বিশ্বজিৎ দাস হত্যাকাণ্ড-হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিল ওরা
বিশ্বজিৎ দাসকে কুপিয়ে ও রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে ছাত্রলীগের ২১ কর্মী। তাঁর শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কমপক্ষে চারটি ক্ষত সৃষ্টি করা হয়েছিল। এর তিনটি করে রফিকুল ইসলাম শাকিল, একটি করে রাজন তালুকদার। ছাত্রলীগের মিছিল থেকেই ওই হামলা হয়।
ঘটনার সময় ছাত্রলীগের অনেক নেতা-কর্মী ও পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলের আশপাশে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে ছিলেন। গতকাল বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি শাকিল, মাহফুজুর রহমান নাহিদ ও রাশেদুজ্জামান শাওন আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য জানায়। ঢাকা মহানগর হাকিম মো. এরফান উল্লাহর খাস কামরায় তারা জবানবন্দি দেয়। এদিকে গতকালই অন্য দুই আসামি টিপু ও কিবরিয়ার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকা মহানগর হাকিম হারুন অর রশিদের আদালত।
গত ১৬ ডিসেম্বর শাকিল, ১৫ ডিসেম্বর শাওন এবং গত ১৪ ডিসেম্বর নাহিদের আট দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন আদালত। এরপর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হেফাজতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলে। এর এক পর্যায়ে আসামিরা জবানবন্দি দিতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক তাজুল ইসলাম গতকাল তাদের আদালতে হাজির করে স্বীকারোক্তি রেকর্ড করার আবেদন জানান।
আমাদের আদালত প্রতিবেদক জানান, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় তিনজনের জবানবন্দি গ্রহণ শেষে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেন। আদালত সূত্রে জানা যায়, স্বীকারোক্তিতে আসামিরা দাবি করে, বিশ্বজিৎকে হত্যার কোনো পরিকল্পনা তাদের ছিল না। তারা তাঁকে চেনেও না। হত্যাকাণ্ড ঘটানোর আগে ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। ওই সময় বিশ্বজিৎ দৌড় দেন। তিনি ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশের পেট্রল পাম্পের পাশের ভবনের দ্বিতীয় তলায় উঠে গিয়ে কলাপসিবল গেট আটকে দেন। এ সময় তাঁকে অবরোধ সমর্থক বলে সন্দেহ হয় তাদের। ফলে তাঁকে ধাওয়া করে গেট খুলে ভেতরে ঢুকে মারতে শুরু করে আসামিরা। তিনজনই দাবি করেছে, পেছন থেকে কিছু লোক জামায়াত-শিবির বলে চিৎকার করায় বিশ্বজিতের ওপর তাদের ক্ষোভ বেড়ে যায়। জবানবন্দিতে আসামিরা জানায়, শাকিল চাপাতি এবং শাওন ও নাহিদ লাঠি-রড দিয়ে বিশ্বজিৎকে আঘাত করে।
কমপক্ষে চারটি জখম করা হয় : তিন আসামির জবানবন্দিতে বিশ্বজিতের শরীরে চারটি জখমের স্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আরো জখমের কথাও উল্লেখ করা হয়। শাকিল জবানবন্দিতে বলে, 'বিশ্বজিৎ দ্বিতীয় তলার ইনটেনসিভ ডেন্টাল কেয়ারে ঢোকার চেষ্টা করিলে রাজন তার হাতে থাকা ড্যাগার দিয়া বিশ্বজিৎকে ঘাই মারে। আমার (শাকিল) হাতে থাকা চাপাতি দিয়া বিশ্বজিতের হাত, পিঠ, পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি কোপাইয়া রক্তাক্ত করার পর সে ফ্লোরে লুটাইয়া পড়ে। তখন বিশ্বজিৎ বাঁচাও বাঁচাও বলিয়া চিৎকার করিতে থাকে। তাহার শরীর হইতে রক্ত ঝরছিল।' শাওন তার জবানবন্দিতে বলে, 'বিস্ফোরণের পরপরই একটি ছেলে ভিক্টোরিয়া পেট্রল পাম্পের পাশে ইনটেনসিভ ডেন্টাল ক্লিনিকের দ্বিতীয় তলার দিকে দৌড়াইয়া উঠিতে দেখিয়া রাজন ডেগার দিয়া তার পিঠে ঘাই মারে। ছেলেটি সিঁড়ি দিয়া দ্বিতীয় তলার বারান্দায় উঠিতে থাকিলে শাকিল, ইউনুছ, টিপু, কিবরিয়া, মোস্তফা, তমাল, আলাউদ্দিন, ইমরান ও ওবায়দুর কাদের তাদের হাতে থাকা চাপাতি, রড ও লাঠি নিয়া ছেলেটিকে মারিতে থাকে। শাকিল চাপাতি দিয়া বিশ্বজিতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কোপাইতে থাকে।'
নাহিদ তার জবানবন্দিতে আদালতকে বলেছে, 'রাজন ডেগার দিয়া বিশ্বজিৎকে ঘাই মারিলে ছেলেটি চিৎকার করিয়া বলিতে থাকে- ভাই, আমাকে মাইরেন না, আমি অপরাধী না, আমার নাম বিশ্বজিৎ দাস। এ কথা বলিতে বলিতে সে দ্বিতীয় তলার বারান্দায় উঠিয়া যায়। তখন ইউনুছ, টিপু, কিবরিয়া, মোস্তফা রড দিয়া বিশ্বজিতের শরীরে আঘাত করিতে থাকে। বিশ্বজিৎ বাঁচার জন্য দ্বিতীয় তলায় ইনটেনসিভ ডেন্টাল কেয়ারের ভিতরে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করিলে শাকিল চাপাতি দিয়া তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করিতে থাকে। তখন বিশ্বজিতের শরীর হইতে রক্ত ঝরছিল। সে বাঁচার জন্য সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামাকালে ইউনুছ, আলাউদ্দিন, ইমরান, তাহসিন, কিবরিয়া তাদের হাতে থাকা রড দিয়া তাকে পিটাইতে থাকে। বিশ্বজিৎ নিচে নামামাত্রই আমি বাম হাত ধরিয়া তাহাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার হাতে থাকা কাঠের রুল দ্বারা মাথায়, বুক, পিঠ, কোমরসহ শরীরে বিভিন্ন স্থানে সজোরে আঘাত করিতে থাকি।' শাকিল আরো বলে, 'এরপর আমরা সকলেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের দিকে চলিয়া যাই। আমার নিকট থাকা চাপাতি গেটের বাইরে পান-চা দোকানের পাশে আবর্জনার নিচে লুকাইয়া রাখিয়া পরে বাসায় চলিয়া যাই। পরে শুনিতে পারি বিশ্বজিৎ দাস মিটফোর্ড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছে।'
২১ জনের নাম : তিনজনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ২১ জন কর্মী বিশ্বজিতের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে। তারা হলো- শাকিল, রাজন, ইউনুছ, টিপু, কিবরিয়া, ওবায়দুর কাদের তাহসিন, আজিজ, আলাউদ্দিন, ইমরান, মোস্তফা, নাহিদ, শাওন, লিমন, আল আমিন, সাইফুল, রফিক, এমদাদ, আজিজ, তমাল, পাভেল ও ইমদাদুল হক।
ছাত্রলীগের মিছিল থেকেই হামলা : তিন আসামিই স্বীকারোক্তিতে জানায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ব্যানারে মিছিল করার সময় ককটেল বিস্ফোরণের পর তারা বিশ্বজিতের ওপর হামলা চালায়।
বাঁচাতে এগিয়ে যায়নি কেউ : শাকিল তার জবানবন্দির একপর্যায়ে বলে, 'বিশ্বজিৎ নিচে নামিয়া আসিয়া দৌড়ে পালানোর চেষ্টাকালে নাহিদ, শাওন, লিমন, আল আমিন, সাইফুল, রফিক, এমদাদ, আজিজসহ আরো অনেকে তাহার পথ রোধ করে এবং তাহাদের হাতে থাকা রড ও লাঠির সাহায্যে মারিতে থাকে। বিশ্বজিৎ বাঁচার জন্য চিৎকার করিতেছিল, কিন্তু তখন কেহই তাহাকে রক্ষার জন্য আগাইয়া আসে নাই। রক্তাক্ত অবস্থায় বিশ্বজিৎ শাঁখারীবাজারে যাওয়াকালে রাস্তায় পড়িয়া যায় এবং একজন রিকশাচালক তাহাকে চিকিৎসার জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমরা সকলেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের দিকে চলিয়া যাই। পরে জানিতে পারি একজন রিকশাচালক তাহাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়া যায়।'
টিপু, কিবরিয়া আরো তিন দিনের রিমান্ডে : এদিকে একই মামলার আসামি কাইয়ুম মিয়া ওরফে টিপু ও এইচ এম কিবরিয়াকে আট দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল আবারও সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম হারুন অর রশিদ তাদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ পর্যন্ত মামলায় মোট ১০ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম বর্তমানে রিমান্ডে আছে। এ ছাড়া মামুন অর রশিদ, ফারুক হোসেন, কাজী নাহিদুজ্জামান তুহিন ও মোসলেহ উদ্দীন মোসলেম কারাগারে আছে।
সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের 'ময়নাতদন্ত' হবে : ডিবি পুলিশ সূত্র গতকাল কালের কণ্ঠকে জানায়, আসামিদের জবানবন্দি, সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ব্যাপক গরমিল আছে। ধারণা করা হচ্ছে, আসামিদের বাঁচাতে এ প্রতিবেদনগুলোতে 'কারসাজি' করা হয়। ব্যাপারটি খতিয়ে দেখতে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে গত শনিবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মহানগর পুলিশ। ওই কমিটি এসব বিষয় খতিয়ে দেখছে।
স্বজনদের চোখে মুখে আতঙ্ক
গত ১৬ ডিসেম্বর শাকিল, ১৫ ডিসেম্বর শাওন এবং গত ১৪ ডিসেম্বর নাহিদের আট দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন আদালত। এরপর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হেফাজতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলে। এর এক পর্যায়ে আসামিরা জবানবন্দি দিতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক তাজুল ইসলাম গতকাল তাদের আদালতে হাজির করে স্বীকারোক্তি রেকর্ড করার আবেদন জানান।
আমাদের আদালত প্রতিবেদক জানান, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় তিনজনের জবানবন্দি গ্রহণ শেষে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেন। আদালত সূত্রে জানা যায়, স্বীকারোক্তিতে আসামিরা দাবি করে, বিশ্বজিৎকে হত্যার কোনো পরিকল্পনা তাদের ছিল না। তারা তাঁকে চেনেও না। হত্যাকাণ্ড ঘটানোর আগে ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। ওই সময় বিশ্বজিৎ দৌড় দেন। তিনি ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশের পেট্রল পাম্পের পাশের ভবনের দ্বিতীয় তলায় উঠে গিয়ে কলাপসিবল গেট আটকে দেন। এ সময় তাঁকে অবরোধ সমর্থক বলে সন্দেহ হয় তাদের। ফলে তাঁকে ধাওয়া করে গেট খুলে ভেতরে ঢুকে মারতে শুরু করে আসামিরা। তিনজনই দাবি করেছে, পেছন থেকে কিছু লোক জামায়াত-শিবির বলে চিৎকার করায় বিশ্বজিতের ওপর তাদের ক্ষোভ বেড়ে যায়। জবানবন্দিতে আসামিরা জানায়, শাকিল চাপাতি এবং শাওন ও নাহিদ লাঠি-রড দিয়ে বিশ্বজিৎকে আঘাত করে।
কমপক্ষে চারটি জখম করা হয় : তিন আসামির জবানবন্দিতে বিশ্বজিতের শরীরে চারটি জখমের স্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আরো জখমের কথাও উল্লেখ করা হয়। শাকিল জবানবন্দিতে বলে, 'বিশ্বজিৎ দ্বিতীয় তলার ইনটেনসিভ ডেন্টাল কেয়ারে ঢোকার চেষ্টা করিলে রাজন তার হাতে থাকা ড্যাগার দিয়া বিশ্বজিৎকে ঘাই মারে। আমার (শাকিল) হাতে থাকা চাপাতি দিয়া বিশ্বজিতের হাত, পিঠ, পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি কোপাইয়া রক্তাক্ত করার পর সে ফ্লোরে লুটাইয়া পড়ে। তখন বিশ্বজিৎ বাঁচাও বাঁচাও বলিয়া চিৎকার করিতে থাকে। তাহার শরীর হইতে রক্ত ঝরছিল।' শাওন তার জবানবন্দিতে বলে, 'বিস্ফোরণের পরপরই একটি ছেলে ভিক্টোরিয়া পেট্রল পাম্পের পাশে ইনটেনসিভ ডেন্টাল ক্লিনিকের দ্বিতীয় তলার দিকে দৌড়াইয়া উঠিতে দেখিয়া রাজন ডেগার দিয়া তার পিঠে ঘাই মারে। ছেলেটি সিঁড়ি দিয়া দ্বিতীয় তলার বারান্দায় উঠিতে থাকিলে শাকিল, ইউনুছ, টিপু, কিবরিয়া, মোস্তফা, তমাল, আলাউদ্দিন, ইমরান ও ওবায়দুর কাদের তাদের হাতে থাকা চাপাতি, রড ও লাঠি নিয়া ছেলেটিকে মারিতে থাকে। শাকিল চাপাতি দিয়া বিশ্বজিতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কোপাইতে থাকে।'
নাহিদ তার জবানবন্দিতে আদালতকে বলেছে, 'রাজন ডেগার দিয়া বিশ্বজিৎকে ঘাই মারিলে ছেলেটি চিৎকার করিয়া বলিতে থাকে- ভাই, আমাকে মাইরেন না, আমি অপরাধী না, আমার নাম বিশ্বজিৎ দাস। এ কথা বলিতে বলিতে সে দ্বিতীয় তলার বারান্দায় উঠিয়া যায়। তখন ইউনুছ, টিপু, কিবরিয়া, মোস্তফা রড দিয়া বিশ্বজিতের শরীরে আঘাত করিতে থাকে। বিশ্বজিৎ বাঁচার জন্য দ্বিতীয় তলায় ইনটেনসিভ ডেন্টাল কেয়ারের ভিতরে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করিলে শাকিল চাপাতি দিয়া তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করিতে থাকে। তখন বিশ্বজিতের শরীর হইতে রক্ত ঝরছিল। সে বাঁচার জন্য সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামাকালে ইউনুছ, আলাউদ্দিন, ইমরান, তাহসিন, কিবরিয়া তাদের হাতে থাকা রড দিয়া তাকে পিটাইতে থাকে। বিশ্বজিৎ নিচে নামামাত্রই আমি বাম হাত ধরিয়া তাহাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার হাতে থাকা কাঠের রুল দ্বারা মাথায়, বুক, পিঠ, কোমরসহ শরীরে বিভিন্ন স্থানে সজোরে আঘাত করিতে থাকি।' শাকিল আরো বলে, 'এরপর আমরা সকলেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের দিকে চলিয়া যাই। আমার নিকট থাকা চাপাতি গেটের বাইরে পান-চা দোকানের পাশে আবর্জনার নিচে লুকাইয়া রাখিয়া পরে বাসায় চলিয়া যাই। পরে শুনিতে পারি বিশ্বজিৎ দাস মিটফোর্ড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছে।'
২১ জনের নাম : তিনজনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ২১ জন কর্মী বিশ্বজিতের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে। তারা হলো- শাকিল, রাজন, ইউনুছ, টিপু, কিবরিয়া, ওবায়দুর কাদের তাহসিন, আজিজ, আলাউদ্দিন, ইমরান, মোস্তফা, নাহিদ, শাওন, লিমন, আল আমিন, সাইফুল, রফিক, এমদাদ, আজিজ, তমাল, পাভেল ও ইমদাদুল হক।
ছাত্রলীগের মিছিল থেকেই হামলা : তিন আসামিই স্বীকারোক্তিতে জানায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ব্যানারে মিছিল করার সময় ককটেল বিস্ফোরণের পর তারা বিশ্বজিতের ওপর হামলা চালায়।
বাঁচাতে এগিয়ে যায়নি কেউ : শাকিল তার জবানবন্দির একপর্যায়ে বলে, 'বিশ্বজিৎ নিচে নামিয়া আসিয়া দৌড়ে পালানোর চেষ্টাকালে নাহিদ, শাওন, লিমন, আল আমিন, সাইফুল, রফিক, এমদাদ, আজিজসহ আরো অনেকে তাহার পথ রোধ করে এবং তাহাদের হাতে থাকা রড ও লাঠির সাহায্যে মারিতে থাকে। বিশ্বজিৎ বাঁচার জন্য চিৎকার করিতেছিল, কিন্তু তখন কেহই তাহাকে রক্ষার জন্য আগাইয়া আসে নাই। রক্তাক্ত অবস্থায় বিশ্বজিৎ শাঁখারীবাজারে যাওয়াকালে রাস্তায় পড়িয়া যায় এবং একজন রিকশাচালক তাহাকে চিকিৎসার জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমরা সকলেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের দিকে চলিয়া যাই। পরে জানিতে পারি একজন রিকশাচালক তাহাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়া যায়।'
টিপু, কিবরিয়া আরো তিন দিনের রিমান্ডে : এদিকে একই মামলার আসামি কাইয়ুম মিয়া ওরফে টিপু ও এইচ এম কিবরিয়াকে আট দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল আবারও সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম হারুন অর রশিদ তাদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ পর্যন্ত মামলায় মোট ১০ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম বর্তমানে রিমান্ডে আছে। এ ছাড়া মামুন অর রশিদ, ফারুক হোসেন, কাজী নাহিদুজ্জামান তুহিন ও মোসলেহ উদ্দীন মোসলেম কারাগারে আছে।
সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের 'ময়নাতদন্ত' হবে : ডিবি পুলিশ সূত্র গতকাল কালের কণ্ঠকে জানায়, আসামিদের জবানবন্দি, সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ব্যাপক গরমিল আছে। ধারণা করা হচ্ছে, আসামিদের বাঁচাতে এ প্রতিবেদনগুলোতে 'কারসাজি' করা হয়। ব্যাপারটি খতিয়ে দেখতে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে গত শনিবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মহানগর পুলিশ। ওই কমিটি এসব বিষয় খতিয়ে দেখছে।
স্বজনদের চোখে মুখে আতঙ্ক
No comments