চরাচর-তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু চিত্র by মুহাম্মদ আশকার ইবনে শাইখ
গত বছরের সেপ্টেম্বরে তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু উদ্বোধন করা হয়। সমগ্র বাংলাদেশের সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই সেতু কতটা গুরুত্বপূর্ণ, এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নিষ্প্রয়োজন। তার পরও বলি, সেতুটি ওই অঞ্চলের সঙ্গে দেশের মানুষের যোগাযোগের প্রধান অবলম্বন। সেতুটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৫০ মিটার এবং এর নির্মাণ ব্যয় ছিল প্রায় ৩৩৭ কোটি টাকা। অনেকের জানা, কর্ণফুলী সেতু দেশের প্রথম ও একমাত্র এঙ্ট্রাডোজ বঙ্ গ্রিডার ব্রিজ। নিঃসন্দেহে সেতুটি দৃষ্টিনন্দন।
দিনরাত সেতুটির ওপর দিয়ে অসংখ্য যানবাহনের সঙ্গে বিপুলসংখ্যক পথচারীও পারাপার হয়। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে। সেতুটির নিরাপত্তাব্যবস্থা দেখভালের দায়দায়িত্ব কার_এ বিষয়টি এখনো অনির্ধারিত থাকায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বহুবিধ। বিস্ময়কর হলেও সত্য, এই দীর্ঘ সেতুর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার জন্য কোনো আয়োজনই রাখা হয়নি! অর্থাৎ এর নজরদারির জন্য সেতুর আশপাশে কিংবা ওপরে-নিচে নেই কোনো রকম ব্যবস্থা। সত্যিই এটি অচিন্তনীয়। এত বড় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি সেতু এভাবে অভিভাবকহীন হয়ে আছে কী করে? আজ পর্যন্ত নির্ধারিত হয়নি সেতুটির দেখভালের দায়দায়িত্ব কার_এও বড় বিস্ময়! যত দূর জানি, সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার পরপরই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সেতুটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে তাগিদ দিয়ে চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছে বিষয়টি যে কোনো গুরুত্বই পায়নি, বিদ্যমান চিত্র সে কথাই বলে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের এমন উদাসীনতা, দায়িত্বজ্ঞানের ঘাটতি কিংবা অদূরদর্শিতা নিয়ে প্রশ্ন থাকার পাশাপাশি সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে সংগত কারণেই। এখন শুনছি (পত্রপত্রিকার প্রতিবেদনেও প্রকাশ) সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা দেখভালের দায়দায়িত্ব কার, এ নিয়ে তর্কবিতর্ক চলছে! সড়ক ও জনপথ বিভাগের যদি সেতুটির ব্যাপারে কোনো দায়দায়িত্ব না থাকে, তাহলে তারা সেতু উদ্বোধনের পর দুটি প্রতিষ্ঠানকে নিলাম ডেকে টোল আদায়ের ব্যবস্থা কিভাবে করে দিল? তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর নির্মাণ কাঠামো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় এর দেখভালের কিংবা শক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা রাখার বিষয়টি আরো জরুরি। এঙ্ট্রাডোজ বঙ্ গ্রিডার ব্রিজের কেব্ল্ প্লাস্টিক দিয়ে মোড়ানো থাকায় পথচারীদের অসাবধানতাবশত (যেমন_জ্বলন্ত সিগারেট ছুড়ে ফেলা) যেকোনো সময় মারাত্মক ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। দুর্বৃত্তচক্র সেতুর মূল্যবান সরঞ্জাম তো নিয়ে যেতে পারেই, তারা নাশকতামূলক কোনো কিছুও ঘটাতে পারে। সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সেতুটি চরম ঝুঁকির মধ্যে আছে। আশা করি, সংশ্লিষ্ট সব দায়িত্বশীল মহল তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুচিত্র আমলে নিয়ে এর নিরাপত্তাবিধান নিশ্চিত করতে কালবিলম্ব না করে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। এ ব্যাপারে কোনো রকম উদাসীনতা প্রদর্শনের অবকাশ নেই।
মুহাম্মদ আশকার ইবনে শাইখ
মুহাম্মদ আশকার ইবনে শাইখ
No comments