একি ব্যাপক দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ!-তিতাসের ১০০ কোটি টাকা

জ্বালানি গ্যাসের সংকটের কারণে সরকার ২০০৯ সালে বাণিজ্যিক ও ২০১০ সালে আবাসিক খাতে নতুন সংযোগ দেওয়া বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত দু-তিন বছরে দেখা গেল, তার ফল সামগ্রিকভাবে নেতিবাচক।প্রথমত, যে উদ্দেশ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা সফল হয়নি। কারণ, এতে বাড়তি গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ হয়নি।


বস্তুত, সরকার এ সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর থেকে নতুন সংযোগ দেওয়া ও নেওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ হলেও সংযোগ দেওয়া-নেওয়া বন্ধ থাকেনি। এ সময়ের মধ্যে যাঁরা নতুন সংযোগ পাওয়ার চেষ্টা করেছেন, তাঁদের ৬০ শতাংশই সংযোগ পেয়েছেন। সরকারের ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এসব সংযোগ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু এগুলোকে চোরাই সংযোগও বলা যায় না। কারণ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও বিল বইয়ের মাধ্যমে ব্যাংকে টাকা জমা নিয়ে এসব সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এসব সংযোগের গ্রাহকেরা বিল পরিশোধও করেছেন। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান বছরে তিতাসের গ্রাহকদের কাছ থেকে যে পরিমাণ অর্থ গ্যাস-বিল হিসেবে পাওয়ার কথা বা পাওয়া গেছে, তার চেয়ে ১০০ কোটি টাকা বেশি। যেহেতু এই সংযোগগুলো কাগজে-কলমে বৈধ নয়, তাই এই ১০০ কোটি টাকা তিতাসের মূল হিসাবে জমা হচ্ছে না।
দ্বিতীয়ত, সরকারের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকা অবস্থায় এই যে সংযোগগুলো দেওয়া হয়েছে, এ থেকে তিতাস কর্তৃপক্ষের ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির আভাস মেলে। কী যুক্তিতে, কিসের বিনিময়ে এই অবৈধ সংযোগগুলো দেওয়া হয়েছে, তা অবশ্যই তদন্ত করে দেখা উচিত। গ্যাসের নতুন সংযোগের ব্যাপারে সরকারের নিষেধাজ্ঞাটি তিতাসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যাপক দুর্নীতিতে লিপ্ত হওয়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহূত হয়েছে বলেই আমাদের ধারণা। এ ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশনের নিশ্চয়ই কিছু করার রয়েছে।
তৃতীয়ত, গ্যাসের নতুন সংযোগের ব্যাপারে সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে যেসব নাগরিক সংযোগ পাননি, জ্বালানি গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাঁরা বিরাট বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। তাঁদের কয়েক গুণ বেশি দামে এলপি গ্যাস কিনতে হচ্ছে, বাজারে যার দাম নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে চলেছে। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে নাগরিকদের সুযোগের সমতা সংবিধানে নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই বৈষম্যের কী জবাব দেবে সরকার? গ্যাসের সংকট আছে—এ কথা সত্য হলেও এই যুক্তিতে সংযোগ পেতে আগ্রহী নাগরিকদের বঞ্চিত করা ন্যায়সংগত হচ্ছে না। কারণ, নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই বিপুলসংখ্যক নতুন সংযোগ দেওয়া হয়েছে কার্যত অবৈধভাবে। সংশ্লিষ্ট ওয়াকিবহাল মহলের কেউ কেউ বলেছেন, এতেও দেশের গ্যাস-পরিস্থিতির তেমন কোনো হেরফের ঘটেনি।
প্রথম আলোর বুধবারের প্রতিবেদনটি থেকে আমাদের কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, তিতাস কোম্পানির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুর্নীতিকে একধরনের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন। এটি একটি গুরুতর বিষয়। এ বিষয়ে বিশদ তদন্ত করে এই দুর্নীতির আইনি প্রতিকার করা অবশ্যকর্তব্য। মহা দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.