কিছু কথা, কিছু স্মৃতি ও প্রশ্ন by মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান
কিছু টুকরো ঘটনা, কিছু টুকরো স্মৃতি নিয়েই আজকের লেখা শুরু করতে চাই। প্রথমেই টাটকা একটি ঘটনা। সোমবার সকালে হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। রোজই ফেরার পথে হাতিরপুলের পথের পাশে বসা এক হকারের কাছ থেকে একটি ‘আমার দেশ’ এবং অন্য একটি পত্রিকা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে কিনি।
কোনো দিন ‘আমার দেশ’র সঙ্গে অন্য একাধিক পত্রিকাও কিনে ফেলি বিশেষ করে সাহিত্য সাময়িকী বা সংস্কৃতির পাতা সংযোজিত দিনগুলোতে। ২১ ডিসেম্বর সোমবার তেমন দিন নয়। হকার আমাকে দেখেই বলে উঠল, স্যার আজতো ‘আমার দেশ’ নেই। জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কেন’? সে ঝটপট বললো—‘কি জানি, কোম্পানি বন্ধ হইয়া গেছে মনে লয়।’ কথাটা বিশ্বাস করার কোনো কারণ ছিল না। ‘আমার দেশ’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জনাব মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয় না থাকলেও তাঁর লেখা এবং টিভি চ্যানেলে দেয়া বক্তব্যের সঙ্গে যতখানি পরিচয় আছে, তাতে কিছু গুণ্ডাপাণ্ডার হুমকি-ধমকি এবং ছ্যাঁচড়া আক্রমণে ভিত হয়ে তিনি পত্রিকা বন্ধ করে দেবেন, ওই হকারের প্রচারণায় এতটা বিভ্রান্ত হওয়ার মতো ‘মানুষ’ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আমি হকারটির ‘জাত’ চিনে নিলাম। এগিয়ে গিয়ে অন্য এক হকারকে প্রশ্ন করলাম, ‘আমার দেশ’ আছে? সে পত্রিকা বের করে দিচ্ছে—এরই মধ্যে পাশ থেকে একজনের কণ্ঠ শুনলাম—‘থাকব না মানে? আমরা আছি না?’ চেয়ে দেখলাম—এক ভদ্রলোক ‘আমার দেশ’ খুলে পড়ছেন। ভদ্রলোককে চিনলাম, ইনিও প্রতিদিন আগের হকারের কাছ থেকে পত্রিকা নেন। তিনি আরও বললেন, ‘এজিদ-সিমার গো হামলায় মানুষ শহীদ হইতে পারে, ইসলাম তাতে থাইমা যায় না।’ দেখলাম, তাঁর মতো আরও ৭/৮ জন। ‘আমার দেশ’ হাতে, রোদে পিঠ দিয়ে পড়ছেন। তাঁরাও ভদ্রলোকের কথায় সোত্সাহে সায় দিলেন। পত্রিকাটা হাতে নিয়ে ফিরতে ফিরতে মনে পড়ে গেল রোববারের (২০ ডিসেম্বর) আমার দেশের প্রধান শিরোনাম ‘আক্রান্ত আমার দেশ’। মনে হলো, হ্যাঁ, আমাদের এ দেশটা তো সত্যিই আক্রান্ত। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি। যার ধারাবাহিকতা চলছে। মনে পড়ল হার্ভার্ড ইন্টারন্যাশনাল রিভিউ পত্রিকায় বাংলাদেশে ইসলামী উগ্রবাদের উত্থান শিরোনামে প্রকাশিত এক গবেষণার কথা। যে গবেষণায় বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ৩৫ ভাগ মাদ্রাসার ছাত্র অর্থাত্ ইসলামী জঙ্গি রয়েছে। ২০০৮ সালের ১৯ নভেম্বর এটা প্রকাশিত হয়। সেনাবাহিনী থেকে পরিষ্কার ব্যাখ্যা দিয়ে প্রমাণ করে দেয়া হয়েছিল যে, ওই গবেষণালব্ধ, উর্বর মস্তিষ্কজাত ‘নবআবিষ্কার’টি সর্বৈব মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। উদ্দেশ্যটা কি? একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত দেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এহেন মিথ্যাচারের উদ্দেশ্য একটিই, তা হলো—আমেরিকাকে উস্কে দেয়া। আমেরিকা বিশ্বজুড়ে সব মুসলিম দেশে কি ঘটিয়ে চলেছে তা বিশ্ববাসী জানে। তারাই তাদের অর্থায়নে ‘আল-কায়দা’ তৈরি করে তাকে ইসলামী জঙ্গি সংগঠন নাম দিয়ে, তাদের দমনের উদ্দেশ্যের কথা বলে দখল করে নিচ্ছে দেশ এবং নিজ স্বার্থানুকূল সরকার বসিয়ে লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছে। সাদ্দাম হোসেনের যুগে ইরাকে আল-কায়দা ছিল না। আমেরিকার দখলদারিত্বের সময় আল-কায়দাকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে ইরাকে। উদ্দেশ্য, আমেরিকা ইরাক ছেড়ে যাওয়ার পরও কখনও যদি সত্যিকার স্বাধীনতাকামী ইরাকের অভ্যুদয়ের সূচনা দেখা যায়, তখনই যেন ‘আল-কায়দা আল-কায়দা’ ‘জঙ্গি জঙ্গি’ ধুয়ো তুলে আবার ঝাঁপিয়ে পড়া যায়। আফগানিস্তান তো বটেই, পাকিস্তানেও গৃহযুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি করে দিয়েছে আমেরিকা। বিন লাদেন আদৌ বেঁচে আছেন, এমন কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ এখন দৃশ্যমান না হলেও আমেরিকার স্বার্থে এবং প্রচারণার জন্য তাকে জীবিত হিসেবে দেখানো বড় প্রয়োজন। গুজব আছে, বিন লাদেনের জীবিত থাকার কথা জেনে ফেলার কারণেই প্রাণ দিতে হয়েছে বেনজির ভুট্টোকে। বিশ্বের দেশে দেশে রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিশিষ্ট নেতাদের হত্যা করা তো আমেরিকার অনেক পুরনো খেলা।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়কে সেনাবাহিনীতে ইসলামী জঙ্গির আধিক্য দেখিয়ে ওই অতি নির্লজ্জ মিথ্যাচার ছিল আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্ব ও আধিপত্যবাদী ভারতকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নগ্ন হস্তক্ষেপের আহ্বান জানানোর উদ্দেশ্যে। এর মধ্যে ইহুদিবাদী সংযোগও ছিল। বিশ্বের একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলকে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এখনও অবৈধ ও সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে জানে। কিছু গণশত্রুর অবশ্য ইহুদি সংযোগ আছে। যদিও বাংলাদেশ সরকার আজও সন্ত্রাসী রাষ্ট্রটির স্বীকৃতি দেয়নি। তবে এ রাষ্ট্রটির এক ঘনিষ্ঠ দোস্ত আমাদের প্রতিবেশী ভারত। আর আমেরিকা তো ইসরাইলের স্বার্থে সারা বিশ্ব ধ্বংস করতেও পশ্চাত্পদ হবে না। আমেরিকা আবার ভারতের নব্য দোস্ত। ভারতে আমেরিকার অনেক স্বার্থ। আর ভারতের স্বার্থ আশপাশের দেশগুলোকে তার একচেটিয়া বাজারে পরিণত করা, সেসব দেশের সব সম্পদ লুণ্ঠন অথবা ধ্বংস করা। তা করতে হলে সেসব দেশে তাঁবেদার সরকারের প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। এ তাঁবেদার প্রতিষ্ঠার জন্য ভারতের সহযোগী হয়ে যেন পশ্চিমা বিশ্বও এগিয়ে আসে, এটাও ওই মিথ্যাচারের উদ্দেশ্য ছিল। আরও একটি ব্যাপার আছে তা হলো—আমেরিকা, ইসরাইল ও ভারতের প্রধান টার্গেট ইসলাম। অতএব তাদের প্রতিষ্ঠিত সরকারকে যেমন হতে হবে তাঁবেদার, তেমনি হতে হবে ইসলামের সব আদর্শের পরিপন্থী। ২০০৭’র নির্বাচন পণ্ড থেকে শুরু করে অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত এবং এমনকি ২০০৮’র তথাকথিত নির্বাচনেও তাই আমরা পাশ্চাত্য দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের অবিশ্রান্ত ছোটাছুটিতে গলদঘর্ম হতে দেখছি। আর হ্যাঁ, ইহুদি কার্ল জেসিও ভাস্কোর সঙ্গে যৌথ গবেষক কোন বাংলাদেশী আমেরিকান হার্ভার্ড ইন্টারন্যাশনাল রিভিউতে লিখেছিলেন—মনে আছে তো?
লেখক : কবি, গীতিকার ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়কে সেনাবাহিনীতে ইসলামী জঙ্গির আধিক্য দেখিয়ে ওই অতি নির্লজ্জ মিথ্যাচার ছিল আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্ব ও আধিপত্যবাদী ভারতকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নগ্ন হস্তক্ষেপের আহ্বান জানানোর উদ্দেশ্যে। এর মধ্যে ইহুদিবাদী সংযোগও ছিল। বিশ্বের একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলকে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এখনও অবৈধ ও সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে জানে। কিছু গণশত্রুর অবশ্য ইহুদি সংযোগ আছে। যদিও বাংলাদেশ সরকার আজও সন্ত্রাসী রাষ্ট্রটির স্বীকৃতি দেয়নি। তবে এ রাষ্ট্রটির এক ঘনিষ্ঠ দোস্ত আমাদের প্রতিবেশী ভারত। আর আমেরিকা তো ইসরাইলের স্বার্থে সারা বিশ্ব ধ্বংস করতেও পশ্চাত্পদ হবে না। আমেরিকা আবার ভারতের নব্য দোস্ত। ভারতে আমেরিকার অনেক স্বার্থ। আর ভারতের স্বার্থ আশপাশের দেশগুলোকে তার একচেটিয়া বাজারে পরিণত করা, সেসব দেশের সব সম্পদ লুণ্ঠন অথবা ধ্বংস করা। তা করতে হলে সেসব দেশে তাঁবেদার সরকারের প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। এ তাঁবেদার প্রতিষ্ঠার জন্য ভারতের সহযোগী হয়ে যেন পশ্চিমা বিশ্বও এগিয়ে আসে, এটাও ওই মিথ্যাচারের উদ্দেশ্য ছিল। আরও একটি ব্যাপার আছে তা হলো—আমেরিকা, ইসরাইল ও ভারতের প্রধান টার্গেট ইসলাম। অতএব তাদের প্রতিষ্ঠিত সরকারকে যেমন হতে হবে তাঁবেদার, তেমনি হতে হবে ইসলামের সব আদর্শের পরিপন্থী। ২০০৭’র নির্বাচন পণ্ড থেকে শুরু করে অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত এবং এমনকি ২০০৮’র তথাকথিত নির্বাচনেও তাই আমরা পাশ্চাত্য দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের অবিশ্রান্ত ছোটাছুটিতে গলদঘর্ম হতে দেখছি। আর হ্যাঁ, ইহুদি কার্ল জেসিও ভাস্কোর সঙ্গে যৌথ গবেষক কোন বাংলাদেশী আমেরিকান হার্ভার্ড ইন্টারন্যাশনাল রিভিউতে লিখেছিলেন—মনে আছে তো?
লেখক : কবি, গীতিকার ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
No comments