কনকনে শীত জীবনের যন্ত্রণা- মমতাজ লতিফ
জাড় বড় আড়বুড়োর ভাঙ্গে ঘাড়।যোয়ানের বুক দুর দুর করেছেলেদের কাছেই যেতে নারে॥শীত সম্পর্কে বাংলায় প্রচলিত প্রাচীন একটি কথা। গ্রামাঞ্চলে এক সময় শীতের অপর একটি নাম চালু ছিল।
এখনও কোথাও কোথাও হয়ত চালু আছে। সে নামটি হচ্ছে জাড়। জাড় বললে শুধু শীতই বোঝায় না, বেশ কড়া শীতই বোঝায়। সেই জাড় সম্পর্কে বলা হয় জাড় বড় আড়। বুড়োর ভাঙ্গে ঘাড়। অর্থাৎ জাড় এমন যে বয়স্ক লোকদের কাবু করে ফেলে, জোয়ান ব্যক্তিদেরও বুক কাঁপায় এবং ছোটদের কাছে ঘেঁষতে পারে না। এবারের এই শেষ ডিসেম্বরের শীত প্রাচীন ওই ছড়াকেও যেন হার মানিয়েছে। এবার যে শীত পড়েছে তা বিশেষজ্ঞদের কাছে যা-ই মনে হোক, সেটা যে ভয়ানক তা ছেলেমেয়ে সবাই ঠাহর বা বুঝতে পারছে।
শীত পড়েছে ভয়ানক রকমের, ঢাকায় বসে যে শীত অনুভব করা যায় সেটাকে ভয়ানক বললে উত্তরবঙ্গে এবং সাধারণভাবে গ্রামের শীতকে ভয়াবহ বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। আবহাওয়া যে চরম রূপ নিয়েছে বহুদিন ধরে সেটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এবারের শীতে দেখা যাচ্ছে সেটা ভাল করে। বোঝা যাচ্ছে দেশটির আবহাওয়া জলবায়ু সেই কবেকার নাতিশীতোষ্ণ থেকে একেবারে চরমভাবাপন্ন পর্যায়ে চলে গেছে। এই শীত এমনিতেই সহ্য করা যাচ্ছে না। এর সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহ বইলে মানুষের চরম দুর্গতির আর কিছু বাকি থাকে না। এখন কয়েকদিন ধরে সেই দুর্গতিই চলছে।
জাড় এখন ছেলে-বুড়ো সবার ঘাড়ে জেঁকে বসেছে আড় হয়ে। এটা এত শীত, এত কষ্ট, এটা বিশ্ব শীত-মানের কাছে তেমনি কিছু নয়। বিশ্বের শীতের দেশগুলোতে শীতে তাপমাত্রা চলে যায় হিমাঙ্কের নিচে। বরফে বরফে ঢেকে যায় সব। আমাদের শীত হিমাঙ্ক থেকে বেশ খানিকটা উপরে, নিচে নামার কথা ভাবতেই পারা যায় না। তবু এই শীতই আমাদের কাছে ভয়ানক। এই শীতে গোটা দেশ জবুথবু। প্রথমত শীত মোকাবেলা করার ক্ষমতা আমাদের কম, শীতকে সামাল দিয়ে, তাকে উপভোগ্য করার ব্যবস্থা আমাদের নেই। সে ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। কারণ একটাই দারিদ্র্য। দারিদ্র্যের কারণেই এত কষ্ট। বহু লোকের ঘর পাকা নয়, কাঁচাঘর বহু মানুষের। বহুজনের ঘরে হিমেল হাওয়া ঢোকে সারা রাত। প্রয়োজনীয় গরম জামাকাপড়, লেপ-কম্বল তোশক তাদের নেই। অগণিত মানুষকে রাতে শীতের হাতে আত্মসমর্পণ করে কাটাতে হয়। সারা রাত শীতের কামড় সহ্য করতে হয় তাদের। এ কামড় অনেকের জন্য প্রাণঘাতী।
শীত অনেকের প্রিয় ঋতু। খাওয়া-দাওয়া, বেড়ানো, বনভোজন ইত্যাদি শীতের দিনে বহুজনকে আকৃষ্ট করে। এক সময় দেশে গ্রামাঞ্চলে শীতের সময় নানা স্থানে খেলা, গান-বাজনার আয়োজন করা হতো, কোথাও কোথাও এখনও হয়। শীতের সময় নানা উৎসব-আয়োজনে মেতে থাকত পল্লী বাংলা। তখনও শীতের তীব্রতা কম ছিল তাও বলা যাবে না।
শীত কারও কারও কাছে আনন্দের হলেও বৃহত্তর দরিদ্র মানুষের কাছে নিরানন্দের। এবার বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ যেন তেড়ে এল শীত। বিপদের মধ্যে ফেলে দিল মানুষকে।
বলা হয়, আবহাওয়ার উল্টাপাল্টা অবস্থার কথা। এখন পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে এই উল্টাপাল্টা অবস্থায় আমাদের ঋতু যেন বদলাচ্ছে। উল্টাপাল্টা আচরণ এই ঋতুগুলোর মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গরমের সময় হয়ত ভালমতো গরম পড়ছে না, অথবা এমন গরম পড়ছে যাকে স্বাভাবিক বলা যাবে না। বর্ষায় বৃষ্টি হলো না স্বাভাবিক পরিমাণে অথবা এমন বৃষ্টি হলো যা অস্বাভাবিক। শীতের চেহারা তো দেখাই যাচ্ছে এবার। বর্ষ শেষ, ডিসেম্বর চলছে এখন। ডিসেম্বরে শীত থাকবেই। কিন্তু এত শীত, এমন শৈত্যপ্রবাহ! মানুষের হাড় পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিচ্ছে। বহু মানুষ এমন শীত সহ্য করতে পারছে না। শীতজনিত অসুখে ভুগছে। কষ্ট পাচ্ছে। ঠা-ায় অসাড় হয়ে যাচ্ছে দেহ। উত্তরবঙ্গে কয়েকজন মারাও গেছে
নারী ও শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি সমস্যা বেশি। শীর্ণ অপুষ্ট শরীরে শীত বেশি করে লাগে। শীতজনিত রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের দেশটা যেহেতু এখন এ রকম, তাই একদিকে অপুষ্টি দূর করার কার্যক্রম যেমন জোরদার করা দরকার, তেমনি শীতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার। দরিদ্র মানুষের এখন গরম কাপড় দরকার। সরকারকে আরও বেশি সহায়তা নিয়ে দাঁড়াতে হবে এদের পাশে। রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন, সমাজের বিত্তবান ব্যাক্তিবর্গ, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর এই কাজে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। এক সময় এই ঢাকা নগরীতে দেখা গেছে, দেশের নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড়-ঝঞ্ঝা, বন্যা, সাইক্লোনে মানুষ পথে নেমেছে। গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে গান গেয়ে তরুণেরা টাকা-পয়সা, কাপড়-চোপড় সংগ্রহ করছে। সেগুলো পাঠিয়ে দিচ্ছে দুর্যোগকবলিত এলাকায়। বহু সংগঠন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক দল এই কাজ করেছে। কোন সংগঠন এভাবে সাহায্য সংগ্রহে পথে নামায় অপরাপর সংগঠনের ছেলেমেয়েরা উৎসাহিত হয়েছে। তারাও নেমেছে এই কাজে। এতে দুর্যোগকবলিত এলাকার মানুষের উপকারও হয়েছে অনেকখানি। এমন বহু-গ্রাম, জনপদ, চরাঞ্চল আছে যেখানে বহু শিশু কাঁপছে শীতে, অসহায় বহু নারী এক কাপড়ে কাঁপছেন শীতে। সেসব স্থানে একটি গরম কাপড়, কম্বল, সোয়েটার এমনকি এক জোড়া স্যান্ডেলও এই শীতে খুব দামী জিনিস। সরকারী উদ্যোগে এই কাজটি করা প্রয়োজন। সরকারীভাবে নানা সহায়তা দেয়া হয়। তবু আরও দরকার। একই সঙ্গে সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক দলগুলোকেও এ ব্যাপারে নামা প্রয়োজন। রাজধানী বা অন্যান্য শহরে এমন হৃদয়বান ধনী আছেন, যাঁরা শীতার্তদের সহায়তা করতে চান। তাদের পক্ষে গ্রামে গিয়ে লোকজনের কাছে টাকা-পয়সা, কাপড়-চোপড় দিয়ে আসা সম্ভব নয়। সরকার এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়ে ব্যবস্থা করতে পারে। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনও এই কাজে এগিয়ে আসতে পারে।
সাধারণ মানুষের একটা বড় ভরসা ফুটপাথের দোকানের গরম কাপড়। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এগুলোর দামও বেড়ে যায়। এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী সমাজেরও একটা দায় আছে। তাছাড়া ধনী হৃদয়বান ব্যক্তিরা নিজেদের গরম জামা-কাপড় দরিদ্রদের দেবার জন্য এগিয়ে আসাতে পারেন। এই কাজটি নানা সংগঠন বা বেসরকারী সংস্থা সংগঠিত করতে পারে। কাজগুলো এখনই এগিয়ে নেয়া প্রয়োজন।
আজ পৌষের ১০। এরই মধ্যে রাজধানীসহ সারাদেশে অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত। চলছে একটা শৈত্যপ্রবাহ। দিনে দিনে নীরবে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগামী সপ্তাহের শেষের দিকে শীত আরও বাড়তে পারে। ঘনকুয়াশা পড়ছে এখন। ঘনকুয়াশার কারণে অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত। উত্তরাঞ্চ এর তীব্রতা বেশি। পৌষের পরে মাঘ। কথায় আছে, মাঘের শীতে বাঘ কাঁপে। শীত এখন যে হারে বাড়ছে তাতে মাঘে এর তীব্রতা যে আরও বাড়তে পারে সেটা অনুমান করা যায়। শীতার্তদের পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারী উদ্যোগকে আরও জোরদার করতে হবে।
সামনে মাঘ মাস। মাঘের শীত বাঘকেও কাহিল করে ফেলে। সুতরাং সামনের দিনগুলোয় শীত যে বাড়বে সেটা অনুমান করা যায়। না বাড়লে ভাল। যদি বাড়ে সে লক্ষ্যে দরিদ্রদের সহায়তার কাজটি এখনই সংগঠিত করা দরকার। নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্যে দিয়ে চলে যাচ্ছে ২০১২ সালটা। আর মাত্র কয়েকটা দিন। তারপর ২০১৩ সাল। আর কয়েকদিন পরে মহাজোট সরকারের ৪ বছর পূর্ণ হয়ে শুরু হবে নতুন একটা বছর ৫ম বছর। দেশের উন্নয়ন ও দারিদ্র্যবিমোচনসহ দেশবাসীর সামগ্রিক কল্যাণে সব কমকার্ন্ড পরিচালিত হবে এই প্রত্যাশা। এখন প্রয়োজন শীতার্ত সব মানুষের জন্য মমতামাখা উষ্ণতা। সেটাই নিশ্চিত করা আমাদের কর্তব্য।
শীত পড়েছে ভয়ানক রকমের, ঢাকায় বসে যে শীত অনুভব করা যায় সেটাকে ভয়ানক বললে উত্তরবঙ্গে এবং সাধারণভাবে গ্রামের শীতকে ভয়াবহ বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। আবহাওয়া যে চরম রূপ নিয়েছে বহুদিন ধরে সেটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এবারের শীতে দেখা যাচ্ছে সেটা ভাল করে। বোঝা যাচ্ছে দেশটির আবহাওয়া জলবায়ু সেই কবেকার নাতিশীতোষ্ণ থেকে একেবারে চরমভাবাপন্ন পর্যায়ে চলে গেছে। এই শীত এমনিতেই সহ্য করা যাচ্ছে না। এর সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহ বইলে মানুষের চরম দুর্গতির আর কিছু বাকি থাকে না। এখন কয়েকদিন ধরে সেই দুর্গতিই চলছে।
জাড় এখন ছেলে-বুড়ো সবার ঘাড়ে জেঁকে বসেছে আড় হয়ে। এটা এত শীত, এত কষ্ট, এটা বিশ্ব শীত-মানের কাছে তেমনি কিছু নয়। বিশ্বের শীতের দেশগুলোতে শীতে তাপমাত্রা চলে যায় হিমাঙ্কের নিচে। বরফে বরফে ঢেকে যায় সব। আমাদের শীত হিমাঙ্ক থেকে বেশ খানিকটা উপরে, নিচে নামার কথা ভাবতেই পারা যায় না। তবু এই শীতই আমাদের কাছে ভয়ানক। এই শীতে গোটা দেশ জবুথবু। প্রথমত শীত মোকাবেলা করার ক্ষমতা আমাদের কম, শীতকে সামাল দিয়ে, তাকে উপভোগ্য করার ব্যবস্থা আমাদের নেই। সে ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। কারণ একটাই দারিদ্র্য। দারিদ্র্যের কারণেই এত কষ্ট। বহু লোকের ঘর পাকা নয়, কাঁচাঘর বহু মানুষের। বহুজনের ঘরে হিমেল হাওয়া ঢোকে সারা রাত। প্রয়োজনীয় গরম জামাকাপড়, লেপ-কম্বল তোশক তাদের নেই। অগণিত মানুষকে রাতে শীতের হাতে আত্মসমর্পণ করে কাটাতে হয়। সারা রাত শীতের কামড় সহ্য করতে হয় তাদের। এ কামড় অনেকের জন্য প্রাণঘাতী।
শীত অনেকের প্রিয় ঋতু। খাওয়া-দাওয়া, বেড়ানো, বনভোজন ইত্যাদি শীতের দিনে বহুজনকে আকৃষ্ট করে। এক সময় দেশে গ্রামাঞ্চলে শীতের সময় নানা স্থানে খেলা, গান-বাজনার আয়োজন করা হতো, কোথাও কোথাও এখনও হয়। শীতের সময় নানা উৎসব-আয়োজনে মেতে থাকত পল্লী বাংলা। তখনও শীতের তীব্রতা কম ছিল তাও বলা যাবে না।
শীত কারও কারও কাছে আনন্দের হলেও বৃহত্তর দরিদ্র মানুষের কাছে নিরানন্দের। এবার বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ যেন তেড়ে এল শীত। বিপদের মধ্যে ফেলে দিল মানুষকে।
বলা হয়, আবহাওয়ার উল্টাপাল্টা অবস্থার কথা। এখন পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে এই উল্টাপাল্টা অবস্থায় আমাদের ঋতু যেন বদলাচ্ছে। উল্টাপাল্টা আচরণ এই ঋতুগুলোর মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গরমের সময় হয়ত ভালমতো গরম পড়ছে না, অথবা এমন গরম পড়ছে যাকে স্বাভাবিক বলা যাবে না। বর্ষায় বৃষ্টি হলো না স্বাভাবিক পরিমাণে অথবা এমন বৃষ্টি হলো যা অস্বাভাবিক। শীতের চেহারা তো দেখাই যাচ্ছে এবার। বর্ষ শেষ, ডিসেম্বর চলছে এখন। ডিসেম্বরে শীত থাকবেই। কিন্তু এত শীত, এমন শৈত্যপ্রবাহ! মানুষের হাড় পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিচ্ছে। বহু মানুষ এমন শীত সহ্য করতে পারছে না। শীতজনিত অসুখে ভুগছে। কষ্ট পাচ্ছে। ঠা-ায় অসাড় হয়ে যাচ্ছে দেহ। উত্তরবঙ্গে কয়েকজন মারাও গেছে
নারী ও শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি সমস্যা বেশি। শীর্ণ অপুষ্ট শরীরে শীত বেশি করে লাগে। শীতজনিত রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের দেশটা যেহেতু এখন এ রকম, তাই একদিকে অপুষ্টি দূর করার কার্যক্রম যেমন জোরদার করা দরকার, তেমনি শীতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার। দরিদ্র মানুষের এখন গরম কাপড় দরকার। সরকারকে আরও বেশি সহায়তা নিয়ে দাঁড়াতে হবে এদের পাশে। রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন, সমাজের বিত্তবান ব্যাক্তিবর্গ, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর এই কাজে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। এক সময় এই ঢাকা নগরীতে দেখা গেছে, দেশের নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড়-ঝঞ্ঝা, বন্যা, সাইক্লোনে মানুষ পথে নেমেছে। গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে গান গেয়ে তরুণেরা টাকা-পয়সা, কাপড়-চোপড় সংগ্রহ করছে। সেগুলো পাঠিয়ে দিচ্ছে দুর্যোগকবলিত এলাকায়। বহু সংগঠন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক দল এই কাজ করেছে। কোন সংগঠন এভাবে সাহায্য সংগ্রহে পথে নামায় অপরাপর সংগঠনের ছেলেমেয়েরা উৎসাহিত হয়েছে। তারাও নেমেছে এই কাজে। এতে দুর্যোগকবলিত এলাকার মানুষের উপকারও হয়েছে অনেকখানি। এমন বহু-গ্রাম, জনপদ, চরাঞ্চল আছে যেখানে বহু শিশু কাঁপছে শীতে, অসহায় বহু নারী এক কাপড়ে কাঁপছেন শীতে। সেসব স্থানে একটি গরম কাপড়, কম্বল, সোয়েটার এমনকি এক জোড়া স্যান্ডেলও এই শীতে খুব দামী জিনিস। সরকারী উদ্যোগে এই কাজটি করা প্রয়োজন। সরকারীভাবে নানা সহায়তা দেয়া হয়। তবু আরও দরকার। একই সঙ্গে সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক দলগুলোকেও এ ব্যাপারে নামা প্রয়োজন। রাজধানী বা অন্যান্য শহরে এমন হৃদয়বান ধনী আছেন, যাঁরা শীতার্তদের সহায়তা করতে চান। তাদের পক্ষে গ্রামে গিয়ে লোকজনের কাছে টাকা-পয়সা, কাপড়-চোপড় দিয়ে আসা সম্ভব নয়। সরকার এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়ে ব্যবস্থা করতে পারে। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনও এই কাজে এগিয়ে আসতে পারে।
সাধারণ মানুষের একটা বড় ভরসা ফুটপাথের দোকানের গরম কাপড়। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এগুলোর দামও বেড়ে যায়। এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী সমাজেরও একটা দায় আছে। তাছাড়া ধনী হৃদয়বান ব্যক্তিরা নিজেদের গরম জামা-কাপড় দরিদ্রদের দেবার জন্য এগিয়ে আসাতে পারেন। এই কাজটি নানা সংগঠন বা বেসরকারী সংস্থা সংগঠিত করতে পারে। কাজগুলো এখনই এগিয়ে নেয়া প্রয়োজন।
আজ পৌষের ১০। এরই মধ্যে রাজধানীসহ সারাদেশে অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত। চলছে একটা শৈত্যপ্রবাহ। দিনে দিনে নীরবে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগামী সপ্তাহের শেষের দিকে শীত আরও বাড়তে পারে। ঘনকুয়াশা পড়ছে এখন। ঘনকুয়াশার কারণে অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত। উত্তরাঞ্চ এর তীব্রতা বেশি। পৌষের পরে মাঘ। কথায় আছে, মাঘের শীতে বাঘ কাঁপে। শীত এখন যে হারে বাড়ছে তাতে মাঘে এর তীব্রতা যে আরও বাড়তে পারে সেটা অনুমান করা যায়। শীতার্তদের পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারী উদ্যোগকে আরও জোরদার করতে হবে।
সামনে মাঘ মাস। মাঘের শীত বাঘকেও কাহিল করে ফেলে। সুতরাং সামনের দিনগুলোয় শীত যে বাড়বে সেটা অনুমান করা যায়। না বাড়লে ভাল। যদি বাড়ে সে লক্ষ্যে দরিদ্রদের সহায়তার কাজটি এখনই সংগঠিত করা দরকার। নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্যে দিয়ে চলে যাচ্ছে ২০১২ সালটা। আর মাত্র কয়েকটা দিন। তারপর ২০১৩ সাল। আর কয়েকদিন পরে মহাজোট সরকারের ৪ বছর পূর্ণ হয়ে শুরু হবে নতুন একটা বছর ৫ম বছর। দেশের উন্নয়ন ও দারিদ্র্যবিমোচনসহ দেশবাসীর সামগ্রিক কল্যাণে সব কমকার্ন্ড পরিচালিত হবে এই প্রত্যাশা। এখন প্রয়োজন শীতার্ত সব মানুষের জন্য মমতামাখা উষ্ণতা। সেটাই নিশ্চিত করা আমাদের কর্তব্য।
No comments