ্বস্ত কোনো বন্ধু নয়। আরবরা এখনো মনে করেন মিথ্যা অজুহাতে ইরাকে মানুষ হত্যা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে ফিলিস্তিনির বিরুদ্ধে এই মার্কিন-ইসরাইলি ষড়যন্ত্রের পর আরব শাসকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতার নীতি বজায় রাখা কঠিন হবে। ফিলিস্তিনিদের বিষয়ে গুরুত্ব না দিলেও নিজ দেশের নাগরিকদের ক্ষোভের বিষয়টি তাদের অবশ্যই চিন্তার কারণ হবে। তবে এর অর্থ এই নয় যে, আরব বিশ্ব যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, তবে তারা অনেক বেশি সাবধানী হবে সহযোগিতার ক্ষেত্রে। এর ফলে ফিলিস্তিনি শান্তি আলোচনায় আমেরিকার নিরপেক্ষতার গুরুত্ব হারিয়েছে চিরতরে।- নিউ ইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণ
ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের পরিণতি মারাত্মক হতে পারে
জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বীকৃতি এমুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঘটনা। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর ফিলিস্তিনে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং শেষ হয়ে যেতে পারে মধ্যপ্রাচ্য শান্তিপ্রক্রিয়া। জেরুসালেম নিয়ে কেন এই বিতর্ক এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মূল সমস্যা কোথায়?
ফিলিস্তিন ও ইসরাইল উভয় রাষ্ট্রই জেরুসালেমকে তাদের নিজ নিজ রাজধানী ও পবিত্র নগরী মনে করে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড হলেও শহরটি বর্তমানে ইসরাইলের দখলে। এই সমস্যার সমাধানে প্রয়োজন শান্তিচুক্তি। ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর থেকেই নগরীটির মর্যাদা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। এই যুদ্ধের আগে জেরুসালেমকে নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক এলাকা ঘোষণা করেছিল জাতিসঙ্ঘ; কিন্তু সেসবের তোয়াক্কা না করে যুদ্ধে ইসরাইল নগরীর পশ্চিম অর্ধেক দখল করে নেয়। আর ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে দখল করে নেয় বাকি অর্ধেক। বেশির ভাগ মানুষেরই প্রত্যাশা ছিল, একটি শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পশ্চিম জেরুসালেম ইসরাইলকে ও পূর্ব জেরুসালেম ফিলিস্তিনকে দেয়া হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই জেরুসালেমকে একটি সঙ্কট হিসেবে দেখেছে এবং এর সমাধানের জন্য ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের জনগণকে তাগিদ দিয়েছে। দেশটি সব সময় নিজেদের এই সঙ্কটের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে উপস্থাপন করত। কিন্তু সেই ঐতিহাসিক নিরপেক্ষতা ভঙ্গ করেছেন ট্রাম্প। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, জেরুসালেমের যেকোনো অংশে রাজধানী স্থাপন করতে রাজি নয় ইসরাইল। তারা চায় পুরোটা। ১৯৮০ সালে ইসরাইল জেরুসালেমকে তাদের চিরন্তন রাজধানী ঘোষণা করে আর তখনই মূলত পূর্ব জেরুসালেমের দখলকে আনুষ্ঠানিকতায় রূপ দেয় দখলদার ইহুদি দেশটি। ট্রাম্প জেরুসালেমকে ইসরাইলের ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন সেটিই শুধু নয়, তিনি ইসরাইলের এই অযৌক্তিক দাবি প্রত্যাখ্যান করতে এবং জেরুসালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হওয়া উচিত, এই সত্য কথাটুকু বলতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। এর অর্থ যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইসরাইলের দখলদারিত্বকেই সমর্থন দিচ্ছে, তাই এই সিদ্ধান্ত যেকোনো সম্ভাব্য শান্তি প্রক্রিয়ার মৃত্যু ঘটাতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষপাতিত্ব
যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দশক ধরেই ইসরাইল-ফিলিস্তিন সঙ্কটের প্রধান মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা রেখেছে। উভয় দলের আস্থা অর্জন ও তাদের আলোচনার টেবিলে রাখার জন্য মধ্যস্থতাকারীর নিরপেক্ষতা খুবই জরুরি। যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকেরাও তাদের এই মধ্যস্থতা প্রক্রিয়ার প্রধান নীতি হিসেবে নিরপেক্ষতাকে সব সময়ই ধারণ করতে চান, তাই ট্রাম্পের এই ঘোষণাকে তারা মনে করেন হুঁশিয়ারি সঙ্কেত হিসেবে। তবে নিরপেক্ষতার সেই নীতি বিতর্কিত হয়েছে গত শতাব্দীর আশির দশক থেকে। এটি আরো জোরদার হয়েছে খ্রিষ্টধর্মীয় বিষয়গুলো যখন রাজনৈতিকভাবে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে। খ্রিষ্টান ধর্মপ্রচারকেরা সরাসরি মার্কিন ইহুদিদের সাথে সুর মিলিয়েছেন, আর অন্যরা বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত এই ঘটনায় ইসরাইলকে সমর্থন করা। এই শতাব্দীর শুরুর দিকে দ্বিতীয় ইন্তিফাদার পর থেকে এই অবস্থান আরো জোরদার হয়েছে। এই বিতর্ক সব সময়ই জোরালো হয়েছে জেরুসালেম বিষয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থীরাও তেলআবিব থেকে জেরুসালেমে দূতাবাস স্থানান্তরের অঙ্গীকার করে আসছেন। তবে নির্বাচিত হওয়ার পর অতীতে কেউ এটি বাস্তবায়ন করেননি। তাদের যুক্তি ছিল, শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা সৃষ্টি করা। কিন্তু ট্রাম্প কোনো রাখঢাক ছাড়াই সরাসরি ইসরাইলের পক্ষে অবস্থান নিলেন। পরবর্তী পরিণতি
ট্রাম্পের ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছে বিক্ষোভ, যা প্রায়ই রূপ নিচ্ছে সহিংসতায়। ফিলিস্তিনিদের বক্তব্য হলো ইসরাইলকে বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চি ভূখণ্ডও দখল করতে দেবো না। আর সমগ্র আরব বিশ্বের প্রসঙ্গে বলা যায়- এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র জনপ্রিয় ও বিশ্বস্ত কোনো বন্ধু নয়। আরবরা এখনো মনে করেন মিথ্যা অজুহাতে ইরাকে মানুষ হত্যা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে ফিলিস্তিনির বিরুদ্ধে এই মার্কিন-ইসরাইলি ষড়যন্ত্রের পর আরব শাসকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতার নীতি বজায় রাখা কঠিন হবে। ফিলিস্তিনিদের বিষয়ে গুরুত্ব না দিলেও নিজ দেশের নাগরিকদের ক্ষোভের বিষয়টি তাদের অবশ্যই চিন্তার কারণ হবে। তবে এর অর্থ এই নয় যে, আরব বিশ্ব যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, তবে তারা অনেক বেশি সাবধানী হবে সহযোগিতার ক্ষেত্রে। এর ফলে ফিলিস্তিনি শান্তি আলোচনায় আমেরিকার নিরপেক্ষতার গুরুত্ব হারিয়েছে চিরতরে।- নিউ ইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণ
No comments