চরাচর-সিটি কলোনির দলিত নারীরা by তামান্না ইসলাম অলি
দলিত নারী সুকন্যা জানান, আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে ব্রিটিশ সরকার তাঁদের এ দেশে এনেছিল ভালো কাজ ও বাসস্থান দেওয়ার কথা বলে। কিন্তু এ দেশে এনে দিয়েছে এমন কাজ, যাকে সবাই ছোট কাজ মনে করে। তাঁদের বেশির ভাগেরই আদি বাসস্থান ভারতে।
দলিতদের মধ্যে রয়েছে তেলেগু, কানপুরি, মুচি, ডোম, হেলা, বাঁশফোড়, হাড়ি, রাওয়াত, চামারসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী। মালা রানী দাস সিটি করপোরেশনে কর্মরত একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী। থাকেন রাজধানীর গণকটুলী সিটি কলোনিতে। ছোট একটি ঘরে দুই ছেলেমেয়ে ও মাকে নিয়ে থাকেন। স্বামী মারা গেছেন এক বছর হলো। তিনিও পরিচ্ছন্নতা কর্মী ছিলেন। তাঁর মা এখন বৃদ্ধ। তিনি সিটি করপোরেশনে কাজ করতেন। সংসারে এখন একমাত্র উপার্জনক্ষম মালা। তাঁর থাকার ঘরটি ১০ ফুট বাই ১০ ফুট। এই ছোট্ট ঘরটির মধ্যেই তাঁর সংসার। যেখানে রান্না সেখানেই ঘুমানো। তবে বাথরুমের জন্য যেতে হয় চারতলা ভবনে। কারণ কলোনির নিচে কোনো বাথরুম নেই।
কলোনির এক নম্বর ভবনের বাথরুমের মধ্যে বসবাস শিমুুল রানী দাসের। তিনি জাতিতে কানপুরি ও দলিত শ্রেণীভুক্ত। এখন স্বামী আর সন্তান নিয়ে সংসার পেতেছেন বাথরুমে, যদিও বাথরুমটি বহুকাল ব্যবহার হতো না। তাই কোনো রকমে সারিয়ে নিয়ে থাকার জায়গা বানিয়েছেন তাঁরা। তিনি এখন কাজ করেন একটি সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এর আগে থাকতেন কলোনির তিন নম্বর ভবনে শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে। এত কষ্টের মধ্যেও স্বস্তি শিমুলের। তিনি অন্তত মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন, সিটি কলোনির বহু নারী তা-ও পান না। মালতি দাস জানান, তাঁরা স্কুল থেকে বাসায় ফিরে কাঁদতেন। কারণ স্কুলে তাঁদের পাশে কেউ বসত না। তাই বাধ্য হয়ে বসতে হতো একেবারে পেছনের বেঞ্চে। খুব খারাপ ব্যবহার করতেন শিক্ষকরাও।
দলিতদের সংখ্যা প্রথম দিকে এত বেশি ছিল না। বর্তমানে তাদের সংখ্যা এত বেশি হয়ে পড়েছে যে এখানে আর একটু জায়গাও অবশিষ্ট নেই। আগের ফাঁকা জায়গায় নিজেরাই ঘর তুলেছে। এখন কেউ ইচ্ছা করলেও ঘর তুলতে পারবে না। তাই এর মধ্যেই একই ঘরে আট-দশজনকে থাকতে হয়।
দলিতদের অধিকার আদায় ও স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিত করতে কাজ করছে বেসরকারি সংগঠন 'পাওয়া'। আরেকটি বেসরকারি সংগঠন নাগরিক উদ্যোগের সহায়তায় ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে পাওয়ার সদস্যসংখ্যা ১৮০। সংগঠনের সভানেত্রী একজন নারী। মনি রানী দাস। তিনি জানান, 'পাওয়া' তাঁদের একত্রিত করেছে। অধিকার আদায়ের জন্য সচেতন করছে। 'পাওয়া' সারা বাংলাদেশের দলিতদের নিয়েই কাজ করে। 'পাওয়া' সদস্যদের সঙ্গে প্রতি মাসে দুটি মিটিং করে। মিটিংয়ে সদস্যরা তাঁদের সমস্যা তুলে ধরেন। দলিতরা একসময় মনে করত, সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলার বা মেশার অধিকার তাদের নেই। কিন্তু এখন সেই অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আর এ পরিবর্তনের পুরো কৃতিত্বই দলিত নারীদের বলে দাবি করেন মনি রানী দাস।
তামান্না ইসলাম অলি
কলোনির এক নম্বর ভবনের বাথরুমের মধ্যে বসবাস শিমুুল রানী দাসের। তিনি জাতিতে কানপুরি ও দলিত শ্রেণীভুক্ত। এখন স্বামী আর সন্তান নিয়ে সংসার পেতেছেন বাথরুমে, যদিও বাথরুমটি বহুকাল ব্যবহার হতো না। তাই কোনো রকমে সারিয়ে নিয়ে থাকার জায়গা বানিয়েছেন তাঁরা। তিনি এখন কাজ করেন একটি সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এর আগে থাকতেন কলোনির তিন নম্বর ভবনে শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে। এত কষ্টের মধ্যেও স্বস্তি শিমুলের। তিনি অন্তত মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন, সিটি কলোনির বহু নারী তা-ও পান না। মালতি দাস জানান, তাঁরা স্কুল থেকে বাসায় ফিরে কাঁদতেন। কারণ স্কুলে তাঁদের পাশে কেউ বসত না। তাই বাধ্য হয়ে বসতে হতো একেবারে পেছনের বেঞ্চে। খুব খারাপ ব্যবহার করতেন শিক্ষকরাও।
দলিতদের সংখ্যা প্রথম দিকে এত বেশি ছিল না। বর্তমানে তাদের সংখ্যা এত বেশি হয়ে পড়েছে যে এখানে আর একটু জায়গাও অবশিষ্ট নেই। আগের ফাঁকা জায়গায় নিজেরাই ঘর তুলেছে। এখন কেউ ইচ্ছা করলেও ঘর তুলতে পারবে না। তাই এর মধ্যেই একই ঘরে আট-দশজনকে থাকতে হয়।
দলিতদের অধিকার আদায় ও স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিত করতে কাজ করছে বেসরকারি সংগঠন 'পাওয়া'। আরেকটি বেসরকারি সংগঠন নাগরিক উদ্যোগের সহায়তায় ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে পাওয়ার সদস্যসংখ্যা ১৮০। সংগঠনের সভানেত্রী একজন নারী। মনি রানী দাস। তিনি জানান, 'পাওয়া' তাঁদের একত্রিত করেছে। অধিকার আদায়ের জন্য সচেতন করছে। 'পাওয়া' সারা বাংলাদেশের দলিতদের নিয়েই কাজ করে। 'পাওয়া' সদস্যদের সঙ্গে প্রতি মাসে দুটি মিটিং করে। মিটিংয়ে সদস্যরা তাঁদের সমস্যা তুলে ধরেন। দলিতরা একসময় মনে করত, সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলার বা মেশার অধিকার তাদের নেই। কিন্তু এখন সেই অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আর এ পরিবর্তনের পুরো কৃতিত্বই দলিত নারীদের বলে দাবি করেন মনি রানী দাস।
তামান্না ইসলাম অলি
No comments