সারি সারি ‘লন্ডনি পুল by উজ্জ্বল মেহেদী ও আবদুল ওয়াদুদ
প্রবাসী-অধ্যুষিত সিলেটের বিয়ানীবাজারে দুটি খালের ওপর ৫৮টি সেতু রয়েছে। ছোট সেতুগুলো একটির গা ঘেঁষে আরেকটি দাঁড়িয়ে আছে। এপারে সরকারি রাস্তা, ওপারে বাড়ি, মাঝখানে সরু খাল। এই খালটুকু পার হতে ব্যক্তি-উদ্যোগে সেতুগুলো বানানো হয়েছে। স্থানীয়দের কাছে এগুলো ‘লন্ডনি পুল’ নামে পরিচিত।
এমন নামকরণের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, সেতুকে স্থানীয়ভাবে ‘পুল’ বলা হয়। আর ব্রিটেন-প্রবাসীদের ডাকা হয় ‘লন্ডনি’ নামে। এই প্রবাসীরা বাড়িতে গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের সুবিধার্থে বাড়ি বাড়ি সেতু বানিয়েছেন। তাই লোকে সেতুগুলোকে ‘লন্ডনি পুল’ বলে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সরু হয়ে যাওয়া খাল দুটিতে বর্ষা ছাড়া পানি থাকে না। দুটি খালেরই উৎপত্তিস্থল কুশিয়ারা নদীর লুলা খাল। খাল দুটি বিয়ানীবাজার উপজেলার দুটি ইউনিয়নে পড়েছে। স্থানীয়ভাবে পরিচিত মাথিউরি খালটির দুই কিলোমিটার অংশ পড়েছে মাথিউরা ইউনিয়নে। এই দুই কিলোমিটারেই বানানো হয়েছে ৩৬টি সেতু। মাথিউরার ভাটারবাজারে গিয়ে দুই ধারায় বিভক্ত হয়েছে মাথিউরি খাল। অপর অংশ কুড়ারবাজার ইউনিয়নের উত্তর-আকাখাজনা গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। খালের এই অংশটি স্থানীয়ভাবে আকাখাজনার খাল বলে পরিচিত। এই খালের আধা কিলোমিটারে আছে ২২টি সেতু। সেতুগুলো দৈর্ঘ্যে ২০ থেকে ৪০ ফুট।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী রমেন্দ্র হোম চৌধুরী জানান, দুই খালের এক পাশে একটি রাস্তা থাকায় এমন হয়েছে। একেকটি সেতু তৈরিতে দুই থেকে সাত লাখ টাকা খরচ হয়ে থাকতে পারে জানিয়ে প্রকৌশলী বলেন, ‘খালের ওপারে বরং আরেকটি রাস্তা করে দুই ইউনিয়নে দুটি সেতু হলেই যথেষ্ট ছিল।’
মাথিউরা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কমপ্লেক্সের সামনে ১০০ গজের মধ্যে বড় তিনটি সেতু অবস্থিত। এগুলো একেকটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ৫০ ফুট। একটি গ্রামবাসীর, একটি ইউনিয়ন পরিষদের, অপর সেতুটি ব্যক্তিগত। এক সেতু হলেই তো চলত, তিন সেতু কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে মাথিউরা ইউপির চেয়ারম্যান শিহাব উদ্দিন জানান, ইউনিয়ন পরিষদের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় এক দশক আগে। এরপর তৈরি হয়েছে গ্রামবাসীর (পশ্চিমপার মহল্লা) সেতু। এর পাশে একই আদলে তুরুণ মিয়ার বাড়ির সামনে হয়েছে আরেকটি সেতু। তিনটি সেতুই ‘লন্ডনিদের’ অনুদানে তৈরি হয়েছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান।
মাথিউরার ‘ভুট্টো বাড়ি’র ফটকলাগোয়া সেতুটির মালিক মহসিন উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রামে প্রতিটি বাড়ির গড়ন আলাদা। সামর্থ্য আছে বলেই প্রত্যেকে আলাদা সেতু করেছেন। আমরাও করেছি।’ আলীম লোদী নামে এক সেতুমালিক জানান, ১০-১৫ বছর আগে থেকেই খালে সেতু তৈরি শুরু হয়।
আধা কিলোমিটারে ২২ সেতু থাকা প্রসঙ্গে কুড়ারবাজার ইউপির চেয়ারম্যান আলকাছ আলী জানান, খালের এক পারে সরকারি রাস্তা। অন্য পারে বাড়িগুলো সব রাস্তাহীন। খাল পার হয়ে চলাফেরায় কষ্ট লাঘবে এগুলো করা হয়েছে। গ্রামের প্রায় সব বাড়িতেই দু-চারজন লন্ডনপ্রবাসী থাকায় তাঁরা নিজ থেকে তাঁদের চলাচলের সুবিধা করে নিয়েছেন।
উত্তর-আকাখাজনা গ্রামের রহুল আমিন বলেন ‘গাউর (গ্রামের) হখল বাড়িত লন্ডনি আছইন। লন্ডনিরা দেশও আইলে গাড়ি বাড়িত নিতা পারতা না। বাড়িত গাড়ি হারাইবার (প্রবেশ) লাগিয়া পুল বানাইছইন।’
ভিন্ন মতও পাওয়া গেছে খালের ওপারে রাস্তার পার্শ্ববর্তী এলাকাবাসীর কাছে। তাঁদের ভাষ্য, সড়ক যোগাযোগ হওয়ার আগে দুটি খালই ছিল মানুষের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। কুশিয়ারা নদী থেকে সরাসরি যাত্রীবাহী নৌকা খালে ঢুকত। গোলাপগঞ্জ-মাথিউরা-বিয়ানীবাজার সড়ক হওয়ার পর খালে নৌ-চলাচলে ভাটা পড়ে। একপর্যায়ে খালের ওপারে বাড়িগুলো সড়কমুখী হওয়ার প্রবণতায় প্রায় এক দশকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেতু তৈরি হয়। এতে নাব্যতা হারানো খাল ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে পড়ে।
নালবহর গ্রামের আবদুল্লাহ খান বলেন, সেতু হয়েছে সড়ক যোগাযোগের কারণে। কিন্তু যেখানে একটি সেতু হলেই চলত, সেখানে বাড়ি বাড়ি সেতু বানানো অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়।
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুব্রত কুমার দে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এখানে (বিয়ানীবাজার) যোগদানের পরই দুটি খালের ওই আড়াই কিলোমিটার অংশ দেখে হতবাক হয়েছি। জলাধার সংরক্ষণ আইনে এসব সেতুর নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। আবার মানুষের চলাচলের অসুবিধাও বিবেচ্য বিষয়। ব্যক্তিগত সেতু ও সরকারি খাল চিহ্নিত করে রাখার প্রয়োজনে খাল জরিপ করা হবে।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, সরু হয়ে যাওয়া খাল দুটিতে বর্ষা ছাড়া পানি থাকে না। দুটি খালেরই উৎপত্তিস্থল কুশিয়ারা নদীর লুলা খাল। খাল দুটি বিয়ানীবাজার উপজেলার দুটি ইউনিয়নে পড়েছে। স্থানীয়ভাবে পরিচিত মাথিউরি খালটির দুই কিলোমিটার অংশ পড়েছে মাথিউরা ইউনিয়নে। এই দুই কিলোমিটারেই বানানো হয়েছে ৩৬টি সেতু। মাথিউরার ভাটারবাজারে গিয়ে দুই ধারায় বিভক্ত হয়েছে মাথিউরি খাল। অপর অংশ কুড়ারবাজার ইউনিয়নের উত্তর-আকাখাজনা গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। খালের এই অংশটি স্থানীয়ভাবে আকাখাজনার খাল বলে পরিচিত। এই খালের আধা কিলোমিটারে আছে ২২টি সেতু। সেতুগুলো দৈর্ঘ্যে ২০ থেকে ৪০ ফুট।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী রমেন্দ্র হোম চৌধুরী জানান, দুই খালের এক পাশে একটি রাস্তা থাকায় এমন হয়েছে। একেকটি সেতু তৈরিতে দুই থেকে সাত লাখ টাকা খরচ হয়ে থাকতে পারে জানিয়ে প্রকৌশলী বলেন, ‘খালের ওপারে বরং আরেকটি রাস্তা করে দুই ইউনিয়নে দুটি সেতু হলেই যথেষ্ট ছিল।’
মাথিউরা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কমপ্লেক্সের সামনে ১০০ গজের মধ্যে বড় তিনটি সেতু অবস্থিত। এগুলো একেকটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ৫০ ফুট। একটি গ্রামবাসীর, একটি ইউনিয়ন পরিষদের, অপর সেতুটি ব্যক্তিগত। এক সেতু হলেই তো চলত, তিন সেতু কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে মাথিউরা ইউপির চেয়ারম্যান শিহাব উদ্দিন জানান, ইউনিয়ন পরিষদের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় এক দশক আগে। এরপর তৈরি হয়েছে গ্রামবাসীর (পশ্চিমপার মহল্লা) সেতু। এর পাশে একই আদলে তুরুণ মিয়ার বাড়ির সামনে হয়েছে আরেকটি সেতু। তিনটি সেতুই ‘লন্ডনিদের’ অনুদানে তৈরি হয়েছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান।
মাথিউরার ‘ভুট্টো বাড়ি’র ফটকলাগোয়া সেতুটির মালিক মহসিন উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রামে প্রতিটি বাড়ির গড়ন আলাদা। সামর্থ্য আছে বলেই প্রত্যেকে আলাদা সেতু করেছেন। আমরাও করেছি।’ আলীম লোদী নামে এক সেতুমালিক জানান, ১০-১৫ বছর আগে থেকেই খালে সেতু তৈরি শুরু হয়।
আধা কিলোমিটারে ২২ সেতু থাকা প্রসঙ্গে কুড়ারবাজার ইউপির চেয়ারম্যান আলকাছ আলী জানান, খালের এক পারে সরকারি রাস্তা। অন্য পারে বাড়িগুলো সব রাস্তাহীন। খাল পার হয়ে চলাফেরায় কষ্ট লাঘবে এগুলো করা হয়েছে। গ্রামের প্রায় সব বাড়িতেই দু-চারজন লন্ডনপ্রবাসী থাকায় তাঁরা নিজ থেকে তাঁদের চলাচলের সুবিধা করে নিয়েছেন।
উত্তর-আকাখাজনা গ্রামের রহুল আমিন বলেন ‘গাউর (গ্রামের) হখল বাড়িত লন্ডনি আছইন। লন্ডনিরা দেশও আইলে গাড়ি বাড়িত নিতা পারতা না। বাড়িত গাড়ি হারাইবার (প্রবেশ) লাগিয়া পুল বানাইছইন।’
ভিন্ন মতও পাওয়া গেছে খালের ওপারে রাস্তার পার্শ্ববর্তী এলাকাবাসীর কাছে। তাঁদের ভাষ্য, সড়ক যোগাযোগ হওয়ার আগে দুটি খালই ছিল মানুষের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। কুশিয়ারা নদী থেকে সরাসরি যাত্রীবাহী নৌকা খালে ঢুকত। গোলাপগঞ্জ-মাথিউরা-বিয়ানীবাজার সড়ক হওয়ার পর খালে নৌ-চলাচলে ভাটা পড়ে। একপর্যায়ে খালের ওপারে বাড়িগুলো সড়কমুখী হওয়ার প্রবণতায় প্রায় এক দশকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেতু তৈরি হয়। এতে নাব্যতা হারানো খাল ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে পড়ে।
নালবহর গ্রামের আবদুল্লাহ খান বলেন, সেতু হয়েছে সড়ক যোগাযোগের কারণে। কিন্তু যেখানে একটি সেতু হলেই চলত, সেখানে বাড়ি বাড়ি সেতু বানানো অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়।
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুব্রত কুমার দে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এখানে (বিয়ানীবাজার) যোগদানের পরই দুটি খালের ওই আড়াই কিলোমিটার অংশ দেখে হতবাক হয়েছি। জলাধার সংরক্ষণ আইনে এসব সেতুর নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। আবার মানুষের চলাচলের অসুবিধাও বিবেচ্য বিষয়। ব্যক্তিগত সেতু ও সরকারি খাল চিহ্নিত করে রাখার প্রয়োজনে খাল জরিপ করা হবে।’
No comments