জয়বাংলা বর্জনকারীদের খেতাব বাতিল এবং মুক্তিযুদ্ধ সংগঠকদের মর্যাদা (শেষাংশ)
মুক্তিযুদ্ধে কৃতিত্বের বিষয়টি আপেক্ষিক ব্যাপার। সব সেক্টর কমান্ডারদের সদর দফতর ছিল ভারতে। কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গঠিত বিশাল বাহিনী এবং অসংখ্য বেসামরিক নেতৃত্বে গঠিত বাহিনী বরাবরই ছিল এই ভূখ-ে, সম্মুখ সমরে- গেরিলা যুদ্ধে পাকবাহিনীকে গোটা ৯ মাস রেখেছিল চাপের মুখে।
কাদের সিদ্দিকী একবার আহত হয়ে স্বল্প সময়ের জন্য ভারতে গিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। সেক্টর কমান্ডারদের মধ্যে সম্মুখ সমরে খালেদ মোশারফ মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে এসেছিলেন এবং কর্নেল আবু তাহের একটি পা হারান। পাকবাহিনীর প্রকৃত ও শত্রু মিত্র যে কারা ছিল সে বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধকালে পাক বাহিনী শুধু বঙ্গবন্ধুর বিচার করেই ক্ষ্যান্ত ছিল না। এছাড়া যাদের অনুপস্থিতিতে বিচারের উদ্যোগে নিয়েছিল নিয়েছিল তাদের মধ্যে প্রথম দফায় ২১/৪/৭১ তারিখের ঢাকার পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, আব্দুল মান্নান (টাঙ্গাইল) তোফায়েল আহমদ এবং দি পিপলস দৈনিকের সম্পাদক আবিদুর রহমানকে ২৬/৫/৭১ তারিখে ঢাকায় ১নং সামরিক আদালতে হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়েছিল এবং অনুপস্থিত “বিচার” এ ১৪ বছর সশ্রম কারাদ- এবং অর্ধেক সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল (স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র : ১৫ খ-, পৃষ্ঠা- ৪৫)। (তোফায়েল আহমদের ভোলার ইউনাইটেড ব্যাংকে রক্ষিত ৪ হাজার টাকাও বাজেয়াপ্ত হয়)। নূর-ই-আলম সিদ্দিকীসহ প্রায় সব মিলিট্যান্ট যুব ছাত্রনেতা, আবু সাইদ চৌধুরী, এমএজি ওসমানী, ১৩ জন সিএসপি ও ২২ জন পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্তত ৫৫ জন কর্মকর্তা এবং অধিকাংশ এমএনএ/এমপিএর অনুপস্থিতিতে পাকবাহিনী একই ধরনের বিচার ও শাস্তি প্রদান করেছিল। কিন্তু কোন সেনা কর্মকর্তা এমনকি পাকবাহিনী যার কণ্ঠ বেতারে শুনেছিল, স্বাধীনতার সেই কথিত ঘোষকের (মেজর জিয়া) বিরুদ্ধে এ ধরনের কোন ব্যবস্থা নেয় নি।
মুক্তিযুদ্ধে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ১৯৭৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর এক ঘোষণায় বঙ্গবন্ধু সরকার বীরত্বসূচক খেতাব প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এতে সর্বোচ্চ খেতাব বীরশ্রেষ্ঠ দেওয়া হয় একজন ক্যাপ্টেন, ১ জন ফ্লাইং অফিসার এবং ৪ জন সিপাই ও ১ জন নৌ-সেনা মোট ৭ জন শহীদদের।
৬৮টি বীরউত্তম খেতাবের মধ্যে সেনা অফিসার ৩৪, সিপাই ২৫, ৪ পাইলট, এবং বেসামরিক ৫ জনের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী, ৩ জন নৌ-কমান্ডে এবং ১ জন লিডার গণবাহিনী (সেক্টর- ৪)। সকল সেক্টর কমান্ডাররা এই খেতাব পান যার মধ্যে মেজর জিয়ার নাম যেমনি আছে তেমনি আছে খুনী ডালিম। মেজর পরে কর্নেল জিয়াউদ্দিন (কক্সবাজার) বীরউত্তম খেতাব নিয়ে ১৯৯৬ থেকে সক্রিয় জামায়াত নেতা।
১৭৫টি বীরবিক্রম খেতাবের মধ্যে ২৬ জন সেনা অফিসার, ১১৪ জন সিপাহী এবং বেসামরিক ৩৫ জন। ৪২৬টি বীরপ্রতীক খেতাবের মধ্যে সেনা অফিসার ৪৪, সিপাহী ৩৫২, পাইলট ২ এবং বেসামরিক ১৩০ জন।
উল্লেখ্য, বেশ কজন পুলিশ ও সিভিল কর্মকর্তা/কর্মীর খেতাব সিভিলিয়ান কোটায় দেখানো হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় এই খেতাব বিতরণ সম্ভব হয়নি। কিন্তু যুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য প্রদত্ত খেতাব পরবর্তীতে ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের’ খেতাবে পরিণত হয়। এটি জেনারেল জিয়া সংবিধান থেকে মুক্তিযুদ্ধে শব্দ কে স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রতিস্থাপনের পরবর্তী ধারাবাহিক কার্যক্রম- “যেখানে মুক্তিযুদ্ধ” শব্দ তাকে “স্বাধীনতা যুদ্ধ” পড়তে হবে এর মতো। তবে দুর্ভাগ্য এই যে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য প্রদত্ত খেতাব পরবর্তীতে পার্বত্য জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অপারেশন কৃতিত্বের জন্য সেনাবাহিনীর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সরকার খেতাব দিয়েছিলেন ফিল্ড ফোর্সদের। যার মধ্যে নিয়মিত সেনা কর্মকর্তাদের প্রায় সবাই এই খেতাব পেয়েছেন। সংগঠকদের তথা প্রথম প্রহরে যারা প্রতিরোধে গড়ে তুলেছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত ময়দানেও ছিলেন তাদের খেতাব বহির্ভূত রাখা হয়। সংগঠকরা খেতাব দেন, নেন না। এটি ছিল সরকারের উদারতা এবং আওয়ামী লীগ যে মুক্তিযুদ্ধের কৃতিত্ব আত্মসাত করেনি তার এটি জ্বলন্ত উদাহরণ। তবে ’৭৫-পরবর্তীতে খেতাবপ্রাপ্তদের অনেকেই এই বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছে যে, কেবল তারাই যুদ্ধ করেছে, আওয়ামী লীগ নেতারা ফুর্তি করেছে। আরও এক ধাপ এগিয়ে কেউবা “শেখ মুজিব আত্মসমর্পণ করেছে নেতার পালিয়েছে আর তারা, ভাবটা যেন বেতার কেন্দ্র দখল করে স্বাধীনতা ঘোষণা করে দেশ স্বাধীন করেছে।” খেতাবধারীদের কথায় জনগণ বিভ্রান্ত হয়েছে কেননা যাদের উদ্দেশে কটাক্ষ করা হয়েছে তাদের খেতাব নেই। এই খেতাবের জোরে রাজাকার পুনর্বাসনের দল বিএনপি নিজেদের স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি বলে দাবি করে আসছে। এর মাত্রা এখনও মুক্তিযুদ্ধ যার নামে তাঁকে অস্বীকার এবং যে রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে সেই দলকে খোদ ম্যাডাম খালেদার কণ্ঠে “আওয়ামী লীগ একটি স্বাধীনতা বিরোধী দল ও সরকার” (ইনকিলাব, জনকণ্ঠ ২১/৩/৯৯) এর পর্যায়ে পৌঁছেছে। উল্লেখ্য, ১৪/১২/১২ বুদ্ধিজীবী দিবসে বিএনপি আলোচনা সভায় মওদুদ আহমদ বলেছেন- আওয়ামী লীগ নাকি মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বেইমানি করেছে ’৭৫-এ বাকশাল করে। এই জ্ঞান পাপীরা চরম মিথ্যাচার করে যেই বিষয়টি গোপন করে তা হচ্ছে বাকশাল ছিল একটি যুগান্তকারী সামাজিক বিপ্লব। সে ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিনষ্ট হয়নি। যা হয়েছে জিয়াউর রহমানের হাতে। জিয়ার পদলেহনকারী মওদুদরা কি গোপন করতে পারবেন মুক্তিযুদ্ধের বড় বিশ্বাস ঘাতক জিয়াউর রহমান।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এ ধরনের একটি অপ্রীতিকর উপমা টেনে ইতিহাস আলোচনা করতে হয়। কারণ ৪ খলিফা খ্যাতদের একজন আব্দুল কুদ্দুস মাখন ৮-এর দশকে ডিআইটির একটি প্লটের জন্য দরখাস্ত জানালে প্রথমে তাকে একটি প্লট সাময়িক বরাদ্দ দেয়া হলেও তা ৪ কিস্তির মধ্যে ২ কিস্তি পরিশোধের পরও তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মার্ক কম অজুহাতে সে বরাদ্দ বাতিল করে দেয়। এ নিয়ে এক দশক টানা-হেঁচড়ার পর আওয়ামী লীগ সরকার আমলেই বিষয়টির সম্মানজনক সুরাহা হয় কিন্তু মাখন তা দেখে যেতে পারেননি।
খেতাবপ্রাপ্ত নিয়ে প্রচারের অন্ত নেই। প্রথম আলো পত্রিকা প্রায় দু’বছর ধরে “আমাদের এ ঋণ শোধ হবে না’ শিরোনামে ধারাবাহিক ছাপছে প্রায় ৬ শতাধিক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার নাম, পরিচয় এবং কাহিনী। এতে ধারণাটি আরও পোক্ত হবে যে এরাই দেশ স্বাধীন করেছে। কিন্তু সংগঠকদের কীর্তি থাকছে অনুচ্চারিত।
সে যাই হোক বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় ৪ নেতা হত্যাকারীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সরকার। কিন্তু এদের মধ্যে যারা খেতাবপ্রাপ্ত যেমন মেজর শরিফুল হক ডালিম, বীরউত্তম খেতাবপ্রাপ্ত, তাদের খেতাব বাতিল করা হয়নি। আর যারা মুক্তিযুদ্ধ চেতনা, মূলনীতি বাতিল এবং জয়বাংলা বর্জন করেছিল তারাও খেতাব ব্যবহারের অধিকার হারিয়েছে। এদের খেতাব বাতিল করতে হবে। আর মুক্তিযুদ্ধের সেই মহান সংগঠকদের বিশেষ মর্যাদায় বিভূষিত করতে হবে। কারণ পরবর্তীতে এদের শনাক্ত ও স্মরণ করা কঠিন হবে।
লেখক : কলামিস্ট ও গবেষক
মুক্তিযুদ্ধে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ১৯৭৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর এক ঘোষণায় বঙ্গবন্ধু সরকার বীরত্বসূচক খেতাব প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এতে সর্বোচ্চ খেতাব বীরশ্রেষ্ঠ দেওয়া হয় একজন ক্যাপ্টেন, ১ জন ফ্লাইং অফিসার এবং ৪ জন সিপাই ও ১ জন নৌ-সেনা মোট ৭ জন শহীদদের।
৬৮টি বীরউত্তম খেতাবের মধ্যে সেনা অফিসার ৩৪, সিপাই ২৫, ৪ পাইলট, এবং বেসামরিক ৫ জনের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী, ৩ জন নৌ-কমান্ডে এবং ১ জন লিডার গণবাহিনী (সেক্টর- ৪)। সকল সেক্টর কমান্ডাররা এই খেতাব পান যার মধ্যে মেজর জিয়ার নাম যেমনি আছে তেমনি আছে খুনী ডালিম। মেজর পরে কর্নেল জিয়াউদ্দিন (কক্সবাজার) বীরউত্তম খেতাব নিয়ে ১৯৯৬ থেকে সক্রিয় জামায়াত নেতা।
১৭৫টি বীরবিক্রম খেতাবের মধ্যে ২৬ জন সেনা অফিসার, ১১৪ জন সিপাহী এবং বেসামরিক ৩৫ জন। ৪২৬টি বীরপ্রতীক খেতাবের মধ্যে সেনা অফিসার ৪৪, সিপাহী ৩৫২, পাইলট ২ এবং বেসামরিক ১৩০ জন।
উল্লেখ্য, বেশ কজন পুলিশ ও সিভিল কর্মকর্তা/কর্মীর খেতাব সিভিলিয়ান কোটায় দেখানো হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় এই খেতাব বিতরণ সম্ভব হয়নি। কিন্তু যুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য প্রদত্ত খেতাব পরবর্তীতে ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের’ খেতাবে পরিণত হয়। এটি জেনারেল জিয়া সংবিধান থেকে মুক্তিযুদ্ধে শব্দ কে স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রতিস্থাপনের পরবর্তী ধারাবাহিক কার্যক্রম- “যেখানে মুক্তিযুদ্ধ” শব্দ তাকে “স্বাধীনতা যুদ্ধ” পড়তে হবে এর মতো। তবে দুর্ভাগ্য এই যে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য প্রদত্ত খেতাব পরবর্তীতে পার্বত্য জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অপারেশন কৃতিত্বের জন্য সেনাবাহিনীর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সরকার খেতাব দিয়েছিলেন ফিল্ড ফোর্সদের। যার মধ্যে নিয়মিত সেনা কর্মকর্তাদের প্রায় সবাই এই খেতাব পেয়েছেন। সংগঠকদের তথা প্রথম প্রহরে যারা প্রতিরোধে গড়ে তুলেছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত ময়দানেও ছিলেন তাদের খেতাব বহির্ভূত রাখা হয়। সংগঠকরা খেতাব দেন, নেন না। এটি ছিল সরকারের উদারতা এবং আওয়ামী লীগ যে মুক্তিযুদ্ধের কৃতিত্ব আত্মসাত করেনি তার এটি জ্বলন্ত উদাহরণ। তবে ’৭৫-পরবর্তীতে খেতাবপ্রাপ্তদের অনেকেই এই বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছে যে, কেবল তারাই যুদ্ধ করেছে, আওয়ামী লীগ নেতারা ফুর্তি করেছে। আরও এক ধাপ এগিয়ে কেউবা “শেখ মুজিব আত্মসমর্পণ করেছে নেতার পালিয়েছে আর তারা, ভাবটা যেন বেতার কেন্দ্র দখল করে স্বাধীনতা ঘোষণা করে দেশ স্বাধীন করেছে।” খেতাবধারীদের কথায় জনগণ বিভ্রান্ত হয়েছে কেননা যাদের উদ্দেশে কটাক্ষ করা হয়েছে তাদের খেতাব নেই। এই খেতাবের জোরে রাজাকার পুনর্বাসনের দল বিএনপি নিজেদের স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি বলে দাবি করে আসছে। এর মাত্রা এখনও মুক্তিযুদ্ধ যার নামে তাঁকে অস্বীকার এবং যে রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে সেই দলকে খোদ ম্যাডাম খালেদার কণ্ঠে “আওয়ামী লীগ একটি স্বাধীনতা বিরোধী দল ও সরকার” (ইনকিলাব, জনকণ্ঠ ২১/৩/৯৯) এর পর্যায়ে পৌঁছেছে। উল্লেখ্য, ১৪/১২/১২ বুদ্ধিজীবী দিবসে বিএনপি আলোচনা সভায় মওদুদ আহমদ বলেছেন- আওয়ামী লীগ নাকি মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বেইমানি করেছে ’৭৫-এ বাকশাল করে। এই জ্ঞান পাপীরা চরম মিথ্যাচার করে যেই বিষয়টি গোপন করে তা হচ্ছে বাকশাল ছিল একটি যুগান্তকারী সামাজিক বিপ্লব। সে ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিনষ্ট হয়নি। যা হয়েছে জিয়াউর রহমানের হাতে। জিয়ার পদলেহনকারী মওদুদরা কি গোপন করতে পারবেন মুক্তিযুদ্ধের বড় বিশ্বাস ঘাতক জিয়াউর রহমান।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এ ধরনের একটি অপ্রীতিকর উপমা টেনে ইতিহাস আলোচনা করতে হয়। কারণ ৪ খলিফা খ্যাতদের একজন আব্দুল কুদ্দুস মাখন ৮-এর দশকে ডিআইটির একটি প্লটের জন্য দরখাস্ত জানালে প্রথমে তাকে একটি প্লট সাময়িক বরাদ্দ দেয়া হলেও তা ৪ কিস্তির মধ্যে ২ কিস্তি পরিশোধের পরও তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মার্ক কম অজুহাতে সে বরাদ্দ বাতিল করে দেয়। এ নিয়ে এক দশক টানা-হেঁচড়ার পর আওয়ামী লীগ সরকার আমলেই বিষয়টির সম্মানজনক সুরাহা হয় কিন্তু মাখন তা দেখে যেতে পারেননি।
খেতাবপ্রাপ্ত নিয়ে প্রচারের অন্ত নেই। প্রথম আলো পত্রিকা প্রায় দু’বছর ধরে “আমাদের এ ঋণ শোধ হবে না’ শিরোনামে ধারাবাহিক ছাপছে প্রায় ৬ শতাধিক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার নাম, পরিচয় এবং কাহিনী। এতে ধারণাটি আরও পোক্ত হবে যে এরাই দেশ স্বাধীন করেছে। কিন্তু সংগঠকদের কীর্তি থাকছে অনুচ্চারিত।
সে যাই হোক বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় ৪ নেতা হত্যাকারীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সরকার। কিন্তু এদের মধ্যে যারা খেতাবপ্রাপ্ত যেমন মেজর শরিফুল হক ডালিম, বীরউত্তম খেতাবপ্রাপ্ত, তাদের খেতাব বাতিল করা হয়নি। আর যারা মুক্তিযুদ্ধ চেতনা, মূলনীতি বাতিল এবং জয়বাংলা বর্জন করেছিল তারাও খেতাব ব্যবহারের অধিকার হারিয়েছে। এদের খেতাব বাতিল করতে হবে। আর মুক্তিযুদ্ধের সেই মহান সংগঠকদের বিশেষ মর্যাদায় বিভূষিত করতে হবে। কারণ পরবর্তীতে এদের শনাক্ত ও স্মরণ করা কঠিন হবে।
লেখক : কলামিস্ট ও গবেষক
No comments