আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছাত্রলীগের শতাধিক নেতা
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান শতাধিক সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা। সেই লক্ষ্যে মাঠে নেমেছেন তারা। রুটিন করে নিজ নিজ আসনে সময় দিচ্ছেন যে যার মতো। সুখে-দুঃখে এলাকার জনগণের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন তারা। তাদের অনেকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের দুর্বলতা কাজে লাগাতে ব্যস্ত। এতে দলের মধ্যে নবীন প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে রীতিমতো মনস্তাত্ত্বিক লড়াই চলছে স্থানীয় এমপিদের। কখনো কখনো তা সংঘর্ষেও রূপ নিচ্ছে। তবে কোনোভাবেই মাঠ ছাড়তে রাজি নন তারা। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি আসছে ধরে নিয়েই নির্বাচনী ছক কষছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই দলীয় ফোরামে তা উল্লেখ করেছেন। সংসদ সদস্য ও দলীয় নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিবে এবং তা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অনেকের দায়িত্ব নিলেও এবারের নির্বাচনে আমি আর তাদের দায়িত্ব নিতে পারব না। এমপিদের তাদের যোগ্যতা দিয়ে উঠে আসতে হবে। যাদের ইমেজ খারাপ তাদের আর মনোনয়ন দেয়া হবে না।’ আগামী নির্বাচনের প্রার্থী প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যাদের কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমর্যাদা বিগত দিনে নষ্ট হয়েছে আগামী দিনে তারা মনোনয়ন পাবেন না।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অপোকৃত তরুণ স্বচ্ছ নেতাদেরই গুরুত্ব দেয়া হবে। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অবশ্যই দল ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। দলীয় দুই শীর্ষ নেতার এমন বক্তব্যের পর বিতর্কিত এমপিরা আতঙ্কে রয়েছেন। অন্য দিকে দলের মধ্যে থাকা প্রতিদ্বন্দ্বীরা বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন। বিশেষ করে বিতর্কিত এমপিদের আসনে ছাত্রলীগের সাবেক অনেক কেন্দ্রীয় নেতা মাঠে নেমে পড়েছেন। মনোনয়ন পেতে লবিংসহ নানা ধরনের কৌশল নিয়ে কাজ করে করছেন তারা। সূত্র জানায়, নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যেই একাধিক জরিপ পরিচালনা করেছে। এসব জরিপে দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে আওয়ামী লীগ দলীয় শতাধিক সংসদ সদস্য নিজ নিজ এলাকায় জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন। এমনকি বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমে খারাপ খবরের শিরোনামও হয়েছেন তারা। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহল এসব বিতর্কিত সংসদ সদস্যকে বাদ দিয়ে অপোকৃত তরুণ এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মনোনয়ন দেয়ার চিন্তা করছেন। এমন বার্তায় শতাধিক আসনে আওয়ামী লীগের অপোকৃত তরুণ প্রার্থীরা মনোনয়নের লড়াইয়ে নেমেছেন। জানা গেছে খুলনা, ঝালকাঠি দিনাজপুর, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, পটুয়াখালী, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা, ঢাকা, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম, পিরোজপুর, বরিশাল, ভোলা, মুন্সীগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, কক্সবাজার, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, গাইবান্ধা, যশোর, রাজশাহী, লক্ষ্মীপুরসহ আরো বেশকিছু জেলায় একাধিক আসনে এবার প্রার্থিতায় পরিবর্তন আসতে পারে। জানা গেছে, অপোকৃত তরুণ সাবেক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগের নেতারা, আওয়ামী লীগ সমর্থিত পেশাজীবীদের অনেকে মনোনয়ন দৌড়ে বেশ ভালো অবস্থায় রয়েছেন। তাদের মধ্যে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা এবং আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন (চট্টগ্রাম-১৪), বিশ্বনাথ সরকার বিটু (রংপুর-২), অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম (রংপুর-৩), ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন (গাইবান্ধা-৫), সাখাওয়াত হোসেন শফিক (বগুড়া-৭), ইঞ্জিনিয়ার আকতারুল আলম (নওগাঁ-২), মাহমুদ রেজা (নওগাঁ-২), রতন কুমার সাহা (নাটোর-১), কোহেলি কুদ্দুস মুক্তি (নাটোর-৪), অ্যাডভোকেট রবিউল আলম বুদু (পাবনা-৩), রফিকুল ইসলাম লিটন (পাবনা-৩), অ্যাডভোকেট এ বি এম আহসানুল হক আহসান (যশোর-৩), কামরুল হাসান বারী (যশোর-৫), সাইফুজ্জামান শিখর (মাগুরা-১), পংকজ সাহা (মাগুরা-১), ড. ওয়াহিদুর রহমান টিপু (মাগুরা-২), শ্যামল দাস টিটু (নড়াইল-১), নিজাম উদ্দিন খান নিলু (নড়াইল), বদিউজ্জামান সোহাগ (বাগেরহাট-৪), আকতারুজ্জামান বাবু (খুলনা-৬), আব্দুল মালেক (পটুয়াখালী-২), জিয়াউল হক জুয়েল (পটুয়াখালী-২), শাহে আলম (বরিশাল-২), মনিরুজ্জামান মনির (ঝালকাঠি-২), এস এম মশিউর রহমান শিহাব (বরগুনা-১), মারুফা আক্তার পপি (জামালপুর), অসীম কুমার উকিল (নেত্রকোনা-৩), শফি আহমেদ (নেত্রকোনা-৪), আলমগীর হাসান (নেত্রকোনা-৩), অজয় কর খোকন (কিশোরগঞ্জ-৫), গোলাম সরোয়ার কবীর (মুন্সীগঞ্জ-১),
ইঞ্জিনিয়ার কাজী আবদুল ওয়াহিদ (মুন্সীগঞ্জ-২), ফয়সাল বিপ্লব (মুন্সীগঞ্জ-৩), পনিরুজ্জামান তরুন (ঢাকা-১), ড. আওলাদ হোসেন (ঢাকা-৪), অ্যাডভোকেট মোল্লা আবু কাউসার (ঢাকা-৮), গোলাম রব্বানী চিনু (ঢাকা-১৩), ইকবাল হোসেন সবুজ (গাজীপুর-৩), অ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবীর কাউসার (নরসিংদী-৫), শেখ সোহেল রানা টিপু (রাজবাড়ী-১), ড. আবদুস সোবহান গোলাপ (মাদারীপুর-৩), আনোয়ার হোসেন (মাদারীপুর-৩), দেলোয়ার হোসেন (মাদারীপুর-৩), ইকবাল হোসেন অপু (শরীয়তপুর-১), এ কে এম আজম খান (পিরোজপুর-১), এনামুল হক শামীম (শরীয়তপুর-২), বাহাদুর বেপারী (শরীয়তপুর-৩), মঈন উদ্দিন মঈন (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২), মো: আলামিনুল হক আলামিন (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫), সুজিত রায় নন্দী (চাঁদপুর-৩), ড. মোস্তফা কামাল খান (চাঁদপুর-৫), মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন (চট্টগ্রাম-৬), মাইনুদ্দিন হাসান চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৪), মঞ্জুরুল আলম শাহীন ও জহিরউদ্দীন মাহমুদ লিপটন (ফেনী-৩), সাইফুদ্দীন নাসির (ফেনী-২), এম এ মমিন পাটোয়ারী (লক্ষ্মীপুর-১), আরিফুর রহমান দোলন (ফরিদপুর-২), নাফিউল ইসলাম নাফা (নীলফামারী-৪ ), রবিউল ইসলাম রবি (ঠাকুরগাঁও-৩) প্রমুখ। এসব প্রার্থী নিজ নির্বাচনী এলাকার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। এলাকার জনগণের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন। চেষ্টা করছেন এলাকার উন্নয়নে অবদান রাখতে। তারা আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডিস্থ দলীয় কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, গণভবনসহ প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের বাসায় নিয়মিত ধর্ণা দিচ্ছেন। মনোনয়ন পেতে লবিং-গ্রুপিং করে যাচ্ছেন যে যার মতো করে।
No comments