অবৈধ সংযোগ-গ্যাস চুরি বন্ধ হবে কী করে?

দেশে উত্তোলিত গ্যাসের মজুদ বর্তমান পর্যায়ে চাহিদা পূরণের খুব কাছাকাছি হলেও প্রয়োজনীয় সঞ্চালন লাইন ও কমপ্রেসারের অভাবে সেগুলো গ্রিডে যুক্ত করা যাচ্ছে না বলে সম্প্রতি সমকালে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ পায়। রোববারও গ্যাস সংক্রান্ত আর একটি রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে। সেটাও কম আগ্রহোদ্দীপক নয়।


রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকারের আমলে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে গত দেড় বছরে অবৈধ পথে প্রায় আড়াই লাখ আবাসিক গ্যাস সংযোগ লেগেছে। ফলে বর্তমানে দেশের পাঁচটি বিতরণ কোম্পানির অধীনে আবাসিক গ্যাস গ্রাহকের সংখ্যা বৈধ ২৩ লাখ ৫ হাজার ২৩১টির সঙ্গে অবৈধ প্রায় দেড় লাখ মিলে সাড়ে ২৪ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এতে সরকারের বছরে ৮১ কোটি টাকা রাজস্ব হারানো ছাড়াও বৈধ গ্রাহকরা বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন সময়ে গ্যাসের চাপ মাত্রাতিরিক্ত হ্রাস পাওয়ায় তাদের গ্যাস-প্রাপ্তি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জাতীয় ও ব্যক্তিগত এই দ্বিবিধ ক্ষতির জন্য গ্যাস সংযোগ প্রদানকারী ঠিকাদার ও গ্যাস কোম্পানিগুলোর একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা দায়ী। কারণ তারাই আবাসিক অবৈধ সংযোগ লাগানোয় গ্রাহকদের প্ররোচিত করেছে। প্রশ্ন হলো_ তারা এত বড় একটা দুর্নীতি ও অনিয়ম সংঘটন করতে পারল কী করে? গ্যাস কোম্পানিগুলোর সার্বক্ষণিক বিতরণ ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণের পর্যাপ্ত ও কর্মক্ষম পদ্ধতি না থাকার সুযোগ নিয়েছে তারা। এখন বলা হচ্ছে, পর্যাপ্তসংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট নেই বলে কোম্পানিগুলোর পক্ষে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কাজটিও করা যাচ্ছে না। কিন্তু পর্যাপ্তসংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়া হলেও কি ইতিমধ্যে দেওয়া দেড় লাখের মতো অবৈধ গ্যাস সংযোগ বন্ধ করার কাজ পুরোপুরি সফল করা যাবে? কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে যে, গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে এ কাজে নিয়োজিতদের স্থানীয়দের প্রতিরোধের মুখে পড়তে হতে পারে। অতীতে এ ধরনের ঘটনা যখন ঘটেছে, তখন ভবিষ্যতেও তার পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী ও কোম্পানিগুলোর প্রশাসনকে একযোগে কাজ করা উচিত। এতে কিছুটা সুফল মিলতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাবে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর পুনরায় একই আবাসিকে অবৈধ সংযোগ লেগে গেছে। এভাবে একই স্থানে পুনঃপুন অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যাবে কি! প্রশ্ন আসবে, তাই বলে কি আমরা অবৈধ গ্যাস সংযোগ বন্ধ করার কার্যক্রমকে সমর্থন করব না? অবশ্যই আমরা এভাবে অবৈধ গ্যাস সংযোগ নেওয়ার বিরোধী। এজন্য সর্বাগ্রে এই বেআইনি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা চাই। যেসব আবাসিকে অবৈধ সংযোগ লাগানো হয়েছে সে সবের মালিককে এজন্য অবশ্যই জরিমানা গুনতে হবে। তবে সরকারকে গ্যাস চুরি বন্ধ করার জন্য সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি উত্তোলিত গ্যাসের পুরোটাই গ্রিডে দেওয়ার মাধ্যমে সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে। এতে গ্রাহক পর্যায়ে বর্তমান গ্যাস ঘাটতি অনেকটাই পূরণ হবে। তা ছাড়া দেশে ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটানোর জন্য বোতলজাত গ্যাস সাশ্রয়ী মূল্যে সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.