নিজামী ও সাঈদীর বিচার পুনরায় শুরুর আবেদন- বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক শুরু- যুদ্ধাপরাধী বিচার
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের সাবেক সদস্য (রুকন) বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনপক্ষ যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) শুরু করেছে
। অন্যদিকে জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচার পুনরায় শুরুর (রি-ট্রায়াল) আবেদন করেছেন আসামিপক্ষ। এর আগে গোলাম আযমের পক্ষে তারা রি-ট্রায়ালের আবেদন করেছিল। আজ তিনটি আবেদনের ওপরই শুনানি হবে। অন্যদিকে প্রসিকিউশন পক্ষের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুমকে অপসারণে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর করা আবেদনের শুনানির জন্য আজ তারিখ পুনর্র্নির্ধারণ করা হয়েছে।
পাশাপাশি পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগে আসামিপক্ষের তিন আইনজীবীর বিষয়ে আদেশের জন্য ১০ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছে ট্রাইব্যুনাল। তবে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত আইনজীবী তাজুল ইসলামকে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে কিন্তু তিনি কোন মামলা পরিচালনা করতে পারবেন না। রবিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এই আদেশ প্রদান করেছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ভেতরে ও বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
বাচ্চু রাজাকার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পলাতক বাচ্চু রাজাকার বলে পরিচিত জামায়াতের সাবেক রুকন আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন তার যুক্তিতর্ক শুরু করেছে। প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান তাঁর পক্ষে এই গুরুত্বপূর্ণ যুক্তিতর্ক শুরু করেন। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ এই যুক্তিতর্ক চলছে। ট্রাইব্যুনালে অন্য দু’সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও জজ মোঃ শাহীনুর ইসলাম।
প্রসিকিউটর শাহিদুর রহমান আসামি বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে ৮টি অভিযোগের মধ্যে আনা প্রথম চারটি অভিযোগের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার পরেই বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক শুরু হলো। প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান বলেন, রবিবার ট্রাইব্যুনালের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করার সময় আজাদের বিরুদ্ধে সাক্ষীর জবানবন্দী সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করেছি। আজ বাকি সাক্ষী ও আইনী বিষয়ে আর্গুমেন্ট করা হবে। পরে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আর্গুমেন্ট করবেন।
এছাড়াও ট্রাইব্যুনালে আবুল কালাম আজাদের দুই সাক্ষীর বিষয়ে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করার কথা জানান প্রসিকিউটর। তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে সাক্ষী আবু ইউসুফ ওরফে পাখি ও রঞ্জিত হলেন ভিকটিম। বাচ্চু রাজাকারের (আবুল কালাম আজাদ) উপস্থিতিতেই পাখিকে কমপক্ষে ১ মাস ১৩ দিন আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। ওই আটকাবস্থা থেকে রঞ্জিত কুমার জানালার গ্রিল ভেঙ্গে রাত ২টার দিকে পালিয়ে আসেন।
অভিযুক্ত আবুল কালাম আজাদ ১৯৭১ সালে পাক সেনাদের সক্রিয় সহযোগী হিসেবে ফরিদপুর শহর ও তার আশপাশের এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন ও দেশান্তরসহ অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। তদন্তে ও সাক্ষী প্রমাণে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন-১৯৭৩-এর ৩ (২) (এ) এবং (সি) ধারায় অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গত বছরের ২৯ জুলাই তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। গত বছরের ২২ মার্চ চীফ প্রসিকিউটরের মাধ্যমে আবুল কালাম আজাদকে গ্রেফতারের আবেদন জানালে ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এরপর থেকে সে পলাতক রয়েছে এবং পলাতক অবস্থায় তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
আর্গুমেন্ট (যুক্তিতর্ক) অসমাপ্ত অবস্থায় মামলার কার্যক্রম আজ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। এর আগে আজাদের বিরুদ্ধে জব্দ তালিকার সাক্ষীসহ মোট ২২ জন সাক্ষী দিয়েছেন। রাষ্ট্র নিযুক্ত (ডিফেন্স ল’ইয়ার) আইনজীবী তাদের জেরা শেষ করেছেন। গত ৪ নবেম্বর আজাদের বিরুদ্ধে ৮টি সুনির্দিষ্ট ঘটনায় অভিযোগ গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে ১০টি ঘটনায় ২২টি অভিযোগের ভিত্তিতে মোট ৪৪৮ পৃষ্ঠার অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
নিজামী-সাঈদী ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতবিরোধী অপরাধের অভিযেগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর ্রহমান নিজামী ও মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার পুনরায় শুরু (রি-ট্রায়াল) করার আবেদন করেছে আসামি পক্ষ। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ এই আবেদন করা হয়েছে। আজ এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে ১৯ ডিসেম্বর গোলাম আযমের মামলা পুনরায় শুরু করার আবেদন করে আসামিপক্ষ। আজ গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর তিনটি আবেদন শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। আসামির পক্ষের আইনজীবী মাওলানা মাতিউর রহমান নিজামীর পক্ষে ২১৪ পৃষ্ঠা ও মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে প্রায় ৬শ’ পৃষ্ঠার এ আবেদন করা হয়। সাঈদীর আবেদনের পক্ষে রবিবার ল’পয়েন্টে কথা বলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
আদেশের পর ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, একটি গ্রহণযোগ্য রায় হওয়ার জন্য এ মামলাটি পুনরায় শুরু করা প্রয়োজন। স্কাইপ কেলেঙ্কারি দৈনিক আমার দেশ এবং ইকোনমিস্টে ফাঁস হওয়ার পর সুবিচার পাওয়ার যে আকাক্সক্ষা আছে, তা নষ্ট হয়ে গেছে। ৬(৬) ধারা অনুযায়ী এখন শুধু রায় দিতে বাকি আছে সাঈদী সাহেবের মামলায়। আইন অনুযায়ী যতটুকু বিচার হয়েছে সেখান থেকে আবার শুরু হবার কথা বলা আছে। কিন্তু ২(এ) ধারায় স্বাধীনভাবে বিচার পরিচালনা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার কথা বলা আছে। বিচারপতি নিজামুল হক স্বাধীনভাবে বিচার কাজ পরিচালনা করেননি। তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। শপথে বিচারপতিকে সংবিধান সমুন্নত রাখার কথা বলা আছে। তিনি তাও রক্ষা করেননি। তিনি সুবিচার পাবার পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। ৬(৬) ধারাকে এখানে প্রাধান্য দেয়া ঠিক হবে না। কারণ তিনি তো স্বাধীনভাবে বিচার পরিচালনা করেননি। আমার জীবনে শুনিনি যে, বাইরে থেকে চার্জ গঠনের আদেশ আসে।
প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আইনের বাইরে কিছু কথাবার্তা বলেছেন। শুধু বললেন, আপনারা বিবেচনা করুন। আবেদন গৃহীত না হলে ট্রাইব্যুনালের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে। যুদ্ধাপরাধ বিচার বিলম্ব করার জন্য যেমনিভাবে মাঠে নেমেছে তেমনি আদালতেও করছে। আজকের শুনানির মাধ্যমে আসামি পক্ষের অপপ্রচারগুলো মাঠে যা আছে তা বেরিয়ে আসবে। যা আরও স্পষ্ট হবে। তারা এ জাতীয় আবেদন করেছে তার কোন ভিত্তি নেই। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আমরা আমাদের বক্তব্য রাখার জন্য প্রস্তুত।
এর মধ্যে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে ৬ ডিসেম্বর। তার বিরুদ্ধে রায় যে কোন দিন দেয়া হবে বলে উল্লেখ করে মামলাটির রায় ঘোষণা অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখেছেন ট্রাইব্যুনাল। এখন আবেদনগুলো নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কিছু হবে না।
সাকা চৌধুরী ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী প্রসিকিউশনপক্ষের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুমকে অপসারণের আবেদন করেছে। এর ওপরও শুনানি আজ অনুষ্ঠিত হবে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দিয়েছে।
তাজুল ইসলাম ॥ পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগে আসামিপক্ষের তিন আইনজীবীর বিষয়ে আদেশের জন্য ১০ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছে ট্রাইব্যুনাল। তবে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত আইনজীবী তাজুল ইসলামকে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। তবে তিনি মামলা পরিচালনা করতে পারবেন না। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রবিবার এই আদেশ প্রদান করে।
তাজুল ইসলামসহ বাকি দুই আইনজীবী হচ্ছেন এ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার তানভীর আহমেদ আল আমিন। তাদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। এর আগে গত ৬ নবেম্বর বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আসামিপক্ষের তিন আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে শোকজ নোটিস জারি করে। এবং আইনজীবী তাজুল ইসলামকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল-১ এ প্রবেশ নিষিদ্ধ করে আদেশ দেন। এরও আগে গত ২২ অক্টোবর তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগে আরও একটি শোকজ নোটিস জারি করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, গত ৫ নবেম্বর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষের সাক্ষী সুখরঞ্জন বালীকে ডিবি পুলিশ কর্তৃক অপহরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনালে সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতির জের ধরে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নেয়।
নিরাপত্তা জোরদার ॥ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রবিবার কঠোর নিরাপত্তা নেয়া হয়। পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশ ট্রাইব্যুনালের ভেতরে ও বাইরে অবস্থান নেয়। এ ছাড়া গেটের বাইরে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ডিবি পুলিশের বোমা ডিজপোজাল ইউনিট ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে চেকিং করেছে। প্রবেশ পথে সাংবাদিক, আইনজীবীসহ সবাইকে চেকিং করে ভিতরে প্রবেশ করানো হচ্ছে।
পাশাপাশি পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগে আসামিপক্ষের তিন আইনজীবীর বিষয়ে আদেশের জন্য ১০ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছে ট্রাইব্যুনাল। তবে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত আইনজীবী তাজুল ইসলামকে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে কিন্তু তিনি কোন মামলা পরিচালনা করতে পারবেন না। রবিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এই আদেশ প্রদান করেছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ভেতরে ও বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
বাচ্চু রাজাকার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পলাতক বাচ্চু রাজাকার বলে পরিচিত জামায়াতের সাবেক রুকন আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন তার যুক্তিতর্ক শুরু করেছে। প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান তাঁর পক্ষে এই গুরুত্বপূর্ণ যুক্তিতর্ক শুরু করেন। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ এই যুক্তিতর্ক চলছে। ট্রাইব্যুনালে অন্য দু’সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও জজ মোঃ শাহীনুর ইসলাম।
প্রসিকিউটর শাহিদুর রহমান আসামি বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে ৮টি অভিযোগের মধ্যে আনা প্রথম চারটি অভিযোগের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার পরেই বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক শুরু হলো। প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান বলেন, রবিবার ট্রাইব্যুনালের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করার সময় আজাদের বিরুদ্ধে সাক্ষীর জবানবন্দী সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করেছি। আজ বাকি সাক্ষী ও আইনী বিষয়ে আর্গুমেন্ট করা হবে। পরে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আর্গুমেন্ট করবেন।
এছাড়াও ট্রাইব্যুনালে আবুল কালাম আজাদের দুই সাক্ষীর বিষয়ে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করার কথা জানান প্রসিকিউটর। তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে সাক্ষী আবু ইউসুফ ওরফে পাখি ও রঞ্জিত হলেন ভিকটিম। বাচ্চু রাজাকারের (আবুল কালাম আজাদ) উপস্থিতিতেই পাখিকে কমপক্ষে ১ মাস ১৩ দিন আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। ওই আটকাবস্থা থেকে রঞ্জিত কুমার জানালার গ্রিল ভেঙ্গে রাত ২টার দিকে পালিয়ে আসেন।
অভিযুক্ত আবুল কালাম আজাদ ১৯৭১ সালে পাক সেনাদের সক্রিয় সহযোগী হিসেবে ফরিদপুর শহর ও তার আশপাশের এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন ও দেশান্তরসহ অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। তদন্তে ও সাক্ষী প্রমাণে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন-১৯৭৩-এর ৩ (২) (এ) এবং (সি) ধারায় অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গত বছরের ২৯ জুলাই তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। গত বছরের ২২ মার্চ চীফ প্রসিকিউটরের মাধ্যমে আবুল কালাম আজাদকে গ্রেফতারের আবেদন জানালে ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এরপর থেকে সে পলাতক রয়েছে এবং পলাতক অবস্থায় তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
আর্গুমেন্ট (যুক্তিতর্ক) অসমাপ্ত অবস্থায় মামলার কার্যক্রম আজ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। এর আগে আজাদের বিরুদ্ধে জব্দ তালিকার সাক্ষীসহ মোট ২২ জন সাক্ষী দিয়েছেন। রাষ্ট্র নিযুক্ত (ডিফেন্স ল’ইয়ার) আইনজীবী তাদের জেরা শেষ করেছেন। গত ৪ নবেম্বর আজাদের বিরুদ্ধে ৮টি সুনির্দিষ্ট ঘটনায় অভিযোগ গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে ১০টি ঘটনায় ২২টি অভিযোগের ভিত্তিতে মোট ৪৪৮ পৃষ্ঠার অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
নিজামী-সাঈদী ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতবিরোধী অপরাধের অভিযেগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর ্রহমান নিজামী ও মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার পুনরায় শুরু (রি-ট্রায়াল) করার আবেদন করেছে আসামি পক্ষ। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ এই আবেদন করা হয়েছে। আজ এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে ১৯ ডিসেম্বর গোলাম আযমের মামলা পুনরায় শুরু করার আবেদন করে আসামিপক্ষ। আজ গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর তিনটি আবেদন শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। আসামির পক্ষের আইনজীবী মাওলানা মাতিউর রহমান নিজামীর পক্ষে ২১৪ পৃষ্ঠা ও মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে প্রায় ৬শ’ পৃষ্ঠার এ আবেদন করা হয়। সাঈদীর আবেদনের পক্ষে রবিবার ল’পয়েন্টে কথা বলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
আদেশের পর ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, একটি গ্রহণযোগ্য রায় হওয়ার জন্য এ মামলাটি পুনরায় শুরু করা প্রয়োজন। স্কাইপ কেলেঙ্কারি দৈনিক আমার দেশ এবং ইকোনমিস্টে ফাঁস হওয়ার পর সুবিচার পাওয়ার যে আকাক্সক্ষা আছে, তা নষ্ট হয়ে গেছে। ৬(৬) ধারা অনুযায়ী এখন শুধু রায় দিতে বাকি আছে সাঈদী সাহেবের মামলায়। আইন অনুযায়ী যতটুকু বিচার হয়েছে সেখান থেকে আবার শুরু হবার কথা বলা আছে। কিন্তু ২(এ) ধারায় স্বাধীনভাবে বিচার পরিচালনা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার কথা বলা আছে। বিচারপতি নিজামুল হক স্বাধীনভাবে বিচার কাজ পরিচালনা করেননি। তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। শপথে বিচারপতিকে সংবিধান সমুন্নত রাখার কথা বলা আছে। তিনি তাও রক্ষা করেননি। তিনি সুবিচার পাবার পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। ৬(৬) ধারাকে এখানে প্রাধান্য দেয়া ঠিক হবে না। কারণ তিনি তো স্বাধীনভাবে বিচার পরিচালনা করেননি। আমার জীবনে শুনিনি যে, বাইরে থেকে চার্জ গঠনের আদেশ আসে।
প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আইনের বাইরে কিছু কথাবার্তা বলেছেন। শুধু বললেন, আপনারা বিবেচনা করুন। আবেদন গৃহীত না হলে ট্রাইব্যুনালের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে। যুদ্ধাপরাধ বিচার বিলম্ব করার জন্য যেমনিভাবে মাঠে নেমেছে তেমনি আদালতেও করছে। আজকের শুনানির মাধ্যমে আসামি পক্ষের অপপ্রচারগুলো মাঠে যা আছে তা বেরিয়ে আসবে। যা আরও স্পষ্ট হবে। তারা এ জাতীয় আবেদন করেছে তার কোন ভিত্তি নেই। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আমরা আমাদের বক্তব্য রাখার জন্য প্রস্তুত।
এর মধ্যে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে ৬ ডিসেম্বর। তার বিরুদ্ধে রায় যে কোন দিন দেয়া হবে বলে উল্লেখ করে মামলাটির রায় ঘোষণা অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখেছেন ট্রাইব্যুনাল। এখন আবেদনগুলো নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কিছু হবে না।
সাকা চৌধুরী ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী প্রসিকিউশনপক্ষের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুমকে অপসারণের আবেদন করেছে। এর ওপরও শুনানি আজ অনুষ্ঠিত হবে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দিয়েছে।
তাজুল ইসলাম ॥ পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগে আসামিপক্ষের তিন আইনজীবীর বিষয়ে আদেশের জন্য ১০ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছে ট্রাইব্যুনাল। তবে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত আইনজীবী তাজুল ইসলামকে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। তবে তিনি মামলা পরিচালনা করতে পারবেন না। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রবিবার এই আদেশ প্রদান করে।
তাজুল ইসলামসহ বাকি দুই আইনজীবী হচ্ছেন এ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার তানভীর আহমেদ আল আমিন। তাদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। এর আগে গত ৬ নবেম্বর বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আসামিপক্ষের তিন আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে শোকজ নোটিস জারি করে। এবং আইনজীবী তাজুল ইসলামকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল-১ এ প্রবেশ নিষিদ্ধ করে আদেশ দেন। এরও আগে গত ২২ অক্টোবর তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগে আরও একটি শোকজ নোটিস জারি করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, গত ৫ নবেম্বর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষের সাক্ষী সুখরঞ্জন বালীকে ডিবি পুলিশ কর্তৃক অপহরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনালে সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতির জের ধরে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নেয়।
নিরাপত্তা জোরদার ॥ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রবিবার কঠোর নিরাপত্তা নেয়া হয়। পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশ ট্রাইব্যুনালের ভেতরে ও বাইরে অবস্থান নেয়। এ ছাড়া গেটের বাইরে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ডিবি পুলিশের বোমা ডিজপোজাল ইউনিট ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে চেকিং করেছে। প্রবেশ পথে সাংবাদিক, আইনজীবীসহ সবাইকে চেকিং করে ভিতরে প্রবেশ করানো হচ্ছে।
No comments