চট্টগ্রাম বন্দরের শুল্কায়ন কাজের সময়সীমা বাড়ছে ১ মার্চ থেকে

আগামী ১ মার্চ কিংবা তার আগেই চট্টগ্রাম বন্দরের কাস্টমস হাউসের কর্মদিবস ও কর্মঘণ্টা বাড়ানো হচ্ছে। এখন থেকে শুল্কায়ন কার্যক্রম সকাল নয়টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে।  আর সাপ্তাহিক ছুটির দিন এক দিন কমিয়ে শনিবারও সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত শুল্কায়নের কাজ করা যাবে। এ সময় বিভিন্ন ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখাগুলোও খোলা থাকবে।


জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমেদ এসব কথা জানিয়েছেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের কাস্টম হাউস শুক্র ও শনিবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি পাঁচ দিন খোলা থাকে সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত।
রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) কার্যালয়ে এক আলোচনায় গতকাল রোববার তিনি এ কথা বলেন। সভার আয়োজন করে এফবিসিসিআই।
তবে সভায় ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম বন্দরের শুল্কায়ন কার্যক্রম সপ্তাহের সাত দিনই ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার আহ্বান জানান। অবশ্য ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ মনে করেন, এখনই ২৪ ঘণ্টা এ কার্যক্রম খোলা রাখার দাবিটা উচ্চাকাঙ্ক্ষী। পর্যায়ক্রমে এটি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
সভার বিশেষ অতিথি এনবিআরের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দরে ২৪ ঘণ্টা শুল্কায়ন কার্যক্রম চালু রাখার উদ্যোগ এখনই নেওয়া সম্ভব হবে না। এটি কার্যকর করার মতো প্রয়োজনীয় সুবিধা হয়তো আমাদের এখানে আছে, কিন্তু পেট্রাপোলে এখনো অনেক দুর্বলতা আছে।’
সভার প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী এ কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন, ‘যদিও আমরা চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু করছি, আস্তে আস্তে সব বন্দরে এটি সম্প্রসারণ করা হবে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, বছরের ৩৬৫ দিনই ২৪ ঘণ্টা করে বন্দরের শুল্কায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা। এ ক্ষেত্রে দেখতে হবে, বাণিজ্যিক চাহিদা আছে কি না। ব্যাংকগুলো যদি গ্রাহক না পায়, তাহলে তারা বেশি সময় ব্যাংক খোলা রাখবে না।’
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অগ্রাধিকারের কারণে কাস্টম হাউসের কর্মদিবস বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি দ্রুত বাস্তবায়িত হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা।
গওহর রিজভী বলেন, এ সরকার অতিরিক্ত ব্যবসাবান্ধব। সরকার অনেক কিছু করতে পারে, আবার অনেক কিছু করতে পারে না। সে কারণেই প্রধানমন্ত্রী সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিকে (পিপিপি) গুরুত্ব দিচ্ছেন।
সভায় এফবিসিসিআইর সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছ থেকে নীতি-সহায়তা পাচ্ছি না। ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা তুলে নেওয়া হয়েছে। এতে অর্থনীতিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এটা ব্যবসাবান্ধব নয়।’ তিনি বলেন, সরকারের ঘাটতি পুষিয়ে নিতে বিদেশি ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব করেন।
এ কে আজাদ বলেন, তিন বছর আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হয়েছে। এটা এখনো শেষ হয়নি। কবে তা শেষ হবে, এটা বড় প্রশ্ন।
সভায় মূল প্রবন্ধে এসিআই লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মোয়াল্লেম চৌধুরী বলেন, কর্মঘণ্টা হিসাব করলে চট্টগ্রাম বন্দরে শুল্কায়ন কাজ হয় এখন বছরে মোট ৮৭ দিন। বাকি ২৭৮ দিন কাজ হয় না। তিনি বলেন, যদি ৩৬৫ দিনই কার্যক্রম চলে, তাহলে শুধু চট্টগ্রাম বন্দর থেকেই পণ্য ওঠানো-নামানো ও জাহাজ নোঙর করা বাবদ সরকারের অতিরিক্ত আয় হবে ৭১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এতে এখনকার চেয়ে এক হাজার ১১৭টি জাহাজ বন্দরে নোঙর করা, ট্রাক থেকে এক কোটি ৫৭ লাখ তিন হাজার ১৪৮টি কার্গো ওঠানো-নামানো আর জাহাজ থেকে পাঁচ লাখ ৯৮ হাজার ৩৩৩টি কনটেইনার ওঠানো-নামানো সম্ভব হবে।
এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি জসিম উদ্দিন, সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম কাস্টমের অতিরিক্ত কমিশনার মতিউর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

No comments

Powered by Blogger.