রমজান : বাজার ও ব্যবসা by লুৎফর রহমান রনো
রমজান সিয়াম-সংযমের না ভূরিভোজনের মাস, আত্মশুদ্ধি না অনৈতিক উপার্জনের মাস_নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারবেন না। ব্যবসায়ীরা যেমন বাণিজ্যে নীতিনৈতিকতার তোয়াক্কা করে না, টাকাওয়ালারাও রমজানের মূলনীতি সংযম-শুদ্ধির চিন্তা না করে কেনাকাটা আর রসনাবিলাসে মত্ত হয়ে ওঠে। ব্যবসায়ী ও টাকাওয়ালারা পরস্পরের সহযোগী এবং সমবৈশিষ্ট্যেরও বটে। সবার ওপর আছে সরকার। ক্ষমতাকেন্দ্রের চিরন্তন চরিত্রবৈশিষ্ট্য আবার পূর্বোলি্লখিত দুই শ্রেণীর স্বার্থরক্ষা। আর এই সরল সূত্র অনুসারে বাজারে পণ্যের দাম কমে না। মাঝখানে বাজারের আগুনে পুড়ে মরে অল্প আয়ের সাধারণ গরিব মানুষ।
বাজারের দ্রব্যমূল্যের আগুনে গরিবের জীবন পোড়ে আর টাকাওয়ালাদের ওই আগুনে জীবনবৈচিত্র্যের ওম-আয়েশ বাড়ে। প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ক্যামেরার সামনে বাণিজ্যমন্ত্রী ও ব্যবসায়ীদের যে বাগ্বিতণ্ডা দেখা যায়, শোনা যায়_ওসব একটা রুটিন ওয়ার্ক। মন্ত্রী বা দেশের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের দুটি জগৎ থাকে সুস্পষ্ট। একটি জনতাকে দেখানোর, যার প্রায় সবই দেখানোর উদ্দেশ্যেই সংঘটিত হয়। অন্য জগৎটি হলো সত্য, যা থাকে মিডিয়া বা জনগণের চোখের অন্তরালে। বাজারের নিয়ন্ত্রণ বা জিনিসপত্রের দাম একটি যৌক্তিক পর্যায়ে বেঁধে দেওয়া, পণ্যের গুণগত মান দেখাশোনা ইত্যাদি কাজ বুঝি সরকারের দ্বারা সম্ভব হয়ে ওঠে না, যা অবিশ্বাস্য। বলা হয়, সিন্ডিকেট, আন্তর্জাতিক বাজার, আমদানির দুর্বোধ্য নিয়মনীতি_এসব কারণে বাজার অস্থির। এসবই ভুয়া কথা। সরকারের আন্তরিকতা থাকলে, টিসিবি সক্রিয় হলে, গরিব মানুষের কষ্ট উপলব্ধি ও নিরসনের সদিচ্ছা থাকলে প্রয়োজনীয় আরো আইন প্রণয়ন করা যেত। পত্রিকার সংশ্লিষ্ট একটি সংবাদে জানা গেল ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কথা, জানা গেল, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রাইস কমিশনও গঠন করা হয়নি। অর্থাৎ নতুন কিছুই হয়নি হওয়ার কথা থাকলেও, আর পূরনো সংস্থাগুলো অদক্ষতা, কর্ম-অনীহা ও দুর্নীতির কারণে নিষ্ক্রিয়, যেমন_টিসিবি, বিএসটিআই। এ সংস্থাগুলো তাদের কাজ যদি ৫০ শতাংশও করত সততার সঙ্গে, তাহলে যেকোনো পণ্যের দাম ব্যবসায়ীরা যখন-তখন খুশিমতো বাড়াতে পারত না। দেখা যাচ্ছে, কম্পানিগুলো আটা-ময়দার দাম বাড়াল আবার কমাল। কিন্তু বেকারি পণ্য ও বিস্কুটের দাম শুধু বাড়ছেই। এভাবে বাজারে সব কম্পানির শতভাগ পণ্যেরই উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মূল্য নির্ধারণ করা হয় না। এর অর্থ হলো, কম্পানির মালিক ও বড় ব্যবসায়ীরা সরকারের সততা ও নজরদারি না থাকার সুযোগে ব্যবসার নামে জনগণের কাছ থেকে টাকা লুটে নিচ্ছে। অথচ সরকার ইচ্ছা করলে সফল হতে পারে বাজার নিয়ন্ত্রণে।
আমরা ঠিকই দেখছি, যে কাজটি সরকার ফয়সালা করতে আন্তরিক, সেটা করছেই। আমরা জানি, পুলিশ আন্তরিকভাবে যদি ইচ্ছা করে অপরাধ কমাতে, অন্তত ছিনতাই, মাদক কেনাবেচা, ডাকাতি, নারী-শিশু পাচার ইত্যাদি কমাতে পারে। কিন্তু তা হচ্ছে না। এর কারণ ওই একটি। কথায় আছে, 'সর্ষের মধ্যে ভূত'। কারণ অপরাধজগৎ হলো বিশাল পুলিশবাহিনীর আয়-রোজগারের ক্ষেত্র। অপরাধী তাই আড়ালেই থেকে যায়। কাদেরের মতো শত শত নিরপরাধ নির্যাতনের শিকার হয়, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়, এমনকি জেলেও জীবন পচে ধুঁকে ধুঁকে। কে কার খবর রাখে। কাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলে বেঁচে যাচ্ছে হয়তো মরতে মরতে। কেন করে পুলিশ এসব? কারণ একটাই। আয়-রোজগার ঠিকঠাক রাখতে মাঝেমধ্যে অপরাধীদের মতো তাদেরও 'আইনের' মাধ্যমে অমানবিক কাজ করতে হয়। শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে হয়। আর নীতিবাক্য হলো, পুলিশ জনগণের বন্ধু। পুলিশ কার বন্ধু সেটা জানে পুলিশ, আর জানে যারা অপরাধজগৎ সম্পর্কে ধারণা রাখে।
যা হোক, পুলিশ প্রসঙ্গ চলে এল সরকারি সংস্থার উদাহরণ দিতে গিয়ে। বলছিলাম, পুলিশ ইচ্ছা করলেই কিছু অপরাধ আছে, যা সামাল দিতে পারে। সরকার ইচ্ছা করলে পারে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে। মূলত বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে কিছু ব্যবসায়ী। তাদের মুনাফা-লাভটা যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারলে কাজ হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে গুটিকয় ব্যবসায়ীর হাতে বাজারের চাবিকাঠি, তাদের পরিচয়-ঠিকানা, আস্তানা_সবই সরকারের জানা। সেই কথাই ওঠে। সরকারসংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ওই গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর স্বার্থটাকে প্রাধান্য দিচ্ছে জনগণের স্বার্থ উপেক্ষা করে। কেন করছে, তা না লিখলেও চলে।
তাই বলি, রমজান মাসে ব্যবসায়ীদেরও লোভ দ্বিগুণ বাড়ে। ধনী ভোক্তাদের বাড়ে খাদ্যবিলাস। আর মাঝখানে অনর্থক গরিবের চিল্লাচিলি্ল। সবাই জানে ওই ৩০ দিন দেখতে দেখতে চলে যাবে। রোজার দোহাই দেওয়াও শেষ। সবই আগের মতোই চলবে। চলতে থাকবে চিরদিনই। এই যে লেখাটা লিখছি, তাও নিরর্থক, এতে কী আসে-যায়। কিছু লিখতে হবে তাই লেখা!
লেখক : সাংবাদিক
আমরা ঠিকই দেখছি, যে কাজটি সরকার ফয়সালা করতে আন্তরিক, সেটা করছেই। আমরা জানি, পুলিশ আন্তরিকভাবে যদি ইচ্ছা করে অপরাধ কমাতে, অন্তত ছিনতাই, মাদক কেনাবেচা, ডাকাতি, নারী-শিশু পাচার ইত্যাদি কমাতে পারে। কিন্তু তা হচ্ছে না। এর কারণ ওই একটি। কথায় আছে, 'সর্ষের মধ্যে ভূত'। কারণ অপরাধজগৎ হলো বিশাল পুলিশবাহিনীর আয়-রোজগারের ক্ষেত্র। অপরাধী তাই আড়ালেই থেকে যায়। কাদেরের মতো শত শত নিরপরাধ নির্যাতনের শিকার হয়, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়, এমনকি জেলেও জীবন পচে ধুঁকে ধুঁকে। কে কার খবর রাখে। কাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলে বেঁচে যাচ্ছে হয়তো মরতে মরতে। কেন করে পুলিশ এসব? কারণ একটাই। আয়-রোজগার ঠিকঠাক রাখতে মাঝেমধ্যে অপরাধীদের মতো তাদেরও 'আইনের' মাধ্যমে অমানবিক কাজ করতে হয়। শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে হয়। আর নীতিবাক্য হলো, পুলিশ জনগণের বন্ধু। পুলিশ কার বন্ধু সেটা জানে পুলিশ, আর জানে যারা অপরাধজগৎ সম্পর্কে ধারণা রাখে।
যা হোক, পুলিশ প্রসঙ্গ চলে এল সরকারি সংস্থার উদাহরণ দিতে গিয়ে। বলছিলাম, পুলিশ ইচ্ছা করলেই কিছু অপরাধ আছে, যা সামাল দিতে পারে। সরকার ইচ্ছা করলে পারে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে। মূলত বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে কিছু ব্যবসায়ী। তাদের মুনাফা-লাভটা যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারলে কাজ হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে গুটিকয় ব্যবসায়ীর হাতে বাজারের চাবিকাঠি, তাদের পরিচয়-ঠিকানা, আস্তানা_সবই সরকারের জানা। সেই কথাই ওঠে। সরকারসংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ওই গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর স্বার্থটাকে প্রাধান্য দিচ্ছে জনগণের স্বার্থ উপেক্ষা করে। কেন করছে, তা না লিখলেও চলে।
তাই বলি, রমজান মাসে ব্যবসায়ীদেরও লোভ দ্বিগুণ বাড়ে। ধনী ভোক্তাদের বাড়ে খাদ্যবিলাস। আর মাঝখানে অনর্থক গরিবের চিল্লাচিলি্ল। সবাই জানে ওই ৩০ দিন দেখতে দেখতে চলে যাবে। রোজার দোহাই দেওয়াও শেষ। সবই আগের মতোই চলবে। চলতে থাকবে চিরদিনই। এই যে লেখাটা লিখছি, তাও নিরর্থক, এতে কী আসে-যায়। কিছু লিখতে হবে তাই লেখা!
লেখক : সাংবাদিক
No comments