বিশেষ সাক্ষাৎকার : মেজর জেনারেল (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার-কোনো রাজনৈতিক দলেরই সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করা উচিত হবে না
সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন তোলে। পঁচাত্তরের পর থেকে সেনাবাহিনীতে অনেক ক্যু-পাল্টা ক্যু হয়েছে। সব অভ্যুত্থান চেষ্টা সফল হয়নি। কিন্তু এভাবে দায়িত্ব নিয়ে এর আগে কখনো সেনাবাহিনী অভ্যুত্থান বা সরকার উৎখাতের চেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়ার কথা জনসমক্ষে জানায়নি।
সাম্প্রতিক এই ঘটনাপ্রবাহ ও অন্যান্য বিষয়ে কালের কণ্ঠের মুখোমুখি হয়েছিলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার পিএসসি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলী হাবিব কালের কণ্ঠ : এবারই প্রথম একটি ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের খবর সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানল সাধারণ মানুষ। বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?
মোহাম্মদ আলী শিকদার : গত ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে দু-একটি চিহ্নিত সংবাদপত্রে এ বিষয়ে খবর প্রকাশিত হয়। একটি বড় রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীকে জড়িত করে দুরভিসন্ধিমূলক উদ্দেশ্যে যেসব বিভ্রান্তিকর ও কল্পনাপ্রসূত বক্তব্য-বিবৃতি দেওয়া হচ্ছিল, সে সম্পর্কিত সব কিছুর অবসান ঘটেছে এই প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে। সমগ্র দেশের মানুষ আশ্বস্ত হয়েছে এবং সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষায় সেনাবাহিনীর প্রশংসনীয় ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়েছে। কারণ এর আগে, বিশেষ করে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সেনাবাহিনীতে এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু কখনো তা আনুষ্ঠানিকভাবে জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। ১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাসে যে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেছিলেন, সেই অভ্যুত্থানে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সাহসী সেক্টর কমান্ডার জেনারেল খালেদ মোশাররফসহ বেশ কয়েকজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। দেশের মানুষ সেসব নির্মম হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে এখনো তেমন কিছু জানে না। এ নিয়ে আছে নানা রকম সন্দেহ, গুজব ও বিভ্রান্তি। তাই এবারের এই সংবাদ সম্মেলনকে সব শ্রেণীর মানুষ ইতিবাচকভাবে দেখছেন। এটাকে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অন্যতম সাফল্য হিসেবেই মূল্যায়ন করা হয়েছে। মানুষের প্রত্যাশা হলো, এবার সেনাবাহিনী যেভাবে সময়োচিত ও দৃঢ়চেতা ভূমিকা রেখেছে, ভবিষ্যতেও তা যেন বজায় থাকে।
কালের কণ্ঠ : এবারের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের সঙ্গে জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতার কথা বলা হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
মোহাম্মদ আলী শিকদার : এই অপচেষ্টার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আলামত পর্যালোচনা করে এ সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যতটুকু জানা গেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো ধর্মান্ধ হিসেবে চিহ্নিত ও নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহ্রীর কর্তৃক ৮ জানুয়ারি সারা দেশে এবং সেনানিবাসের ভেতরে লিফলেট বিতরণ। ওই লিফলেটে ধর্মান্ধতাকে পুঁজি করে এবং ধর্মের নামে সেনাবাহিনীর সদস্যদের আহ্বান জানানো হয় বর্তমানে সাংবিধানিকভাবে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতের জন্য। উলি্লখিত লিফলেট এবং এই অপচেষ্টার সঙ্গে জড়িত অন্যতম কুশীলব মেজর জিয়াউল হকের ২৬ ডিসেম্বর প্রচারিত ই-মেইল বার্তাটির প্রায় হুবহু মিল পাওয়া গেছে বলে জানা যায়। পঁচাত্তরের পর থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবহমান রাজনীতির দিকে লক্ষ করলে দেখা যাবে, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াত ও তাদের নেতাদের রাজনৈতিক উত্থানের সঙ্গে বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠনগুলোর আবির্ভাব ও বিস্তারের মিল আছে। পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীরা বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ পায় এবং তার ধারাবাহিকতায় ২০০১-০৬ সালে তাদের 'ন্যাচারাল অ্যালাই' বিএনপির সঙ্গে একত্র হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। এই পরাজিত যুদ্ধাপরাধীদের শঙ্কা থাকা স্বাভাবিক যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দর্শনধারী রাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতায় থাকলে তার সুযোগে এ দেশের মানুষও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জেগে উঠবে। আর সেটি যখন পূর্ণতা পাবে, তখন লাখো মানুষের রক্তে রঞ্জিত বাংলার মাটিতে অন্তত জামায়াতের রাজনীতি করা সম্ভব হবে না। সুতরাং দুইয়ে-দুইয়ে যেমন চার হয়, তেমনি জামায়াত রাজনৈতিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের দল আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বিএনপির কাঁধে সওয়ার হয়। বাহারি নামের নানা জঙ্গি সংগঠন দ্বিতীয় ফ্রন্ট হিসেবে সৃষ্টি ও লালন-পালন করে। এখানে বলা আবশ্যক, একই উদ্দেশ্যে ও কারণে জামায়াত ও জঙ্গিদের সঙ্গে যোগ দেয় পঁচাত্তরের খুনিরা। উদীচীর অনুষ্ঠান, পহেলা বৈশাখ এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড ও বোমা হামলা উপরোক্ত বক্তব্যকে সমর্থন করে। এর ওপর একাত্তর সাল থেকে আজ অবধি জামায়াতের ক্রিয়াকলাপ এবং গত শতকের নব্বইয়ের দশক থেকে জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), হরকাতুল জিহাদ (হুজি) এবং হিযবুত তাহ্রীরের আবির্ভাব, তাদের ধর্মান্ধ উগ্র সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, উদ্ধারকৃত বইপত্র ও প্রকাশনা, জঙ্গিদের বোমা ও গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জামায়াতের সংস্রবের বিবরণ এবং সর্বোপরি এই জঙ্গিদের লুকিয়ে রাখা বা আড়াল করার কাজে জামায়াতিদের প্রাণান্তকর চেষ্টাই বলে দেয়, এই ধর্মান্ধদের গোড়া একই স্থানে। অর্থাৎ তারা সবাই 'সবার তরে'। জামায়াতের দুই শীর্ষ নেতা, যাঁরা যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত, তাঁরা ২০০১-০৬ সময়ে বিএনপি সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ছিলেন। উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাহিনীগুলোর ভেতরে তাঁদের অনেক অন্ধ অনুসারী সুপরিকল্পিতভাবে যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়নি, তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে? দেশের প্রায় শতভাগ তারুণ্যের প্রত্যাশা অনুযায়ী বর্তমান সরকার একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করেছে। ইতিমধ্যে অভিযুক্ত হিসেবে জামায়াতের গোলাম আযমসহ ছয়জন এবং বিএনপির দুজন শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার হয়ে আদালতে সোপর্দিত হয়েছেন। বর্তমান সরকারের বাকি দুই বছরে এই বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে অপরাধীদের যথাযথ শাস্তি হবে বলে মানুষ আশাবাদী। আর সেটি যদি হয়, তাহলে এ দেশের রাজনীতির অঙ্গন থেকে জামায়াতের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে; যেমনটি তারা বিলীন হয়ে গিয়েছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর। সুতরাং যুদ্ধাপরাধী, তাদের দোসর এবং পঁচাত্তরের খুনিদের মদদপুষ্ট জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতা অবশ্যই গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখতে হবে।
কালের কণ্ঠ : জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনের কথা শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মত কী?
মোহাম্মদ আলী শিকদার : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে নিরাপত্তা কাউন্সিল রয়েছে। তবে প্রতিটি দেশের নিরাপত্তা কাউন্সিল ওই দেশের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ বাধ্যবাধকতা, বৈদেশিক নীতি এবং জাতীয় লক্ষ্য ও আদর্শের ওপর ভিত্তি করে গঠন করা হয়েছে। গত জরুরি আইনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনের বিষয়টি তখনকার ক্ষমতাশালীরা জোরেশোরে সামনে এনেছিলেন। কিন্তু তখন এর সাংগঠনিক কাঠামো, ক্ষমতা এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বিন্যাসের হাইয়্যারকিতে এই সংগঠনের অবস্থান কোথায় হবে, তা নিয়ে সিভিল সমাজে অনেক বিতর্ক হয়েছিল। সে সময় ক্ষমতাসীনরা যেভাবে নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠন করতে চেয়েছিলেন তা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না, বরং মানুষের মনে সন্দেহ জেগেছিল যে ওই অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীরা তাদের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য বোধ হয় এমন একটি সংগঠন সৃষ্টি করতে চাইছে। সুতরাং নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠন করতে হলে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে যেন শক্তিশালী করতে সহায়ক হয় এবং সংবিধানকে সমুন্নত রাখতে পারে, সেভাবে এর কাঠামো, ক্ষমতা ও অবস্থান ঠিক করতে হবে। সর্বোপরি সংসদে বিস্তারিত আলোচনা করে এবং জনগণকে আস্থায় নিয়ে তা করা গেলে খারাপ হবে না।
কালের কণ্ঠ : ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, অভ্যুত্থান চেষ্টা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। এ-জাতীয় কর্মকাণ্ড যাতে আর না ঘটে, তার জন্য কী করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?
মোহাম্মদ আলী শিকদার : যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যত দিন শেষ না হবে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক সব আসামিকে যত দিন পর্যন্ত আটক করে আদালতের দণ্ডাদেশ কার্যকর করা না যাবে এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে, রাষ্ট্রের সব অঙ্গন ও সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দর্শন যত দিন প্রতিষ্ঠিত না হবে, তত দিন এমন হুমকি ও আশঙ্কা থেকে জাতি পরিত্রাণ পাবে না। এই ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন থেকে জাতিকে রক্ষা করতে হলে সব ধরনের ধর্মান্ধ জঙ্গি ভয়াবহতা সম্পর্কে সব শ্রেণী-পেশার জনগণকে সচেতন করতে হবে। জঙ্গিদের জন্য Fish out of water- এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে। বাঙালি চায় শান্তিময় ও কল্যাণময় বাংলাদেশ। তাই এই চাওয়ার মূল প্রতিবন্ধক ধর্মান্ধ উগ্র জঙ্গি শক্তির প্রভাবমুক্ত রাষ্ট্রব্যবস্থা আজ একান্তভাবে কাম্য। হানাহানি ও রক্তারক্তি এড়িয়ে সেটি প্রতিষ্ঠা করা কিভাবে সম্ভব, তা নিয়ে দেশের সুধী ও পণ্ডিতজনদের ভাবতে হবে। সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান চেষ্টা বন্ধ করতে হলে অফিসার ক্যাডেট নির্বাচনপ্রক্রিয়া আরো সময়োপযোগী করে নিশ্ছিদ্র সতর্কতামূলক ব্যবস্থা প্রণয়ন করা দরকার। প্রশিক্ষণ ও মোটিভেশন-দর্শনে জাতীয় চেতনার প্রতিফলন থাকতে হবে। প্রমোশন, পোস্টিং ও নিয়োগপ্রক্রিয়ার মধ্যে সব বিবেচনার ঊধর্ে্ব স্থান দিতে হবে জাতীয় চেতনার প্রতি দায়বদ্ধতাকে। সর্বোপরি জাতীয় মর্যাদা রক্ষাকল্পে ঘটে যাওয়া বিকৃত মস্তিষ্কের ঘৃণ্য অপচেষ্টাকে শক্ত হাতে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে হ্যান্ডেল করতে হবে, যাতে এমন চিন্তা আর কখনো কেউ না করে।
কালের কণ্ঠ : ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর আমরা দেখলাম, প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল পরস্পরকে দোষারোপ করছে। বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?
মোহাম্মদ আলী শিকদার : ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে সরকারি ও বিরোধী দল পরস্পরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছে, যা প্রকৃত কালপ্রিটদের শনাক্ত করার প্রচেষ্টা ব্যাহত করতে পারে। তদন্ত এখনো চলছে, তাই আগাম কোনো বক্তব্য দিয়ে মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা ঠিক হবে না। তদন্তই বলে দেবে কারা এই ঘৃণ্য অপচেষ্টার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। তবে মনে রাখতে হবে, Statement of Fact এবং দোষারোপ এক কথা নয়। বরং তদন্তকে শক্তিশালী ও বস্তুনিষ্ঠ করার জন্য যার যে তথ্য-উপাত্ত জানা আছে, সেটা প্রকাশ করলে তদন্ত কমিশনের জন্য তা ক্লু হিসেবে সহায়ক হতে পারে। তবে কোনো পক্ষ থেকে নিজেদের মনগড়া ও কল্পনাপ্রসূত বক্তব্য দেওয়া উচিত হবে না। ২৬ ডিসেম্বর মেজর জিয়াউল হকের ই-মেইল বার্তা হিযবুত তাহ্রীরের লিফলেট এবং ৯ জানুয়ারি একটি রাজনৈতিক দল থেকে লিফলেটে বর্ণিত বক্তব্য একই ধরনের বক্তব্য প্রদানের কথা পুনর্ব্যক্ত করলে তাকে দোষারোপ করা না বলে Statement of Fact হিসেবে বিবেচনা করাই যৌক্তিক।
কালের কণ্ঠ : রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা রাজনৈতিক দলের কি এ ক্ষেত্রে করণীয় কিছু আছে?
মোহাম্মদ আলী শিকদার : সেনাবাহিনী রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। রাষ্ট্র ও জাতির মর্যাদার জন্য সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা বজায় রাখা অপরিহার্য। বিগত দিনে সেনাবাহিনীর স্বল্পসংখ্যক ব্যক্তির স্বার্থান্বেষী কার্যকলাপ সত্ত্বেও এখনো সেনাবাহিনীর প্রতি সাধারণ মানুষের প্রবল আস্থা ও বিশ্বাস আছে। সেনাবাহিনীর নিজস্ব আইন আছে। সেই আইন অনুসারে সংঘটিত ঘটনার সঠিক তদন্ত ও বিচার সেনাবাহিনীই করতে পারবে। এই বিচারপ্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা দলের কোনো কিছু করণীয় নেই। কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া সমীচীন হবে না। রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং দল দেশ পরিচালনায় ভূমিকা রাখে। নির্বাচিত রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করে। সেনাবাহিনী সরকারের মেশিনারিজের একটি অংশ। এখানে ব্যবহার করা বা ব্যবহৃত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কোনো রাজনৈতিক দলেরই উচিত হবে না সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করা।
কালের কণ্ঠ : আমরা নিশ্চয় আশা করতে পারি যে আমাদের সেনাবাহিনী এখন অনেক সচেতন। গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা কী হওয়া উচিত?
মোহাম্মদ আলী শিকদার : সেনাবাহিনীর সৈনিক থেকে অফিসার পর্যন্ত সবাই এখন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। উন্মুক্ত তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গেও তাঁরা এখন সম্পৃক্ত। তা ছাড়া জাতিসংঘের মিশনের জন্য তাঁরা শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনের পরিবেশ ও পরিস্থিতি সম্পর্কেও সম্যক অবহিত। গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে তাঁদের জাতীয় চেতনা ও দর্শনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে।
কালের কণ্ঠ : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ আলী শিকদার : আপনাকেও ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ আলী শিকদার : গত ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে দু-একটি চিহ্নিত সংবাদপত্রে এ বিষয়ে খবর প্রকাশিত হয়। একটি বড় রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীকে জড়িত করে দুরভিসন্ধিমূলক উদ্দেশ্যে যেসব বিভ্রান্তিকর ও কল্পনাপ্রসূত বক্তব্য-বিবৃতি দেওয়া হচ্ছিল, সে সম্পর্কিত সব কিছুর অবসান ঘটেছে এই প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে। সমগ্র দেশের মানুষ আশ্বস্ত হয়েছে এবং সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষায় সেনাবাহিনীর প্রশংসনীয় ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়েছে। কারণ এর আগে, বিশেষ করে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সেনাবাহিনীতে এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু কখনো তা আনুষ্ঠানিকভাবে জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। ১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাসে যে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেছিলেন, সেই অভ্যুত্থানে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সাহসী সেক্টর কমান্ডার জেনারেল খালেদ মোশাররফসহ বেশ কয়েকজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। দেশের মানুষ সেসব নির্মম হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে এখনো তেমন কিছু জানে না। এ নিয়ে আছে নানা রকম সন্দেহ, গুজব ও বিভ্রান্তি। তাই এবারের এই সংবাদ সম্মেলনকে সব শ্রেণীর মানুষ ইতিবাচকভাবে দেখছেন। এটাকে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অন্যতম সাফল্য হিসেবেই মূল্যায়ন করা হয়েছে। মানুষের প্রত্যাশা হলো, এবার সেনাবাহিনী যেভাবে সময়োচিত ও দৃঢ়চেতা ভূমিকা রেখেছে, ভবিষ্যতেও তা যেন বজায় থাকে।
কালের কণ্ঠ : এবারের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের সঙ্গে জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতার কথা বলা হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
মোহাম্মদ আলী শিকদার : এই অপচেষ্টার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আলামত পর্যালোচনা করে এ সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যতটুকু জানা গেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো ধর্মান্ধ হিসেবে চিহ্নিত ও নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহ্রীর কর্তৃক ৮ জানুয়ারি সারা দেশে এবং সেনানিবাসের ভেতরে লিফলেট বিতরণ। ওই লিফলেটে ধর্মান্ধতাকে পুঁজি করে এবং ধর্মের নামে সেনাবাহিনীর সদস্যদের আহ্বান জানানো হয় বর্তমানে সাংবিধানিকভাবে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতের জন্য। উলি্লখিত লিফলেট এবং এই অপচেষ্টার সঙ্গে জড়িত অন্যতম কুশীলব মেজর জিয়াউল হকের ২৬ ডিসেম্বর প্রচারিত ই-মেইল বার্তাটির প্রায় হুবহু মিল পাওয়া গেছে বলে জানা যায়। পঁচাত্তরের পর থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবহমান রাজনীতির দিকে লক্ষ করলে দেখা যাবে, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াত ও তাদের নেতাদের রাজনৈতিক উত্থানের সঙ্গে বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠনগুলোর আবির্ভাব ও বিস্তারের মিল আছে। পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীরা বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ পায় এবং তার ধারাবাহিকতায় ২০০১-০৬ সালে তাদের 'ন্যাচারাল অ্যালাই' বিএনপির সঙ্গে একত্র হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। এই পরাজিত যুদ্ধাপরাধীদের শঙ্কা থাকা স্বাভাবিক যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দর্শনধারী রাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতায় থাকলে তার সুযোগে এ দেশের মানুষও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জেগে উঠবে। আর সেটি যখন পূর্ণতা পাবে, তখন লাখো মানুষের রক্তে রঞ্জিত বাংলার মাটিতে অন্তত জামায়াতের রাজনীতি করা সম্ভব হবে না। সুতরাং দুইয়ে-দুইয়ে যেমন চার হয়, তেমনি জামায়াত রাজনৈতিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের দল আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বিএনপির কাঁধে সওয়ার হয়। বাহারি নামের নানা জঙ্গি সংগঠন দ্বিতীয় ফ্রন্ট হিসেবে সৃষ্টি ও লালন-পালন করে। এখানে বলা আবশ্যক, একই উদ্দেশ্যে ও কারণে জামায়াত ও জঙ্গিদের সঙ্গে যোগ দেয় পঁচাত্তরের খুনিরা। উদীচীর অনুষ্ঠান, পহেলা বৈশাখ এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড ও বোমা হামলা উপরোক্ত বক্তব্যকে সমর্থন করে। এর ওপর একাত্তর সাল থেকে আজ অবধি জামায়াতের ক্রিয়াকলাপ এবং গত শতকের নব্বইয়ের দশক থেকে জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), হরকাতুল জিহাদ (হুজি) এবং হিযবুত তাহ্রীরের আবির্ভাব, তাদের ধর্মান্ধ উগ্র সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, উদ্ধারকৃত বইপত্র ও প্রকাশনা, জঙ্গিদের বোমা ও গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জামায়াতের সংস্রবের বিবরণ এবং সর্বোপরি এই জঙ্গিদের লুকিয়ে রাখা বা আড়াল করার কাজে জামায়াতিদের প্রাণান্তকর চেষ্টাই বলে দেয়, এই ধর্মান্ধদের গোড়া একই স্থানে। অর্থাৎ তারা সবাই 'সবার তরে'। জামায়াতের দুই শীর্ষ নেতা, যাঁরা যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত, তাঁরা ২০০১-০৬ সময়ে বিএনপি সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ছিলেন। উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাহিনীগুলোর ভেতরে তাঁদের অনেক অন্ধ অনুসারী সুপরিকল্পিতভাবে যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়নি, তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে? দেশের প্রায় শতভাগ তারুণ্যের প্রত্যাশা অনুযায়ী বর্তমান সরকার একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করেছে। ইতিমধ্যে অভিযুক্ত হিসেবে জামায়াতের গোলাম আযমসহ ছয়জন এবং বিএনপির দুজন শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার হয়ে আদালতে সোপর্দিত হয়েছেন। বর্তমান সরকারের বাকি দুই বছরে এই বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে অপরাধীদের যথাযথ শাস্তি হবে বলে মানুষ আশাবাদী। আর সেটি যদি হয়, তাহলে এ দেশের রাজনীতির অঙ্গন থেকে জামায়াতের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে; যেমনটি তারা বিলীন হয়ে গিয়েছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর। সুতরাং যুদ্ধাপরাধী, তাদের দোসর এবং পঁচাত্তরের খুনিদের মদদপুষ্ট জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতা অবশ্যই গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখতে হবে।
কালের কণ্ঠ : জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনের কথা শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মত কী?
মোহাম্মদ আলী শিকদার : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে নিরাপত্তা কাউন্সিল রয়েছে। তবে প্রতিটি দেশের নিরাপত্তা কাউন্সিল ওই দেশের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ বাধ্যবাধকতা, বৈদেশিক নীতি এবং জাতীয় লক্ষ্য ও আদর্শের ওপর ভিত্তি করে গঠন করা হয়েছে। গত জরুরি আইনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনের বিষয়টি তখনকার ক্ষমতাশালীরা জোরেশোরে সামনে এনেছিলেন। কিন্তু তখন এর সাংগঠনিক কাঠামো, ক্ষমতা এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বিন্যাসের হাইয়্যারকিতে এই সংগঠনের অবস্থান কোথায় হবে, তা নিয়ে সিভিল সমাজে অনেক বিতর্ক হয়েছিল। সে সময় ক্ষমতাসীনরা যেভাবে নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠন করতে চেয়েছিলেন তা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না, বরং মানুষের মনে সন্দেহ জেগেছিল যে ওই অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীরা তাদের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য বোধ হয় এমন একটি সংগঠন সৃষ্টি করতে চাইছে। সুতরাং নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠন করতে হলে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে যেন শক্তিশালী করতে সহায়ক হয় এবং সংবিধানকে সমুন্নত রাখতে পারে, সেভাবে এর কাঠামো, ক্ষমতা ও অবস্থান ঠিক করতে হবে। সর্বোপরি সংসদে বিস্তারিত আলোচনা করে এবং জনগণকে আস্থায় নিয়ে তা করা গেলে খারাপ হবে না।
কালের কণ্ঠ : ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, অভ্যুত্থান চেষ্টা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। এ-জাতীয় কর্মকাণ্ড যাতে আর না ঘটে, তার জন্য কী করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?
মোহাম্মদ আলী শিকদার : যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যত দিন শেষ না হবে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক সব আসামিকে যত দিন পর্যন্ত আটক করে আদালতের দণ্ডাদেশ কার্যকর করা না যাবে এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে, রাষ্ট্রের সব অঙ্গন ও সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দর্শন যত দিন প্রতিষ্ঠিত না হবে, তত দিন এমন হুমকি ও আশঙ্কা থেকে জাতি পরিত্রাণ পাবে না। এই ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন থেকে জাতিকে রক্ষা করতে হলে সব ধরনের ধর্মান্ধ জঙ্গি ভয়াবহতা সম্পর্কে সব শ্রেণী-পেশার জনগণকে সচেতন করতে হবে। জঙ্গিদের জন্য Fish out of water- এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে। বাঙালি চায় শান্তিময় ও কল্যাণময় বাংলাদেশ। তাই এই চাওয়ার মূল প্রতিবন্ধক ধর্মান্ধ উগ্র জঙ্গি শক্তির প্রভাবমুক্ত রাষ্ট্রব্যবস্থা আজ একান্তভাবে কাম্য। হানাহানি ও রক্তারক্তি এড়িয়ে সেটি প্রতিষ্ঠা করা কিভাবে সম্ভব, তা নিয়ে দেশের সুধী ও পণ্ডিতজনদের ভাবতে হবে। সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান চেষ্টা বন্ধ করতে হলে অফিসার ক্যাডেট নির্বাচনপ্রক্রিয়া আরো সময়োপযোগী করে নিশ্ছিদ্র সতর্কতামূলক ব্যবস্থা প্রণয়ন করা দরকার। প্রশিক্ষণ ও মোটিভেশন-দর্শনে জাতীয় চেতনার প্রতিফলন থাকতে হবে। প্রমোশন, পোস্টিং ও নিয়োগপ্রক্রিয়ার মধ্যে সব বিবেচনার ঊধর্ে্ব স্থান দিতে হবে জাতীয় চেতনার প্রতি দায়বদ্ধতাকে। সর্বোপরি জাতীয় মর্যাদা রক্ষাকল্পে ঘটে যাওয়া বিকৃত মস্তিষ্কের ঘৃণ্য অপচেষ্টাকে শক্ত হাতে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে হ্যান্ডেল করতে হবে, যাতে এমন চিন্তা আর কখনো কেউ না করে।
কালের কণ্ঠ : ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর আমরা দেখলাম, প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল পরস্পরকে দোষারোপ করছে। বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?
মোহাম্মদ আলী শিকদার : ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে সরকারি ও বিরোধী দল পরস্পরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছে, যা প্রকৃত কালপ্রিটদের শনাক্ত করার প্রচেষ্টা ব্যাহত করতে পারে। তদন্ত এখনো চলছে, তাই আগাম কোনো বক্তব্য দিয়ে মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা ঠিক হবে না। তদন্তই বলে দেবে কারা এই ঘৃণ্য অপচেষ্টার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। তবে মনে রাখতে হবে, Statement of Fact এবং দোষারোপ এক কথা নয়। বরং তদন্তকে শক্তিশালী ও বস্তুনিষ্ঠ করার জন্য যার যে তথ্য-উপাত্ত জানা আছে, সেটা প্রকাশ করলে তদন্ত কমিশনের জন্য তা ক্লু হিসেবে সহায়ক হতে পারে। তবে কোনো পক্ষ থেকে নিজেদের মনগড়া ও কল্পনাপ্রসূত বক্তব্য দেওয়া উচিত হবে না। ২৬ ডিসেম্বর মেজর জিয়াউল হকের ই-মেইল বার্তা হিযবুত তাহ্রীরের লিফলেট এবং ৯ জানুয়ারি একটি রাজনৈতিক দল থেকে লিফলেটে বর্ণিত বক্তব্য একই ধরনের বক্তব্য প্রদানের কথা পুনর্ব্যক্ত করলে তাকে দোষারোপ করা না বলে Statement of Fact হিসেবে বিবেচনা করাই যৌক্তিক।
কালের কণ্ঠ : রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা রাজনৈতিক দলের কি এ ক্ষেত্রে করণীয় কিছু আছে?
মোহাম্মদ আলী শিকদার : সেনাবাহিনী রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। রাষ্ট্র ও জাতির মর্যাদার জন্য সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা বজায় রাখা অপরিহার্য। বিগত দিনে সেনাবাহিনীর স্বল্পসংখ্যক ব্যক্তির স্বার্থান্বেষী কার্যকলাপ সত্ত্বেও এখনো সেনাবাহিনীর প্রতি সাধারণ মানুষের প্রবল আস্থা ও বিশ্বাস আছে। সেনাবাহিনীর নিজস্ব আইন আছে। সেই আইন অনুসারে সংঘটিত ঘটনার সঠিক তদন্ত ও বিচার সেনাবাহিনীই করতে পারবে। এই বিচারপ্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা দলের কোনো কিছু করণীয় নেই। কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া সমীচীন হবে না। রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং দল দেশ পরিচালনায় ভূমিকা রাখে। নির্বাচিত রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করে। সেনাবাহিনী সরকারের মেশিনারিজের একটি অংশ। এখানে ব্যবহার করা বা ব্যবহৃত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কোনো রাজনৈতিক দলেরই উচিত হবে না সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করা।
কালের কণ্ঠ : আমরা নিশ্চয় আশা করতে পারি যে আমাদের সেনাবাহিনী এখন অনেক সচেতন। গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা কী হওয়া উচিত?
মোহাম্মদ আলী শিকদার : সেনাবাহিনীর সৈনিক থেকে অফিসার পর্যন্ত সবাই এখন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। উন্মুক্ত তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গেও তাঁরা এখন সম্পৃক্ত। তা ছাড়া জাতিসংঘের মিশনের জন্য তাঁরা শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনের পরিবেশ ও পরিস্থিতি সম্পর্কেও সম্যক অবহিত। গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে তাঁদের জাতীয় চেতনা ও দর্শনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে।
কালের কণ্ঠ : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ আলী শিকদার : আপনাকেও ধন্যবাদ।
No comments