রোগ সরবরাহকারী ওয়াসা-পাইপলাইনগুলো সংস্কার করুন
বাংলাদেশে বছরে সাড়ে চার লাখ লোক কলেরায় আক্রান্ত হয় কেবল দূষিত পানি পান করার কারণে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রে (আইসিডিডিআরবি) গড়ে প্রতিদিন সাড়ে চার শতাধিক রোগী ভর্তি হয়, যার একটি বড় অংশ কলেরায় আক্রান্ত। আর এর জন্য মূলত দায়ী ঢাকা ওয়াসার দূষিত পানি।
তদুপরি চাহিদার তুলনায় সরবরাহ এত কম যে এই বর্ষাকালেও ঢাকার অনেক এলাকায় পানির জন্য রীতিমতো হাহাকার চলছে। মানুষ পানির দাবিতে শূন্য কলস নিয়ে মিছিল করছে। অথচ এগুলো সমাধান না করেই ঢাকা ওয়াসা এ বছরও পানির দাম বাড়িয়েছে।
দেশে জনস্বাস্থ্য তথা স্বাস্থ্যসেবার শনৈঃশনৈঃ উন্নতি হচ্ছে বলে সরকার যতই ঢাকঢোল পেটাক না কেন, বাস্তবে হচ্ছে তার উল্টোটা। মঙ্গলবারের কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ঢাকা মহানগরীর বেশির ভাগ এলাকায় ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করে, তা পান করা তো দূরের কথা, তা দিয়ে হাত-মুখও ধোয়া যায় না। পানি যেমন দূষিত, তেমনি দুর্গন্ধযুক্ত। কারণ অসংখ্য ফুটোযুক্ত সরবরাহ লাইনে সুয়্যারেজের ময়লা পানি ঢুকে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় ওয়াসার পানি পরীক্ষা করেও তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফলে এখন ঢাকা ওয়াসা নগরীতে পানির নামে আসলে কলেরা-ডায়রিয়াই সরবরাহ করে চলেছে। কিন্তু পানি ছাড়া তো জীবনধারণ সম্ভব নয়। তাই বহু মানুষ বাধ্য হচ্ছে সেই দূষিত পানিই ব্যবহার করতে। ফলে আক্রান্ত হচ্ছে কলেরাসহ নানা রকম পেটের পীড়ায়। কেউ কেউ তৃষ্ণা নিবারণের জন্য অনেক বেশি দাম দিয়ে পানির জার কিনতেও বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু সেই পানিও যে নিরাপদ হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। অথচ রাজধানীতে এই নিশ্চয়তাহীন বোতল ও জারের পানির এখন প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার বাজার সৃষ্টি হয়েছে। নুন আনতে পান্তা ফুরায় সেই নিম্নবিত্ত, এমনকি মধ্যবিত্ত নাগরিকদেরও এখন দ্রব্যমূল্য নিয়ে ত্রাহি অবস্থা। তাদের প্রতিটি পরিবারেই আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। তদুপরি ওয়াসাকে পানির বিল দেওয়ার পরও যদি জারের পানি কিনে পান করতে হয়, তাহলে একে কী বলা যাবে? গোদের ওপর বিষফোড়া বললেও কম বলা হবে। আর ওয়াসা শুধু রোগজীবাণুযুক্ত পানিই সরবরাহ করছে না, অজৈব দূষণ অর্থাৎ কারখানার বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্য মেশানো পানি সরবরাহ করেও ক্যান্সারসহ নানা রোগ ছড়াচ্ছে। কারণ ওয়াসার পানি শোধনাগারে পানিকে কেবল জীবাণুমুক্ত করা যায়; বিষাক্ত রাসায়নিকমুক্ত করার প্রযুক্তি সেখানে নেই। অথচ ঢাকার পার্শ্ববর্তী নদীগুলোতে ব্যাপক হারে রাসায়নিক বর্জ্য এসে পড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. বেনজীর আহম্মেদের উক্তিটি এ ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, 'রাজধানীতে যদি কেবল ওয়াসা নিরাপদ ও জীবাণুমুক্ত পানি সরবরাহ করতে পারে, তাহলে ৯০ শতাংশ ডায়রিয়া এমনিতেই কমে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।' তাঁর সঙ্গে যোগ করে বলতে চাই, শুধু ডায়রিয়া নয়, জন্ডিস, টাইফয়েডসহ আরো অনেক রোগই কমে যাবে। কিন্তু সেই কাজটি ওয়াসা কবে করতে পারবে? আদৌ পারবে কি? এ ব্যাপারে রাষ্ট্র তথা এর কর্ণধাররাই বা কী করছেন? তাঁদের এভাবে চোখ বুজে থাকা উচিত নয়, কাম্যও নয়। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোর দিকে তাঁদের মাঝেমধ্যে তাকানো প্রয়োজন। নির্বাচনী ইশতেহারের ১১.২-এ তাঁরা বলেছিলেন, 'আর্সেনিক সমস্যার সমাধান করে ২০১১ সালের মধ্যে সবার জন্য নিরাপদ সুপেয় পানি এবং ২০১৩ সালের মধ্যে প্রতিটি বাড়িতে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা হবে।' ২০১১ সাল তো যাই যাই করছে, কিন্তু কোথায় সেই সুপেয় পানি? জনগণের স্বাস্থ্য যেখানে মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন, সেখানে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ, জীর্ণ ও ফুটো হয়ে যাওয়া পাইপলাইনগুলো পুনঃস্থাপন করতে হবে। আশা করি, সরকার চরম জনভোগান্তি নিরসনে আরো আন্তরিক হবে।
দেশে জনস্বাস্থ্য তথা স্বাস্থ্যসেবার শনৈঃশনৈঃ উন্নতি হচ্ছে বলে সরকার যতই ঢাকঢোল পেটাক না কেন, বাস্তবে হচ্ছে তার উল্টোটা। মঙ্গলবারের কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ঢাকা মহানগরীর বেশির ভাগ এলাকায় ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করে, তা পান করা তো দূরের কথা, তা দিয়ে হাত-মুখও ধোয়া যায় না। পানি যেমন দূষিত, তেমনি দুর্গন্ধযুক্ত। কারণ অসংখ্য ফুটোযুক্ত সরবরাহ লাইনে সুয়্যারেজের ময়লা পানি ঢুকে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় ওয়াসার পানি পরীক্ষা করেও তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফলে এখন ঢাকা ওয়াসা নগরীতে পানির নামে আসলে কলেরা-ডায়রিয়াই সরবরাহ করে চলেছে। কিন্তু পানি ছাড়া তো জীবনধারণ সম্ভব নয়। তাই বহু মানুষ বাধ্য হচ্ছে সেই দূষিত পানিই ব্যবহার করতে। ফলে আক্রান্ত হচ্ছে কলেরাসহ নানা রকম পেটের পীড়ায়। কেউ কেউ তৃষ্ণা নিবারণের জন্য অনেক বেশি দাম দিয়ে পানির জার কিনতেও বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু সেই পানিও যে নিরাপদ হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। অথচ রাজধানীতে এই নিশ্চয়তাহীন বোতল ও জারের পানির এখন প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার বাজার সৃষ্টি হয়েছে। নুন আনতে পান্তা ফুরায় সেই নিম্নবিত্ত, এমনকি মধ্যবিত্ত নাগরিকদেরও এখন দ্রব্যমূল্য নিয়ে ত্রাহি অবস্থা। তাদের প্রতিটি পরিবারেই আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। তদুপরি ওয়াসাকে পানির বিল দেওয়ার পরও যদি জারের পানি কিনে পান করতে হয়, তাহলে একে কী বলা যাবে? গোদের ওপর বিষফোড়া বললেও কম বলা হবে। আর ওয়াসা শুধু রোগজীবাণুযুক্ত পানিই সরবরাহ করছে না, অজৈব দূষণ অর্থাৎ কারখানার বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্য মেশানো পানি সরবরাহ করেও ক্যান্সারসহ নানা রোগ ছড়াচ্ছে। কারণ ওয়াসার পানি শোধনাগারে পানিকে কেবল জীবাণুমুক্ত করা যায়; বিষাক্ত রাসায়নিকমুক্ত করার প্রযুক্তি সেখানে নেই। অথচ ঢাকার পার্শ্ববর্তী নদীগুলোতে ব্যাপক হারে রাসায়নিক বর্জ্য এসে পড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. বেনজীর আহম্মেদের উক্তিটি এ ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, 'রাজধানীতে যদি কেবল ওয়াসা নিরাপদ ও জীবাণুমুক্ত পানি সরবরাহ করতে পারে, তাহলে ৯০ শতাংশ ডায়রিয়া এমনিতেই কমে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।' তাঁর সঙ্গে যোগ করে বলতে চাই, শুধু ডায়রিয়া নয়, জন্ডিস, টাইফয়েডসহ আরো অনেক রোগই কমে যাবে। কিন্তু সেই কাজটি ওয়াসা কবে করতে পারবে? আদৌ পারবে কি? এ ব্যাপারে রাষ্ট্র তথা এর কর্ণধাররাই বা কী করছেন? তাঁদের এভাবে চোখ বুজে থাকা উচিত নয়, কাম্যও নয়। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোর দিকে তাঁদের মাঝেমধ্যে তাকানো প্রয়োজন। নির্বাচনী ইশতেহারের ১১.২-এ তাঁরা বলেছিলেন, 'আর্সেনিক সমস্যার সমাধান করে ২০১১ সালের মধ্যে সবার জন্য নিরাপদ সুপেয় পানি এবং ২০১৩ সালের মধ্যে প্রতিটি বাড়িতে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা হবে।' ২০১১ সাল তো যাই যাই করছে, কিন্তু কোথায় সেই সুপেয় পানি? জনগণের স্বাস্থ্য যেখানে মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন, সেখানে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ, জীর্ণ ও ফুটো হয়ে যাওয়া পাইপলাইনগুলো পুনঃস্থাপন করতে হবে। আশা করি, সরকার চরম জনভোগান্তি নিরসনে আরো আন্তরিক হবে।
No comments