সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে -ড. ইউনূসের বক্তব্য
আমি বারবার বলছি যে, দ্বন্দ্বের আবহে গ্রামীণ ব্যাংকের নেতৃত্বে পরিবর্তনের উদ্যোগ নিলে তাতে প্রতিষ্ঠানটির জন্য অমঙ্গল বয়ে আনতে পারে। আমার বরাবর আশা, একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ যৌক্তিক পরিবেশে এটি হওয়া উচিত, যাতে গ্রামীণ ব্যাংকের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে।
রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে ভবিষ্যতে গ্রামীণ ব্যাংকের মতো একটি প্রতিষ্ঠান তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে কি-না
গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে সর্বোচ্চ আদালতের রায় সবাই জানেন। কেন আমি গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকতে চেয়েছি, কেন দেশে-বিদেশে অনেকে এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হচ্ছে_ এসব নিয়ে কারও কারও মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছে। আমি আদালতে গিয়েছি একটি সুনির্দিষ্ট কারণে। বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে কোনো জবাবদিহিতার সুযোগ না দিয়েই আমাকে অপসারণ করার জন্য একটি পত্র দিয়েছে, যাতে এও বলা হয়েছে যে, গত ১১ বছর ধরে আমি এ পদে অবৈধভাবে আছি (যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিতভাবে বার্ষিক ভিত্তিতে এ সময়কালে গ্রামীণ ব্যাংক পরিদর্শন করেছে এবং কখনও গ্রামীণ ব্যাংকের কোনো বিষয় নিষ্পত্তিহীন রয়েছে বলে কোনো অভিযোগ তোলেনি)। এই পত্র আইনসঙ্গত হয়নি এবং এর মাধ্যমে আমার প্রতি ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে বলে আমি মনে করেছি। গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের ৯ সদস্যও একই রকম মনে করেছেন। তাই আমি ও তারা পৃথকভাবে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি, যাতে আমার ও গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর পত্রটির মাধ্যমে যে অন্যায় হয়েছে বলে আমরা মনে করেছি তার নিরসন হয়।
চার কোটি গরিব মানুষের ভাগ্য : আমি ঠিক করেছিলাম, মহামান্য আদালতের শেষ রায় দ্বারা যদি নির্ধারিত হয় যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পত্রটি সঠিক ছিল না তাহলে আমরা যথারীতি গ্রামীণ ব্যাংকের স্বার্থে কাজ করব, সুন্দরভাবে কীভাবে আমার দায়িত্ব হস্তান্তর করতে পারি সে চেষ্টা করব। আর যদি সেই রায় আমরা না পাই তাহলে স্বাভাবিকভাবেই বোর্ড বাংলাদেশ ব্যাংকের পত্র অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। আমার আদালতে যাওয়ার কারণ এটুকুই।
গ্রামীণ ব্যাংকের ভবিষ্যৎ রক্ষা এবং এর প্রায় এক কোটি দরিদ্র ঋণগ্রহীতাদের (যারা এ ব্যাংকের ৯৬.৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকও বটে) আশা-ভরসার স্থলটুকুকে রক্ষার বিষয়টি অনেক বড় ও ব্যাপক বিষয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশের চার কোটি দরিদ্র মানুষের ভাগ্য, এর পরোক্ষ প্রভাবে সারা দুনিয়ায় ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে জড়িত বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যতের। দারিদ্র্য দূরীকরণের এ সফল মডেলটির অস্তিত্বের প্রশ্নগুলোও অবহেলা করার মতো নয়। গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে বিদায় নেওয়ার আগে-পরে এর ভবিষ্যৎ রক্ষার ক্ষেত্রে আমি কী ভূমিকা নিতে পারলাম বা পারলাম না_ এটিই আমার এবং সে সঙ্গে অনেকের বড় ভাবনা।
কেউ কেউ বলেছেন, আদালতে না গিয়ে অর্থমন্ত্রীর অনুরোধ অনুযায়ী বিদায় নিলে আমার সম্মান থাকত। আমি সেটি মনে করি না। তাতেও আমার বিদায়ের ক্ষেত্রে এবং গ্রামীণ ব্যাংকের ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে ফল একই হতো। বরং আমি এমন একটি আকস্মিক প্রস্তাব মেনে নিয়ে অসংখ্য কর্মী ও ঋণগ্রহীতার পরিবারকে স্বেচ্ছায় অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিলে নিজের কাছে নিজে অপরাধী হয়ে থাকতাম। সেটি আমি স্বজ্ঞানে করতে পারিনি।
কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদটি যতদিন পারা যায় আঁকড়ে ধরে থাকাটাই আমার উদ্দেশ্য। এ পদটিই আমার জীবনের পরম আরাধ্য ধন নয়। আমি নিজেও খুবই সচেতন ছিলাম ও আছি যে, আমার বাকি কাজ এ পদে থেকে নয়, বরং এটি ছেড়ে দিয়ে অন্য কোনো অবস্থান থেকে তরুণদের সঙ্গে নিয়ে সারা জীবনের মূল কাজটি চালিয়ে যাওয়া_ এ দেশ এবং পৃথিবী থেকে দারিদ্র্যকে নির্বাসনে পাঠানোর চেষ্টায়। তবে সেটি যেন গ্রামীণ ব্যাংকের মতো একটি প্রতিষ্ঠানকে কোনো রকমের ঝুঁকিতে ফেলে না করতে হয় সে জন্য আমার চিন্তার অন্ত ছিল না। অর্থমন্ত্রীকে এক বছর আগে লেখা চিঠি প্রকাশ করার মাধ্যমে আমি সে চিন্তার কথাটিই সবার সামনে তুলে ধরেছি। কীভাবে ওরকম ঝুঁকি এড়িয়ে কাজটি করা যায় সে সম্পর্কে দুটি বিকল্প আমি তাকে দিয়েছিলাম। আমার সে প্রচেষ্টায় সাড়া আসেনি। কাজেই কেউ যদি বলেন, অন্যায়ভাবে পদ ধরে রাখা বা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে পরিবর্তনের চেষ্টার সঙ্গে সহযোগিতা না করাটাই আমার উদ্দেশ্য তাহলে আমার প্রতি অবিচার করা হবে।
দ্বন্দ্বের আবহে নেতৃত্বে পরিবর্তন মঙ্গলজনক হবে না : আমি বারবার বলছি যে, দ্বন্দ্বের আবহে গ্রামীণ ব্যাংকের নেতৃত্বে পরিবর্তনের উদ্যোগ নিলে তাতে প্রতিষ্ঠানটির জন্য অমঙ্গল বয়ে আনতে পারে। আমার বরাবর আশা, একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ যৌক্তিক পরিবেশে এটি হওয়া উচিত, যাতে গ্রামীণ ব্যাংকের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে। রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে ভবিষ্যতে গ্রামীণ ব্যাংকের মতো একটি প্রতিষ্ঠান তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে কি-না, সফল হতে পারবে কি-না, সে সাফল্য ধরে রাখতে পারবে কি-না_ এগুলোই বড় প্রশ্ন। রাজনৈতিক প্রভাবের ছায়া পড়লে আমাদের দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কী হয় তা তো সবার জানা। গ্রামীণ ব্যাংক তো চলে বিশ্বাস আর আস্থার ওপর নির্ভর করে।
গ্রামীণ ব্যাংকের ভেতর-বাইরে যেখানেই থাকি, এক্ষেত্রে নিজের দায়িত্বটিকে অবহেলা করা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। গ্রামীণ ব্যাংকের স্বকীয়তা ও গরিবদের মালিকানা রক্ষা একটি সাধারণ ঘটনা মাত্র নয়, দরিদ্র মানুষের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের ক্ষেত্রে এটি একটি সুদূরপ্রসারী প্রশ্ন। এর জন্য যা কিছু করা সম্ভব তা করা আমাদের সবার দায়িত্ব বলে মনে করি।
বাংলাদেশকে বাইরের দুনিয়ায় অসংখ্য মানুষ সম্মান দিতে শুরু করেছে এ কারণেই। এটিই হলো আমাদের গর্ব, বিশ্বের দরবারে আমাদের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি। এ ভাবমূর্তি বিনষ্ট হলে জাতি হিসেবে আমরা কি ক্ষতিগ্রস্ত হবো না? আমাদের গর্ব আর আত্মবিশ্বাসে কি চিড় ধরবে না? আমি সম্ভাব্য আশঙ্কাগুলো থেকে গ্রামীণ ব্যাংককে, বিশেষ করে দরিদ্র নারীর ক্ষমতায়নকে এবং সার্বিকভাবে নাগরিক সমাজের উদ্যোগকে অব্যাহত রাখা নিশ্চিত করতে সবার কাছে আবেদন জানাচ্ছি।
গরিব মহিলার মালিকানার ব্যাংক : দরিদ্র মহিলার মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের মতো বিশ্বখ্যাত এবং দেশের গৌরবের প্রতিষ্ঠানকে অনিশ্চয়তার পথে ঠেলে দেওয়ার কোনো সুযোগ সৃষ্টি হোক_ এ রকম কোনো পরিস্থিতি আমরা কেউ কামনা করি না।
গত ৩৫ বছরে আমরা গ্রামীণ ব্যাংককে একটি মজবুত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে পেরেছি। ব্যাংক প্রতি বছর মুনাফা অর্জন করতে পারছে। সে মুনাফা শেয়ার মালিক হিসেবে ঋণগ্রহীতাদের কাছে পেঁৗছে দিতে পেরে আমরা আনন্দ পাচ্ছি।
যে ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়েছিল ৮৫৬ টাকা দিয়ে সে ব্যাংক এখন মাসে এক হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করছে। এর আমানতের পরিমাণ দশ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি আমানত এসেছে ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে। আমাদের এমন শাখাও আছে যেখানে সদস্যদের আমানতের পরিমাণ তাদের নেওয়া ঋণের দ্বিগুণ। আমাদের এক হাজার ১৫০টি শাখা আছে যেখানে সদস্যদের আমানতের পরিমাণ ঋণের পরিমাণের ৭৫ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি। প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা যেটা সদস্যদের আমানত হিসেবে ব্যাংকে জমা আছে, তার ৯৭ শতাংশই হলো মহিলাদের সঞ্চয়। এ টাকার ওপর মহিলাদের আর কোনো ভাগীদার নেই। এছাড়া গৃহঋণের মাধ্যমে প্রায় ৭ লাখ মহিলা নিজ মালিকানায় গৃহনির্মাণ করতে পেরেছেন।
গ্রামীণ ব্যাংকে যে মহিলারা যোগ দিয়েছেন তাদের সন্তানদের বয়সও এখন বেড়েছে। শুরুতেই তাদের সবাইকে আমরা স্কুলে পাঠাতে পেরেছি_ এটিই আমাদের আনন্দ। তাদের অনেককে বৃত্তি দিতে পারছি, উচ্চ শিক্ষার জন্য ঋণ দিতে পারছি_ তা আমাদের তৃপ্তি দেয়। আজ পর্যন্ত আমরা ১৮ কোটি টাকা বৃত্তি বাবদ দিতে পেরেছি, ৪০০ কোটি টাকা উচ্চশিক্ষা ঋণ দিতে পেরেছি। উচ্চশিক্ষা ঋণ পেয়ে ৫০ হাজার ছেলেমেয়ে এখন ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। অনেকে পিএইচডি ডিগ্রি সমাপ্ত করেছে। গ্রামীণ ব্যাংকের নতুন প্রজন্মকে আমরা একটা নতুন জীবন দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাদের মধ্যে আমরা এ অঙ্গীকার জাগিয়ে তুলছি যে, 'আমরা চাকরি করব না, আমরা চাকরি দেব।' তাদের জন্য আমরা নতুন উদ্যোক্তা ঋণ চালু করেছি। এখন আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হলো, দ্বিতীয় প্রজন্মকে চিরস্থায়ীভাবে দারিদ্র্য থেকে অনেক দূরে সরে আসার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। এ কাজের সাফল্যকে দ্রুত নিশ্চিত করাই হবে এখন আমাদের লক্ষ্য।
মানুষের মনে হয়তো এ রকম ধারণার সৃষ্টি হয়েছে যে, গ্রামীণ ব্যাংক বিদেশি টাকায় চলে। এটি মোটেই সত্য নয়। ১৯৯৫ সালের পর থেকে আর আমরা বিদেশি টাকা গ্রহণ করিনি। গ্রামীণ ব্যাংক সম্পূর্ণ নিজের টাকায় চলে। আমানতের খাতে যে টাকা জমা হয় তা দিয়েই ঋণ দেওয়া হয়। গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণ জগতে সর্বনিম্ন। ক্রমহ্রাসমান পদ্ধতিতে শতকরা ২০ টাকা। সরল সুদ অর্থাৎ সুদের ওপর সুদ হয় না। অথচ আমানতের ওপর চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ দেওয়া হয়। কেউ কেউ বলেন, এটি সরকারি ব্যাংক। কেউ কেউ বলেন, এটি এনজিও। বাস্তবে এটি সরকারি ব্যাংকও নয়, এটি এনজিও নয়। এটি একটি বিশেষ আইনে সৃষ্ট গরিবের মালিকানায় একটা বেসরকারি ব্যাংক।
অভিযোগ করা হয়, গরিবের ওপর জোরজুলুম করে টাকা আদায় করা হয়। জোরজুলুমের কোনো প্রয়োজন নেই গ্রামীণ ব্যাংকে। ঋণগ্রহীতা নিজেই গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক। ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ক্রমাগতভাবে বাড়ানো যায়। কত টাকা কিস্তি দেবেন তা সম্পূর্ণ ঋণগ্রহীতার ওপর নির্ভর করে। ঋণগ্রহীতা বা তার স্বামীর মৃত্যু হলে সঙ্গে সঙ্গে ঋণের অবশিষ্ট টাকা মওকুফ হয়ে যায়। ঋণের দায়িত্ব পরিবারের কারও ওপর বর্তায় না।
গ্রামীণ ব্যাংকের মতো বিশাল একটি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভুল ধারণার অবসান ঘটিয়ে আমরা যত বেশি নাগরিক উদ্যোগের প্রতি যত্নবান হতে পারি তত বেশি মঙ্গলজনক হবে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে, পরিবেশের ক্ষেত্রে, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে, নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে, প্রযুক্তির উদ্ভাবনশীল ব্যবহারের ক্ষেত্রে, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বৃহত্তর গণ্ডিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে, তরুণ উদ্যোক্তা সৃষ্টির ক্ষেত্রে, ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে, এ রকম আরও বহুক্ষেত্রে সামাজিক ব্যবসার ধারণা এবং কাঠামো অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।
এই সমর্থন নাগরিক উদ্যোগের অগ্রযাত্রার প্রতি সমর্থন : গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষেত্রে যে সমর্থন দেশের ভেতরে এবং বাইরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রকাশিত হয়েছে সে সমর্থন শুধু গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতি সমর্থনই নয়, সে সমর্থন নাগরিক উদ্যোগের অগ্রযাত্রার প্রতিও সোচ্চার সমর্থন। এ সমর্থনকে অব্যাহত রাখতে হবে, জোরদার করতে হবে। এ সমর্থনকে সক্রিয় উদ্যোগে পরিণত করার আয়োজন করতে হবে। সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে আমি আমার উদ্যোগ অব্যাহত রাখব। আমার মূল প্রস্তাবটি হচ্ছে, আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে সামাজিক সমস্যা সমাধানের প্রচুর ক্ষমতা আছে। সে ক্ষমতা কর্মক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য যেন আমরা এগিয়ে আসি। ২০৩০ সালের মধ্যে যদি আমরা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই তাহলে তার ভিত্তি তো আমাদের এখনই প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
আসুন, আমরা গ্রামীণ ব্যাংকের অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করি, যে ব্যাংক গরিব মহিলাকে তার সুপ্ত ক্ষমতা প্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে, যে ব্যাংক পৃথিবীতে স্বনির্ভরতার মাধ্যমে দারিদ্র্যের সমস্যা মোকাবেলা করার এক অনন্য প্রতিষ্ঠান ও পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। তার সঙ্গে নিশ্চিত করি নাগরিক সমাজের সব উদ্যোগের স্রোতকে, বাধাহীনভাবে বেগবান করার নিরাপত্তাকে। সরকার এবং নাগরিক সমাজ পারস্পরিক আস্থা এবং সহযোগিতার মধ্যে কাজ করতে পারলে আমাদের এ অর্জন সহজেই সম্ভব। এ সুযোগ যেন আমরা কিছুতেই হাতছাড়া না করি।
গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে সর্বোচ্চ আদালতের রায় সবাই জানেন। কেন আমি গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকতে চেয়েছি, কেন দেশে-বিদেশে অনেকে এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হচ্ছে_ এসব নিয়ে কারও কারও মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছে। আমি আদালতে গিয়েছি একটি সুনির্দিষ্ট কারণে। বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে কোনো জবাবদিহিতার সুযোগ না দিয়েই আমাকে অপসারণ করার জন্য একটি পত্র দিয়েছে, যাতে এও বলা হয়েছে যে, গত ১১ বছর ধরে আমি এ পদে অবৈধভাবে আছি (যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিতভাবে বার্ষিক ভিত্তিতে এ সময়কালে গ্রামীণ ব্যাংক পরিদর্শন করেছে এবং কখনও গ্রামীণ ব্যাংকের কোনো বিষয় নিষ্পত্তিহীন রয়েছে বলে কোনো অভিযোগ তোলেনি)। এই পত্র আইনসঙ্গত হয়নি এবং এর মাধ্যমে আমার প্রতি ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে বলে আমি মনে করেছি। গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের ৯ সদস্যও একই রকম মনে করেছেন। তাই আমি ও তারা পৃথকভাবে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি, যাতে আমার ও গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর পত্রটির মাধ্যমে যে অন্যায় হয়েছে বলে আমরা মনে করেছি তার নিরসন হয়।
চার কোটি গরিব মানুষের ভাগ্য : আমি ঠিক করেছিলাম, মহামান্য আদালতের শেষ রায় দ্বারা যদি নির্ধারিত হয় যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পত্রটি সঠিক ছিল না তাহলে আমরা যথারীতি গ্রামীণ ব্যাংকের স্বার্থে কাজ করব, সুন্দরভাবে কীভাবে আমার দায়িত্ব হস্তান্তর করতে পারি সে চেষ্টা করব। আর যদি সেই রায় আমরা না পাই তাহলে স্বাভাবিকভাবেই বোর্ড বাংলাদেশ ব্যাংকের পত্র অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। আমার আদালতে যাওয়ার কারণ এটুকুই।
গ্রামীণ ব্যাংকের ভবিষ্যৎ রক্ষা এবং এর প্রায় এক কোটি দরিদ্র ঋণগ্রহীতাদের (যারা এ ব্যাংকের ৯৬.৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকও বটে) আশা-ভরসার স্থলটুকুকে রক্ষার বিষয়টি অনেক বড় ও ব্যাপক বিষয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশের চার কোটি দরিদ্র মানুষের ভাগ্য, এর পরোক্ষ প্রভাবে সারা দুনিয়ায় ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে জড়িত বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যতের। দারিদ্র্য দূরীকরণের এ সফল মডেলটির অস্তিত্বের প্রশ্নগুলোও অবহেলা করার মতো নয়। গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে বিদায় নেওয়ার আগে-পরে এর ভবিষ্যৎ রক্ষার ক্ষেত্রে আমি কী ভূমিকা নিতে পারলাম বা পারলাম না_ এটিই আমার এবং সে সঙ্গে অনেকের বড় ভাবনা।
কেউ কেউ বলেছেন, আদালতে না গিয়ে অর্থমন্ত্রীর অনুরোধ অনুযায়ী বিদায় নিলে আমার সম্মান থাকত। আমি সেটি মনে করি না। তাতেও আমার বিদায়ের ক্ষেত্রে এবং গ্রামীণ ব্যাংকের ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে ফল একই হতো। বরং আমি এমন একটি আকস্মিক প্রস্তাব মেনে নিয়ে অসংখ্য কর্মী ও ঋণগ্রহীতার পরিবারকে স্বেচ্ছায় অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিলে নিজের কাছে নিজে অপরাধী হয়ে থাকতাম। সেটি আমি স্বজ্ঞানে করতে পারিনি।
কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদটি যতদিন পারা যায় আঁকড়ে ধরে থাকাটাই আমার উদ্দেশ্য। এ পদটিই আমার জীবনের পরম আরাধ্য ধন নয়। আমি নিজেও খুবই সচেতন ছিলাম ও আছি যে, আমার বাকি কাজ এ পদে থেকে নয়, বরং এটি ছেড়ে দিয়ে অন্য কোনো অবস্থান থেকে তরুণদের সঙ্গে নিয়ে সারা জীবনের মূল কাজটি চালিয়ে যাওয়া_ এ দেশ এবং পৃথিবী থেকে দারিদ্র্যকে নির্বাসনে পাঠানোর চেষ্টায়। তবে সেটি যেন গ্রামীণ ব্যাংকের মতো একটি প্রতিষ্ঠানকে কোনো রকমের ঝুঁকিতে ফেলে না করতে হয় সে জন্য আমার চিন্তার অন্ত ছিল না। অর্থমন্ত্রীকে এক বছর আগে লেখা চিঠি প্রকাশ করার মাধ্যমে আমি সে চিন্তার কথাটিই সবার সামনে তুলে ধরেছি। কীভাবে ওরকম ঝুঁকি এড়িয়ে কাজটি করা যায় সে সম্পর্কে দুটি বিকল্প আমি তাকে দিয়েছিলাম। আমার সে প্রচেষ্টায় সাড়া আসেনি। কাজেই কেউ যদি বলেন, অন্যায়ভাবে পদ ধরে রাখা বা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে পরিবর্তনের চেষ্টার সঙ্গে সহযোগিতা না করাটাই আমার উদ্দেশ্য তাহলে আমার প্রতি অবিচার করা হবে।
দ্বন্দ্বের আবহে নেতৃত্বে পরিবর্তন মঙ্গলজনক হবে না : আমি বারবার বলছি যে, দ্বন্দ্বের আবহে গ্রামীণ ব্যাংকের নেতৃত্বে পরিবর্তনের উদ্যোগ নিলে তাতে প্রতিষ্ঠানটির জন্য অমঙ্গল বয়ে আনতে পারে। আমার বরাবর আশা, একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ যৌক্তিক পরিবেশে এটি হওয়া উচিত, যাতে গ্রামীণ ব্যাংকের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে। রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে ভবিষ্যতে গ্রামীণ ব্যাংকের মতো একটি প্রতিষ্ঠান তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে কি-না, সফল হতে পারবে কি-না, সে সাফল্য ধরে রাখতে পারবে কি-না_ এগুলোই বড় প্রশ্ন। রাজনৈতিক প্রভাবের ছায়া পড়লে আমাদের দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কী হয় তা তো সবার জানা। গ্রামীণ ব্যাংক তো চলে বিশ্বাস আর আস্থার ওপর নির্ভর করে।
গ্রামীণ ব্যাংকের ভেতর-বাইরে যেখানেই থাকি, এক্ষেত্রে নিজের দায়িত্বটিকে অবহেলা করা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। গ্রামীণ ব্যাংকের স্বকীয়তা ও গরিবদের মালিকানা রক্ষা একটি সাধারণ ঘটনা মাত্র নয়, দরিদ্র মানুষের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের ক্ষেত্রে এটি একটি সুদূরপ্রসারী প্রশ্ন। এর জন্য যা কিছু করা সম্ভব তা করা আমাদের সবার দায়িত্ব বলে মনে করি।
বাংলাদেশকে বাইরের দুনিয়ায় অসংখ্য মানুষ সম্মান দিতে শুরু করেছে এ কারণেই। এটিই হলো আমাদের গর্ব, বিশ্বের দরবারে আমাদের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি। এ ভাবমূর্তি বিনষ্ট হলে জাতি হিসেবে আমরা কি ক্ষতিগ্রস্ত হবো না? আমাদের গর্ব আর আত্মবিশ্বাসে কি চিড় ধরবে না? আমি সম্ভাব্য আশঙ্কাগুলো থেকে গ্রামীণ ব্যাংককে, বিশেষ করে দরিদ্র নারীর ক্ষমতায়নকে এবং সার্বিকভাবে নাগরিক সমাজের উদ্যোগকে অব্যাহত রাখা নিশ্চিত করতে সবার কাছে আবেদন জানাচ্ছি।
গরিব মহিলার মালিকানার ব্যাংক : দরিদ্র মহিলার মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের মতো বিশ্বখ্যাত এবং দেশের গৌরবের প্রতিষ্ঠানকে অনিশ্চয়তার পথে ঠেলে দেওয়ার কোনো সুযোগ সৃষ্টি হোক_ এ রকম কোনো পরিস্থিতি আমরা কেউ কামনা করি না।
গত ৩৫ বছরে আমরা গ্রামীণ ব্যাংককে একটি মজবুত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে পেরেছি। ব্যাংক প্রতি বছর মুনাফা অর্জন করতে পারছে। সে মুনাফা শেয়ার মালিক হিসেবে ঋণগ্রহীতাদের কাছে পেঁৗছে দিতে পেরে আমরা আনন্দ পাচ্ছি।
যে ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়েছিল ৮৫৬ টাকা দিয়ে সে ব্যাংক এখন মাসে এক হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করছে। এর আমানতের পরিমাণ দশ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি আমানত এসেছে ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে। আমাদের এমন শাখাও আছে যেখানে সদস্যদের আমানতের পরিমাণ তাদের নেওয়া ঋণের দ্বিগুণ। আমাদের এক হাজার ১৫০টি শাখা আছে যেখানে সদস্যদের আমানতের পরিমাণ ঋণের পরিমাণের ৭৫ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি। প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা যেটা সদস্যদের আমানত হিসেবে ব্যাংকে জমা আছে, তার ৯৭ শতাংশই হলো মহিলাদের সঞ্চয়। এ টাকার ওপর মহিলাদের আর কোনো ভাগীদার নেই। এছাড়া গৃহঋণের মাধ্যমে প্রায় ৭ লাখ মহিলা নিজ মালিকানায় গৃহনির্মাণ করতে পেরেছেন।
গ্রামীণ ব্যাংকে যে মহিলারা যোগ দিয়েছেন তাদের সন্তানদের বয়সও এখন বেড়েছে। শুরুতেই তাদের সবাইকে আমরা স্কুলে পাঠাতে পেরেছি_ এটিই আমাদের আনন্দ। তাদের অনেককে বৃত্তি দিতে পারছি, উচ্চ শিক্ষার জন্য ঋণ দিতে পারছি_ তা আমাদের তৃপ্তি দেয়। আজ পর্যন্ত আমরা ১৮ কোটি টাকা বৃত্তি বাবদ দিতে পেরেছি, ৪০০ কোটি টাকা উচ্চশিক্ষা ঋণ দিতে পেরেছি। উচ্চশিক্ষা ঋণ পেয়ে ৫০ হাজার ছেলেমেয়ে এখন ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। অনেকে পিএইচডি ডিগ্রি সমাপ্ত করেছে। গ্রামীণ ব্যাংকের নতুন প্রজন্মকে আমরা একটা নতুন জীবন দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাদের মধ্যে আমরা এ অঙ্গীকার জাগিয়ে তুলছি যে, 'আমরা চাকরি করব না, আমরা চাকরি দেব।' তাদের জন্য আমরা নতুন উদ্যোক্তা ঋণ চালু করেছি। এখন আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হলো, দ্বিতীয় প্রজন্মকে চিরস্থায়ীভাবে দারিদ্র্য থেকে অনেক দূরে সরে আসার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। এ কাজের সাফল্যকে দ্রুত নিশ্চিত করাই হবে এখন আমাদের লক্ষ্য।
মানুষের মনে হয়তো এ রকম ধারণার সৃষ্টি হয়েছে যে, গ্রামীণ ব্যাংক বিদেশি টাকায় চলে। এটি মোটেই সত্য নয়। ১৯৯৫ সালের পর থেকে আর আমরা বিদেশি টাকা গ্রহণ করিনি। গ্রামীণ ব্যাংক সম্পূর্ণ নিজের টাকায় চলে। আমানতের খাতে যে টাকা জমা হয় তা দিয়েই ঋণ দেওয়া হয়। গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণ জগতে সর্বনিম্ন। ক্রমহ্রাসমান পদ্ধতিতে শতকরা ২০ টাকা। সরল সুদ অর্থাৎ সুদের ওপর সুদ হয় না। অথচ আমানতের ওপর চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ দেওয়া হয়। কেউ কেউ বলেন, এটি সরকারি ব্যাংক। কেউ কেউ বলেন, এটি এনজিও। বাস্তবে এটি সরকারি ব্যাংকও নয়, এটি এনজিও নয়। এটি একটি বিশেষ আইনে সৃষ্ট গরিবের মালিকানায় একটা বেসরকারি ব্যাংক।
অভিযোগ করা হয়, গরিবের ওপর জোরজুলুম করে টাকা আদায় করা হয়। জোরজুলুমের কোনো প্রয়োজন নেই গ্রামীণ ব্যাংকে। ঋণগ্রহীতা নিজেই গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক। ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ক্রমাগতভাবে বাড়ানো যায়। কত টাকা কিস্তি দেবেন তা সম্পূর্ণ ঋণগ্রহীতার ওপর নির্ভর করে। ঋণগ্রহীতা বা তার স্বামীর মৃত্যু হলে সঙ্গে সঙ্গে ঋণের অবশিষ্ট টাকা মওকুফ হয়ে যায়। ঋণের দায়িত্ব পরিবারের কারও ওপর বর্তায় না।
গ্রামীণ ব্যাংকের মতো বিশাল একটি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভুল ধারণার অবসান ঘটিয়ে আমরা যত বেশি নাগরিক উদ্যোগের প্রতি যত্নবান হতে পারি তত বেশি মঙ্গলজনক হবে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে, পরিবেশের ক্ষেত্রে, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে, নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে, প্রযুক্তির উদ্ভাবনশীল ব্যবহারের ক্ষেত্রে, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বৃহত্তর গণ্ডিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে, তরুণ উদ্যোক্তা সৃষ্টির ক্ষেত্রে, ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে, এ রকম আরও বহুক্ষেত্রে সামাজিক ব্যবসার ধারণা এবং কাঠামো অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।
এই সমর্থন নাগরিক উদ্যোগের অগ্রযাত্রার প্রতি সমর্থন : গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষেত্রে যে সমর্থন দেশের ভেতরে এবং বাইরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রকাশিত হয়েছে সে সমর্থন শুধু গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতি সমর্থনই নয়, সে সমর্থন নাগরিক উদ্যোগের অগ্রযাত্রার প্রতিও সোচ্চার সমর্থন। এ সমর্থনকে অব্যাহত রাখতে হবে, জোরদার করতে হবে। এ সমর্থনকে সক্রিয় উদ্যোগে পরিণত করার আয়োজন করতে হবে। সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে আমি আমার উদ্যোগ অব্যাহত রাখব। আমার মূল প্রস্তাবটি হচ্ছে, আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে সামাজিক সমস্যা সমাধানের প্রচুর ক্ষমতা আছে। সে ক্ষমতা কর্মক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য যেন আমরা এগিয়ে আসি। ২০৩০ সালের মধ্যে যদি আমরা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই তাহলে তার ভিত্তি তো আমাদের এখনই প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
আসুন, আমরা গ্রামীণ ব্যাংকের অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করি, যে ব্যাংক গরিব মহিলাকে তার সুপ্ত ক্ষমতা প্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে, যে ব্যাংক পৃথিবীতে স্বনির্ভরতার মাধ্যমে দারিদ্র্যের সমস্যা মোকাবেলা করার এক অনন্য প্রতিষ্ঠান ও পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। তার সঙ্গে নিশ্চিত করি নাগরিক সমাজের সব উদ্যোগের স্রোতকে, বাধাহীনভাবে বেগবান করার নিরাপত্তাকে। সরকার এবং নাগরিক সমাজ পারস্পরিক আস্থা এবং সহযোগিতার মধ্যে কাজ করতে পারলে আমাদের এ অর্জন সহজেই সম্ভব। এ সুযোগ যেন আমরা কিছুতেই হাতছাড়া না করি।
No comments