পদ্মা সেতু প্রকল্প: বিশ্বব্যাংকের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ দুদকের তদন্ত সঠিক ও সম্পূর্ণ হয়নি
বিশ্বব্যাংকের মূল আপত্তি কেবল একটি মানুষ
নিয়ে। সংস্থাটি বলেছে, পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সাবেক
যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করেনি বাংলাদেশের
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, বাদ পড়েছেন একমাত্র সৈয়দ আবুল হোসেন।
বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেল এ অবস্থায় বলেছে, পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে করা দুদকের তদন্ত সম্পূর্ণ ও সঠিক হয়নি। বিশ্বব্যাংক গঠিত প্যানেলের চূড়ান্ত এই প্রতিবেদন গতকাল মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে এ নিয়ে সরকার ও দুদকের সঙ্গে চিঠি চালাচালি হলেও বিশ্বব্যাংক এই প্রথম পদ্মা সেতু নিয়ে তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করল।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সরকারের কার্যক্রম নিয়েও মন্তব্য করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে পদ্মা সেতু নিয়ে ঋণচুক্তি হওয়ার পর ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে এবং ২০১২ সালের এপ্রিলে দুবার বাংলাদেশকে চিঠি দিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। চুক্তি বাতিল না করে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বানের মাধ্যমে বাংলাদেশকে যথেষ্ট সময়ও দেওয়া হয়েছিল। এরপর সরকার মন্ত্রিসভায় রদবদল করলেও দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, পদ্মা সেতুর অর্থায়ন পুনরায় চালু করার বিষয়ে চারটি বিষয়ে সমঝোতা হলেও সরকার শেষ পর্যন্ত তা মানেনি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। কেননা, সরকার সমঝোতা অনুযায়ী সম্পূর্ণ ও সঠিক তদন্ত করেনি।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞ প্যানেলের তিনজন মিলেই দিয়েছেন। তাঁরা হলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সাবেক প্রধান আইনজীবী আর্জেন্টিনার নাগরিক লুই গ্যাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পো, হংকংয়ের দুর্নীতিবিরোধী স্বাধীন কমিশনের সাবেক কমিশনার টিমোথি টং এবং যুক্তরাজ্যের সিরিয়াস ফ্রড কার্যালয়ের সাবেক পরিচালক রিচার্ড অল্ডারম্যান।
ওয়েবসাইটে প্রকাশের আগে ৯ জুন বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের নতুন পরিচালক জোহানেস জাট অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে দেখা করে প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন। এরপর অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বস্তুনিষ্ঠ, তবে অসম্পূর্ণ। এর একটি জবাব তিনি দেবেন এবং সেই জবাবটি চূড়ান্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রকাশ করার কথাও বলেছিলেন। তবে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতিবিরোধী বিভাগ ইন্টিগ্রিটি ভাইস প্রেসিডেন্সি (আইএনটি) গতকাল কেবল চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গত ১৭ ডিসেম্বর সাবেক সেতুসচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। সাতজনের মধ্যে তিনজন বিদেশি নাগরিক, তাঁরা সবাই ঘুষ দিয়ে কাজ পেতে আগ্রহী কানাডার প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের সাবেক কর্মকর্তা। তাঁদের মধ্যে রমেশ শাহ ও মোহাম্মদ ইসমাইলের বিরুদ্ধে কানাডার আদালতে মামলা চলছে।
মামলা থেকে সৈয়দ আবুল হোসেনকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা উল্লেখ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুদকের মামলা থেকে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীকে বাদ দেওয়ার কোনো বৈধ ও উপযুক্ত কারণ নেই। তাঁর বিরুদ্ধে প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। বিশেষ করে রমেশ শাহর ডায়েরিতে লেখা রয়েছে, কাজ পেলে সৈয়দ আবুল হোসেনকে কার্যাদেশের ৪ শতাংশ অর্থ ঘুষ দেওয়া হবে। এসব তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মন্ত্রী হিসেবে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের দায় তিনি এড়াতে পারেন না।
বিশেষজ্ঞ প্যানেলের এই চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ২০১২ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত দুদক ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠক এবং চিঠির মাধ্যমে আলোচনার সংক্ষিপ্ত একটি বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। যেমন:
অক্টোবর ১০-১৬: জাপানের টোকিওতে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সঙ্গে বিশ্বব্যাংক, অন্যান্য দাতা এবং বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একটি প্রস্তুতিমূলক বৈঠক হয়। এরপর ১৪ অক্টোবর দুদক প্যানেলকে জানায়, সন্দেহ করার মতো কোনো তথ্য দুদকের হাতে নেই।
নভেম্বর ৯: বিশ্বব্যাংক এ-সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দুদকে পাঠায়, যা অনুসন্ধান পর্যায় থেকে তদন্ত পর্যায়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।
ডিসেম্বর ২-৫: ঢাকায় দুদক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তদন্তের বিষয়ে, বিশেষ করে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী নিয়ে সামান্য প্রমাণও ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে আলোচনা হয়। চার সরকারি ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সাজা হওয়ার মতো যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে বলেও সেখানে আলোচনা হয়।
ডিসেম্বর ১৭: দুদক তদন্ত শেষ করে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীকে বাদ দিয়ে অন্য সাতজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকে এ মামলায় আসামি করা হয়নি। তবে এজাহারে বলা হয়েছে, অনিয়মে এ দুজনের সংশ্লিষ্টতা তদন্তে খতিয়ে দেখা হবে।
জানুয়ারি ৯: দুদকের কাছে লেখা চিঠিতে প্যানেল জানায়, প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ ব্যক্তি হিসেবে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। সাবেক সচিবের অনুরোধে তিনি এসএনসি-লাভালিনের ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে দেখা করে সম্ভবত অবৈধ অর্থ ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা করেন। প্যানেল মনে করে, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীর নাম মামলায় আসামি হিসেবে এনে তাঁকে তদন্তের আওতায় আনা উচিত ছিল।
জানুয়ারি ২১: প্যানেলের প্রশ্নের জবাবে দুদক চিঠিতে জানায়, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীকে আসামি করার মতো দালিলিক প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। তবে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
জানুয়ারি ৩১: অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট কিমকে চিঠি দিয়ে জানান, পদ্মা সেতুর জন্য বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সাহায্য বাংলাদেশ নেবে না। তবে পদ্মা নিয়ে অনিয়ম বিষয়ে তদন্ত চলবে।
বিশেষজ্ঞ দলের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বিশ্বব্যাংক ঠিক সময়ে পাওয়া তথ্য দিয়ে চলমান দুর্নীতি ও ঘুষ লেনদেন সার্থকভাবে প্রতিহত করেছে, যা অনেক বেশি আর্থিক ক্ষতি ও লক্ষ্য অর্জনে বিঘ্ন তৈরি করতে পারত। এসব তথ্য একই সময়ে বাংলাদেশের তদন্ত সংস্থাকে অবহিত করার পরও দুদক এ বিষয়ে সঠিক কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
এদিকে, স্বপ্রণোদিত হয়ে পাঠানো এক বিবৃতিতে সৈয়দ আবুল হোসেন গতকাল বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক প্যানেলের রিপোর্ট আন্তর্জাতিক দাদাগিরির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।’ দুই পৃষ্ঠার ওই বিবৃতিতে তিনি বরাবরের মতোই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
দুদকের কার্যক্রম: গতকাল দুদকের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান দুদকের লিখিত প্রতিক্রিয়া অর্থমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে দুদকের চেয়ারম্যান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক প্যানেলের প্রতিবেদনে কিছু আপত্তির কথা আছে। আমরা তার জবাব দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ প্যানেলের দাবি একটাই—এক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়নি কেন? আমরা এ প্রসঙ্গে কেন আসামি করা হয়নি, তার উত্তর দিয়েছি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের জবাবে দুদক লিখিত প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, ‘সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে এজাহারভুক্ত করা না হলেও এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত না পাওয়ায় আবুল হোসেনকে আসামি করা যায়নি।’
বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেল এ অবস্থায় বলেছে, পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে করা দুদকের তদন্ত সম্পূর্ণ ও সঠিক হয়নি। বিশ্বব্যাংক গঠিত প্যানেলের চূড়ান্ত এই প্রতিবেদন গতকাল মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে এ নিয়ে সরকার ও দুদকের সঙ্গে চিঠি চালাচালি হলেও বিশ্বব্যাংক এই প্রথম পদ্মা সেতু নিয়ে তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করল।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সরকারের কার্যক্রম নিয়েও মন্তব্য করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে পদ্মা সেতু নিয়ে ঋণচুক্তি হওয়ার পর ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে এবং ২০১২ সালের এপ্রিলে দুবার বাংলাদেশকে চিঠি দিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। চুক্তি বাতিল না করে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বানের মাধ্যমে বাংলাদেশকে যথেষ্ট সময়ও দেওয়া হয়েছিল। এরপর সরকার মন্ত্রিসভায় রদবদল করলেও দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, পদ্মা সেতুর অর্থায়ন পুনরায় চালু করার বিষয়ে চারটি বিষয়ে সমঝোতা হলেও সরকার শেষ পর্যন্ত তা মানেনি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। কেননা, সরকার সমঝোতা অনুযায়ী সম্পূর্ণ ও সঠিক তদন্ত করেনি।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞ প্যানেলের তিনজন মিলেই দিয়েছেন। তাঁরা হলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সাবেক প্রধান আইনজীবী আর্জেন্টিনার নাগরিক লুই গ্যাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পো, হংকংয়ের দুর্নীতিবিরোধী স্বাধীন কমিশনের সাবেক কমিশনার টিমোথি টং এবং যুক্তরাজ্যের সিরিয়াস ফ্রড কার্যালয়ের সাবেক পরিচালক রিচার্ড অল্ডারম্যান।
ওয়েবসাইটে প্রকাশের আগে ৯ জুন বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের নতুন পরিচালক জোহানেস জাট অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে দেখা করে প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন। এরপর অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বস্তুনিষ্ঠ, তবে অসম্পূর্ণ। এর একটি জবাব তিনি দেবেন এবং সেই জবাবটি চূড়ান্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রকাশ করার কথাও বলেছিলেন। তবে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতিবিরোধী বিভাগ ইন্টিগ্রিটি ভাইস প্রেসিডেন্সি (আইএনটি) গতকাল কেবল চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গত ১৭ ডিসেম্বর সাবেক সেতুসচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। সাতজনের মধ্যে তিনজন বিদেশি নাগরিক, তাঁরা সবাই ঘুষ দিয়ে কাজ পেতে আগ্রহী কানাডার প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের সাবেক কর্মকর্তা। তাঁদের মধ্যে রমেশ শাহ ও মোহাম্মদ ইসমাইলের বিরুদ্ধে কানাডার আদালতে মামলা চলছে।
মামলা থেকে সৈয়দ আবুল হোসেনকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা উল্লেখ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুদকের মামলা থেকে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীকে বাদ দেওয়ার কোনো বৈধ ও উপযুক্ত কারণ নেই। তাঁর বিরুদ্ধে প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। বিশেষ করে রমেশ শাহর ডায়েরিতে লেখা রয়েছে, কাজ পেলে সৈয়দ আবুল হোসেনকে কার্যাদেশের ৪ শতাংশ অর্থ ঘুষ দেওয়া হবে। এসব তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মন্ত্রী হিসেবে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের দায় তিনি এড়াতে পারেন না।
বিশেষজ্ঞ প্যানেলের এই চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ২০১২ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত দুদক ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠক এবং চিঠির মাধ্যমে আলোচনার সংক্ষিপ্ত একটি বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। যেমন:
অক্টোবর ১০-১৬: জাপানের টোকিওতে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সঙ্গে বিশ্বব্যাংক, অন্যান্য দাতা এবং বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একটি প্রস্তুতিমূলক বৈঠক হয়। এরপর ১৪ অক্টোবর দুদক প্যানেলকে জানায়, সন্দেহ করার মতো কোনো তথ্য দুদকের হাতে নেই।
নভেম্বর ৯: বিশ্বব্যাংক এ-সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দুদকে পাঠায়, যা অনুসন্ধান পর্যায় থেকে তদন্ত পর্যায়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।
ডিসেম্বর ২-৫: ঢাকায় দুদক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তদন্তের বিষয়ে, বিশেষ করে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী নিয়ে সামান্য প্রমাণও ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে আলোচনা হয়। চার সরকারি ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সাজা হওয়ার মতো যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে বলেও সেখানে আলোচনা হয়।
ডিসেম্বর ১৭: দুদক তদন্ত শেষ করে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীকে বাদ দিয়ে অন্য সাতজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকে এ মামলায় আসামি করা হয়নি। তবে এজাহারে বলা হয়েছে, অনিয়মে এ দুজনের সংশ্লিষ্টতা তদন্তে খতিয়ে দেখা হবে।
জানুয়ারি ৯: দুদকের কাছে লেখা চিঠিতে প্যানেল জানায়, প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ ব্যক্তি হিসেবে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। সাবেক সচিবের অনুরোধে তিনি এসএনসি-লাভালিনের ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে দেখা করে সম্ভবত অবৈধ অর্থ ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা করেন। প্যানেল মনে করে, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীর নাম মামলায় আসামি হিসেবে এনে তাঁকে তদন্তের আওতায় আনা উচিত ছিল।
জানুয়ারি ২১: প্যানেলের প্রশ্নের জবাবে দুদক চিঠিতে জানায়, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীকে আসামি করার মতো দালিলিক প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। তবে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
জানুয়ারি ৩১: অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট কিমকে চিঠি দিয়ে জানান, পদ্মা সেতুর জন্য বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সাহায্য বাংলাদেশ নেবে না। তবে পদ্মা নিয়ে অনিয়ম বিষয়ে তদন্ত চলবে।
বিশেষজ্ঞ দলের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বিশ্বব্যাংক ঠিক সময়ে পাওয়া তথ্য দিয়ে চলমান দুর্নীতি ও ঘুষ লেনদেন সার্থকভাবে প্রতিহত করেছে, যা অনেক বেশি আর্থিক ক্ষতি ও লক্ষ্য অর্জনে বিঘ্ন তৈরি করতে পারত। এসব তথ্য একই সময়ে বাংলাদেশের তদন্ত সংস্থাকে অবহিত করার পরও দুদক এ বিষয়ে সঠিক কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
এদিকে, স্বপ্রণোদিত হয়ে পাঠানো এক বিবৃতিতে সৈয়দ আবুল হোসেন গতকাল বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক প্যানেলের রিপোর্ট আন্তর্জাতিক দাদাগিরির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।’ দুই পৃষ্ঠার ওই বিবৃতিতে তিনি বরাবরের মতোই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
দুদকের কার্যক্রম: গতকাল দুদকের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান দুদকের লিখিত প্রতিক্রিয়া অর্থমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে দুদকের চেয়ারম্যান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক প্যানেলের প্রতিবেদনে কিছু আপত্তির কথা আছে। আমরা তার জবাব দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ প্যানেলের দাবি একটাই—এক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়নি কেন? আমরা এ প্রসঙ্গে কেন আসামি করা হয়নি, তার উত্তর দিয়েছি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের জবাবে দুদক লিখিত প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, ‘সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে এজাহারভুক্ত করা না হলেও এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত না পাওয়ায় আবুল হোসেনকে আসামি করা যায়নি।’
No comments