স্মরণ-শরীফ হোসেন : দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বইমেলার জনক by ফখরে আলম
১৯৫৫ সালের ৩ ডিসেম্বর বাংলা ভাষা সাহিত্যচর্চা ও গবেষণার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলা একাডেমী। এর ২৩ বছর পর ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমী চত্ব্বরে একুশে ফেব্রুয়ারি উদ্যাপন উপলক্ষে অমর একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজন করা হয়। সেই থেকে অব্যাহতভাবে বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
কিন্তু ১৯৬৭ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রথম বইমেলার আয়োজন করেছিলেন অধ্যাপক শরীফ হোসেন। এ ছাড়া তিনি প্রথম ১৯৭৩ সালে এ দেশে আন্তর্জাতিক বইমেলা আয়োজন করে বই বিপ্লবের জাদুকর হয়েছিলেন। ঢাকা-কলকাতায় যখন বইমেলা এই শব্দ উচ্চারিত হয়নি তখন শরীফ হোসেনের বইমেলা প্রাণবন্ত।
লাইব্রেরি গবেষক ড. মোফাখখার হোসেন খানের গবেষণা থেকে জানা যায়, এ উপমহাদেশে প্রথম ১৮৫১ সালে যশোরে পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয়। এমন মতামতও আছে, ১৮৫৪ সালে যশোরের জেলা কালেক্টর আর সি রেকস প্রথম যশোরে পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৮ সালে যশোর ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পর পাবলিক লাইব্রেরির নামকরণ করা হয় যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি। শরীফ হোসেন ১৯৬২ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত টানা ২০ বছর এ লাইব্রেরির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৬৭ সালে তিনি যশোর এম এম কলেজের ছাত্র ড. মুস্তাফিজুর রহমান, রাশেদ আহমেদ, সিরাজুল হক বুলবুল, মশিউল আযমসহ আরো কয়েকজনকে নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তোলেন। এ বাহিনীকে নিয়ে তিনি ১৯৬৭ সালের আগস্টে যশোর পাবলিক লাইব্রেরির পুরনো দ্বিতল ভবনে প্রথম বইমেলার আয়োজন করেছিলেন। প্রথম মেলায় পাঠকদের ব্যাপক সাড়া পেয়ে তিনি ভ্রাম্যমাণ বইমেলা ও ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি নিয়ে কাজ শুরু করেন। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি ৫২টি বইমেলার আয়োজন করেছেন। যশোরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, হাট-বাজার ছাড়াও খুলনা, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইলসহ দক্ষিণাঞ্চলে তিনি বইমেলার আয়োজন করে প্রশংসিত হয়েছেন। ১৮টি কাঠের বঙ্ েবই বোঝাই করে ট্রাকযোগে শরীফ হোসেন বইয়ের প্রতি মানুষের ভালোবাসা জাগানোর জন্য গ্রামে গ্রামে ঘুরেছেন। অনেকে তাঁকে যাত্রাপার্টির কথা বলেছেন। তিনি তা কবুল করে বই যাত্রাপার্টি গঠন করেছেন। বইয়ের গুণগান করে তিনি হাট-বাজারের মানুষকে গান শুনিয়েছেন। প্রদর্শন করেছেন অভিনব যন্ত্রপাতি। বই নিয়ে ভালুক, গরু, গাধা ওই যন্ত্রের ভেতর প্রবেশ করছে আর মানুষ হয়ে বের হয়ে যাচ্ছে।
শরীফ হোসেন ১৯৭৩ সালে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক কথাসাহিত্যিক সরদার জয়েনউদ্দিনের সহযোগিতায় যশোর পাবলিক লাইব্রেরিতে প্রথম আন্তর্জাতিক গ্রন্থমেলার আয়োজন করেন। বইমেলার পাশাপাশি তিনি গরিব মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বই ঋণ দেওয়ার জন্য এ দেশে প্রথম ১৯৭২ সালে যশোর পাবলিক লাইব্রেরিতে বই ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৮ সালে খুলনা বি এল কলেজে, ১৯৮৪ সালে মাদারীপুর সরকারি নাজিম উদ্দিন কলেজে, ১৯৯০ সালে যশোর সরকারি এম এম কলেজে তিনি বই ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে পাঠাগার আন্দোলনে যুগান্তকারী ইতিহাস সৃষ্টি করেন।
২০০১ সালে সরকার কর্তৃক শ্রেষ্ঠ পাঠাগার সংগঠক হিসেবে শরীফ হোসেন পুরস্কৃত হন। ২০০২ সালে গ্রন্থাগার আন্দোলনের জন্য তিনি একুশে পদক অর্জন করেন। দেশের গ্রন্থাগার আন্দোলনের এটিই প্রথম স্বীকৃতি। ২০০৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান। বাংলাদেশের পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রনায়ক, বইমেলার জনক শরীফ হোসেনকে নিয়ে অবশ্যই একুশের বইমেলায় আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।
ফখরে আলম
লাইব্রেরি গবেষক ড. মোফাখখার হোসেন খানের গবেষণা থেকে জানা যায়, এ উপমহাদেশে প্রথম ১৮৫১ সালে যশোরে পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয়। এমন মতামতও আছে, ১৮৫৪ সালে যশোরের জেলা কালেক্টর আর সি রেকস প্রথম যশোরে পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৮ সালে যশোর ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পর পাবলিক লাইব্রেরির নামকরণ করা হয় যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি। শরীফ হোসেন ১৯৬২ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত টানা ২০ বছর এ লাইব্রেরির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৬৭ সালে তিনি যশোর এম এম কলেজের ছাত্র ড. মুস্তাফিজুর রহমান, রাশেদ আহমেদ, সিরাজুল হক বুলবুল, মশিউল আযমসহ আরো কয়েকজনকে নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তোলেন। এ বাহিনীকে নিয়ে তিনি ১৯৬৭ সালের আগস্টে যশোর পাবলিক লাইব্রেরির পুরনো দ্বিতল ভবনে প্রথম বইমেলার আয়োজন করেছিলেন। প্রথম মেলায় পাঠকদের ব্যাপক সাড়া পেয়ে তিনি ভ্রাম্যমাণ বইমেলা ও ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি নিয়ে কাজ শুরু করেন। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি ৫২টি বইমেলার আয়োজন করেছেন। যশোরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, হাট-বাজার ছাড়াও খুলনা, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইলসহ দক্ষিণাঞ্চলে তিনি বইমেলার আয়োজন করে প্রশংসিত হয়েছেন। ১৮টি কাঠের বঙ্ েবই বোঝাই করে ট্রাকযোগে শরীফ হোসেন বইয়ের প্রতি মানুষের ভালোবাসা জাগানোর জন্য গ্রামে গ্রামে ঘুরেছেন। অনেকে তাঁকে যাত্রাপার্টির কথা বলেছেন। তিনি তা কবুল করে বই যাত্রাপার্টি গঠন করেছেন। বইয়ের গুণগান করে তিনি হাট-বাজারের মানুষকে গান শুনিয়েছেন। প্রদর্শন করেছেন অভিনব যন্ত্রপাতি। বই নিয়ে ভালুক, গরু, গাধা ওই যন্ত্রের ভেতর প্রবেশ করছে আর মানুষ হয়ে বের হয়ে যাচ্ছে।
শরীফ হোসেন ১৯৭৩ সালে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক কথাসাহিত্যিক সরদার জয়েনউদ্দিনের সহযোগিতায় যশোর পাবলিক লাইব্রেরিতে প্রথম আন্তর্জাতিক গ্রন্থমেলার আয়োজন করেন। বইমেলার পাশাপাশি তিনি গরিব মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বই ঋণ দেওয়ার জন্য এ দেশে প্রথম ১৯৭২ সালে যশোর পাবলিক লাইব্রেরিতে বই ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৮ সালে খুলনা বি এল কলেজে, ১৯৮৪ সালে মাদারীপুর সরকারি নাজিম উদ্দিন কলেজে, ১৯৯০ সালে যশোর সরকারি এম এম কলেজে তিনি বই ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে পাঠাগার আন্দোলনে যুগান্তকারী ইতিহাস সৃষ্টি করেন।
২০০১ সালে সরকার কর্তৃক শ্রেষ্ঠ পাঠাগার সংগঠক হিসেবে শরীফ হোসেন পুরস্কৃত হন। ২০০২ সালে গ্রন্থাগার আন্দোলনের জন্য তিনি একুশে পদক অর্জন করেন। দেশের গ্রন্থাগার আন্দোলনের এটিই প্রথম স্বীকৃতি। ২০০৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান। বাংলাদেশের পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রনায়ক, বইমেলার জনক শরীফ হোসেনকে নিয়ে অবশ্যই একুশের বইমেলায় আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।
ফখরে আলম
No comments