রাজনীতি-রাজপথ কোনটি রক্ষা করবে, দেশ না বাড়ি? by এ কে এম জাকারিয়া
রাজপথ এ দেশকে অনেক কিছু দিয়েছে। স্বাধীনতার আগের কথা বাদ দিয়ে বলছি। এরশাদবিরোধী আন্দোলন, নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান, একানব্বইয়ে নতুন করে গণতন্ত্রের শুরু—সবই রাজপথের আন্দোলনের ফল। সেই গণতন্ত্রকে যখন এদিক-সেদিক নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, তখনো রাজপথই ছিল ভরসা।
কোনো পক্ষের নীলনকশা অনুযায়ী নির্বাচন হবে কি হবে না, তার ফয়সালাও হয়েছে রাজপথে। এত কিছু দিয়েছে যে রাজপথ, তার প্রতি তাই আমাদের চাওয়ার শেষ নেই। ‘জাতির’ সামনে আবার এমন এক ‘জরুরি’ চাওয়া এসে হাজির হয়েছে এই সময়ে, যার জন্য ভরসা মানতে হচ্ছে আবার সেই রাজপথকেই।
খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ির বিষয়টি রাজপথেই ফয়সালা হবে, এমন ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। সরকার যদি কোনো চাওয়া-পাওয়া থেকে ‘জাতিকে’ বঞ্চিত করতে চায় এবং দেশের আইন-আদালত যদি এই বঞ্চনা থেকে তাদের রক্ষা করতে না পারে, তবে রাজপথ ছাড়া আর উপায়ই বা কী! সেনানিবাসের বাড়িটি বেগম খালেদা জিয়ার থাকুক, এটা ‘জাতির চাওয়া’ না হলে নিশ্চয়ই এ নিয়ে বিএনপি রাজপথে আন্দোলনের কথা ভাবত না। আদালতের মাধ্যমে যে বিষয়টির সুরাহা হবে না, সে ব্যাপারে অনেকটা নিশ্চিত মওদুদ আহমদ। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ি নিয়ে বিএনপি আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে। তবে উচ্চ আদালতের রায় যা-ই হোক না কেন, বাড়ির বিষয়ে ফয়সালা হবে রাজপথে।’ তিনি আইনজ্ঞ মানুষ, হয়তো বুঝতে পেরেছেন, আইন খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ি রক্ষা করতে পারবে না। আইনের প্রতি যখন আস্থা রাখতে পারছেন না, তখন রাজপথকেই তো বেছে নেবেন! রাজপথ জাতিকে অনেক কিছু দিয়েছে, কিন্তু খালেদা জিয়াকে বাড়িটি ফিরিয়ে দেবে তো?
রাজপথ গণতন্ত্র ফেরত এনেছে, বিরোধী দলকে ক্ষমতায় ফিরিয়েছে। কিন্তু রাজপথ কারও বাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছে, এমন নজির অবশ্য নেই। দলনেত্রীর বাড়ি রক্ষায় তবে বিএনপি রাজপথকে বেছে নিতে চাইছে কেন? সেনানিবাসের এই বাড়ি ফেরত পাওয়ার সঙ্গে যদি দেশের ‘গণতন্ত্র’ বা ভবিষ্যতে দলের ক্ষমতায় যাওয়ার সম্পর্ক (?) থেকে থাকে, তবে অবশ্য ভিন্ন কথা। এ ক্ষেত্রে রাজপথের ওপর ভরসা করাকে জায়েজ মানতেই হবে। তবে রাজপথে নামার আগে খালেদা জিয়ার বাড়ির সঙ্গে দেশের গণতন্ত্র বা রাজনীতির একটি সম্পর্ক বা সম্পর্কের একটি সূত্র তো প্রতিষ্ঠা করতে হবে। খালেদা জিয়ার বাড়ির বিষয়টিকে জাতীয় ইস্যু করে তোলা না গেলে রাজপথে নামা যাবে কী করে। এ জন্য শুরুতে সেমিনার বা গোলটেবিল ধরনের কিছু করা জরুরি ছিল। সেই কাজটি শুরু হয়েছে। খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ি নিয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সেমিনারের বিষয়টি ছিল ‘খালেদা জিয়ার বাসভবন: সরকারের ভূমিকা ও নাগরিকদের প্রত্যাশা’। খালেদা জিয়ার বাড়ির বিষয়টি যে রাজপথে ফয়সালা হবে, তার ঘোষণা এসেছে এ সেমিনার থেকেই।
খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ি নিয়ে ‘সরকারের ভূমিকায়’ লুকোছাপার কিছু দেখা যাচ্ছে না। সরকার চায় না যে খালেদা জিয়া সেনানিবাসের বাড়িটিতে থাকুন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি দলের জেলা পর্যায়ের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদকদের জন্য আয়োজিত এক কর্মশালায় সেদিনও বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া মানবতার ডাক দেন, মানবতার কথা চিন্তা করে ভদ্রভাবে বাড়ি ছেড়ে দেওয়া উচিত। সেনা কর্মকর্তাদের আবাসনসমস্যা, আর সেখানে তিনি ১০ বিঘার বাড়ি দখল করে রেখেছেন। সে সময় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত ছিল একটি বাড়ি জিয়া পরিবারকে দেওয়ার। গুলশানে একটি বাড়ি তাঁকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরশাদ সাহেবের সঙ্গে দহরম-মহরম করে তিনি এই বাড়ি নিয়েছেন।’ (প্রথম আলো, ৬ নভেম্বর)
এই বাড়িটি নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া বা তাঁর দলের নানা প্রত্যাশা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। খালেদা জিয়া বাড়িটি রক্ষা করতে চান, সে জন্য তিনি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। হাইকোর্ট বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য ৩০ দিন সময় দিয়েছিলেন। ১২ নভেম্বর সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে ৮ নভেম্বর তিনি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি চেয়ে লিভ টু আপিল করেছেন। আর মওদুদ আহমদের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আমরা দলের প্রত্যাশার বিষয়টিও জেনে গেছি। খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের এই বাড়ি দখলে রাখতেই হবে। কিন্তু খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়িটি নিয়ে ‘নাগরিকদের’ প্রত্যাশা কী, সেটাই আমাদের কাছে স্পষ্ট হলো না।
খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের এই বাড়িটির সঙ্গে দলের স্বার্থ বা ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো সম্পর্ক আছে, তা নিশ্চয় মানতে চাইবে না দলটি। কিন্তু আমরা দেখছি যে এই বাড়িটি রক্ষার জন্য ব্যক্তি খালেদা জিয়ার চেয়ে দলটিই যেন মরিয়া হয়ে উঠেছে বেশি। তা না হলে দলের পক্ষ থেকে বিষয়টি রাজপথে ফয়সালার প্রশ্ন আসবে কেন? খালেদা জিয়া বা তাঁর দল বিএনপির জন্য ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সেনানিবাসের এই বাড়িটি ফেরত পাওয়ার সবচেয়ে ভালো পথ তো আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় যাওয়া। দল ক্ষমতায় গেলে সবই যে করা যায়, তা বিএনপির অজানা নয়। আর ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে বিএনপিকে যথেষ্ট আশাবাদীই মনে হচ্ছে। সামনে ক্ষমতায় এসে বর্তমান সরকারের অনিয়মের বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে ব্যাপারে জনগণকে নিয়মিত আশ্বস্ত করে যাচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। ৭ নভেম্বর নয়াপল্টনের জনসভায় তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘এই সরকারের আমলে যেসব যায়গায় শুধু আওয়ামী লীগ পরিচয়ে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, সেসব নিয়োগ বাতিল করা হবে। আবার সেখানে নিয়ম অনুযায়ী মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে।’ ক্ষমতায় গেলে মইনুল সড়কের বিঘা আটেকের বাড়িটিও যে আবার
ফেরত নেওয়া যাবে, এই আশ্বাস তিনি নিজেকে দিচ্ছেন না কেন?
রাজপথ আমাদের দেশে ঐতিহাসিকভাবেই বিরোধী দলের পছন্দের জায়গা। ইতিহাসের নিয়ম মেনে চললে এখন বিএনপির রাজপথেই থাকার সময়। খালেদা জিয়ার বাড়ি নিয়ে রাজপথে থাকার ঘোষণা এসেছে। তবে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি চেয়ে খালেদা জিয়া লিভ টু আপিল করায় এর নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ নিয়ে রাস্তায় নামার সুযোগ কম। আদালত লিভ টু আপিলের শুনানি ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করেছেন। কিন্তু বিরোধী দল রাজপথের বাইরে থাকবে, তা তো হয় না। আপাতত ট্রানজিট এবং ভারতের সঙ্গে ঋণচুক্তি দিয়ে শুরু হোক, গা গরম করা জরুরি। বিএনপিকে শুধু খালেদা জিয়ার বাড়ি রক্ষার আন্দোলন করলে তো হবে না, দেশও তো রক্ষা করতে হবে! ঈদের পর ‘দেশরক্ষায়’ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া।
আমরা আসলে ধন্ধের মধ্যে পড়ে গেছি। রাজপথ শেষ পর্যন্ত কোনটি রক্ষা করবে? দেশ না বাড়ি!
এ কে এম জাকারিয়া: সাংবাদিক।
akmzakaria@gmail.com
খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ির বিষয়টি রাজপথেই ফয়সালা হবে, এমন ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। সরকার যদি কোনো চাওয়া-পাওয়া থেকে ‘জাতিকে’ বঞ্চিত করতে চায় এবং দেশের আইন-আদালত যদি এই বঞ্চনা থেকে তাদের রক্ষা করতে না পারে, তবে রাজপথ ছাড়া আর উপায়ই বা কী! সেনানিবাসের বাড়িটি বেগম খালেদা জিয়ার থাকুক, এটা ‘জাতির চাওয়া’ না হলে নিশ্চয়ই এ নিয়ে বিএনপি রাজপথে আন্দোলনের কথা ভাবত না। আদালতের মাধ্যমে যে বিষয়টির সুরাহা হবে না, সে ব্যাপারে অনেকটা নিশ্চিত মওদুদ আহমদ। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ি নিয়ে বিএনপি আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে। তবে উচ্চ আদালতের রায় যা-ই হোক না কেন, বাড়ির বিষয়ে ফয়সালা হবে রাজপথে।’ তিনি আইনজ্ঞ মানুষ, হয়তো বুঝতে পেরেছেন, আইন খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ি রক্ষা করতে পারবে না। আইনের প্রতি যখন আস্থা রাখতে পারছেন না, তখন রাজপথকেই তো বেছে নেবেন! রাজপথ জাতিকে অনেক কিছু দিয়েছে, কিন্তু খালেদা জিয়াকে বাড়িটি ফিরিয়ে দেবে তো?
রাজপথ গণতন্ত্র ফেরত এনেছে, বিরোধী দলকে ক্ষমতায় ফিরিয়েছে। কিন্তু রাজপথ কারও বাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছে, এমন নজির অবশ্য নেই। দলনেত্রীর বাড়ি রক্ষায় তবে বিএনপি রাজপথকে বেছে নিতে চাইছে কেন? সেনানিবাসের এই বাড়ি ফেরত পাওয়ার সঙ্গে যদি দেশের ‘গণতন্ত্র’ বা ভবিষ্যতে দলের ক্ষমতায় যাওয়ার সম্পর্ক (?) থেকে থাকে, তবে অবশ্য ভিন্ন কথা। এ ক্ষেত্রে রাজপথের ওপর ভরসা করাকে জায়েজ মানতেই হবে। তবে রাজপথে নামার আগে খালেদা জিয়ার বাড়ির সঙ্গে দেশের গণতন্ত্র বা রাজনীতির একটি সম্পর্ক বা সম্পর্কের একটি সূত্র তো প্রতিষ্ঠা করতে হবে। খালেদা জিয়ার বাড়ির বিষয়টিকে জাতীয় ইস্যু করে তোলা না গেলে রাজপথে নামা যাবে কী করে। এ জন্য শুরুতে সেমিনার বা গোলটেবিল ধরনের কিছু করা জরুরি ছিল। সেই কাজটি শুরু হয়েছে। খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ি নিয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সেমিনারের বিষয়টি ছিল ‘খালেদা জিয়ার বাসভবন: সরকারের ভূমিকা ও নাগরিকদের প্রত্যাশা’। খালেদা জিয়ার বাড়ির বিষয়টি যে রাজপথে ফয়সালা হবে, তার ঘোষণা এসেছে এ সেমিনার থেকেই।
খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ি নিয়ে ‘সরকারের ভূমিকায়’ লুকোছাপার কিছু দেখা যাচ্ছে না। সরকার চায় না যে খালেদা জিয়া সেনানিবাসের বাড়িটিতে থাকুন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি দলের জেলা পর্যায়ের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদকদের জন্য আয়োজিত এক কর্মশালায় সেদিনও বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া মানবতার ডাক দেন, মানবতার কথা চিন্তা করে ভদ্রভাবে বাড়ি ছেড়ে দেওয়া উচিত। সেনা কর্মকর্তাদের আবাসনসমস্যা, আর সেখানে তিনি ১০ বিঘার বাড়ি দখল করে রেখেছেন। সে সময় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত ছিল একটি বাড়ি জিয়া পরিবারকে দেওয়ার। গুলশানে একটি বাড়ি তাঁকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরশাদ সাহেবের সঙ্গে দহরম-মহরম করে তিনি এই বাড়ি নিয়েছেন।’ (প্রথম আলো, ৬ নভেম্বর)
এই বাড়িটি নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া বা তাঁর দলের নানা প্রত্যাশা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। খালেদা জিয়া বাড়িটি রক্ষা করতে চান, সে জন্য তিনি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। হাইকোর্ট বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য ৩০ দিন সময় দিয়েছিলেন। ১২ নভেম্বর সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে ৮ নভেম্বর তিনি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি চেয়ে লিভ টু আপিল করেছেন। আর মওদুদ আহমদের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আমরা দলের প্রত্যাশার বিষয়টিও জেনে গেছি। খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের এই বাড়ি দখলে রাখতেই হবে। কিন্তু খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়িটি নিয়ে ‘নাগরিকদের’ প্রত্যাশা কী, সেটাই আমাদের কাছে স্পষ্ট হলো না।
খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের এই বাড়িটির সঙ্গে দলের স্বার্থ বা ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো সম্পর্ক আছে, তা নিশ্চয় মানতে চাইবে না দলটি। কিন্তু আমরা দেখছি যে এই বাড়িটি রক্ষার জন্য ব্যক্তি খালেদা জিয়ার চেয়ে দলটিই যেন মরিয়া হয়ে উঠেছে বেশি। তা না হলে দলের পক্ষ থেকে বিষয়টি রাজপথে ফয়সালার প্রশ্ন আসবে কেন? খালেদা জিয়া বা তাঁর দল বিএনপির জন্য ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সেনানিবাসের এই বাড়িটি ফেরত পাওয়ার সবচেয়ে ভালো পথ তো আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় যাওয়া। দল ক্ষমতায় গেলে সবই যে করা যায়, তা বিএনপির অজানা নয়। আর ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে বিএনপিকে যথেষ্ট আশাবাদীই মনে হচ্ছে। সামনে ক্ষমতায় এসে বর্তমান সরকারের অনিয়মের বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে ব্যাপারে জনগণকে নিয়মিত আশ্বস্ত করে যাচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। ৭ নভেম্বর নয়াপল্টনের জনসভায় তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘এই সরকারের আমলে যেসব যায়গায় শুধু আওয়ামী লীগ পরিচয়ে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, সেসব নিয়োগ বাতিল করা হবে। আবার সেখানে নিয়ম অনুযায়ী মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে।’ ক্ষমতায় গেলে মইনুল সড়কের বিঘা আটেকের বাড়িটিও যে আবার
ফেরত নেওয়া যাবে, এই আশ্বাস তিনি নিজেকে দিচ্ছেন না কেন?
রাজপথ আমাদের দেশে ঐতিহাসিকভাবেই বিরোধী দলের পছন্দের জায়গা। ইতিহাসের নিয়ম মেনে চললে এখন বিএনপির রাজপথেই থাকার সময়। খালেদা জিয়ার বাড়ি নিয়ে রাজপথে থাকার ঘোষণা এসেছে। তবে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি চেয়ে খালেদা জিয়া লিভ টু আপিল করায় এর নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ নিয়ে রাস্তায় নামার সুযোগ কম। আদালত লিভ টু আপিলের শুনানি ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করেছেন। কিন্তু বিরোধী দল রাজপথের বাইরে থাকবে, তা তো হয় না। আপাতত ট্রানজিট এবং ভারতের সঙ্গে ঋণচুক্তি দিয়ে শুরু হোক, গা গরম করা জরুরি। বিএনপিকে শুধু খালেদা জিয়ার বাড়ি রক্ষার আন্দোলন করলে তো হবে না, দেশও তো রক্ষা করতে হবে! ঈদের পর ‘দেশরক্ষায়’ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া।
আমরা আসলে ধন্ধের মধ্যে পড়ে গেছি। রাজপথ শেষ পর্যন্ত কোনটি রক্ষা করবে? দেশ না বাড়ি!
এ কে এম জাকারিয়া: সাংবাদিক।
akmzakaria@gmail.com
No comments