রংপুরে সংঘর্ষ-আরেকটি খারাপ নজির
পরম্পরা ও পরিণতি যাই হোক, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শনিবার সংঘটিত সংঘর্ষের দায় স্থানীয় সাংসদ হোসেন মকবুল শাহরিয়ার এড়াতে পারেন না। তিনি যদিও দাবি করছেন যে, 'নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধে স্মারকলিপি দেওয়ার' জন্য সেখানে গিয়েছিলেন, তা বিশ্বাস করা কঠিন। লাঠি হাতে মারমুখী লোকজনকে ট্রাকে ট্রাকে নিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করা আর যাই হোক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির নমুনা নয়।
কিন্তু তাই বলে সাংসদ ও তার লোকজনের ওপর যেভাবে হামলা চালানো হয়েছে, তাও কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এর নিন্দা জানাচ্ছি। সাংসদ ও তার লোকজন যদি বাড়াবাড়ি করে সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতিকারের জন্য আদালতেও যেতে পারত। তার বদলে কর্মচারীরা নিজেরাই লাঠিসোটা হাতে নেমে পড়ে গুরুতর অপরাধ করেছে। তাদের ভুলে যাওয়া উচিত হয়নি তারা প্রজাতন্ত্রের বেতনভোগীমাত্র। অপরপক্ষে সংসদ সদস্য বিপুল জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করেন। তাকে লুকানো অবস্থান থেকে টেনে এনে মারধর করার মধ্য দিয়ে হাসপাতালের কর্মচারীদের দুর্বৃত্ত মানসিকতাই স্পষ্ট হয়েছে। উভয় পক্ষই যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর প্রতি নূ্যনতম মানবিকতা প্রদর্শন করেনি, তাও বলতে চাই। আমরা মনে করি এর সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত। এ প্রশ্নও উঠবে যে, হোসেন মকবুল শাহরিয়ার যদি আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত হতেন, তাহলে কি হাসপাতালের বীরপুঙ্গবরা এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার সাহস পেত? তাদের পেছনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জড়িত কি-না খতিয়ে দেখার আহ্বান জানাই। এই ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়ায় যেন রাজনৈতিক প্রভাব কাজ না করে, সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে হবে। প্রভাবমুক্ত থাকতে হবে কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়াও। জানা যাচ্ছে, ওই প্রক্রিয়ায় 'কোটা' বরাদ্দের দাবিতেই সাংসদ শক্তি প্রদর্শন করতে গিয়েছিলেন। একই অসঙ্গত দাবিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের মুখচেনা ব্যক্তিরাও কিছুদিন আগে ধর্মঘট পর্যন্ত ডেকেছিল। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কি স্থানীয় রাজনীতিক ও সাংসদের মৌরসি পাট্টা? শনিবারের সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে সেখানে যে খারাপ নজির স্থাপিত হলো, জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে তা খানিকটা লঘু করা যেতে পারে।
No comments