অলৌকিক ঘটনা, বুজরুকি ও হুজুগ by ওয়াহিদ নবি
মানুষের ক্ষমতা নেই যেসব ঘটনা ঘটাতে বা যে
ঘটনাগুলো প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম মেনে চলে না, সেই ঘটনাগুলোকে অলৌকিক
ঘটনা বলা হয়। এ ছাড়া কিছু ঘটনা ঘটে, যেগুলো কদাচিৎ ঘটে না, সেগুলোকেও
অলৌকিক ঘটনা বলে কখনো কখনো বর্ণর্না করা হয়।
উদাহরণ
হিসেবে বলা যেতে পারে যে কতগুলো ব্যাধি যেগুলোকে দুরারোগ্য বলে মনে করা হয়,
এমনই একটি রোগে যদি কেউ ভোগেন এবং চিকিৎসক নন এমন কেউ যদি রোগটি ভালো করে
দেন, তবে সেটাকে অলৌকিক ঘটনা বলে বর্ণনা করা হবে। অবশ্য একজন চিকিৎসক যদি
রোগীকে সারিয়ে তোলেন, তবে সে ক্ষেত্রে বলা হবে যে চিকিৎসক খুব ভালো। সাভারে
রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৭ দিন পর রেশমাকে জীবিত পাওয়া অলৌকিক ঘটনা
বলে বিবেচিত হবে।
অতীতে পয়গম্বররা অলৌকিক ঘটনা ঘটিয়েছেন। হজরত মুসা (আ.) ভূমধ্যসাগরের পানি দুই দিকে সরিয়ে রাস্তা বের করে দিয়েছেন তাঁর অনুগতদের জন্য, যাতে তাঁরা ফেরাউনের সেনাদের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে নিরাপদে গন্তব্যে পেঁৗছতে পারেন। যিশুখ্রিস্টের পুনর্জন্ম একটি অলৌকিক ঘটনা। মিরাজ একটি অলৌকিক ঘটনা। ক্রিস্টোফার হিসেন্স তাঁর বইতে উল্লেখ করেছেন, অলৌকিক ঘটনা এখন ঘটে না কারণ পয়গম্বর আর আল্লাহ তায়ালা পাঠান না। কিন্তু অলৌকিক ঘটনা ঘটা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। পোপ সেন্ট উপাধি তাঁদেরই দেন যাঁরা কমপক্ষে দুটি অলৌকিক ঘটনার সঙ্গে জড়িত। অলৌকিক ঘটনা আদৌ ঘটেছিল কি না, এ নিয়ে বিজ্ঞজনরা মন্তব্য করেছেন যাঁদের মধ্যে রয়েছেন জন স্টুয়ার্ট মিল, বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন, টমাস জেফারসন, রিচার্ড ডকিন্স, ক্রিস্টোফার হিসেন্স প্রমুখ মনীষী। এলবার্ট হাবার্ড বলেছিলেন, 'অলৌকিক ঘটনার কথা যাঁরা বলেন তাঁরা অন্যের কাছে ওই সব ঘটনার কথা শুনেছেন, নিজে দেখেননি।' এথান এলেন বলেছিলেন, 'পৃথিবীর যে দেশগুলোতে শিক্ষার প্রসার ঘটেছে এবং বিজ্ঞানের অগ্রগতি ঘটেছে সেসব দেশে অলৌকিক ঘটনা এখন আর ঘটে না; কিন্তু যে দেশগুলোতে শিক্ষার প্রসার ঘটেনি সেসব দেশে এখনো অলৌকিক ঘটনা ঘটে থাকে।' পৃথিবীর সব দেশেই সম্ভবত এ ধরনের মানুষ দেখা গেছে। মানুষকে প্রতারিত করার জন্য এসব অলৌকিক ঘটনা ঘটানোর দাবিকে বুজরুকি বলা হয়। আমেরিকার জোসেফ স্মিথ ও ভারতের ভগবান রজনিশকে এ ধরনের মানুষ বলে মনে করেন অনেকেই।
অলৌকিক ঘটনা ও বুজরুকির মধ্যে পার্থক্য অনেকেই সময়মতো ধরতে পারেন না। কিন্তু এক ধরনের মানুষ আছেন যাঁরা সহজেই প্রভাবান্বিত হন অন্যের দ্বারা। সহজেই অন্যকে বিশ্বাস করেন। সহজেই এই কারণে প্রতারিত হন। ইংরেজিতে তাঁদের 'গালিবল পিপল' (gullible) বা 'ক্রেডুলাস পিপল' (credulus) বলে বর্ণনা করা হয়। এই দুই শ্রেণীর মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। তবে কেউ কেউ মনে করেন যে গালিবল পিপলের সহজেই প্রভাবান্বিত করে তাঁদের দ্বারা অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করে নেওয়া যায়। 'ক্রেডুলাস পিপলরা' অন্যের কথায় সহজেই বিশ্বাস করেন তবে তাঁরা অন্যের কথায় অনাকাঙ্ক্ষিত কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বেন না।
পত্রিকান্তরে জানা যায় যে গত ৩ মার্চ বেশ কয়েকটি মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা করা হয় যে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুখ চাঁদে দেখা গেছে। তার ফাঁসির হুকুম হয়েছিল একাত্তরের মানবতাবিরোধী কাজের জন্য। তার দলের লোকেরা তাকে নিরপরাধ বলে জনসমক্ষে প্রকাশ করে। সে একজন ভালো মুসলমান, কাজেই তাকে নাস্তিকরা মেরে ফেলছে_এমন কথা বলা হয়। সাঈদী অত্যন্ত ভালো ধর্মপ্রাণ মানুষ, কাজেই তার মুখ চাঁদে দেখা গেছে এসব কথা শুনে এবং তাতে বিশ্বাস করে ক্ষিপ্ত জনতা মিছিল বের করে। তারা বিদ্যুৎকেন্দ্র পুড়ে দেয় ও অন্যান্য ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হয়।
এখন কেউ যদি অন্য কাউকে বলে চাঁদে সাঈদীর মুখ দেখা যাওয়ার কথা, তবে বেশ একটা হাস্যরোল শুরু হয়। কিন্তু ঘটনাটি মোটেই হাসির নয়। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ঘটনাটি আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত। ঘটনাটি সংজ্ঞা অনুযায়ী অলৌকিক ঘটনা নয়। এটি একটি বুজরুকি। এই বুজরুকি করা হয়েছে ধর্মের নামে। এটি এমন সময়ে করা হয়েছে যখন বাংলাদেশের রাজনীতি একটি উত্তেজনাময় পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল। একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের রায় বেরোনো শুরু হয়েছিল তখন। কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়টি দেশের মানুষ পছন্দ করেনি। অগণিত ক্ষুব্ধ মানুষ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। তারা একত্রিত হয় শাহবাগ চত্বরে। এর কয়েক দিন পর সাঈদীর ফাঁসির রায় বেরোয়। সাঈদীর চিন্তাধারার মানুষরা প্রজন্ম চত্বরের মানুষদের নাস্তিক বলে অভিহিত করে। ইসলাম বিপন্ন বলে ঘোষণা করে। এমনি অবস্থায় চাঁদে সাঈদীর মুখ দেখাজাতীয় বুজরুকি অত্যন্ত বিপদসংকুল। এটি যারা করেছে তাদের হাস্যরসের স্রষ্টা হিসেবে দেখা ভুল হবে।
আর যারা মিছিলে যোগ দিয়েছিল ক্ষিপ্ত মেজাজে তাদের কথাও গুরুত্বসহকারে ভাবতে হবে। সংজ্ঞা অনুযায়ী এরা গালিবল (gullible)। সাধারণভাবে মনে করা হয় যে শিক্ষার অভাবেই মানুষ হুজুগপ্রিয় হয়। কথাটি আংশিকভাবে সত্য। মানবজাতির ইতিহাসে দৈব ঘটনার হুজুগ সৃষ্টি করে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ঘৃণার সৃষ্টি করে বিরুদ্ধবাদীদের হত্যা করার উদাহরণ বিরল নয়। তাই বাংলাদেশের সচেতন মানুষদের এ বিষয়ে সাবধান হতে হবে। সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করতে হবে। রাজনীতিতে যারা ধর্মের ব্যবহার করে তাদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সঠিক তথ্য জানাতে হবে। যারা ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করে রাজনৈতিকভাবে তাদের মোকাবিলা করতে হবে। আর যারা পার্থিব আদর্শে বিশ্বাসী তাদের আরো কর্মতৎপর হতে হবে। হেফাজতিদের আগ্রাসন আমরা দেখেছি। এই আগ্রাসন দেখে ভবিষ্যতের জন্য সাবধান হওয়ার প্রয়োজন আছে। সবাই সকৌতুকে বলে থাকেন 'হুজুগে বাঙালি' বা 'শুনে মুসলমান'। আমাদের মধ্যে এসব প্রবণতা সত্যই রয়েছে কি না তা গুরুত্বসহকারে ভেবে দেখার সময় এসেছে।
লেখক : রয়্যাল কলেজ অব সাইকিয়াট্রিস্টের ফেলো
অতীতে পয়গম্বররা অলৌকিক ঘটনা ঘটিয়েছেন। হজরত মুসা (আ.) ভূমধ্যসাগরের পানি দুই দিকে সরিয়ে রাস্তা বের করে দিয়েছেন তাঁর অনুগতদের জন্য, যাতে তাঁরা ফেরাউনের সেনাদের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে নিরাপদে গন্তব্যে পেঁৗছতে পারেন। যিশুখ্রিস্টের পুনর্জন্ম একটি অলৌকিক ঘটনা। মিরাজ একটি অলৌকিক ঘটনা। ক্রিস্টোফার হিসেন্স তাঁর বইতে উল্লেখ করেছেন, অলৌকিক ঘটনা এখন ঘটে না কারণ পয়গম্বর আর আল্লাহ তায়ালা পাঠান না। কিন্তু অলৌকিক ঘটনা ঘটা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। পোপ সেন্ট উপাধি তাঁদেরই দেন যাঁরা কমপক্ষে দুটি অলৌকিক ঘটনার সঙ্গে জড়িত। অলৌকিক ঘটনা আদৌ ঘটেছিল কি না, এ নিয়ে বিজ্ঞজনরা মন্তব্য করেছেন যাঁদের মধ্যে রয়েছেন জন স্টুয়ার্ট মিল, বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন, টমাস জেফারসন, রিচার্ড ডকিন্স, ক্রিস্টোফার হিসেন্স প্রমুখ মনীষী। এলবার্ট হাবার্ড বলেছিলেন, 'অলৌকিক ঘটনার কথা যাঁরা বলেন তাঁরা অন্যের কাছে ওই সব ঘটনার কথা শুনেছেন, নিজে দেখেননি।' এথান এলেন বলেছিলেন, 'পৃথিবীর যে দেশগুলোতে শিক্ষার প্রসার ঘটেছে এবং বিজ্ঞানের অগ্রগতি ঘটেছে সেসব দেশে অলৌকিক ঘটনা এখন আর ঘটে না; কিন্তু যে দেশগুলোতে শিক্ষার প্রসার ঘটেনি সেসব দেশে এখনো অলৌকিক ঘটনা ঘটে থাকে।' পৃথিবীর সব দেশেই সম্ভবত এ ধরনের মানুষ দেখা গেছে। মানুষকে প্রতারিত করার জন্য এসব অলৌকিক ঘটনা ঘটানোর দাবিকে বুজরুকি বলা হয়। আমেরিকার জোসেফ স্মিথ ও ভারতের ভগবান রজনিশকে এ ধরনের মানুষ বলে মনে করেন অনেকেই।
অলৌকিক ঘটনা ও বুজরুকির মধ্যে পার্থক্য অনেকেই সময়মতো ধরতে পারেন না। কিন্তু এক ধরনের মানুষ আছেন যাঁরা সহজেই প্রভাবান্বিত হন অন্যের দ্বারা। সহজেই অন্যকে বিশ্বাস করেন। সহজেই এই কারণে প্রতারিত হন। ইংরেজিতে তাঁদের 'গালিবল পিপল' (gullible) বা 'ক্রেডুলাস পিপল' (credulus) বলে বর্ণনা করা হয়। এই দুই শ্রেণীর মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। তবে কেউ কেউ মনে করেন যে গালিবল পিপলের সহজেই প্রভাবান্বিত করে তাঁদের দ্বারা অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করে নেওয়া যায়। 'ক্রেডুলাস পিপলরা' অন্যের কথায় সহজেই বিশ্বাস করেন তবে তাঁরা অন্যের কথায় অনাকাঙ্ক্ষিত কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বেন না।
পত্রিকান্তরে জানা যায় যে গত ৩ মার্চ বেশ কয়েকটি মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা করা হয় যে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুখ চাঁদে দেখা গেছে। তার ফাঁসির হুকুম হয়েছিল একাত্তরের মানবতাবিরোধী কাজের জন্য। তার দলের লোকেরা তাকে নিরপরাধ বলে জনসমক্ষে প্রকাশ করে। সে একজন ভালো মুসলমান, কাজেই তাকে নাস্তিকরা মেরে ফেলছে_এমন কথা বলা হয়। সাঈদী অত্যন্ত ভালো ধর্মপ্রাণ মানুষ, কাজেই তার মুখ চাঁদে দেখা গেছে এসব কথা শুনে এবং তাতে বিশ্বাস করে ক্ষিপ্ত জনতা মিছিল বের করে। তারা বিদ্যুৎকেন্দ্র পুড়ে দেয় ও অন্যান্য ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হয়।
এখন কেউ যদি অন্য কাউকে বলে চাঁদে সাঈদীর মুখ দেখা যাওয়ার কথা, তবে বেশ একটা হাস্যরোল শুরু হয়। কিন্তু ঘটনাটি মোটেই হাসির নয়। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ঘটনাটি আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত। ঘটনাটি সংজ্ঞা অনুযায়ী অলৌকিক ঘটনা নয়। এটি একটি বুজরুকি। এই বুজরুকি করা হয়েছে ধর্মের নামে। এটি এমন সময়ে করা হয়েছে যখন বাংলাদেশের রাজনীতি একটি উত্তেজনাময় পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল। একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের রায় বেরোনো শুরু হয়েছিল তখন। কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়টি দেশের মানুষ পছন্দ করেনি। অগণিত ক্ষুব্ধ মানুষ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। তারা একত্রিত হয় শাহবাগ চত্বরে। এর কয়েক দিন পর সাঈদীর ফাঁসির রায় বেরোয়। সাঈদীর চিন্তাধারার মানুষরা প্রজন্ম চত্বরের মানুষদের নাস্তিক বলে অভিহিত করে। ইসলাম বিপন্ন বলে ঘোষণা করে। এমনি অবস্থায় চাঁদে সাঈদীর মুখ দেখাজাতীয় বুজরুকি অত্যন্ত বিপদসংকুল। এটি যারা করেছে তাদের হাস্যরসের স্রষ্টা হিসেবে দেখা ভুল হবে।
আর যারা মিছিলে যোগ দিয়েছিল ক্ষিপ্ত মেজাজে তাদের কথাও গুরুত্বসহকারে ভাবতে হবে। সংজ্ঞা অনুযায়ী এরা গালিবল (gullible)। সাধারণভাবে মনে করা হয় যে শিক্ষার অভাবেই মানুষ হুজুগপ্রিয় হয়। কথাটি আংশিকভাবে সত্য। মানবজাতির ইতিহাসে দৈব ঘটনার হুজুগ সৃষ্টি করে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ঘৃণার সৃষ্টি করে বিরুদ্ধবাদীদের হত্যা করার উদাহরণ বিরল নয়। তাই বাংলাদেশের সচেতন মানুষদের এ বিষয়ে সাবধান হতে হবে। সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করতে হবে। রাজনীতিতে যারা ধর্মের ব্যবহার করে তাদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সঠিক তথ্য জানাতে হবে। যারা ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করে রাজনৈতিকভাবে তাদের মোকাবিলা করতে হবে। আর যারা পার্থিব আদর্শে বিশ্বাসী তাদের আরো কর্মতৎপর হতে হবে। হেফাজতিদের আগ্রাসন আমরা দেখেছি। এই আগ্রাসন দেখে ভবিষ্যতের জন্য সাবধান হওয়ার প্রয়োজন আছে। সবাই সকৌতুকে বলে থাকেন 'হুজুগে বাঙালি' বা 'শুনে মুসলমান'। আমাদের মধ্যে এসব প্রবণতা সত্যই রয়েছে কি না তা গুরুত্বসহকারে ভেবে দেখার সময় এসেছে।
লেখক : রয়্যাল কলেজ অব সাইকিয়াট্রিস্টের ফেলো
No comments