তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যে জীবন যাদের গড়া by আফজাল আহমেদ
অস্বাস্থ্যকর পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় অনৈতিকতার অভিঘাতে অবক্ষয়িত রাজনীতি গণমানুষের কল্যাণে পরিপূর্ণভাবে নিবেদিত হতে পারছে না। সেখানে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের ভেতর দিয়ে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে অর্থবহ করতে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারেননি রাজনীতিবিদরা।
আর এই না পারার ব্যর্থতায় পশ্চাত্পদ জনগোষ্ঠী ন্যায়সঙ্গত অধিকার থেকে বঞ্চিত। উল্লেখযোগ্য যারা বিত্তহীন তারা ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা মেটাতে অক্ষম, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য অপমান তাদের নিত্যসঙ্গী। সহজ-সরল ও অসহায় এই মানুষ মঙ্গলময় ভবিষ্যতের রাজনৈতিক আশ্বাসে বিশ্বাস করে অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষায় থাকে দিনবদলের। সময় গড়িয়ে যায় আপন গতিতে, কিন্তু নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় না। অপুষ্টি ও অনিরাপত্তায় রঙিন স্বপ্নগুলো ধূসর হয়ে একসময় বিবর্ণ শুকনো পাতার মতো ঝরে পড়ে। আশাভঙ্গের বেদনা দীর্ঘশ্বাস হয়ে হারিয়ে যায় বেঁচে থাকার শ্রমঘন কঠিনতম সংগ্রামে। আত্ম ও দলীয় স্বার্থে দুর্নীতির ব্যাপকতায় অমানবিকতার জয়জয়কারে ন্যায়-নিষ্ঠতা, ন্যায্যতা কথার কথা হয়ে দাঁড়ায়। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলতে হয় বাধাগ্রস্ত। এ রকম অবস্থায় ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন রাজনীতির কাছে আর কিবা আশা করা যায়।
পুঁজিবাদী এ সমাজ দিতে জানে না, পারে শুধু নিতে। একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে, মুনাফা অর্জনের ভেতর দিয়ে সবকিছুকে ব্যক্তিসম্পদে পরিণত করা। যার অবশ্যম্ভাবী নির্মম পরিণতি হচ্ছে সীমাহীন দরিদ্রতা। বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা বদলে সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আপনজনে পরিণত হতে পারেনি রাষ্ট্র। আর তাই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ শুধু বঞ্চনা ও নিষ্পেষণের শিকারই নয়, রাজনৈতিকভাবে পরাধীনও বটে (অর্থের কারসাজিতে অর্থনৈতিকভাবে শৃঙ্খলিতরা সত্যিকার অর্থে চিন্তা-চেতনায় স্বাধীন থাকতে পারে না)। দুর্বল ও গরিবদের সর্বোচ্চ সুবিধা দিয়ে অর্থনীতি ঢেলে সাজালে গরিবরা গরিব থাকবে না, তাদের সন্তানরাও শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবে, পাবে চিকিত্সা সেবা। কিন্তু বাস্তব চিত্র তো ভিন্ন। নির্বাচনের ভেতর দিয়ে ক্ষমতার হাতবদল হলেও সাধারণের দিনবদল হয় না, টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি এবং দখলিকরণের হাতবদল হয় মাত্র। তারপরও সত্য, নির্বাচন মানুষকে আশান্বিত করে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে ক্ষমতায় যেতে রাজনীতিবিদরা চির অবহেলিত গরিবদের আপন করে নেয়ার তীব্র প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন। অনান্তরিক জেনেও সাময়িক মর্যাদায় কেউ কেউ আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। ভোটবাণিজ্যে অধিক মুনাফা অর্জনের নিমিত্তে রাজনীতিবিদদের অতিকৌশলী আচরণে সহায়-সম্বলহীনরা হয় বিভ্রান্ত। উত্সবমুখর পরিবেশে বেপরোয়া প্রতিশ্রুতিতে আস্থাশীল হয়ে নতুন করে দিনবদলের আশায় উজ্জীবিত হয়। সুশাসন ও সুষম বণ্টনে বৈষম্যবিহীন ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার গভীর আকাঙ্ক্ষায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চায়। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় অর্থ। মিথ্যা প্রচারণায় চরিত্র হননসহ প্রভাব-প্রতিপত্তি ও সন্ত্রাসে ভোটারদের স্বাধীন চিন্তাকে প্রভাবিত করার পাশাপাশি ভোটাধিকারকে পণ্যে পরিণত করার প্রয়াসও চলে। তার ভেতরেই নির্বাচন হয়, প্রত্যাশিত দল ক্ষমতায় যায়। তারপর আবারও প্রত্যাশা পূরণের সেই অন্তহীন অপেক্ষা, আশা-নিরাশার পেণ্ডুলামে দোল খাওয়া। এভাবেই সরকার আসে, সরকার যায় কিন্তু গরিব ও দুর্বলদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় না। অসহায়ত্ব তাদের গ্রাস করে। আর সেই অসহায়ত্ববোধ থেকে সৃষ্ট হতাশায় তৈরি হয় মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা। এ সমস্যা দ্রুতগতিতে পরবর্তী প্রজন্মের ভেতরেও ছড়িয়ে পড়ছে, যা আগামীতে দুরারোগ্য উদ্বেগ-উত্কণ্ঠায় পরিণত হতে পারে। ক্রমবর্ধমান অপরাধ প্রবণতা সেই ইঙ্গিতই বহন করে। ভয়ঙ্কর এই হুমকি থেকে উত্তরণে প্রজ্ঞা ও নিষ্ঠায় কার্যকর সমন্বিত পদক্ষেপ বড় বেশি প্রয়োজন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, তার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
শ্রেণীবিভক্ত এই সমাজ ব্যবস্থায় পশ্চাত্পদ শ্রেণীর স্বার্থ সুরক্ষায় রাজনীতিকে প্রকৃত গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যেতে হবে। তার জন্য সবার আগে প্রয়োজন চিন্তাশীলতায় ব্যাপক পরিবর্তন। রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের শত্রু না ভেবে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক চর্চায় যৌথ প্রজ্ঞায় দেশি-বিদেশি কায়েমি স্বার্থবাদীদের হাত থেকে দেশ ও দেশের গরিব মানুষদের বাঁচানোর সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। নিষ্পেষিত নিরন্ন গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে একাত্ম হতে অধিক থেকে অধিকতর মনোযোগী হতে না পারলে ভবিষ্যত্ যে মঙ্গলময় নয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। হতদরিদ্র রাজনৈতিক সংস্কৃতি দিয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দারিদ্র্য বিমোচন আদৌ সম্ভব কিনা তা নিয়ে গণমনে অবশ্য সংশয়-সন্দেহ রয়ে গেছে। কথাকৌশলে কৃষক-শ্রমিক খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষাবলম্বন করা আর শ্রেণী চরিত্রের খোলস থেকে বেরিয়ে তাদের জন্য নিবেদিত হয়ে সাহসী পদক্ষেপ নেয়া এক কথা নয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে অদ্যাবধি সব সরকারের আমলে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের লোভ বাড়তে বাড়তে আজ দানবে পরিণত হয়েছে। পক্ষপাতিত্ব আচরণে হুকুমনির্ভর প্রশাসন দিয়ে অসুরীয় কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এ দানবকে এখনই প্রতিহত করতে না পারলে আগামীতে মহাদানবে পরিণত হবে তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই।
রাজনীতিবিদরা প্রতিনিয়ত জনগণের অধিকার নিশ্চিত করাসহ অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলেন। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই জনগণ কারা? এ কথা তো আমরা সবাই জানি, জনগণ অবিভাজ্য কিছু নয়। বিত্তবান, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও বিত্তহীন শ্রেণীতে বিভাজিত জনগণের কোনো অংশের পক্ষে প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলগুলো? অতীত থেকে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলগুলোর কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করে যদি কারও মনে হয় ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দলীয় নেতাকর্মীরাই প্রকৃত জনগণ তবে কি তা ভুল হবে? ধনী-গরিবের ব্যবধান কমিয়ে সুশাসনের অঙ্গীকার করা যত সহজ ঠিক ততটাই কঠিন কাজে পরিণত করা। তার জন্য আমাদের সবাইকে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে বদলাতে হবে। দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে সমাজের অসঙ্গতিগুলো দূর করতে না পারলে সামনে শুধুই অন্ধকার। আর সেই অন্ধকারে গণতন্ত্রকে সুসংহত করে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার প্রত্যয় খর-কুটোর মতো ভেসে যাবে। এমনিতে বিদ্যমান গণতন্ত্র কাদের পক্ষে তা নিয়ে মতভেদ আছে। বিত্তবান ও বিত্তহীনদের গণতন্ত্র কখনও এক হতে পারে না। একপক্ষ দুর্বল হলেই না আরেক পক্ষ সবল হবে। ধনী-গরিবে বিভাজিত আজকের পৃথিবীতে আব্রাহাম লিঙ্কনের ‘গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা, জনগণের শাসন’—উক্তির সঙ্গে একমত হওয়ার সুযোগ কোথায়? তিনি যদি জনগণের স্থলে বিত্তহীন গরিবদের কথা বলতেন, তবে তা বিদ্যমান পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতো। কথামালা নয় বাস্তবোচিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে সেই দিন কবে আসবে যেদিন মৌলিক অধিকারবঞ্চিত মানুষের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে?
লেখক : প্রকৌশলী ও কলামিস্ট
পুঁজিবাদী এ সমাজ দিতে জানে না, পারে শুধু নিতে। একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে, মুনাফা অর্জনের ভেতর দিয়ে সবকিছুকে ব্যক্তিসম্পদে পরিণত করা। যার অবশ্যম্ভাবী নির্মম পরিণতি হচ্ছে সীমাহীন দরিদ্রতা। বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা বদলে সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আপনজনে পরিণত হতে পারেনি রাষ্ট্র। আর তাই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ শুধু বঞ্চনা ও নিষ্পেষণের শিকারই নয়, রাজনৈতিকভাবে পরাধীনও বটে (অর্থের কারসাজিতে অর্থনৈতিকভাবে শৃঙ্খলিতরা সত্যিকার অর্থে চিন্তা-চেতনায় স্বাধীন থাকতে পারে না)। দুর্বল ও গরিবদের সর্বোচ্চ সুবিধা দিয়ে অর্থনীতি ঢেলে সাজালে গরিবরা গরিব থাকবে না, তাদের সন্তানরাও শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবে, পাবে চিকিত্সা সেবা। কিন্তু বাস্তব চিত্র তো ভিন্ন। নির্বাচনের ভেতর দিয়ে ক্ষমতার হাতবদল হলেও সাধারণের দিনবদল হয় না, টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি এবং দখলিকরণের হাতবদল হয় মাত্র। তারপরও সত্য, নির্বাচন মানুষকে আশান্বিত করে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে ক্ষমতায় যেতে রাজনীতিবিদরা চির অবহেলিত গরিবদের আপন করে নেয়ার তীব্র প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন। অনান্তরিক জেনেও সাময়িক মর্যাদায় কেউ কেউ আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। ভোটবাণিজ্যে অধিক মুনাফা অর্জনের নিমিত্তে রাজনীতিবিদদের অতিকৌশলী আচরণে সহায়-সম্বলহীনরা হয় বিভ্রান্ত। উত্সবমুখর পরিবেশে বেপরোয়া প্রতিশ্রুতিতে আস্থাশীল হয়ে নতুন করে দিনবদলের আশায় উজ্জীবিত হয়। সুশাসন ও সুষম বণ্টনে বৈষম্যবিহীন ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার গভীর আকাঙ্ক্ষায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চায়। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় অর্থ। মিথ্যা প্রচারণায় চরিত্র হননসহ প্রভাব-প্রতিপত্তি ও সন্ত্রাসে ভোটারদের স্বাধীন চিন্তাকে প্রভাবিত করার পাশাপাশি ভোটাধিকারকে পণ্যে পরিণত করার প্রয়াসও চলে। তার ভেতরেই নির্বাচন হয়, প্রত্যাশিত দল ক্ষমতায় যায়। তারপর আবারও প্রত্যাশা পূরণের সেই অন্তহীন অপেক্ষা, আশা-নিরাশার পেণ্ডুলামে দোল খাওয়া। এভাবেই সরকার আসে, সরকার যায় কিন্তু গরিব ও দুর্বলদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় না। অসহায়ত্ব তাদের গ্রাস করে। আর সেই অসহায়ত্ববোধ থেকে সৃষ্ট হতাশায় তৈরি হয় মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা। এ সমস্যা দ্রুতগতিতে পরবর্তী প্রজন্মের ভেতরেও ছড়িয়ে পড়ছে, যা আগামীতে দুরারোগ্য উদ্বেগ-উত্কণ্ঠায় পরিণত হতে পারে। ক্রমবর্ধমান অপরাধ প্রবণতা সেই ইঙ্গিতই বহন করে। ভয়ঙ্কর এই হুমকি থেকে উত্তরণে প্রজ্ঞা ও নিষ্ঠায় কার্যকর সমন্বিত পদক্ষেপ বড় বেশি প্রয়োজন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, তার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
শ্রেণীবিভক্ত এই সমাজ ব্যবস্থায় পশ্চাত্পদ শ্রেণীর স্বার্থ সুরক্ষায় রাজনীতিকে প্রকৃত গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যেতে হবে। তার জন্য সবার আগে প্রয়োজন চিন্তাশীলতায় ব্যাপক পরিবর্তন। রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের শত্রু না ভেবে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক চর্চায় যৌথ প্রজ্ঞায় দেশি-বিদেশি কায়েমি স্বার্থবাদীদের হাত থেকে দেশ ও দেশের গরিব মানুষদের বাঁচানোর সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। নিষ্পেষিত নিরন্ন গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে একাত্ম হতে অধিক থেকে অধিকতর মনোযোগী হতে না পারলে ভবিষ্যত্ যে মঙ্গলময় নয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। হতদরিদ্র রাজনৈতিক সংস্কৃতি দিয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দারিদ্র্য বিমোচন আদৌ সম্ভব কিনা তা নিয়ে গণমনে অবশ্য সংশয়-সন্দেহ রয়ে গেছে। কথাকৌশলে কৃষক-শ্রমিক খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষাবলম্বন করা আর শ্রেণী চরিত্রের খোলস থেকে বেরিয়ে তাদের জন্য নিবেদিত হয়ে সাহসী পদক্ষেপ নেয়া এক কথা নয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে অদ্যাবধি সব সরকারের আমলে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের লোভ বাড়তে বাড়তে আজ দানবে পরিণত হয়েছে। পক্ষপাতিত্ব আচরণে হুকুমনির্ভর প্রশাসন দিয়ে অসুরীয় কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এ দানবকে এখনই প্রতিহত করতে না পারলে আগামীতে মহাদানবে পরিণত হবে তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই।
রাজনীতিবিদরা প্রতিনিয়ত জনগণের অধিকার নিশ্চিত করাসহ অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলেন। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই জনগণ কারা? এ কথা তো আমরা সবাই জানি, জনগণ অবিভাজ্য কিছু নয়। বিত্তবান, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও বিত্তহীন শ্রেণীতে বিভাজিত জনগণের কোনো অংশের পক্ষে প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলগুলো? অতীত থেকে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলগুলোর কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করে যদি কারও মনে হয় ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দলীয় নেতাকর্মীরাই প্রকৃত জনগণ তবে কি তা ভুল হবে? ধনী-গরিবের ব্যবধান কমিয়ে সুশাসনের অঙ্গীকার করা যত সহজ ঠিক ততটাই কঠিন কাজে পরিণত করা। তার জন্য আমাদের সবাইকে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে বদলাতে হবে। দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে সমাজের অসঙ্গতিগুলো দূর করতে না পারলে সামনে শুধুই অন্ধকার। আর সেই অন্ধকারে গণতন্ত্রকে সুসংহত করে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার প্রত্যয় খর-কুটোর মতো ভেসে যাবে। এমনিতে বিদ্যমান গণতন্ত্র কাদের পক্ষে তা নিয়ে মতভেদ আছে। বিত্তবান ও বিত্তহীনদের গণতন্ত্র কখনও এক হতে পারে না। একপক্ষ দুর্বল হলেই না আরেক পক্ষ সবল হবে। ধনী-গরিবে বিভাজিত আজকের পৃথিবীতে আব্রাহাম লিঙ্কনের ‘গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা, জনগণের শাসন’—উক্তির সঙ্গে একমত হওয়ার সুযোগ কোথায়? তিনি যদি জনগণের স্থলে বিত্তহীন গরিবদের কথা বলতেন, তবে তা বিদ্যমান পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতো। কথামালা নয় বাস্তবোচিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে সেই দিন কবে আসবে যেদিন মৌলিক অধিকারবঞ্চিত মানুষের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে?
লেখক : প্রকৌশলী ও কলামিস্ট
No comments