রাজনৈতিক তৃতীয় শক্তিকে স্বাগত অরাজনৈতিক হলে প্রতিরোধ-মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল
বিএনপি অরাজনৈতিক কোনো তৃতীয় শক্তিকে সমর্থন করবে না, বরং তাদের প্রতিহত করবে। তবে কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠন জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারলে তাদের স্বাগত জানানো হবে। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরো বলেছেন, রাজনৈতিক শক্তির বাইরে অসাংবিধানিক ও অরাজনৈতিক কোনো শক্তিকে বিএনপি কোনোভাবেই সমর্থন করবে না।
এ ছাড়া বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে সরকার এগিয়ে আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে চলমান রাজনীতি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিরোধী দলের আন্দোলন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ নানা বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দেন তিনি। ডিআরইউ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়ে নিজেদের প্রস্তাব সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এ বিষয়ে আমাদের নতুন কোনো প্রস্তাব নেই। ত্রয়োদশ সংশোধনীই আমাদের প্রস্তাব। তবে ওই সংশোধনীতে নির্দলীয় সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগের বিষয়টি সংশোধন করতে হবে। সে জন্য আলোচনা হতে পারে।' তিনি বলেন, বিএনপি কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।
তৃতীয় শক্তির উত্থান প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, 'বিএনপি সাংবিধানিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। আমরাই ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছি। তাই রাজনৈতিক শক্তির বাইরে অরাজনৈতিক ও অসাংবিধানিক কোনো শক্তিকে বিএনপি কোনোকালেই সমর্থন করেনি। ভবিষ্যতেও করবে না। বরং তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। তবে যদি কোনো রাজনৈতিক দল বা শক্তি জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে, তাহলে আমরা তাদের স্বাগত জানাব।'
যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গ : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে না। তারা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করছে। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারই একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে চিহ্নিত ১৯৫ জনকে ক্ষমা করে দিয়েছে। বিএনপিও এই বিচারের বিরোধী নয়। আমরা চাই, বিচারটি স্বচ্ছতার ভিত্তিতে হোক। এ বিচার যাতে কোনোভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা না হয়। অভিযুক্তরা যাতে ন্যায়বিচার পায়। এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন না ওঠে।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বলেছে, তাদের আমলেই মানবতাবিরোধী সব অপরাধীর বিচার শেষ করবে। সে ক্ষেত্রে বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেখা যাবে।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বন্ধ করবে। আমরা মনে করি, প্রতিটি মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। অবশ্যই অপরাধের বিচার হতে হবে। একজন মানুষকে তুলে নিয়ে কিংবা গ্রেপ্তার করে হত্যা ও গুম করা হবে- এটা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। যারা এ ধরনের কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।'
পোশাক শিল্পে ভাঙচুরের ঘটনা প্রসঙ্গে : বিএনপির এই নেতা বলেন, 'আমরা মনে করি, গার্মেন্ট শিল্পের এই বিশৃঙ্খলার পেছনে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত থাকতে পারে। ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে সারা পৃথিবীতে প্রতিযোগিতা হয়। যুদ্ধও হয়। আশুলিয়ার ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত এ বিষয়ে বিএনপির কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।'
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ গত বুধবার আশুলিয়ার ঘটনার পেছনে একটি প্রভাবশালী দেশ এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান ভারতকে দায়ী করে যে বক্তব্য দিয়েছেন সে প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, তারাই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।
আওয়ামী লীগের ১৭৫ আসনের আশা : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, 'আমি খুশি হয়েছি যে, আওয়ামী লীগ ২৬৫ আসন থেকে নেমে ১৭৫ আসনে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীকে বলব, দেয়ালের লিখন দেখুন। মানুষের চোখের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করুন।' আদালতে গিয়ে নির্দলীয় সরকারের বিষয়ে ফয়সালা করতে সৈয়দ আশরাফের পরামর্শ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আদালতে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। সেখানে তো ন্যায়বিচার পাব না। তবে কথাটা অপ্রিয় হলেও সত্য, উচ্চ আদালতের রায়ের একটি অংশ সরকার সুবিধামতো গ্রহণ করে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। রায়ের অন্য অংশটি তারা গ্রহণ করেনি। রায়ের সেই অংশটিতে বলা হয়েছে, বাস্তবতার নিরিখে আগামী দুটি নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে হতে পারে।'
সংসদে যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, 'বিএনপি চায় সংসদ কার্যকর হোক। আমরা একে প্রাধান্য দিই। আমাদের সংসদ সদস্যরা প্রতিটি কমিটির মিটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন। সংসদে বিরোধী দল এ পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজার দৃষ্টি আকর্ষণ নোটিশ ও মুলতবি প্রস্তাব দিয়েছে। তার একটিও স্পিকার গ্রহণ করেননি।'
ফখরুল বলেন, সংসদে ওয়াক আউট হতেই পারে। যেমন জিয়াউর রহমানের সময়ে তৎকালীন নেতা শাহ আজিজুর রহমান বিরোধীদলীয় নেতার অফিসে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতেন। আন্তরিকতা দিয়ে তাঁদের সংসদে ফিরিয়ে এনেছিলেন। কিন্তু এখন সরকার মনেই করে না বিরোধী দলের সঙ্গে কথা বলা দরকার।
মেধাবী ছাত্রদের রাজনীতিতে আসতে হবে : মির্জা ফখরুল ইসলাম আশঙ্কার সঙ্গে বলেন, 'বর্তমানে দেশের ৮০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী রাজনীতি পছন্দ করে না। রাজনীতির প্রতি তাদের বিমুখতা ও অনীহা আমাদের রাজনীতির জন্য আশঙ্কাজনক। তা হলে কিভাবে দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গড়ে উঠবে।' তিনি বলেন, 'মেধাবী ছাত্রদের রাজনীতিতে আসতে হবে। ছাত্রদের ছাত্র রাজনীতি করতে হবে। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। দলের ভেতরে প্রশিক্ষণ কর্মসূচিও চালু করেছি।'
রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা বলেন, 'সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভেতরে জামায়াত আছে। আমি মনে করি, মন্ত্রীরা যখন কথা বলবেন, তখন দায়িত্ব নিয়ে বলবেন। জানি না, তিনি কোন তথ্যের ভিত্তিতে এমন কথা বলেছেন। সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে মন্ত্রীর এই বক্তব্য প্রমাণ করা উচিত।'
মির্জা ফখরুল মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে আরো বলেন, 'আমাদের নেত্রী ১১ জুন যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তাকে সরকারের অনেকে পিছুটান বলছেন। এটা ঠিক নয়। আমরা হরতালের মতো কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে আসার সংস্কৃতি চালু করতে চাই বলে সরকার একে দুর্বলতা মনে করছে।'
মির্জা ফখরুল বলেন, ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পর থেকে চলমান আন্দোলনে সরকার বিরোধী দলের ১২ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে কারাগারে আটক রেখেছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য শুভ হতে পারে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'আদালত নিয়ে কথা বলতে আমরা কিছুটা ইতস্তত বোধ করি। কারণ কোনটা আদালত অবমাননা হয়ে যায়, বলা মুশকিল, যেখানে স্পিকার আদালতের দৃষ্টিতে রাষ্ট্রদ্রোহী হয়ে যান। তাই নির্দলীয় সরকার পদ্ধতি বাতিলের রায়ের বিষয়ে কথা বলতে চাই না। তবে সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী বিচারপতি টি এইচ খান বলেছেন, কোনো বিচারপতি অবসর নেওয়ার এক বছর পর কোনো রায় লিখতে পারেন না। এটা আইনের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, 'বিগত দিনে আমরা যত আন্দোলন কর্মসূচি দিয়েছি, যে কয়টি হরতাল দিয়েছি তার মধ্যে এ বিষয়গুলোও ছিল। আপনারা যদি ওই সময়ের লিফলেটগুলো দেখেন, তাহলে এটা দেখতে পাবেন।' তিনি বলেন, 'কলকাতায় ট্রামের ভাড়া ৫ পয়সা বাড়লে যেমন জনগণ তার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসে, আমাদের দেশে সেরকম হয় না। আমরা যখন এসব বিষয় নিয়ে রাস্তায় নামি, তখন সাধারণ জনগণের মধ্যে থেকে কম সাড়া পাই।'
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে চলমান রাজনীতি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিরোধী দলের আন্দোলন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ নানা বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দেন তিনি। ডিআরইউ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়ে নিজেদের প্রস্তাব সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এ বিষয়ে আমাদের নতুন কোনো প্রস্তাব নেই। ত্রয়োদশ সংশোধনীই আমাদের প্রস্তাব। তবে ওই সংশোধনীতে নির্দলীয় সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগের বিষয়টি সংশোধন করতে হবে। সে জন্য আলোচনা হতে পারে।' তিনি বলেন, বিএনপি কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।
তৃতীয় শক্তির উত্থান প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, 'বিএনপি সাংবিধানিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। আমরাই ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছি। তাই রাজনৈতিক শক্তির বাইরে অরাজনৈতিক ও অসাংবিধানিক কোনো শক্তিকে বিএনপি কোনোকালেই সমর্থন করেনি। ভবিষ্যতেও করবে না। বরং তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। তবে যদি কোনো রাজনৈতিক দল বা শক্তি জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে, তাহলে আমরা তাদের স্বাগত জানাব।'
যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গ : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে না। তারা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করছে। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারই একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে চিহ্নিত ১৯৫ জনকে ক্ষমা করে দিয়েছে। বিএনপিও এই বিচারের বিরোধী নয়। আমরা চাই, বিচারটি স্বচ্ছতার ভিত্তিতে হোক। এ বিচার যাতে কোনোভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা না হয়। অভিযুক্তরা যাতে ন্যায়বিচার পায়। এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন না ওঠে।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বলেছে, তাদের আমলেই মানবতাবিরোধী সব অপরাধীর বিচার শেষ করবে। সে ক্ষেত্রে বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেখা যাবে।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বন্ধ করবে। আমরা মনে করি, প্রতিটি মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। অবশ্যই অপরাধের বিচার হতে হবে। একজন মানুষকে তুলে নিয়ে কিংবা গ্রেপ্তার করে হত্যা ও গুম করা হবে- এটা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। যারা এ ধরনের কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।'
পোশাক শিল্পে ভাঙচুরের ঘটনা প্রসঙ্গে : বিএনপির এই নেতা বলেন, 'আমরা মনে করি, গার্মেন্ট শিল্পের এই বিশৃঙ্খলার পেছনে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত থাকতে পারে। ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে সারা পৃথিবীতে প্রতিযোগিতা হয়। যুদ্ধও হয়। আশুলিয়ার ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত এ বিষয়ে বিএনপির কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।'
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ গত বুধবার আশুলিয়ার ঘটনার পেছনে একটি প্রভাবশালী দেশ এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান ভারতকে দায়ী করে যে বক্তব্য দিয়েছেন সে প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, তারাই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।
আওয়ামী লীগের ১৭৫ আসনের আশা : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, 'আমি খুশি হয়েছি যে, আওয়ামী লীগ ২৬৫ আসন থেকে নেমে ১৭৫ আসনে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীকে বলব, দেয়ালের লিখন দেখুন। মানুষের চোখের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করুন।' আদালতে গিয়ে নির্দলীয় সরকারের বিষয়ে ফয়সালা করতে সৈয়দ আশরাফের পরামর্শ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আদালতে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। সেখানে তো ন্যায়বিচার পাব না। তবে কথাটা অপ্রিয় হলেও সত্য, উচ্চ আদালতের রায়ের একটি অংশ সরকার সুবিধামতো গ্রহণ করে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। রায়ের অন্য অংশটি তারা গ্রহণ করেনি। রায়ের সেই অংশটিতে বলা হয়েছে, বাস্তবতার নিরিখে আগামী দুটি নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে হতে পারে।'
সংসদে যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, 'বিএনপি চায় সংসদ কার্যকর হোক। আমরা একে প্রাধান্য দিই। আমাদের সংসদ সদস্যরা প্রতিটি কমিটির মিটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন। সংসদে বিরোধী দল এ পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজার দৃষ্টি আকর্ষণ নোটিশ ও মুলতবি প্রস্তাব দিয়েছে। তার একটিও স্পিকার গ্রহণ করেননি।'
ফখরুল বলেন, সংসদে ওয়াক আউট হতেই পারে। যেমন জিয়াউর রহমানের সময়ে তৎকালীন নেতা শাহ আজিজুর রহমান বিরোধীদলীয় নেতার অফিসে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতেন। আন্তরিকতা দিয়ে তাঁদের সংসদে ফিরিয়ে এনেছিলেন। কিন্তু এখন সরকার মনেই করে না বিরোধী দলের সঙ্গে কথা বলা দরকার।
মেধাবী ছাত্রদের রাজনীতিতে আসতে হবে : মির্জা ফখরুল ইসলাম আশঙ্কার সঙ্গে বলেন, 'বর্তমানে দেশের ৮০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী রাজনীতি পছন্দ করে না। রাজনীতির প্রতি তাদের বিমুখতা ও অনীহা আমাদের রাজনীতির জন্য আশঙ্কাজনক। তা হলে কিভাবে দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গড়ে উঠবে।' তিনি বলেন, 'মেধাবী ছাত্রদের রাজনীতিতে আসতে হবে। ছাত্রদের ছাত্র রাজনীতি করতে হবে। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। দলের ভেতরে প্রশিক্ষণ কর্মসূচিও চালু করেছি।'
রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা বলেন, 'সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভেতরে জামায়াত আছে। আমি মনে করি, মন্ত্রীরা যখন কথা বলবেন, তখন দায়িত্ব নিয়ে বলবেন। জানি না, তিনি কোন তথ্যের ভিত্তিতে এমন কথা বলেছেন। সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে মন্ত্রীর এই বক্তব্য প্রমাণ করা উচিত।'
মির্জা ফখরুল মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে আরো বলেন, 'আমাদের নেত্রী ১১ জুন যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তাকে সরকারের অনেকে পিছুটান বলছেন। এটা ঠিক নয়। আমরা হরতালের মতো কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে আসার সংস্কৃতি চালু করতে চাই বলে সরকার একে দুর্বলতা মনে করছে।'
মির্জা ফখরুল বলেন, ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পর থেকে চলমান আন্দোলনে সরকার বিরোধী দলের ১২ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে কারাগারে আটক রেখেছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য শুভ হতে পারে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'আদালত নিয়ে কথা বলতে আমরা কিছুটা ইতস্তত বোধ করি। কারণ কোনটা আদালত অবমাননা হয়ে যায়, বলা মুশকিল, যেখানে স্পিকার আদালতের দৃষ্টিতে রাষ্ট্রদ্রোহী হয়ে যান। তাই নির্দলীয় সরকার পদ্ধতি বাতিলের রায়ের বিষয়ে কথা বলতে চাই না। তবে সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী বিচারপতি টি এইচ খান বলেছেন, কোনো বিচারপতি অবসর নেওয়ার এক বছর পর কোনো রায় লিখতে পারেন না। এটা আইনের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, 'বিগত দিনে আমরা যত আন্দোলন কর্মসূচি দিয়েছি, যে কয়টি হরতাল দিয়েছি তার মধ্যে এ বিষয়গুলোও ছিল। আপনারা যদি ওই সময়ের লিফলেটগুলো দেখেন, তাহলে এটা দেখতে পাবেন।' তিনি বলেন, 'কলকাতায় ট্রামের ভাড়া ৫ পয়সা বাড়লে যেমন জনগণ তার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসে, আমাদের দেশে সেরকম হয় না। আমরা যখন এসব বিষয় নিয়ে রাস্তায় নামি, তখন সাধারণ জনগণের মধ্যে থেকে কম সাড়া পাই।'
No comments