কালের কণ্ঠে প্রকাশিত 'মুক্তিযোদ্ধার বাঁচার লড়াই'-পাশে দাঁড়াবেন প্রধানমন্ত্রী
একদিন দেশকে শত্রুমুক্ত করতে জীবন বাজি রেখে অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। ৯ মাসের যুদ্ধ শেষে অর্জিত হয়েছে একটি স্বাধীন ভূখণ্ড। তবে যাঁদের বীরত্ব ও ত্যাগে দেশ স্বাধীন হয়, তাঁদের অনেকেই আজ ভালো নেই।
পরিবারের সদস্যদের মুখে দুবেলা দুমুঠো ভাত তুলে দিতে কেউ হয়েছেন রিকশাওয়ালা, কেউ চা-দোকানি, কেউ দর্জি, কেউ বা চাষি। কারো কারো পক্ষে তাও সম্ভব হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে তাঁরা হাতে তুলে নিচ্ছেন ভিক্ষার থালা। একাত্তরের বীর সেনানীদের এই জীবনযুদ্ধের চিত্র এখন একের পর এক উঠে আসছে কালের কণ্ঠের প্রথম পাতায়। পত্রিকার পাঠকদের পাশাপাশি সে খবর চোখ এড়ায়নি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ১ ডিসেম্বর কালের কণ্ঠে 'চশমাটা ভাঙায় দর্জিগিরি বন্ধ রবিউলের' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি পড়েই প্রধানমন্ত্রী মর্মাহত হন। এরপর তিনি মনস্থির করেন, এসব মুক্তিযোদ্ধার পাশে দাঁড়াবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা পেয়ে কালের কণ্ঠের সঙ্গে যোগাযোগ করেন প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ সেলিমা খাতুন। তিনি জানান, বাঁচার লড়াই শিরোনামে কালের কণ্ঠে যেসব মুক্তিযোদ্ধার কথা ছাপা হচ্ছে তাঁদেরকে প্রধানমন্ত্রী সহযোগিতা করবেন।
গতকাল রবিবার দুপুরে ৩১ জন মুক্তিযোদ্ধার সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২-এর কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গেলে আগামী মাসের শেষদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সহযোগিতা করা হবে।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব সেলিমা খাতুন কালের কণ্ঠকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন পড়ে প্রধানমন্ত্রী আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এরপর প্রধানমন্ত্রী এসব দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাকে সহযোগিতা করার নির্দেশ দেন। এ ক্ষেত্রে ডিসেম্বরে কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন ধরে ৩১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সহযোগিতা করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী পাশে দাঁড়াবেন- এ খবর পেয়ে উচ্ছ্বসিত কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করেছেন কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে উঠে আসা মুক্তিযোদ্ধারা। নতুন আশায় তাঁরা বুক বেঁধেছেন।
খবরটি জানাতে যোগাযোগ করা হলে রাজধানী ঢাকার ছোলমাইদ এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান আতি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এইডা তো স্বপ্নের মতো মনে অয়। অর্থের দরকার নাই, একবার মায়ের (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে দেখা হইলে মইরাও শান্তি পামু।'
প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতার খবর শুনে কেঁদে ফেলেন নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চান্দেরকান্দি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সামসুল হক দারু মিয়া। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দেশের জন্য যুদ্ধ করতে গিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর ছোড়া গোলার আঘাতে হারিয়েছি শারীরিক ক্ষমতা। এ কারণে সংসারের অভাব-অনটন কখনোই মেটাতে পারিনি। এ জন্য স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের প্রচুর কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। কিন্তু জীবনের সব দুঃখ ভুলিয়ে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতার সংবাদ। কিন্তু এই সহযোগিতা যদি মা (প্রধানমন্ত্রী) নিজের হাতে আমাদেরকে দেন তাহলে জীবনটা ধন্য হবে।'
রাজশাহীর দুর্গাপুরের হতদরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আলী বলেন, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে সহযোগিতা করলে শেষ বয়সে আর মানুষের জমিতে কাজ করতে হবে না।' নীলফামারীর মুক্তিযোদ্ধা রিকশাচালক অফিজ উদ্দিন অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, 'যাঁর (বঙ্গবন্ধুর) ডাকে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম, আজ তাঁরই কন্যা দেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি আমার সহযোগিতায় এগিয়ে আসছেন জেনে কৃতজ্ঞ আমি।' ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার নয়াদিল গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা কাজী হেলাল উদ্দিন বলেন, 'এইডা খুবঅই আনন্দের খবর। এইডা অইব আমার জীবনের বড় পাওনা। আর শেখের বেডিরে (প্রধানমন্ত্রী) সামনে থেইক্কা দেখতে পারলে আনন্দ পামু। বঙ্গবন্ধুরে যারা মারছে, তাদের হগলের বিচার চামু প্রধানমন্ত্রীর কাছে।' রাজধানীর ভাটারা এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রশিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পেলেই ধন্য হব। দেখা হলে তাঁকে দুঃখের কথাগুলো বলব।'
একইভাবে কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করেন পিরোজপুরের মুক্তিযোদ্ধা হাদিস প্যাদা, 'আমাগো নেত্রী আমারে সহযোগিতা করলে সুখের সীমা থাকব না। বঙ্গবন্ধুর কন্যারে একবার নিজের চোখে দেখতে মন চায়। আমি ভাবছি, আমার হয়তো আর রিকশা চালানো লাগব না।' কেশবপুরের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আমির আলী খাঁ কৃতজ্ঞতা জানাতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। স্বাধীনের পর ৪২ বছর কেউ খোঁজ নেয়নি। সেই বঙ্গবন্ধুর কন্যা আমাদেও খোঁজ নিয়েছেন, সহযোগিতা করবেন- বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।' কথাগুলো বলতে বলতে চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে তাঁর। কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বাহেরচর গ্রামের হতদরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা মনু মিয়া বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ইচ্ছা ছিল, যাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধে গিয়েছিলাম, সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার ইচ্ছা ছিল। সে ইচ্ছা পূরণ করতে দেয়নি ঘাতকরা। কিন্তু শেষ জীবনে এসে বঙ্গবন্ধুর কন্যার সঙ্গে দেখা হলে চাওয়া-পাওয়ার কিছু থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে আমার দুটি দাবি থাকবে। প্রথমটি যুদ্ধাপরাধীর বিচারকাজ শেষ করা আর দ্বিতীয়টি বঙ্গবন্ধুর অন্য খুনিদেও দেশে এনে ফাঁসি দেওয়া।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন রফিকুল ইসলাম (রাজশাহী), সুমন বর্মণ (নরসিংদী), বিশ্বজিৎ পাল বাবু (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), দেবদাস মজুমদার (পিরোজপুর), নুরুল ইসলাম খান (কেশবপুর, যশোর), নিখিল ভূবন রায় (নীলফামারী), ওমর ফারুক মিয়াজী (দাউদকান্দি, কুমিল্লা)
গতকাল রবিবার দুপুরে ৩১ জন মুক্তিযোদ্ধার সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২-এর কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গেলে আগামী মাসের শেষদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সহযোগিতা করা হবে।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব সেলিমা খাতুন কালের কণ্ঠকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন পড়ে প্রধানমন্ত্রী আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এরপর প্রধানমন্ত্রী এসব দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাকে সহযোগিতা করার নির্দেশ দেন। এ ক্ষেত্রে ডিসেম্বরে কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন ধরে ৩১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সহযোগিতা করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী পাশে দাঁড়াবেন- এ খবর পেয়ে উচ্ছ্বসিত কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করেছেন কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে উঠে আসা মুক্তিযোদ্ধারা। নতুন আশায় তাঁরা বুক বেঁধেছেন।
খবরটি জানাতে যোগাযোগ করা হলে রাজধানী ঢাকার ছোলমাইদ এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান আতি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এইডা তো স্বপ্নের মতো মনে অয়। অর্থের দরকার নাই, একবার মায়ের (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে দেখা হইলে মইরাও শান্তি পামু।'
প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতার খবর শুনে কেঁদে ফেলেন নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চান্দেরকান্দি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সামসুল হক দারু মিয়া। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দেশের জন্য যুদ্ধ করতে গিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর ছোড়া গোলার আঘাতে হারিয়েছি শারীরিক ক্ষমতা। এ কারণে সংসারের অভাব-অনটন কখনোই মেটাতে পারিনি। এ জন্য স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের প্রচুর কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। কিন্তু জীবনের সব দুঃখ ভুলিয়ে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতার সংবাদ। কিন্তু এই সহযোগিতা যদি মা (প্রধানমন্ত্রী) নিজের হাতে আমাদেরকে দেন তাহলে জীবনটা ধন্য হবে।'
রাজশাহীর দুর্গাপুরের হতদরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আলী বলেন, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে সহযোগিতা করলে শেষ বয়সে আর মানুষের জমিতে কাজ করতে হবে না।' নীলফামারীর মুক্তিযোদ্ধা রিকশাচালক অফিজ উদ্দিন অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, 'যাঁর (বঙ্গবন্ধুর) ডাকে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম, আজ তাঁরই কন্যা দেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি আমার সহযোগিতায় এগিয়ে আসছেন জেনে কৃতজ্ঞ আমি।' ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার নয়াদিল গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা কাজী হেলাল উদ্দিন বলেন, 'এইডা খুবঅই আনন্দের খবর। এইডা অইব আমার জীবনের বড় পাওনা। আর শেখের বেডিরে (প্রধানমন্ত্রী) সামনে থেইক্কা দেখতে পারলে আনন্দ পামু। বঙ্গবন্ধুরে যারা মারছে, তাদের হগলের বিচার চামু প্রধানমন্ত্রীর কাছে।' রাজধানীর ভাটারা এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রশিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পেলেই ধন্য হব। দেখা হলে তাঁকে দুঃখের কথাগুলো বলব।'
একইভাবে কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করেন পিরোজপুরের মুক্তিযোদ্ধা হাদিস প্যাদা, 'আমাগো নেত্রী আমারে সহযোগিতা করলে সুখের সীমা থাকব না। বঙ্গবন্ধুর কন্যারে একবার নিজের চোখে দেখতে মন চায়। আমি ভাবছি, আমার হয়তো আর রিকশা চালানো লাগব না।' কেশবপুরের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আমির আলী খাঁ কৃতজ্ঞতা জানাতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। স্বাধীনের পর ৪২ বছর কেউ খোঁজ নেয়নি। সেই বঙ্গবন্ধুর কন্যা আমাদেও খোঁজ নিয়েছেন, সহযোগিতা করবেন- বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।' কথাগুলো বলতে বলতে চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে তাঁর। কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বাহেরচর গ্রামের হতদরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা মনু মিয়া বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ইচ্ছা ছিল, যাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধে গিয়েছিলাম, সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার ইচ্ছা ছিল। সে ইচ্ছা পূরণ করতে দেয়নি ঘাতকরা। কিন্তু শেষ জীবনে এসে বঙ্গবন্ধুর কন্যার সঙ্গে দেখা হলে চাওয়া-পাওয়ার কিছু থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে আমার দুটি দাবি থাকবে। প্রথমটি যুদ্ধাপরাধীর বিচারকাজ শেষ করা আর দ্বিতীয়টি বঙ্গবন্ধুর অন্য খুনিদেও দেশে এনে ফাঁসি দেওয়া।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন রফিকুল ইসলাম (রাজশাহী), সুমন বর্মণ (নরসিংদী), বিশ্বজিৎ পাল বাবু (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), দেবদাস মজুমদার (পিরোজপুর), নুরুল ইসলাম খান (কেশবপুর, যশোর), নিখিল ভূবন রায় (নীলফামারী), ওমর ফারুক মিয়াজী (দাউদকান্দি, কুমিল্লা)
No comments