যুদ্ধাপরাধী বিচার ট্রাইব্যুনাল ॥ আত্মঘাতী হামলার শঙ্কা- বিচারপতি ও প্রসিকিউটরদের অনেকেই টার্গেট
জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ যুদ্ধাপরাধী হিসেবে শীর্ষ নেতাদের বিচার ঠেকাতে জামায়াতের রয়েছে অসংখ্য পরিকল্পনা। বিচার ঠেকানোর লক্ষ্যেই জামায়াত নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হুজি, জেএমবি, হিযবুত তাহ্রীরসহ অন্তত ৪০টি উগ্র ইসলামী ও মৌলবাদী দল গড়ে তোলে।
শুধু দল নয় নীতি গবেষণা কেন্দ্র, এসো শান্তির পথে ও হালের মুক্ত চিন্তা ফাউন্ডেশনের মতো অসংখ্য সংগঠনের জন্ম দিয়েছে তারা। সারাদেশে ধারাবাহিক নাশকতার সঙ্গে জামায়াতের সঙ্গে জঙ্গী ও উগ্র মৌলবাদী সংগঠনগুলো জড়িত। জামায়াতের তৈরি এসব সংগঠনের অর্থের যোগান আসে মধ্যপ্রাচ্য এবং পার্শ্ববর্তী একটি মুসলিম দেশের বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠন ও সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে। সম্প্রতি মুক্ত চিন্তা ফাউন্ডেশনের নামে পার্শ্ববর্তী একটি মুসলিম দেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা আসার তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। বিদেশ থেকে আনা বিপুল অঙ্কের অর্থের একটি বড় অংশ খরচ করা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল এবং যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার কাজে। পুরো প্রক্রিয়াটির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী ও একটি আলোচিত দৈনিক পত্রিকার একজন বিতর্কিত সম্পাদকের যোগসূত্র থাকার তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে জামায়াত দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলের ভেতরের খবর রাখতে জামায়াত খুবই কৌশলী। ’৮০ দশকে দেশের প্রায় প্রতিটি বড় বড় রাজনৈতিক দলে পরিকল্পিতভাবে জামায়াত তাদের লোক নিয়োগ করে। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এবং কৌশলে তারা এ কাজটি এখনও করে যাচ্ছে। নিয়োগপ্রাপ্তদের মাধ্যমে জামায়াত ওসব রাজনৈতিক দলের ভেতরের তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। অনেক বড় রাজনৈতিক দলের মাঝারি পর্যায়ের নেতা পর্যন্ত রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর লোক। আর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে মাঠ পর্যায়ে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও অঙ্গ সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী। এসব কর্মী জামায়াতের নির্দেশে সুযোগ বুঝে নানা ধরনের নাশকতা করে থাকে। যার দোষ পড়ে ওসব রাজনৈতিক দলের ঘাড়ে।
যেমনটি হয়েছে কেরানীগঞ্জে মা মেয়ে ও চালককে গুলি করে বহুল আলোচিত পরাগ ম-ল অপহরণ এবং পুরনো ঢাকায় বিশ্বজিৎ দাস খুনের ঘটনায়। দুটি ঘটনারই নেপথ্য কারিগর জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গ সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মী। পরাগ ম-ল অপহরণের মূল হোতা আমিনুল ইসলাম জুয়েল ওরফে মোল্লা জুয়েল। সে মূলত ছাত্র শিবিরের ক্যাডার। কেরানীগঞ্জ থানা ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল সে। এরপর সেখান থেকে বিতাড়িত হয়ে ওই এলাকার বিএনপির এক ডাকসাইটে নেতার অনুগ্রহে প্রথমে ছাত্রদলে, এরপর যুবদলে যোগ দেয়। সেখান থেকে প্রথমে ছাত্রলীগে, পরে যুবলীগে যোগ দেয়। এক ছাত্রলীগ নেতা খুনের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। আর বিশ্বজিৎ দাসের গ্রেফতারকৃত খুনীরা জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গ সংগঠন ছাত্র শিবির থেকে ছাত্রলীগে ‘অনুপ্রবেশকারী।’
অভিযোগ রয়েছে, বহুল আলোচিত বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী নিখোঁজের সঙ্গেও জামায়াতের পরোক্ষ যোগসূত্র রয়েছে। ইলিয়াস আলীর কারণে সিলেটের বিশ্বনাথ ও বালাগঞ্জে জামায়াত-শিবির সুবিধে করতে পারছিল না। ফলে সিলেটের রাজনীতিতে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নেয়। এজন্য জামায়াতের তরফ থেকে ইলিয়াস আলীকে দায়ী করা হতো। শুধুমাত্র ইলিয়াস আলীর কারণে সিলেটে একই মঞ্চে বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের বসা নিয়ে পর্যন্ত দীর্ঘ দিন ধরেই দ্বন্দ্ব চলছিল। জামায়াত বিএনপির কাছেই ঘেঁষতে পারছিল না। এমন নানা রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের সূত্রধরেও ইলিয়াস আলী নিখোঁজের ঘটনা ঘটতে পারে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে এমন নানা ঘটনার সঙ্গেই জামায়াতের সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। আইনী মোকাবেলার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে জামায়াত তাদের অর্থায়নে বহু ব্যারিস্টার ও আইনজ্ঞ তৈরি করেছে। বছরখানেক আগে জামায়াতের অর্থায়নে ব্যারিস্টার হওয়া এক শ’ জন ঢাকায় এসেছে। তারা আইন চর্চা করছেন। এসব ব্যারিস্টার মতিঝিলসহ আশপাশের বিভিন্ন ল ফার্মে আইন চর্চা করে যাচ্ছেন। জামায়াতের রয়েছে নানা ধরনের আইনজীবী। অনেক আইনজীবী কারাবন্দী জঙ্গীদের কারামুক্ত করতে জামিনের চেষ্টা করছেন। কারামুক্ত ওসব জঙ্গীকে বড় ধরনের নাশকতা চালাতে মাঠে নামানো হবে।
জামায়াতের কয়েকটি আইটি ফার্ম রয়েছে। অধিকাংশ আইটি ফার্ম আইডিবি ভবনে। বছরপাঁচেক আগেও এসব ফার্মে মাসিক ২ হাজার টাকা স্কলারশিপ দিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা মেধাবী ছাত্রদের ভর্তি করা হতো। এসব ছাত্রকে ২ বছর বাংলাদেশে কম্পিউটারের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশ পাঠানো হয়। সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিজামুল হকের ই-মেইল ও স্কাইপে হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটে। জামায়াতের তৈরি কম্পিউটার বিশেষজ্ঞরাই হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জড়িত। হ্যাকাররা জামায়াতের আইটি ফার্মের মাধ্যমে বিদেশে উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। হ্যাকাররা বাংলাদেশী।
যুদ্ধাপরাধী হিসেবে শীর্ষ জামায়াত নেতাদের একদিন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। সে বিষয়ে জামায়াত দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই নিশ্চিত। তাই বিচার বানচাল করতে জামায়াতে ইসলামী একের পর এক গড়ে তোলে হুজি, জেএমবি, হিযবুত তাহ্রীরসহ অন্তত ৪০টি উগ্র ও মৌলবাদী সংগঠন। এসব নিষিদ্ধ সংগঠনের অধিকাংশ নেতাকর্মী জামায়াতের লোক।
প্রসঙ্গত, আফগান যুদ্ধে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১২ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ছাত্র শিবিরেই ছিল ১০৮২ জন। ১৯৯৫ সালে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আফগান ফেরত প্রায় ৩ হাজার যোদ্ধাকে একত্রিত করে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের তালতলায় ‘জাগো মুজাহিদ’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলা হয়। এর পেছনের কারিগরও জামায়াতে ইসলামী। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার অন্যতম আসামি মুফতি হান্নান ছিল জাগো মুজাহিদ গঠনের অন্যতম সংগঠক। সংগঠিত দলটিকে হরকত-উল-জিহাদ অব বাংলাদেশ সংক্ষেপে হুজিবি নাম দেয়া হয়। হুজিবিই পরবর্তীতে হুজি নাম ধারণ করে। হুজি গঠনে বিএনপি-জামায়াতের একটি অংশ নানাভাবে সহযোগিতা করে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী একটি মুসলিম দেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা হুজি গঠনে আর্থিক সহায়তা দেয়।
আফগানফেরত জঙ্গীরা ট্রেনিং ক্যাম্প চালু করে। পরে মুফতি হান্নান, শায়খ আব্দুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইয়ের পরামর্শে সুনামগঞ্জ জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানার পেছনে, নাইক্ষ্যংছড়ি, হিমছড়ি, বিলাইছড়ি, খাগড়াছড়ি, মানিকছড়ি, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, পটিয়া, লালখানবাজার, সিলেট ও কক্সবাজারের উখিয়াসহ আশপাশের দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় মাদ্রাসার নামে ট্রেনিং ক্যাম্প চালু করে। এসব ট্রেনিং ক্যাম্পে ছাত্র শিবির ক্যাডারদেরও ট্রেনিং দেয়া হতো। ছাত্র শিবিরের ট্রেনিংপ্রাপ্ত সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। তাদের কাছে মারাত্মক ধরনের বিস্ফোরক, ক্ষুদ্র ও ভারি আগ্নেয়াস্ত্র আছে। পরে হুজি নিষিদ্ধ হলে প্রশিক্ষিতরা জামায়াতে একীভূত হয়।
গড়ে তোলা হয় জেএমবি। জেএমবি গঠনে জামায়াতে ইসলামী সরাসরি জড়িত। জেএমবির প্রায় ৯৮ ভাগ নেতাকর্মীই জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী। জেএমবির মতো মারাত্মক জঙ্গী সংগঠনের প্রধান মুফতি মাওলানা সাইদুর রহমান জাফর গ্রেফতার হওয়ার পর গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন, জামায়াতের নামানুসারেই জেএমবি (জামায়াতুল মুজাহিদীন অব বাংলাদেশ) নাম রাখা হয়। তার বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল থানাধীন কুজাপুর এলাকার মিরপুরবাজার গ্রামে। তিনি ১৯৭৮ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি, ১৯৮১ সালে জামায়াতে ইসলামীর মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ১৯৮৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর মৌলভীবাজার জেলা শাখার আমির ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ছিলেন। জেলা আমীর থাকা অবস্থায়ই দলীয় নির্দেশে তিনি জেএমবিতে যোগ দেন। ২০০৬ সালে তিনি জেএমবির আমীর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
জেএমবি নিষিদ্ধ হলে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জামায়াতে ইসলামীর সরাসরি সহযোগিতায় আইডিপি (ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টি) নামে নির্বাচন কমিশন থেকে একটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের চেষ্টা চালায়। এর উদ্যোক্তা ছিলেন আফগান ফেরত যোদ্ধা মুফতি মাওলানা আব্দুস সালাম। মূলত হুজি ও জেএমবির জঙ্গীদের একত্রিত করতেই আইডিপি গঠনের চেষ্টা করা হয়েছিল।
শুধু আইডিপি নয়, জামায়াতের সরাসরি মদদে গড়ে উঠেছে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহ্রীর। বাংলাদেশে আধুনিক জঙ্গীবাদের ধারা চালু করতেই সবচেয়ে উচ্চ শিক্ষিতদের নিয়ে গড়ে তোলা হয় হিযবুত তাহরীর। ২০০৩ সালের ২৩ জানুয়ারি বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক গোলটেবিল বৈঠকে বাংলাদেশে দলটির আনুষ্ঠানিক কার্যকম চালুর ঘোষণা দেয়। একমাস পর থেকেই দলটি কার্যক্রম শুরু করে। দলের প্রথম অফিস করার জায়গা দিয়েছিল ছাত্র শিবির। জামায়াতের সঙ্গে বর্তমানে নিষিদ্ধ দলটির নেতাকর্মীরা মাঠে সক্রিয় রয়েছে। জামায়াতের কৌশলী বুদ্ধিতেই হিযবুত তাহ্রীর নীতি গবেষণা কেন্দ্র নামে আরেকটি সংগঠন সৃষ্টি করে। আড়ালে চলত জঙ্গী কার্যক্রম।
এছাড়া জামায়াতে ইসলামী ছাত্র শিবিরের মাধ্যমে ‘এসো শান্তির পথে’ নামে একটি সংগঠন চালু করে। সংগঠনের নামে একটি ডকুমেন্টারিও তৈরি করে তারা। ডকুমেন্টারিটি দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিনা পয়সায় সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখানো হতো। ডকুমেন্টারিটি তৈরির মূল উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করা। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধী হিসেবে শীর্ষ জামায়াত নেতাদের ভূমিকা সম্পর্কে মানুষের মনে দ্বিমত সৃষ্টি করার লক্ষ্যেই ডকুমেন্টারিটি দেখানো হতো। সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় ডকুমেন্টারিটি দেখানোর দায়িত্বে ছিল ছাত্র শিবিরের। ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরা পালাক্রমে ডকুমেন্টারিটি প্রদর্শন করত।
এছাড়া জামায়াতে ইসলামী বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শেষ সময়ে মুক্ত চিন্তা ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলে। সংগঠনটি গড়ে তোলার আসল কারিগর জামায়াতে ইসলামী। সংগঠনটির অন্যতম সংগঠক একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার বিতর্কিত সম্পাদক। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটশন থেকে সংগঠনটি সৃষ্টি হয়। সংগঠনটি দাঁড় করানোর দিন রমনা রেস্তরাঁয় অন্তত ৫ শতাধিক মানুষের রাতের খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল। সংগঠনটির নেতাকর্র্মীদের অধিকাংশই জামায়াত-শিবিরের লোকজন। বিতর্কিত ওই সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার হওয়ায় সংগঠনের সব নেতাকর্মীই বুয়েট থেকে পাস করা তরুণ ইঞ্জিনিয়ার।
এটি একই সঙ্গে এনজিও ও সংগঠনের কাজ করত। সংগঠনের নামে পার্শ্ববর্তী একটি মুসলিম দেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা আসে। জামায়াতে ইসলামী এসব টাকা এনে দিয়েছিল। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে জাতীয় প্রেসক্লাব ও সিরডাপ মিলনায়তনে বহু সভা, সেমিনার সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা হয়েছিল ওই টাকায়। এসব সভা সেমিনারে মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকতেন বিতর্কিত ওই সম্পাদক, কয়েকজন আইনজীবী ও জামায়াতপন্থী কতিপয় বুদ্ধিজীবী। সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী ওই দেশটির সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার তরফ থেকে ‘মুক্ত চিন্তা ফাউন্ডেশনের’ কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে অনুদান দেয়া টাকার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, প্রয়োজনে ওই দেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থাটি আরও টাকা দিতে রাজি। মধ্যপ্রাচ্য ও পার্শ্ববর্তী ওই দেশের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা আসছে। এসব টাকায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের চেষ্টা চলছে। শুধুমাত্র টাকার জোরে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে দেশের সব উগ্র ও মৌলবাদী সংগঠনসহ জামায়াতের অর্থায়নে পরিচালিত প্রতিটি সংগঠন জোটবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমেছে। ভবিষ্যতে জামায়াত যুদ্ধাপরাধী হিসেবে শীর্ষ নেতাদের বিচার বানচালে কারাগার, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ওপর আত্মঘাতী হামলা চালাতে পারে। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের ই-মেল ও স্কাইপে হ্যাকিং করাও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার জামায়াতের নানামুখী পরিকল্পনার একটি। শুধু নিজামুল হক নয়, যুদ্ধাপরাধ মামলা সংশ্লিষ্ট বহু বিচারপতি ও আইনজীবী, প্রসিকিউটর প্রযুক্তিগত ও ব্যক্তিগতভাবে জামায়াতের হামলার টার্গেটে রয়েছেন।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে জামায়াত দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলের ভেতরের খবর রাখতে জামায়াত খুবই কৌশলী। ’৮০ দশকে দেশের প্রায় প্রতিটি বড় বড় রাজনৈতিক দলে পরিকল্পিতভাবে জামায়াত তাদের লোক নিয়োগ করে। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এবং কৌশলে তারা এ কাজটি এখনও করে যাচ্ছে। নিয়োগপ্রাপ্তদের মাধ্যমে জামায়াত ওসব রাজনৈতিক দলের ভেতরের তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। অনেক বড় রাজনৈতিক দলের মাঝারি পর্যায়ের নেতা পর্যন্ত রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর লোক। আর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে মাঠ পর্যায়ে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও অঙ্গ সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী। এসব কর্মী জামায়াতের নির্দেশে সুযোগ বুঝে নানা ধরনের নাশকতা করে থাকে। যার দোষ পড়ে ওসব রাজনৈতিক দলের ঘাড়ে।
যেমনটি হয়েছে কেরানীগঞ্জে মা মেয়ে ও চালককে গুলি করে বহুল আলোচিত পরাগ ম-ল অপহরণ এবং পুরনো ঢাকায় বিশ্বজিৎ দাস খুনের ঘটনায়। দুটি ঘটনারই নেপথ্য কারিগর জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গ সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মী। পরাগ ম-ল অপহরণের মূল হোতা আমিনুল ইসলাম জুয়েল ওরফে মোল্লা জুয়েল। সে মূলত ছাত্র শিবিরের ক্যাডার। কেরানীগঞ্জ থানা ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল সে। এরপর সেখান থেকে বিতাড়িত হয়ে ওই এলাকার বিএনপির এক ডাকসাইটে নেতার অনুগ্রহে প্রথমে ছাত্রদলে, এরপর যুবদলে যোগ দেয়। সেখান থেকে প্রথমে ছাত্রলীগে, পরে যুবলীগে যোগ দেয়। এক ছাত্রলীগ নেতা খুনের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। আর বিশ্বজিৎ দাসের গ্রেফতারকৃত খুনীরা জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গ সংগঠন ছাত্র শিবির থেকে ছাত্রলীগে ‘অনুপ্রবেশকারী।’
অভিযোগ রয়েছে, বহুল আলোচিত বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী নিখোঁজের সঙ্গেও জামায়াতের পরোক্ষ যোগসূত্র রয়েছে। ইলিয়াস আলীর কারণে সিলেটের বিশ্বনাথ ও বালাগঞ্জে জামায়াত-শিবির সুবিধে করতে পারছিল না। ফলে সিলেটের রাজনীতিতে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নেয়। এজন্য জামায়াতের তরফ থেকে ইলিয়াস আলীকে দায়ী করা হতো। শুধুমাত্র ইলিয়াস আলীর কারণে সিলেটে একই মঞ্চে বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের বসা নিয়ে পর্যন্ত দীর্ঘ দিন ধরেই দ্বন্দ্ব চলছিল। জামায়াত বিএনপির কাছেই ঘেঁষতে পারছিল না। এমন নানা রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের সূত্রধরেও ইলিয়াস আলী নিখোঁজের ঘটনা ঘটতে পারে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে এমন নানা ঘটনার সঙ্গেই জামায়াতের সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। আইনী মোকাবেলার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে জামায়াত তাদের অর্থায়নে বহু ব্যারিস্টার ও আইনজ্ঞ তৈরি করেছে। বছরখানেক আগে জামায়াতের অর্থায়নে ব্যারিস্টার হওয়া এক শ’ জন ঢাকায় এসেছে। তারা আইন চর্চা করছেন। এসব ব্যারিস্টার মতিঝিলসহ আশপাশের বিভিন্ন ল ফার্মে আইন চর্চা করে যাচ্ছেন। জামায়াতের রয়েছে নানা ধরনের আইনজীবী। অনেক আইনজীবী কারাবন্দী জঙ্গীদের কারামুক্ত করতে জামিনের চেষ্টা করছেন। কারামুক্ত ওসব জঙ্গীকে বড় ধরনের নাশকতা চালাতে মাঠে নামানো হবে।
জামায়াতের কয়েকটি আইটি ফার্ম রয়েছে। অধিকাংশ আইটি ফার্ম আইডিবি ভবনে। বছরপাঁচেক আগেও এসব ফার্মে মাসিক ২ হাজার টাকা স্কলারশিপ দিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা মেধাবী ছাত্রদের ভর্তি করা হতো। এসব ছাত্রকে ২ বছর বাংলাদেশে কম্পিউটারের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশ পাঠানো হয়। সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিজামুল হকের ই-মেইল ও স্কাইপে হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটে। জামায়াতের তৈরি কম্পিউটার বিশেষজ্ঞরাই হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জড়িত। হ্যাকাররা জামায়াতের আইটি ফার্মের মাধ্যমে বিদেশে উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। হ্যাকাররা বাংলাদেশী।
যুদ্ধাপরাধী হিসেবে শীর্ষ জামায়াত নেতাদের একদিন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। সে বিষয়ে জামায়াত দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই নিশ্চিত। তাই বিচার বানচাল করতে জামায়াতে ইসলামী একের পর এক গড়ে তোলে হুজি, জেএমবি, হিযবুত তাহ্রীরসহ অন্তত ৪০টি উগ্র ও মৌলবাদী সংগঠন। এসব নিষিদ্ধ সংগঠনের অধিকাংশ নেতাকর্মী জামায়াতের লোক।
প্রসঙ্গত, আফগান যুদ্ধে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১২ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ছাত্র শিবিরেই ছিল ১০৮২ জন। ১৯৯৫ সালে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আফগান ফেরত প্রায় ৩ হাজার যোদ্ধাকে একত্রিত করে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের তালতলায় ‘জাগো মুজাহিদ’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলা হয়। এর পেছনের কারিগরও জামায়াতে ইসলামী। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার অন্যতম আসামি মুফতি হান্নান ছিল জাগো মুজাহিদ গঠনের অন্যতম সংগঠক। সংগঠিত দলটিকে হরকত-উল-জিহাদ অব বাংলাদেশ সংক্ষেপে হুজিবি নাম দেয়া হয়। হুজিবিই পরবর্তীতে হুজি নাম ধারণ করে। হুজি গঠনে বিএনপি-জামায়াতের একটি অংশ নানাভাবে সহযোগিতা করে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী একটি মুসলিম দেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা হুজি গঠনে আর্থিক সহায়তা দেয়।
আফগানফেরত জঙ্গীরা ট্রেনিং ক্যাম্প চালু করে। পরে মুফতি হান্নান, শায়খ আব্দুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইয়ের পরামর্শে সুনামগঞ্জ জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানার পেছনে, নাইক্ষ্যংছড়ি, হিমছড়ি, বিলাইছড়ি, খাগড়াছড়ি, মানিকছড়ি, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, পটিয়া, লালখানবাজার, সিলেট ও কক্সবাজারের উখিয়াসহ আশপাশের দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় মাদ্রাসার নামে ট্রেনিং ক্যাম্প চালু করে। এসব ট্রেনিং ক্যাম্পে ছাত্র শিবির ক্যাডারদেরও ট্রেনিং দেয়া হতো। ছাত্র শিবিরের ট্রেনিংপ্রাপ্ত সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। তাদের কাছে মারাত্মক ধরনের বিস্ফোরক, ক্ষুদ্র ও ভারি আগ্নেয়াস্ত্র আছে। পরে হুজি নিষিদ্ধ হলে প্রশিক্ষিতরা জামায়াতে একীভূত হয়।
গড়ে তোলা হয় জেএমবি। জেএমবি গঠনে জামায়াতে ইসলামী সরাসরি জড়িত। জেএমবির প্রায় ৯৮ ভাগ নেতাকর্মীই জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী। জেএমবির মতো মারাত্মক জঙ্গী সংগঠনের প্রধান মুফতি মাওলানা সাইদুর রহমান জাফর গ্রেফতার হওয়ার পর গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন, জামায়াতের নামানুসারেই জেএমবি (জামায়াতুল মুজাহিদীন অব বাংলাদেশ) নাম রাখা হয়। তার বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল থানাধীন কুজাপুর এলাকার মিরপুরবাজার গ্রামে। তিনি ১৯৭৮ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি, ১৯৮১ সালে জামায়াতে ইসলামীর মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ১৯৮৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর মৌলভীবাজার জেলা শাখার আমির ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ছিলেন। জেলা আমীর থাকা অবস্থায়ই দলীয় নির্দেশে তিনি জেএমবিতে যোগ দেন। ২০০৬ সালে তিনি জেএমবির আমীর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
জেএমবি নিষিদ্ধ হলে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জামায়াতে ইসলামীর সরাসরি সহযোগিতায় আইডিপি (ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টি) নামে নির্বাচন কমিশন থেকে একটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের চেষ্টা চালায়। এর উদ্যোক্তা ছিলেন আফগান ফেরত যোদ্ধা মুফতি মাওলানা আব্দুস সালাম। মূলত হুজি ও জেএমবির জঙ্গীদের একত্রিত করতেই আইডিপি গঠনের চেষ্টা করা হয়েছিল।
শুধু আইডিপি নয়, জামায়াতের সরাসরি মদদে গড়ে উঠেছে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহ্রীর। বাংলাদেশে আধুনিক জঙ্গীবাদের ধারা চালু করতেই সবচেয়ে উচ্চ শিক্ষিতদের নিয়ে গড়ে তোলা হয় হিযবুত তাহরীর। ২০০৩ সালের ২৩ জানুয়ারি বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক গোলটেবিল বৈঠকে বাংলাদেশে দলটির আনুষ্ঠানিক কার্যকম চালুর ঘোষণা দেয়। একমাস পর থেকেই দলটি কার্যক্রম শুরু করে। দলের প্রথম অফিস করার জায়গা দিয়েছিল ছাত্র শিবির। জামায়াতের সঙ্গে বর্তমানে নিষিদ্ধ দলটির নেতাকর্মীরা মাঠে সক্রিয় রয়েছে। জামায়াতের কৌশলী বুদ্ধিতেই হিযবুত তাহ্রীর নীতি গবেষণা কেন্দ্র নামে আরেকটি সংগঠন সৃষ্টি করে। আড়ালে চলত জঙ্গী কার্যক্রম।
এছাড়া জামায়াতে ইসলামী ছাত্র শিবিরের মাধ্যমে ‘এসো শান্তির পথে’ নামে একটি সংগঠন চালু করে। সংগঠনের নামে একটি ডকুমেন্টারিও তৈরি করে তারা। ডকুমেন্টারিটি দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিনা পয়সায় সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখানো হতো। ডকুমেন্টারিটি তৈরির মূল উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করা। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধী হিসেবে শীর্ষ জামায়াত নেতাদের ভূমিকা সম্পর্কে মানুষের মনে দ্বিমত সৃষ্টি করার লক্ষ্যেই ডকুমেন্টারিটি দেখানো হতো। সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় ডকুমেন্টারিটি দেখানোর দায়িত্বে ছিল ছাত্র শিবিরের। ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরা পালাক্রমে ডকুমেন্টারিটি প্রদর্শন করত।
এছাড়া জামায়াতে ইসলামী বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শেষ সময়ে মুক্ত চিন্তা ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলে। সংগঠনটি গড়ে তোলার আসল কারিগর জামায়াতে ইসলামী। সংগঠনটির অন্যতম সংগঠক একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার বিতর্কিত সম্পাদক। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটশন থেকে সংগঠনটি সৃষ্টি হয়। সংগঠনটি দাঁড় করানোর দিন রমনা রেস্তরাঁয় অন্তত ৫ শতাধিক মানুষের রাতের খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল। সংগঠনটির নেতাকর্র্মীদের অধিকাংশই জামায়াত-শিবিরের লোকজন। বিতর্কিত ওই সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার হওয়ায় সংগঠনের সব নেতাকর্মীই বুয়েট থেকে পাস করা তরুণ ইঞ্জিনিয়ার।
এটি একই সঙ্গে এনজিও ও সংগঠনের কাজ করত। সংগঠনের নামে পার্শ্ববর্তী একটি মুসলিম দেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা আসে। জামায়াতে ইসলামী এসব টাকা এনে দিয়েছিল। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে জাতীয় প্রেসক্লাব ও সিরডাপ মিলনায়তনে বহু সভা, সেমিনার সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা হয়েছিল ওই টাকায়। এসব সভা সেমিনারে মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকতেন বিতর্কিত ওই সম্পাদক, কয়েকজন আইনজীবী ও জামায়াতপন্থী কতিপয় বুদ্ধিজীবী। সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী ওই দেশটির সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার তরফ থেকে ‘মুক্ত চিন্তা ফাউন্ডেশনের’ কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে অনুদান দেয়া টাকার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, প্রয়োজনে ওই দেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থাটি আরও টাকা দিতে রাজি। মধ্যপ্রাচ্য ও পার্শ্ববর্তী ওই দেশের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা আসছে। এসব টাকায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের চেষ্টা চলছে। শুধুমাত্র টাকার জোরে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে দেশের সব উগ্র ও মৌলবাদী সংগঠনসহ জামায়াতের অর্থায়নে পরিচালিত প্রতিটি সংগঠন জোটবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমেছে। ভবিষ্যতে জামায়াত যুদ্ধাপরাধী হিসেবে শীর্ষ নেতাদের বিচার বানচালে কারাগার, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ওপর আত্মঘাতী হামলা চালাতে পারে। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের ই-মেল ও স্কাইপে হ্যাকিং করাও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার জামায়াতের নানামুখী পরিকল্পনার একটি। শুধু নিজামুল হক নয়, যুদ্ধাপরাধ মামলা সংশ্লিষ্ট বহু বিচারপতি ও আইনজীবী, প্রসিকিউটর প্রযুক্তিগত ও ব্যক্তিগতভাবে জামায়াতের হামলার টার্গেটে রয়েছেন।
No comments