ঝড়ের কবলে যুক্তরাজ্য অজানা গন্তব্যে ব্রেক্সিট
আগাম নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ব্রিটেন নতুন এক রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রবেশ করেছে। প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মের পদত্যাগ দাবি করছেন তার কনজারভেটিভ পার্টির বহু নেতাকর্মী। মাত্র ১০ দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রেক্সিট আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। ফলে রাজনৈতিক এ পরিস্থিতিতে অজানা গন্তব্যে গিয়ে ঠেকেছে বেক্সিট আলোচনা। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাকে আরও পাকাপোক্ত করতে হঠাৎই এপ্রিলে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন। কিন্তু ব্রিটেনের ভোটাররা বিস্ময়কর এক আঘাত হেনেছেন তার প্রতি। নির্বাচনে পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন তিনি। ফলে নতুন এক বিপর্যয়ের যুগে প্রবেশ করল যুক্তরাজ্য। নির্বাচনের কারণে এখন ব্রেক্সিট আলোচনা বিলম্বিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের কাছ থেকে এক বছরেরও কম সময় আগে তেরেসা ক্ষমতা নিয়েছিলেন। ব্রেক্সিট গণভোটে পরাজয়ের পর পদত্যাগ করেন ক্যামেরন। সাবেক অর্থমন্ত্রী জর্জ অসবর্ন নির্বাচনী ফলাফলের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, তার দলের এ পারফরম্যান্স বিপর্যয়কর। কনজারভেটিভ দলের এমপি আনা সাউব্রি বলেন, এখন নিজের অবস্থান সম্পর্কে তেরেসাকে বিবেচনা করতে হবে। নির্বাচনের এ ফল ব্রিটেনকে আরেক রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় ফেলবে, যেখানে ব্রেক্সিট নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা স্থবির হয়ে যাবে। এরই মধ্যে নির্বাচনের ফলে পাউন্ডের দরপতন হয়েছে। এদিকে, তেরেসা বলেন, এখন এ সময়ে দেশে প্রয়োজন একটি স্থিতিশীলতা। নির্বাচনে তার দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালেও তিনি নতুন সরকার গঠনে তৎপর থাকবেন বলে জানান। তবে বিরোধী লেবার নেতা জেরেমি করবিন বলেন, প্রাথমিক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী তার ম্যান্ডেট হারিয়েছেন। তিনি তাকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান। সিএনএনের সাংবাদিক জেন মেরিক লিখেছেন, দেশের কর্তৃত্ব, কনজারভেটিভ পার্টির কর্তৃত্ব ধরে রাখার ব্যাপারে এটা তেরেসার জন্য বিরাট এক বিপর্যয়।
কারণ, তিনি এই নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেকে আরও শক্তিশালী ও স্থিতিশীল নেতৃত্ব গড়ে তোলার কথা বলেছিলেন। মেরিক আরও বলেন, এ নির্বাচন ছিল তেরেসার জন্য একটি গণভোট এবং তাতে তিনি পরাজিত হয়েছেন। এখন সামনের দিনগুলোতে যেসব বিষয় আসবে তার মধ্যে ব্রেক্সিট সমঝোতা অন্যতম। যদি তেরেসা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থেকে যান তাহলেও এ আলোচনা হয়ে উঠবে কঠিন। অনেকেই এ নির্বাচনকে ব্রেক্সিট-নির্বাচন হিসেবে দেখেছেন। এক্ষেত্রে ব্রেক্সিট আলোচনা ঝুলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেতারাও। ইউরোপীয় কমিশনের জার্মান সদস্য গুয়েনতার ওতেঙ্গার বলেন, তারা এখনও জানেন না ১৯ জুনের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক হবে কিনা। এছাড়া কোনো নেতা শক্ত অবস্থানে না থাকলে তার সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ নাও হতে পারে। ইইউর বাজেট কমিশনার ওতেঙ্গার আরও বলেন, ‘আমরা এমন একটি সরকার চাই যারা তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ নিতে পারবে। দুর্বল সরকার হলে দু’পক্ষের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’ ইউরোপ রেডিও ওয়ানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী অ্যাডওয়ার্ড ফিলিপ বলেন, ব্রিটেনের নির্বাচনী ফলাফল বিস্মিত করেছে কিন্তু ব্রেক্সিট ইস্যুতে দেশের সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হবে না। আমি মনে করি না যে এ ফলাফলে ব্রেক্সিট নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেবে। ইইউর ফরাসি নেতা পিয়েরে মোসোভিসি বলেন, ‘এই ফলাফল অবশ্যই আলোচনায় প্রভাব ফেলবে। তবে ব্রিটেন কোনোভাবেই ইইউতে থাকতে চাইবে না আর। ফিনল্যান্ডের সাবেক প্রিমিয়ার আলেক্সান্ডার স্টাব এক টুইটে বলেন, ‘হয়তো আমাদের ব্রেক্সিট নিয়ে আলোচনায় বিরতি নিতে হবে।’ সিএনএন ও রয়টার্স।
No comments