স্বপ্নের আমেরিকা সুখী মানুষের দেশ নয়
এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দরিদ্র দেশগুলোর শ্রমজীবী জনসাধারণের কাছে যুক্তরাষ্ট্র যেন এক অধরা স্বপ্ন। এসব মানুষের বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে রোজগার করার সাধ আকাশের চাঁদের মতো অধরা থেকে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল সম্পদ ও অসীম ক্ষমতার গল্প এসব দেশের মানুষের মুখে মুখে। কিন্তু নতুন ধরনের পরিসংখ্যান বলছে, ‘স্বর্গে’ সুখী নয় খেটে খাওয়া মানুষরা। সেখানে ধনী-গরিবের আয়ের তফাত বাড়ছে টাইফুনের গতিতে। শিক্ষার সুযোগ ক্রমে সংকুচিত হচ্ছে। সমাজে-পরিবারে অশান্তিতে অতিষ্ঠ কিশোর বয়সীরা বন্দুক হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে সহপাঠীর ওপর। হত্যা করছে স্কুলপড়ুয়া শিশুদের।
সম্প্রতি ‘দ্য ডন’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষের বাস লাতিন আমেরিকায়। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ কাতার, সবচেয়ে বেশি আয়ুষ্কালের মানুষের দেশ জাপান বা সবচেয়ে বেশি উচ্চশিক্ষিতের দেশ কানাডার মানুষও দরিদ্র দেশগুলোর মানুষের মতো সুখী নয়।
জগতের সবকিছুর প্রতি সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখে, এমন মানুষের বাস পানামা ও প্যারাগুয়েতে। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে আছে এল সালভাদর ও ভেনেজুয়েলা। এর পরের স্থানগুলোতে যথাক্রমে ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, থাইল্যান্ড, গুয়াতেমালা, ফিলিপাইন, ইকুয়েডর ও কোস্টারিকা।
গলআপ ইনকরপোরেশন ১৪৮টি দেশের প্রতিটির এক হাজার মানুষকে তাঁদের বিশ্রাম, কর্মক্ষেত্রে সম্মান লাভ, হাসি-আনন্দে থাকা, প্রতিদিন ভালো বা মজার কোনো না কোনো কাজ করা, নতুন কিছু শেখা এবং গত দিনটি কতটুকু আনন্দে কেটেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন করে। জবাব অনুযায়ী তৈরি হয় সন্তুষ্টিসীমা।
সবচেয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির লোকের বাস সিঙ্গাপুরে। এর ওপরে আছে যথাক্রমে আর্মেনিয়া, ইরাক, জর্জিয়া, ইয়েমেন, সার্বিয়া, বেলারুশ, লিথুয়ানিয়া, মাদাগাস্কার ও আফগানিস্তান।
ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির জনগোষ্ঠীর তালিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ৩৩। লাতিন আমেরিকার বৃহত্ অর্থনীতির দেশ মেক্সিকো ও ব্রাজিলের অবস্থান আরও পেছনে। এ জরিপ থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার, সমৃদ্ধিশালী দেশের মানুষও অসুখী হতে পারে।
‘আমেরিকান স্বপ্নে’ বিভোর মানুষের জীবন অর্থনীতির চাকায় বাঁধা। অর্থনীতি যত তলায়, আমেরিকার সাধারণ মানুষের জীবনও তত তলিয়ে যায়। এর প্রমাণও মিলেছে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে। সম্প্রতি রয়টার্স যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে বিভিন্ন অসামঞ্জস্য নিয়ে তিনটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এসব প্রতিবেদনে দেশটির বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট ও সামাজিক অস্থিরতার পরিষ্কার চিত্র ফুটে উঠেছে।
রয়টার্সের বিশ্লেষণ বলছে, দেশটির ওয়াল স্ট্রিট ও সিলিকন ভ্যালির মতো ধনিক শ্রেণীর এলাকাগুলো নয়, বরং পুরো দেশেই আর্থিক অসমতা বাড়ছে।
বর্তমানে দেশটির ৪৯ থেকে ৫০টি অঙ্গরাজ্যে ধনী ও গরিবের ব্যবধান বেড়ে চলেছে। ১৯৮৯ সালের পর এত ব্যাপক মাত্রার অসমতা আর দেখা যায়নি।
৪৩টি অঙ্গরাজ্যে দারিদ্র্যের হার বাড়ছে। নেভাদায় এ হার বাড়ছে হু হু করে। ইন্ডিয়ানায় ক্রমে বেড়ে চলা আবাসন ব্যবসায় আকস্মিক ধস দরিদ্রদের হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এখন এ অঙ্গরাজ্যে শ্রমিকদের মজুরি সবচেয়ে কম। ৫০টি অঙ্গরাজ্যে সবচেয়ে ধনীদের এক-পঞ্চমাংশ আরও বেশি মাত্রায় আয়ের সুযোগ পাচ্ছে। অথচ ২৮টি অঙ্গরাজ্যে মধ্যমশ্রেণীর লোকের আয় কমে যাচ্ছে।
সবচেয়ে বেশি মাত্রার অসমতা দেখা দিয়েছে নিউ ইংল্যান্ড অঞ্চলে। এখানে উত্পাদনশীল কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গরিব ও মধ্যমশ্রেণীর লোকেরা সংকটের মুখে পড়েছে। অপরদিকে উচ্চশিক্ষিত ধনীরা জৈবপ্রযুক্তি ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করে বিপুল আয় করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল বিল্ডিং থেকে দুই মাইল দূরে যে স্থানে পোটোম্যাক ও অ্যানাকোসটিয়া নদী মিশেছে, তা ধনী-দরিদ্রের বিভক্তিকে স্পষ্ট করে তুলেছে। পূর্বে অবস্থিত অষ্টম ওয়ার্ডটি নগরের সবচেয়ে দরিদ্র এলাকা। গত দশকের হিসাব অনুযায়ী, শহরটির অধিবাসীদের এক-তৃতীয়াংশ এবং শিশুদের অর্ধেক দরিদ্র।
এ এলাকাটির কয়েক মাইল পশ্চিমে নগরটির অন্যতম শীর্ষ ধনী নারী ল্যানি হের বাস। সেখানে তিনি ২০ লাখ ডলার (প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি টাকা) মূল্যে এক বিশাল বাড়ি বানিয়েছেন। এ বাড়ির বিশাল জানালাগুলো দিয়ে পোটোম্যাক নদী চোখে পড়ে। এ বাড়িতেই তন্বী-কায়া ল্যানি কিছুদিন পর পর সেলিব্রেটিদের নিয়ে ভোজের উত্সব করেন। দাতা হিসেবেও তাঁর খ্যাতি আছে। শহরের সবচেয়ে অভিজাত এলাকায় তিনি অনেক দাতব্য কাজ সারেন। কিন্তু তাঁর বাড়ির কয়েক মাইল দূরে দারিদ্র্যের কালো ছায়া ক্রমে বিস্তার লাভ করছে।
আমেরিকাসহ বিভিন্ন উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোতে যেসব কারণে আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়ছে, তার একটি কারণ খুব বেশি দৃশ্যমান। এটি হলো—উত্পাদনমুখী শিল্পের বিনাশ এবং দপ্তরগুলোতে কেরানি ও সচিবদের বদলে কম্পিউটার ও সফটওয়্যারের ব্যবহার বৃদ্ধি। এ পরিস্থিতিতে স্বল্প দক্ষ কর্মীদের জন্য বেশি বেতনের কাজের সুযোগও অনেক সংকুচিত হয়েছে।
এখন বাজারে যেসব কাজের সুযোগ আছে, সেগুলোর জন্য উচ্চশিক্ষা জরুরি। জর্জ টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ২০০৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেওয়ার পর নতুন করে ২২ লাখ চাকরির জন্য উচ্চশিক্ষা আবশ্যক হয়েছে। মাধ্যমিক স্কুল পাস করা তরুণদের জন্য নির্ধারিত ছিল এমন ৫৮ লাখ কাজের সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
চাকরির লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য গরিব মার্কিনদের আরও বেশি সার্টিফিকেটধারী হওয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এটা খুব আশার কথা নয়। কারণ, এটি কার্যত দেশটিতে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যের একটি নতুন বহিঃপ্রকাশ মাত্র। শিক্ষাবিদেরা এর নাম দিয়েছেন, ‘অর্জন ব্যবধান’। এ পার্থক্য চিরকালই ছিল। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হলো, এটি কমার বদলে ক্রমে বাড়ছে। সমাজের নিচুতলার মানুষের সন্তানেরা আগের চেয়ে ভালো শিক্ষা পাচ্ছে। কিন্তু উঁচুতলার লোকেদের ছেলেমেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে বহু গুণে। ফলে আয়ের বৈষম্য বাড়ছে।
গত বছর স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, সিকি শতাব্দী আগে ধনী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের অর্জন ব্যবধান যা ছিল, তা এখন বেড়ে গেছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। ওই গবেষণাপত্রে বলা হয়, ভালো শিক্ষার্থীদের আয়ও হয় ভালো। তাই গরিবরা আরও গরিব হয়।
ম্যাসাচুসেটসের শিক্ষামন্ত্রী পল রেভিল বলেন, ‘এক সময় অভিজাতরা সমাজের সবাইকে শিক্ষিত করার জন্য যেমন সর্বজনীন শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন, এখন আমাদের রাষ্ট্রেরও উচিত ধনী-দরিদ্র সবার জন্য এ রকম শিক্ষার ব্যবস্থা করা।’
সম্প্রতি ‘দ্য ডন’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষের বাস লাতিন আমেরিকায়। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ কাতার, সবচেয়ে বেশি আয়ুষ্কালের মানুষের দেশ জাপান বা সবচেয়ে বেশি উচ্চশিক্ষিতের দেশ কানাডার মানুষও দরিদ্র দেশগুলোর মানুষের মতো সুখী নয়।
জগতের সবকিছুর প্রতি সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখে, এমন মানুষের বাস পানামা ও প্যারাগুয়েতে। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে আছে এল সালভাদর ও ভেনেজুয়েলা। এর পরের স্থানগুলোতে যথাক্রমে ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, থাইল্যান্ড, গুয়াতেমালা, ফিলিপাইন, ইকুয়েডর ও কোস্টারিকা।
গলআপ ইনকরপোরেশন ১৪৮টি দেশের প্রতিটির এক হাজার মানুষকে তাঁদের বিশ্রাম, কর্মক্ষেত্রে সম্মান লাভ, হাসি-আনন্দে থাকা, প্রতিদিন ভালো বা মজার কোনো না কোনো কাজ করা, নতুন কিছু শেখা এবং গত দিনটি কতটুকু আনন্দে কেটেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন করে। জবাব অনুযায়ী তৈরি হয় সন্তুষ্টিসীমা।
সবচেয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির লোকের বাস সিঙ্গাপুরে। এর ওপরে আছে যথাক্রমে আর্মেনিয়া, ইরাক, জর্জিয়া, ইয়েমেন, সার্বিয়া, বেলারুশ, লিথুয়ানিয়া, মাদাগাস্কার ও আফগানিস্তান।
ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির জনগোষ্ঠীর তালিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ৩৩। লাতিন আমেরিকার বৃহত্ অর্থনীতির দেশ মেক্সিকো ও ব্রাজিলের অবস্থান আরও পেছনে। এ জরিপ থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার, সমৃদ্ধিশালী দেশের মানুষও অসুখী হতে পারে।
‘আমেরিকান স্বপ্নে’ বিভোর মানুষের জীবন অর্থনীতির চাকায় বাঁধা। অর্থনীতি যত তলায়, আমেরিকার সাধারণ মানুষের জীবনও তত তলিয়ে যায়। এর প্রমাণও মিলেছে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে। সম্প্রতি রয়টার্স যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে বিভিন্ন অসামঞ্জস্য নিয়ে তিনটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এসব প্রতিবেদনে দেশটির বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট ও সামাজিক অস্থিরতার পরিষ্কার চিত্র ফুটে উঠেছে।
রয়টার্সের বিশ্লেষণ বলছে, দেশটির ওয়াল স্ট্রিট ও সিলিকন ভ্যালির মতো ধনিক শ্রেণীর এলাকাগুলো নয়, বরং পুরো দেশেই আর্থিক অসমতা বাড়ছে।
বর্তমানে দেশটির ৪৯ থেকে ৫০টি অঙ্গরাজ্যে ধনী ও গরিবের ব্যবধান বেড়ে চলেছে। ১৯৮৯ সালের পর এত ব্যাপক মাত্রার অসমতা আর দেখা যায়নি।
৪৩টি অঙ্গরাজ্যে দারিদ্র্যের হার বাড়ছে। নেভাদায় এ হার বাড়ছে হু হু করে। ইন্ডিয়ানায় ক্রমে বেড়ে চলা আবাসন ব্যবসায় আকস্মিক ধস দরিদ্রদের হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এখন এ অঙ্গরাজ্যে শ্রমিকদের মজুরি সবচেয়ে কম। ৫০টি অঙ্গরাজ্যে সবচেয়ে ধনীদের এক-পঞ্চমাংশ আরও বেশি মাত্রায় আয়ের সুযোগ পাচ্ছে। অথচ ২৮টি অঙ্গরাজ্যে মধ্যমশ্রেণীর লোকের আয় কমে যাচ্ছে।
সবচেয়ে বেশি মাত্রার অসমতা দেখা দিয়েছে নিউ ইংল্যান্ড অঞ্চলে। এখানে উত্পাদনশীল কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গরিব ও মধ্যমশ্রেণীর লোকেরা সংকটের মুখে পড়েছে। অপরদিকে উচ্চশিক্ষিত ধনীরা জৈবপ্রযুক্তি ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করে বিপুল আয় করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল বিল্ডিং থেকে দুই মাইল দূরে যে স্থানে পোটোম্যাক ও অ্যানাকোসটিয়া নদী মিশেছে, তা ধনী-দরিদ্রের বিভক্তিকে স্পষ্ট করে তুলেছে। পূর্বে অবস্থিত অষ্টম ওয়ার্ডটি নগরের সবচেয়ে দরিদ্র এলাকা। গত দশকের হিসাব অনুযায়ী, শহরটির অধিবাসীদের এক-তৃতীয়াংশ এবং শিশুদের অর্ধেক দরিদ্র।
এ এলাকাটির কয়েক মাইল পশ্চিমে নগরটির অন্যতম শীর্ষ ধনী নারী ল্যানি হের বাস। সেখানে তিনি ২০ লাখ ডলার (প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি টাকা) মূল্যে এক বিশাল বাড়ি বানিয়েছেন। এ বাড়ির বিশাল জানালাগুলো দিয়ে পোটোম্যাক নদী চোখে পড়ে। এ বাড়িতেই তন্বী-কায়া ল্যানি কিছুদিন পর পর সেলিব্রেটিদের নিয়ে ভোজের উত্সব করেন। দাতা হিসেবেও তাঁর খ্যাতি আছে। শহরের সবচেয়ে অভিজাত এলাকায় তিনি অনেক দাতব্য কাজ সারেন। কিন্তু তাঁর বাড়ির কয়েক মাইল দূরে দারিদ্র্যের কালো ছায়া ক্রমে বিস্তার লাভ করছে।
আমেরিকাসহ বিভিন্ন উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোতে যেসব কারণে আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়ছে, তার একটি কারণ খুব বেশি দৃশ্যমান। এটি হলো—উত্পাদনমুখী শিল্পের বিনাশ এবং দপ্তরগুলোতে কেরানি ও সচিবদের বদলে কম্পিউটার ও সফটওয়্যারের ব্যবহার বৃদ্ধি। এ পরিস্থিতিতে স্বল্প দক্ষ কর্মীদের জন্য বেশি বেতনের কাজের সুযোগও অনেক সংকুচিত হয়েছে।
এখন বাজারে যেসব কাজের সুযোগ আছে, সেগুলোর জন্য উচ্চশিক্ষা জরুরি। জর্জ টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ২০০৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেওয়ার পর নতুন করে ২২ লাখ চাকরির জন্য উচ্চশিক্ষা আবশ্যক হয়েছে। মাধ্যমিক স্কুল পাস করা তরুণদের জন্য নির্ধারিত ছিল এমন ৫৮ লাখ কাজের সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
চাকরির লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য গরিব মার্কিনদের আরও বেশি সার্টিফিকেটধারী হওয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এটা খুব আশার কথা নয়। কারণ, এটি কার্যত দেশটিতে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যের একটি নতুন বহিঃপ্রকাশ মাত্র। শিক্ষাবিদেরা এর নাম দিয়েছেন, ‘অর্জন ব্যবধান’। এ পার্থক্য চিরকালই ছিল। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হলো, এটি কমার বদলে ক্রমে বাড়ছে। সমাজের নিচুতলার মানুষের সন্তানেরা আগের চেয়ে ভালো শিক্ষা পাচ্ছে। কিন্তু উঁচুতলার লোকেদের ছেলেমেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে বহু গুণে। ফলে আয়ের বৈষম্য বাড়ছে।
গত বছর স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, সিকি শতাব্দী আগে ধনী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের অর্জন ব্যবধান যা ছিল, তা এখন বেড়ে গেছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। ওই গবেষণাপত্রে বলা হয়, ভালো শিক্ষার্থীদের আয়ও হয় ভালো। তাই গরিবরা আরও গরিব হয়।
ম্যাসাচুসেটসের শিক্ষামন্ত্রী পল রেভিল বলেন, ‘এক সময় অভিজাতরা সমাজের সবাইকে শিক্ষিত করার জন্য যেমন সর্বজনীন শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন, এখন আমাদের রাষ্ট্রেরও উচিত ধনী-দরিদ্র সবার জন্য এ রকম শিক্ষার ব্যবস্থা করা।’
No comments