ওরা কোথায় যাবে? by তারেক শামসুর রেহমান
গত ২৮ জুলাই এইচএসসির ফল প্রকাশিত হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের যে উল্লাসের ছবি পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে, সেই উল্লাস হতাশায় পরিণত হতে পারে যখন এদের অনেকেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির কোনো সুযোগ পাবে না। দেশে এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। পাসের হারও বেড়েছে। ১০টি শিক্ষা বোর্ডের মোট পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। পাসের হার এবার ৭৫ দশমিক ০৮। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৯ হাজার ৭৬৯ ছাত্রছাত্রী, যা গত বছরের চেয়ে ১০ হাজার ৭৬৫ জন বেশি।
এতে করে আমাদের শিক্ষার মান কতটুকু বেড়েছে, আমি সেই বিতর্কে যাব না, আমার প্রশ্ন, মেধাসম্পন্ন এসব তরুণ কোথায় ভর্তি হবে? আমরা যখন এক সময় এইচএসসি পাস করেছিলাম, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল কম, হাতেগোনা। মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যাও ছিল সীমিত। বুয়েট ছিল প্রকৌশল বিদ্যার একমাত্র ভরসা। আজ যুগের বিবর্তনে বেড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা। বেড়েছে মেডিক্যাল কলেজ ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু তার পরও মেধাবীদের অনেকেই সরকারি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করার কোনো সুযোগ পাবে না। পরিসংখ্যানই বলে দেয় এদের অনেকের জন্যই কোনো সুযোগ নেই।
এবার বিভিন্ন গ্রেডে পাস করেছে পাঁচ লাখ ৭৪ হাজার ২৬১ জন। এরা কোথায় যাবে? সবারই টার্গেট থাকে নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল তথা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। কিন্তু সেই ভাগ্য অনেকেরই হয় না। অনেকে বাধ্য হয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন কলেজগুলোতে ভর্তি হয়। কিন্তু কলেজগুলোতে মানসম্পন্ন শিক্ষা দেওয়া হয় না। আমি অনেক কলেজের খবর জানি, যেখানে অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। কিন্তু কোনো ক্লাস হয় না। এমনি একটি কলেজের নাম পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ, যে কলেজের ছাত্র ছিলাম আমি একসময়। ইংরেজিতে অনার্স রয়েছে। শিক্ষকের সংখ্যা কম। আদৌ কোনো ক্লাস হয় না। এই কলেজটি পুরনো। অনার্স রয়েছে ১৩টি বিষয়ে। অধিকাংশ শিক্ষকই ক্লাস নেন না, প্রাইভেট পড়ান। ছাত্ররা বাধ্য হয় প্রাইভেট পড়তে। ইংরেজিতে অনার্স পড়া এক ছাত্র আমাকে জানিয়েছিল, তারা ঢাকা থেকে গাইড বই নিয়ে যায়, ওটা মুখস্থ করে পরীক্ষা দেয়। ঢাকার একটি নামি কলেজের খবর আমি জানি। ওখানকার অবস্থাও একই। অনার্স চালু করা হয়েছে। কিন্তু কোনো তদারকি নেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরিণত হয়েছে একটি সার্টিফিকেট বিতরণ করা প্রতিষ্ঠানে। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কথা নাই বা বললাম। ওখানে কারা পড়ান, কী পড়ান_তা মনিটর করার কেউ নেই। সদ্যবিদায়ী মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম তাই আক্ষেপ করেই বলেছেন, 'ওরা কোনো কথা শোনে না।'
আজ যখন এইচএসসির মেধাবী তরুণদের ছবি আমি দেখি, তখন আমার মনে হয়, আমরা এক সার্টিফিকেটসর্বস্ব জাতিকে পরিণত হতে যাচ্ছি। 'ঘরে ঘরে এমএ পাস। আর ইদানীং ট্রেণ্ড হচ্ছে এমবিএ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দাঁড়িয়ে আছে এমবিএ ডিগ্রি দেওয়ার জন্য। তাদের আবার একাধিক ক্যাম্পাস। একটি শক্ত লোকের বড় দরকার ছিল ইউজিসিতে। আজাদ চৌধুরী নিজেকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে গর্ব করেন। পত্রিকায় পরিচয়ও দেন সেভাবে। দু-দুবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যিনি ভিসি ছিলেন, তাঁর কাছে প্রতিমন্ত্রীর পরিচয়টা বড় হওয়া উচিত নয়। তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়মশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবেন_এই উদ্যোগই তাঁর নেওয়া উচিত।
শিক্ষামন্ত্রী আসেন। শিক্ষামন্ত্রী যান। ইউজিসির চেয়ারম্যানও বদলে যায় সরকারের পটপরিবর্তনের পর পরই। কিন্তু উচ্চশিক্ষায় গুণগত কোনো পরিবর্তন আসে না। আমরা একটি শিক্ষানীতি পেয়েছি। কিন্তু সেখানেও নতুন প্রজন্মের উচ্চশিক্ষার কোনো দিকনির্দেশনা নেই। আগামী ২০ বছরে আমাদের কত গ্র্যাজুয়েট দরকার, কোন কোন খাতে আমাদের প্রশিক্ষিত জনশক্তি দরকার, তার কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পালি বা ফারসি ভাষায় শত শত ছাত্রছাত্রী ভর্তি হচ্ছে। এর কি আদৌ প্রয়োজন? আমাদের সমাজব্যবস্থায় একজন মুসলমান ছেলে পালি ভাষায় মাস্টার ডিগ্রি নিয়ে চাকরি করবে কোথায়? শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্যই ভর্তি হওয়া। পড়াশোনাটা এখানে গৌণ। এভাবেই মেধার অপচয় হচ্ছে। এ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ভাবেন বলে মনে হয় না। উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে প্রায় প্রতিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে কথা বলছেন মাননীয় রাষ্ট্রপতি। আমরা আমজনতা তাঁর বক্তব্য শুনে উৎফুল্ল হচ্ছি। কিন্তু তিনি কি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট বাণিজ্য বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন? কেন এখনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠন করা হলো না, যারা শিক্ষার মান নির্ধারণ করবে? নামসর্বস্ব একটি সার্টিফিকেট, শিক্ষার মানোন্নয়নের কোনো পরিচয় হতে পারে না। আমরা আশঙ্কা করছি, এইচএসসি পাস করা অনেক তরুণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আদৌ কোনো সুযোগ না পেয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে এবং একসময় নামসর্বস্ব একখানা সার্টিফিকেটের অধিকারী সে হবে! কিন্তু ওই সার্টিফিকেট দেখিয়ে সে চাকরি পাবে, এই নিশ্চয়তা সমাজ তাকে দেবে না।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনো ভালো ভালো শিক্ষক রয়েছেন। অনেকেই শুধু টাকার জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করেন। তরুণ শিক্ষার্থীরা যাতে করে নামসর্বস্ব সার্টিফিকেটের জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে ঝুঁকে না পড়ে, সে জন্য নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া যায় : ১. পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে 'দ্বিতীয় শিফট চালু করা। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় শিফটে যারা পড়বে, তারা অতিরিক্ত ভর্তি ফি দিয়ে পড়বে। বিভাগের শিক্ষকদের এ জন্য অতিরিক্ত সম্মানীর ব্যবস্থা করতে হবে। ফলে একদিকে তাঁরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে নিরুৎসাহী হবেন, অন্যদিকে বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে আমরা দ্বিতীয় শিফটের ব্যাপারে আকৃষ্ট করতে পারব। দ্বিতীয় শিফটের জন্য ইউজিসি একটি নীতিমালা তৈরি করবে এবং প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তা অনুসরণ করবে। ২. পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দ্বিতীয় ক্যাম্পাস চালু করা। ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী কিংবা শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস বিভাগের বাইরে অন্যত্র চালু করা সম্ভব। একজন প্রো-ভিসির পরিচালনায় তা চালু হতে পারে। মূল ক্যাম্পাসের শিক্ষকরাই সেখানে নিয়মিতভাবে শিক্ষা দিতে পারেন। প্রয়োজনে কিছু তরুণ শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। ৩. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো ভেঙে সাতটি বিভাগীয় শহরে সাতটি পুরনো কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে চালু করা যেতে পারে। কোনো কোনো কলেজে ভালো শিক্ষক আছেন। তাঁদের নিয়ে উচ্চপর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো সম্ভব। এসব কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যেভাবে রয়েছে, তা শুধু সার্টিফিকেটসর্বস্ব একটি তরুণ প্রজন্মের জন্ম দিচ্ছে। ৪. পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে নতুন ক্যাম্পাস, দ্বিতীয় শিফট চালুর বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে।
আমাদের তরুণ প্রজন্মের মেধা আছে। এরা প্রতিভাবান। উচ্চশিক্ষা এদের অধিকার। এদের মেধা ব্যবহার করার স্বার্থেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা চাই না, যে জিপিএ-৫ পেয়ে একটা স্বপ্ন দেখেছিল, তার স্বপ্ন ভেঙে যাক।
লেখক : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক সদস্য
tsrahman 09@gmail.com
এবার বিভিন্ন গ্রেডে পাস করেছে পাঁচ লাখ ৭৪ হাজার ২৬১ জন। এরা কোথায় যাবে? সবারই টার্গেট থাকে নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল তথা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। কিন্তু সেই ভাগ্য অনেকেরই হয় না। অনেকে বাধ্য হয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন কলেজগুলোতে ভর্তি হয়। কিন্তু কলেজগুলোতে মানসম্পন্ন শিক্ষা দেওয়া হয় না। আমি অনেক কলেজের খবর জানি, যেখানে অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। কিন্তু কোনো ক্লাস হয় না। এমনি একটি কলেজের নাম পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ, যে কলেজের ছাত্র ছিলাম আমি একসময়। ইংরেজিতে অনার্স রয়েছে। শিক্ষকের সংখ্যা কম। আদৌ কোনো ক্লাস হয় না। এই কলেজটি পুরনো। অনার্স রয়েছে ১৩টি বিষয়ে। অধিকাংশ শিক্ষকই ক্লাস নেন না, প্রাইভেট পড়ান। ছাত্ররা বাধ্য হয় প্রাইভেট পড়তে। ইংরেজিতে অনার্স পড়া এক ছাত্র আমাকে জানিয়েছিল, তারা ঢাকা থেকে গাইড বই নিয়ে যায়, ওটা মুখস্থ করে পরীক্ষা দেয়। ঢাকার একটি নামি কলেজের খবর আমি জানি। ওখানকার অবস্থাও একই। অনার্স চালু করা হয়েছে। কিন্তু কোনো তদারকি নেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরিণত হয়েছে একটি সার্টিফিকেট বিতরণ করা প্রতিষ্ঠানে। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কথা নাই বা বললাম। ওখানে কারা পড়ান, কী পড়ান_তা মনিটর করার কেউ নেই। সদ্যবিদায়ী মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম তাই আক্ষেপ করেই বলেছেন, 'ওরা কোনো কথা শোনে না।'
আজ যখন এইচএসসির মেধাবী তরুণদের ছবি আমি দেখি, তখন আমার মনে হয়, আমরা এক সার্টিফিকেটসর্বস্ব জাতিকে পরিণত হতে যাচ্ছি। 'ঘরে ঘরে এমএ পাস। আর ইদানীং ট্রেণ্ড হচ্ছে এমবিএ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দাঁড়িয়ে আছে এমবিএ ডিগ্রি দেওয়ার জন্য। তাদের আবার একাধিক ক্যাম্পাস। একটি শক্ত লোকের বড় দরকার ছিল ইউজিসিতে। আজাদ চৌধুরী নিজেকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে গর্ব করেন। পত্রিকায় পরিচয়ও দেন সেভাবে। দু-দুবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যিনি ভিসি ছিলেন, তাঁর কাছে প্রতিমন্ত্রীর পরিচয়টা বড় হওয়া উচিত নয়। তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়মশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবেন_এই উদ্যোগই তাঁর নেওয়া উচিত।
শিক্ষামন্ত্রী আসেন। শিক্ষামন্ত্রী যান। ইউজিসির চেয়ারম্যানও বদলে যায় সরকারের পটপরিবর্তনের পর পরই। কিন্তু উচ্চশিক্ষায় গুণগত কোনো পরিবর্তন আসে না। আমরা একটি শিক্ষানীতি পেয়েছি। কিন্তু সেখানেও নতুন প্রজন্মের উচ্চশিক্ষার কোনো দিকনির্দেশনা নেই। আগামী ২০ বছরে আমাদের কত গ্র্যাজুয়েট দরকার, কোন কোন খাতে আমাদের প্রশিক্ষিত জনশক্তি দরকার, তার কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পালি বা ফারসি ভাষায় শত শত ছাত্রছাত্রী ভর্তি হচ্ছে। এর কি আদৌ প্রয়োজন? আমাদের সমাজব্যবস্থায় একজন মুসলমান ছেলে পালি ভাষায় মাস্টার ডিগ্রি নিয়ে চাকরি করবে কোথায়? শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্যই ভর্তি হওয়া। পড়াশোনাটা এখানে গৌণ। এভাবেই মেধার অপচয় হচ্ছে। এ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ভাবেন বলে মনে হয় না। উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে প্রায় প্রতিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে কথা বলছেন মাননীয় রাষ্ট্রপতি। আমরা আমজনতা তাঁর বক্তব্য শুনে উৎফুল্ল হচ্ছি। কিন্তু তিনি কি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট বাণিজ্য বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন? কেন এখনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠন করা হলো না, যারা শিক্ষার মান নির্ধারণ করবে? নামসর্বস্ব একটি সার্টিফিকেট, শিক্ষার মানোন্নয়নের কোনো পরিচয় হতে পারে না। আমরা আশঙ্কা করছি, এইচএসসি পাস করা অনেক তরুণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আদৌ কোনো সুযোগ না পেয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে এবং একসময় নামসর্বস্ব একখানা সার্টিফিকেটের অধিকারী সে হবে! কিন্তু ওই সার্টিফিকেট দেখিয়ে সে চাকরি পাবে, এই নিশ্চয়তা সমাজ তাকে দেবে না।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনো ভালো ভালো শিক্ষক রয়েছেন। অনেকেই শুধু টাকার জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করেন। তরুণ শিক্ষার্থীরা যাতে করে নামসর্বস্ব সার্টিফিকেটের জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে ঝুঁকে না পড়ে, সে জন্য নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া যায় : ১. পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে 'দ্বিতীয় শিফট চালু করা। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় শিফটে যারা পড়বে, তারা অতিরিক্ত ভর্তি ফি দিয়ে পড়বে। বিভাগের শিক্ষকদের এ জন্য অতিরিক্ত সম্মানীর ব্যবস্থা করতে হবে। ফলে একদিকে তাঁরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে নিরুৎসাহী হবেন, অন্যদিকে বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে আমরা দ্বিতীয় শিফটের ব্যাপারে আকৃষ্ট করতে পারব। দ্বিতীয় শিফটের জন্য ইউজিসি একটি নীতিমালা তৈরি করবে এবং প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তা অনুসরণ করবে। ২. পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দ্বিতীয় ক্যাম্পাস চালু করা। ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী কিংবা শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস বিভাগের বাইরে অন্যত্র চালু করা সম্ভব। একজন প্রো-ভিসির পরিচালনায় তা চালু হতে পারে। মূল ক্যাম্পাসের শিক্ষকরাই সেখানে নিয়মিতভাবে শিক্ষা দিতে পারেন। প্রয়োজনে কিছু তরুণ শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। ৩. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো ভেঙে সাতটি বিভাগীয় শহরে সাতটি পুরনো কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে চালু করা যেতে পারে। কোনো কোনো কলেজে ভালো শিক্ষক আছেন। তাঁদের নিয়ে উচ্চপর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো সম্ভব। এসব কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যেভাবে রয়েছে, তা শুধু সার্টিফিকেটসর্বস্ব একটি তরুণ প্রজন্মের জন্ম দিচ্ছে। ৪. পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে নতুন ক্যাম্পাস, দ্বিতীয় শিফট চালুর বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে।
আমাদের তরুণ প্রজন্মের মেধা আছে। এরা প্রতিভাবান। উচ্চশিক্ষা এদের অধিকার। এদের মেধা ব্যবহার করার স্বার্থেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা চাই না, যে জিপিএ-৫ পেয়ে একটা স্বপ্ন দেখেছিল, তার স্বপ্ন ভেঙে যাক।
লেখক : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক সদস্য
tsrahman 09@gmail.com
No comments