দ্রুত বিধি প্রণয়ন ও লোকবল বাড়ানো হোক-মানবাধিকার কমিশনের নিজস্ব তদন্ত

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আবার সংবাদ শিরোনাম হলো। এবারের সংবাদ: মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো কমিশন নিজেই তদন্ত করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিধিমালাহীন, প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে কার্যক্ষেত্রে দুর্বল একটি প্রতিষ্ঠান জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।


এই প্রতিষ্ঠানের এহেন দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলোর যে সরকারি তদন্ত করা হয়, তার অধিকাংশের ফল তাদের ভাষায় ‘ভালো’ হয় না। আমরা কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে মনে করি। তবে এর বাস্তবায়ন কীভাবে সম্ভব, তা ভাবনার বিষয়।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো নিয়ে পুলিশ বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালিত তদন্ত সম্পর্কে জনমনে আস্থার যথেষ্ট অভাব কাজ করে। অনেক সময় উল্লেখযোগ্য ঘটনার তদন্তের ফল জনগণের কাছে স্পষ্টতই অগ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। বিশেষত র‌্যাব-পুলিশসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার তদন্তে অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টাই বেশি থাকে। প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের লক্ষ্যে পক্ষপাতহীনভাবে অধিকতর গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে নিজস্ব তদন্ত পরিচালনার সিদ্ধান্ত যদি মানবাধিকার কমিশন বাস্তবায়ন করতে পারে, তবে তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিকার তথা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নিশ্চয় সহায়ক হবে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, কমিশন গঠনের দেড় বছরেও বিধিমালা তৈরি করা হলো না। বিধিমালা ছাড়া কোনো কমিশন বস্তুত কাজ শুরুই করতে পারে না। কমিশনে প্রয়োজনীয় জনবলও নিয়োগ করা হয়নি। অর্থাৎ মানবাধিকার কমিশনকে কাজ শুরু করার উপযোগী করতেই আইন মন্ত্রণালয় তথা সরকারের অনীহা লক্ষ করা যাচ্ছে। কমিশনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে হতাশা ও ক্ষোভ ব্যক্ত করা হয়েছে সংগত কারণেই।
মানবাধিকার মানুষের মৌলিক অধিকার; গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সেই অধিকার রক্ষায় বদ্ধপরিকর। দুঃখজনকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অধিকাংশ অভিযোগই ওঠে সরকারের বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের বিরুদ্ধে। এতে সরকার বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, সাধারণভাবে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মনে এমন ধারণা কাজ করে, যেন বা পুরো সরকারই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত। তা ছাড়া সরকারি যে সংস্থার সদস্যের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে, ঘটনার তদন্তও পরিচালিত হয় তাদের দ্বারাই। ফলে প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলে; সরকারি তদন্ত-প্রক্রিয়া ও তদন্তের ফল নিয়ে জনমনে আস্থাহীনতার কারণও প্রধানত এই।
মানবাধিকার কমিশন এমনই এক প্রতিষ্ঠান, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর প্রতিকারে সরকারকে সহযোগিতা করতে পারে। এই প্রতিষ্ঠানটি যত শক্তিশালী হবে, জনসাধারণের মানবাধিকার রক্ষা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিকারে সরকারের তত বেশি সুবিধা হবে। সে জন্য এর বিধি প্রণয়নের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ করা সরকারের দায়িত্ব। মানবাধিকার কমিশনের সক্রিয় তৎপরতার ফলে দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে এবং এর ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও বাড়বে।

No comments

Powered by Blogger.