হাসপাতালে ধর্মঘট-প্রতিকারের ভিন্ন পথ ভাবুন
হাসপাতালের চিকিৎসকদের একযোগে ধর্মঘট পালন কি নৈতিক মানদণ্ডে গ্রহণযোগ্য_ এ প্রশ্ন বিভিন্ন দেশেই উঠছে। অন্যায়ের শিকার হলে তার প্রতিকার কিংবা ন্যায্য দাবি তুলে ধরতে হলে প্রতিবাদের ভাষা কীরূপ হওয়া উচিত, তা নিয়ে মতের ভিন্নতা রয়েছে। আইন করে ধর্মঘট নিষিদ্ধ করেও তেমন সুফল মিলছে না। রোগীদের জন্য চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি করে মাঝে মধ্যেই ঘটছে কর্মবিরতি। কখনও তা হয় স্বল্প সময়ের জন্য, কখনও-বা একটানা। বাংলাদেশেও তা চলছে।
সোমবার সমকালে হাসপাতালে চিকিৎসকদের ধর্মঘটের দুটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। একটি রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে, অন্যটি টাঙ্গাইলের মধুপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। উভয় ঘটনার সূত্রপাত আইন-শৃঙ্খলাজনিত কারণে। মিটফোর্ডে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠন যুবলীগের একজন ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকে কর্মরত চিকিৎসক চিনতে না পারার 'গুরুতর অপরাধে' সন্ত্রাসীদের রোষের শিকার হয়েছেন এক চিকিৎসক এবং প্রতিকার ও নিরাপত্তার দাবিতে তার সহকর্মীরা রোববার দল বেঁধে ধর্মঘট শুরু করে দেন। মধুপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংকটাপন্ন এক রোগীর মৃত্যু ঘটেছে 'যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে' এবং এ অভিযোগ তুলে মৃতের স্বজনরা এক চিকিৎসককে মারধর করে। পরিণতিতে ডাকা হয় ধর্মঘট। মিটফোর্ড হাসপাতালের অবস্থান রাজধানীতে হওয়ায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ত্বরিত হস্তক্ষেপে কয়েক ঘণ্টা পর ধর্মঘটের নিরসন ঘটে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, তাদের ধর্মঘট সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। যুবলীগের দাপুটে স্থানীয় নেতা নাসির উদ্দিনকে গ্রেফতার এবং অন্য সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতার করার আশ্বাসের ফলে চিকিৎসকরা কিছুটা নমনীয় হন। অন্যদিকে মধুপুরের চিকিৎসকদের ধর্মঘট অনির্দিষ্টকালের জন্য ডাকা হয়েছে এবং কখন ঊর্ধ্বতন কেউ গিয়ে তাদের আশ্বাস দেবেন সেটা স্পষ্ট হয়নি। এ কারণে রোগীদের চরম ভোগান্তি ও অসহায় অবস্থা চলতে পারে। হাসপাতালে গিয়ে যথাসময়ে চিকিৎসা না পেলে রোগীদের যন্ত্রণা অসহনীয় হতে থাকে। এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে। তাই বলে সব দায় কেবলই চিকিৎসকদের? যুবলীগের একজন স্থানীয় নেতাকে চিনতে না পারা যদি 'গুরুতর অপরাধ' হিসেবে গণ্য হয়, তাহলে সরকারি হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের জন্য দক্ষ ও যোগ্য চিকিৎসক দূরের কথা, সাধারণ এমবিবিএস চিকিৎসক পাওয়াও দুষ্কর হবে এবং বলা যায়, এমনটি ঘটছেও। সরকার সমর্থক চিকিৎসকরা মিটফোর্ডের ধর্মঘটে নাখোশ হয়েছেন এবং তার দ্রুত নিরসনে যত্নবান হয়েছেন। কিন্তু যাদের কারণে চিকিৎসকদের এমন কঠোর অবস্থান নিতে হয়েছে তাদের নিয়ন্ত্রণ করবে কে? এটা কে না জানে যে, নাসির উদ্দিনের মতো অনেক সন্ত্রাসী দেশব্যাপী ছড়িয়ে রয়েছে এবং তাদের কারণে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর স্বাভাবিক কাজ বিঘি্নত হচ্ছে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য বরাদ্দ অর্থে ভাগ বসাতে তারা সদা তৎপর। এদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আরও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে থাকা অস্বাভাবিক নয়। আবার চিকিৎসকদেরও বুঝতে হবে যে, অন্যায়ের প্রতিকারের সব পথ বন্ধ হলেই কেবল ধর্মঘটের মতো চরম পদক্ষেপের কথা ভাবা যেতে পারে এবং তাদের অবস্থান যে ন্যায্য ও যৌক্তিক_ সেটাও সবাইকে বুঝতে দিতে হবে। এটাও বাস্তবতা যে, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের অনেকেই মূল চাকরির প্রতি তেমন মনোযোগী নন, বরং তাদের বেশিরভাগ সময় কাটে ক্লিনিক কিংবা ব্যক্তিগত চেম্বারে। এ কারণে জনমনে চিকিৎসকদের প্রতি ক্ষোভের মাত্রা যথেষ্ট এবং সেটাকে উপেক্ষা করাও ঠিক হবে না।
No comments