স্বাধীনতাস্তম্ভ নিয়ে জটিলতা নয়
গৌরব ও শৌর্যের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণকাজে অনীহা কেন? আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্মারক স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণে সরকারের দীর্ঘসূত্রতা এবং সর্বশেষ পরিস্থিতি বিবেচনা করে এমন প্রশ্নই করা যায়। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী দলটি যখন ক্ষমতাসীন, তখন সংগতভাবেই এমন প্রশ্ন আসাটা দুর্ভাগ্যজনক।
ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ আন্দোলনের বিশাল কয়েকটি অধ্যায় রচিত হয়েছে। বাংলাদেশ আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অধ্যায়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সেই কারণেই ১৯৯৬ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকার সেখানে স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ডিজাইন নির্বাচন থেকে শুরু করে প্রতিটি কাজ সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সে সময় কাজটি সম্পন্ন হয়নি। সম্পন্ন না হওয়ার পেছনে সেই একই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কার্যকর ছিল। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের আবেগের চেয়ে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরই প্রাধান্য পায় তখন। যে কারণে জীবন্ত কিংবদন্তিখ্যাত তৎকালীন ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাণপুরুষ নেলসন ম্যান্ডেলার উপস্থিতিতে উদ্বোধন হওয়া স্বাধীনতাস্তম্ভটি সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি। স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ নিয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যের পদত্যাগের ঘটনা তখনো ঘটেছিল। তখনো আমলা বনাম বিশেষজ্ঞ কমিটির দ্বন্দ্বই প্রত্যক্ষ করা গেছে। পরবর্তী সময়ে জামায়াত-বিএনপি জোট ক্ষমতায় আসার পর আবারও স্বাধীনতাস্তম্ভ উদ্বোধন করা হয়। আর তখন ম্যুরালে পরিবর্তন এনে তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়। তাদের মেয়াদেও সামান্য কিছু কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। সংগত কারণেই এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আশা করা হয়েছিল, কাজটি সুষ্ঠুভাবে এবং দ্রুত সম্পন্ন হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এবারও বাকি কাজটুকু এখনো সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ বিশেষজ্ঞ কমিটির ছয় সদস্যের পদত্যাগের ঘটনাটি প্রত্যেককেই ভাবিয়ে তুলেছে। কাজটি সম্পন্ন করতে হলে যেমন আমলাদের প্রয়োজন, তেমনি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের আবেগকে যথাযথ স্থান দিতে হলে সেখানে বিশেষজ্ঞদের সংযুক্তিও প্রয়োজন। কিন্তু বিশেষজ্ঞ কমিটির বক্তব্য অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবই উপস্থিত থাকছেন না মিটিংয়ে। বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করবে মন্ত্রণালয়, সেখানে মন্ত্রণালয়ের সচিব যিনি এই কমিটিরও সদস্য, তাঁর অনুপস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। আবার একইভাবে বলা যায়, প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ছয় সদস্য এভাবে পদত্যাগ না করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করতে পারতেন। এর পরও গোটা বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে এভাবে না এলেই বোধ হয় ভালো হতো। যতদূর জানা যায়, দুই বছর আগেই সুপারিশ করা হয়েছিল সেখানে জাদুঘরের কাজ শুরু করতে লোক নিয়োগ করার জন্য। দুই বছরেও কোনো লোক সেখানে নিয়োগ করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এটাও কি লাল ফিতার দৌরাত্ম্য? এ মুহূর্তে দেশের স্বার্থেই সব জটিলতা পেছনে ফেলে অন্তত স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ সম্পন্ন ও তা জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। শুভক্ষণটি ৭ মার্চ হলে আরো ভালো।
No comments