পবিত্র কোরআনের আলো-আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখতে অভিনব কৌশল

৬৩. ফালাম্মা- রাজা'ঊ- ইলা- আবীহিম কা-লূ য়া-আবা-না- মুনি'আ মিন্নালকাইলু ফাআরসিল মা'আনা- আখা-না- নাকতাল ওয়া ইন্না- লাহূ লাহা-ফিযূন। ৬৪. কা-লা হাল আ-মানুকুম 'আলাইহি ইল্লা- কামা- আমিনতুকুম 'আলা- আখীহি মিন কাবলু, ফাল্লা-হু খাইরুন হা-ফিযাঁও ওয়া হুয়া আরহামুর রা-হিমীন।
৬৫. ওয়া লাম্মা- ফাতাহূ মাতা-'আহুম ওয়াজাদূ বিদা'আতাহুম রুদ্দাত ইলাইহিম, কা-লূ য়া- আবা-না মা নাবগী, হা-যিহি বিদা'আতুনা- রুদ্দাত ইলাইনা, ওয়া নামীরু আহলানা ওয়া নাহফাযু আখা-না ওয়া নাযদা-দু কাইলা বা'ঈরিন, যা-লিকা কাইলুন য়াসীর। সুরা ইউসুফ।
অনুবাদ : ৬৩. এরপর তারা তাদের পিতার কাছে ফিরে গিয়ে বলল, আব্বাজি, আগামীতে আমাদের স্বল্পমূল্যে খাদ্য দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।* আপনি আমাদের সঙ্গে আমাদের ভাইকে দিয়ে দিন, তাহলে আমরা খাদ্যের বরাদ্দ পাব। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, আমরা তার পুরোপুরি হেফাজত করব। ৬৪. বললেন, আমি তার বিষয়ে তোমাদের কি সেই ধরনের বিশ্বাস করব, এর আগে যেমন তার ভাই (ইউসুফের) বিষয়ে করেছিলাম? আল্লাহ উত্তম হেফাজতকারী এবং তিনিই সবচেয়ে দয়ালু। ৬৫. তারা বাড়ি ফিরে নিজেদের মালপত্র খুলে দেখল, এর ভেতরে গুঁজে তাদের পণ্যমূল্য ফেরত দেওয়া হয়েছে। তা দেখে তারা বলল, আব্বাজি, আমরা আর কী চাই, এই দেখুন, আমাদের পরিশোধিত পণ্যমূল্যও আমাদের ফেরত দেওয়া হয়েছে।* এখন আমরা আবার আমাদের পরিবারবর্গের জন্য রসদ সংগ্রহ করব, আমাদের ভাইয়ের দেখাশোনা করব এবং অতিরিক্ত এক উটের বোঝাও নিয়ে আসব। এভাবে এই অতিরিক্ত খাদ্য সহজেই পাওয়া যাবে।
তাফসির : * এখানে ইউসুফ (আ.)-এর সেই কথাই তারা পিতাকে জানাচ্ছেন যে আগামীতে বিনইয়ামিনকে সঙ্গে করে নিয়ে না গেলে আমাদের স্বল্পমূল্যের খাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হবে না। স্বল্পমূল্যে এক ব্যক্তিকে এক উট বোঝাই খাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হতো। বাংলাদেশে প্রচলিত পরিমাপ ও পরিমাণ অনুযায়ী তা ছিল ২১০ সের বা পাঁচ মণের কিছু বেশি।
* ইউসুফ (আ.) পিতা ও ভাই বিনইয়ামিনসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের কাছ থেকে খোঁজখবর নিলেন। সব কিছু জানার পর এমন আকাঙ্ক্ষা তাঁর অন্তরে উদয় হওয়া খুবই স্বাভাবিক, তারা আবারও আসুক। তাই তিনি তাদের রাজকীয় সম্মান করলেন। বিশেষভাবে বললেন, 'তোমরা পরেরবার যখন আসবে, তখন ওই ভাইটিকেও নিয়ে আসবে। তোমরা তো দেখছই আমি কিভাবে পুরো খাদ্যশস্য দিয়ে থাকি। তোমরা এও দেখছ, আমি মেহমানদের কতটা আপ্যায়ন করি।' সঙ্গে সঙ্গে তিনি সাবধানবাণীও উচ্চারণ করলেন, 'তোমরা পরবর্তী সময়ে ওই ভাইকে সঙ্গে না আনলে আমি তোমাদের কাউকেই খাদ্য বরাদ্দ দেব না।' কারণ, তখন প্রমাণ হবে, তোমরা আমার সঙ্গে মিথ্যাচার করেছ। তাই ওই ভাইকে না নিয়ে তোমরা আমার কাছে এসো না। প্রকাশ্য এই ব্যবস্থার পাশাপাশি তিনি খাদ্যশস্যের মূল্য হিসেবে যেসব নগদ অর্থকড়ি কিংবা অলঙ্কার জমা দিয়েছিলেন, সেগুলো গোপনে তাদের আসবাবপত্রের মধ্যে রেখে দিতে কর্মচারীদের নির্দেশ দিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, বাড়ি ফিরে তারা মালপত্র খুলেই যখন এসব দেখবে, তখন তা নিয়ে ফের খাদ্য সংগ্রহ করতে আসবে। এভাবেই তিনি আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখতে অভিনব কৌশল অবলম্বন করেছিলেন।
তাফসিরে ইবনে কাছির ও মাআরেফুল কোরআন অবলম্বনে হাসানুল কাদির


No comments

Powered by Blogger.