রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিচিহ্ন-অযত্ন সে তো আমারই দীনতা
বাংলাদেশ-ভারতজুড়ে যখন রাষ্ট্রীয়ভাবে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মসার্ধশতবার্ষিকী বিপুল উৎসাহে পালিত হতে যাচ্ছে, তখন তার একটি দুর্লভ আশীর্বাদবাণী অযত্নে-অবহেলায় পড়ে থাকার খবর বেমানান দেখায়।
এটা প্রত্যাশিত যে, বাঙালি জাতীয়তাবাদের অন্যতম প্রধান দ্রষ্টার জন্মবার্ষিকীর দ্বিরাষ্ট্রীয় এ আয়োজনে তার জীবন ও কর্মের তাৎপর্য আমাদের কাছে নতুন করে ধরা পড়ার পাশাপাশি তার অনেক স্মারকও সাধারণের কাছে উন্মোচিত হবে। বাংলাদেশে এমন সুযোগ ভারতের তুলনায় সুলভও বটে। আমরা জানি, পারিবারিক জমিদারি দেখাশোনা করা কিংবা নিছক পর্যটনের উদ্দেশ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিভিন্ন সময়ে পূর্ববঙ্গ ভ্রমণ করেছেন। আর পশ্চিমবঙ্গে ছিল তার বাসস্থান। সেখানে তার স্মারকগুলো অনেকখানি নির্দিষ্ট। কিন্তু বাংলাদেশে তার অনেক স্মৃতিচিহ্ন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের মনে আছে, ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কবির পাচক কবিজউদ্দিনের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছিল ছয় পৃষ্ঠার এক দীর্ঘ চিঠি। যেখানে গৃহস্থালি কথাবার্তা নয়, সংক্ষেপে নিজের জীবন ও কর্মের কথাই বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে খুঁজলে এমন আরও স্মারক পাওয়া কঠিন নয় নিশ্চয়ই। কিন্তু তারও আগে ইতিমধ্যে প্রাপ্ত স্মৃতিচিহ্নগুলো সযতনে সংরক্ষণ করা জরুরি। এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটিই যথাযথভাবে হচ্ছে না বলে যে আশঙ্কা বিভিন্ন সময়ে উচ্চারিত হয়, তা অমূলক নয়। মঙ্গলবার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, নওগাঁর পতিসরে ১৯৩৭ সালে 'কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশন' স্থাপনের সময় যে আশীর্বাদবাণী দিয়েছিলেন, তা যত্নের সঙ্গে সংরক্ষিত হচ্ছে না। ওই প্রতিষ্ঠানে কবির পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও পুত্রবধূ প্রতিমা দেবীর যেসব চিঠি সংরক্ষিত আছে, তা অবশ্যই কবির আশীর্বাদবাণীর মতো গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু তাই বলে সেগুলো পোকার খাবারে পরিণত হবে কেন? সমকালের প্রতিবেদনেই স্পষ্ট যে, আঞ্চলিক প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি নিয়ে ঔদাসীন্যই প্রদর্শন করে আসছেন। শিকড়বিনাশী এই প্রক্রিয়া আর চলতে দেওয়া যায় না। আমরা চাই অবিলম্বে সেখানকার স্মৃতিচিহ্নগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এবারের ২৫ বৈশাখ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আরেকটি জন্মদিনের আগেই।
No comments