সাত পাপমুক্ত সমাজের সন্ধান by রুদ্র মাসুদ
বৈষম্যের শিকার নিরীহ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করতে গিয়ে 'অহিংসার' মাধ্যমে সহিংসতা মোকাবেলার মাধ্যমে পৃথিবীব্যাপী স্মরণীয় হয়ে আছেন মহাত্মা গান্ধী। তার পিতৃদত্ত নাম মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী। এ মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধীই তার কর্মের মাধ্যমে হয়ে উঠেছিলেন 'মহাত্মা গান্ধী'। আজ ৩০ জানুয়ারি এ মহান ব্যক্তিটির ৬৪তম মৃত্যুবার্ষিকী।
বাবা কাবা গান্ধী এবং মা পুতলী বাঈর সন্তান মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী (মহাত্মা গন্ধী) ১৮৬৯ সালের ২ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন ভারতের গুজরাট রাজ্যের পোরবন্দরে। শৈশবেই গান্ধীজি বুঝতে পেরেছিলেন 'অহিংসা'র শক্তি অত্যন্ত প্রবল এবং তা হিংসার থেকে বহুগুণে শক্তিশালী। তাই তার পরবর্তী জীবনে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে শুরু করে ভারতবর্ষব্যাপী যেখানেই তিনি মানবতার অবমাননা দেখেছেন, যেখানেই দুর্বলের প্রতি সবলের অত্যাচার দেখেছেন_ দেখেছেন ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর অস্পৃশ্যতা, সেখানেই প্রয়োগ করেছেন 'অহিংসা'র শক্তি। তার স্লোগান ছিল ÔSay no to violence, violence solves no problems.Õ
১৮৯১ সালের ১০ জুন লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি পাস করেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সহিংসতা দেখতে ১৮৯৩ সালের এপ্রিলে সেখানে যান মহাত্মা গান্ধী। দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার পথে কালো হওয়ার অপরাধে প্রথম শ্রেণীর টিকিট থাকা সত্ত্বেও ট্রেন থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় গান্ধীজিকে। এ ছাড়া শেতাঙ্গদের দ্বারা অশ্বেতাঙ্গদের বিভিন্নভাবে অত্যাচার ও নির্যাতন দারুণভাবে নাড়া দেয় গান্ধীকে। মানুষের অধিকার রক্ষার আন্দোলন করতে গিয়ে মহাত্মা গান্ধী নতুন মাত্রা যোগ করেন_ 'অহিংসা'। এ অহিংসার মাধ্যমে তিনি সহিংসতা মোকাবেলার পরীক্ষা শুরু করেন ১৯০৬ সালে ১১ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে সত্যগ্রহ আন্দোলনের মাধ্যমে। পরে তা গোটা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে 'ভারত ছাড়' আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি ছিল এ 'অহিংসা'।
ব্রিটিশ শাসনামলের শেষ দিকে কলকাতার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঢেউ আছড়ে পড়ে পূর্ববাংলার নোয়াখালীতেও। ১৯৪৬ সালে ১০ থেকে ২৩ অক্টোবর তখনকার বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার রামগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে এ দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। ভ্রাতৃঘাতী সেই দাঙ্গা নিরসনে ১৯৪৬ সালের ৭ নভেম্বর রেলযোগে নোয়াখালীর চৌমুহনীতে নামেন গান্ধীজি। পরে ৭৭ বছর বয়সে অসুস্থ শরীর নিয়ে গ্রামে গ্রামে হেঁটে হেঁটে শোনান শান্তির অভয় বাণী। এক পর্যায়ে ১৯৪৭ সালের ২৯ জানুয়ারি বর্তমান সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ গ্রামে পেঁৗছেন গান্ধীজি। জয়াগে অবস্থানকালেই বিহারের দাঙ্গার খবরে বিচলিত হয়ে সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্তে নোয়াখালী ত্যাগ করেন তিনি।
শান্তিপূর্ণ, অহিংস ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়তে সাতটি সামাজিক পাপ_ নীতিহীন রাজনীতি, চরিত্রহীন শিক্ষা, মানবতাহীন বিজ্ঞান, নৈতিকতাহীন বাণিজ্য, শ্রমহীন সম্পদ, বিবেকবর্জিত আনন্দ এবং ত্যাগহীন অর্চনা পরিহার করার আহ্বান জানিয়েছিলেন গান্ধীজি। বর্তমানে গান্ধীজির ভারতসহ গোটা বিশ্বে চলছে অস্থিরতা। বাংলাদেশও বাদ যায়নি সে অস্থিরতা থেকে। এ অস্থিরতার মূলে আছে সামাজিক পাপ। সম্পদ গড়ার অসম প্রতিযোগিতা আর বিপরীতে চরম দারিদ্র্য, বিশ্ববাণিজ্যের কশাঘাতে বাংলাদেশসহ দরিদ্র দেশগুলোর কোটি কোটি মানুষের হাহাকার, সর্বগ্রাসী ভোগবাদ, দেশে দেশে রাষ্ট্রক্ষমতায় আরোহণের জন্য অর্থ আর অস্ত্রের কাছে গণতান্ত্রিক রাজনীতির আত্মসমর্পণ, সাধারণের শিক্ষা অর্জনের সুযোগ বাণিজ্যের শিকলে বন্দি করার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা, বীজসহ প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ক্রমাগত অশুভ চেষ্টা এবং অসংখ্য সামাজিক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। অধিকার নিয়ে কথা বললেই কণ্ঠরোধ করা তো আমাদের দেশেই ঘটছে হরহামেশা, ধনতন্ত্রের হাতে আজ শৃঙ্খলিত মানবতা। ক্ষেত্রবিশেষে এসব ঘটছে আবার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়! বর্তমানে কাঙ্ক্ষিত সমতাভিত্তিক অহিংস সমাজ প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন গান্ধীজি কর্তৃক চিহ্নিত সেই সামাজিক পাপ পরিহার।
গান্ধীকর্মীরা সেই সাতটি সামাজিক পাপ মোচনের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করছে চার বছর ধরে। গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের উদ্যোগে দেশব্যাপী শান্তির পদযাত্রা, আলোচনা সভা, নাটক ও কুইজ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে জনপরিসরে তুলে ধরা হচ্ছে সামাজিক পাপ মোচনের গুরুত্ব।
গান্ধীজি রাতারাতি মহাত্মা হয়ে ওঠেননি, কর্মের মাধ্যমে হয়ে উঠেছিলেন 'মহাত্মা গান্ধী'। অহিংস সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামাজিক ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা, মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি, সংঘাত এড়ানো এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করা, চরকা শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে খাদি বস্ত্রের ব্যবহার বাড়ানো, দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা, মানবাধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো, কৃষি ও শিক্ষার বিকাশ প্রভৃতি ছিল গান্ধীর ধ্যান-জ্ঞান।
জনকল্যাণে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মহাত্মা গান্ধী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরলেও তাকে জীবন দিতে হয়নি। লাঞ্ছিত হয়েছেন। কিন্তু দমে যাননি। নিজ দেশেই তাকে প্রাণ দিতে হয় দুর্বৃত্তের হাতে। ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি দিলি্লর এক প্রার্থনা সভায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে নাথুরাম গডসের হিংসার অনলে প্রাণ বিসর্জন দেন মহাত্মা গান্ধী। মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি গান্ধীজির প্রতি।
১৮৯১ সালের ১০ জুন লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি পাস করেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সহিংসতা দেখতে ১৮৯৩ সালের এপ্রিলে সেখানে যান মহাত্মা গান্ধী। দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার পথে কালো হওয়ার অপরাধে প্রথম শ্রেণীর টিকিট থাকা সত্ত্বেও ট্রেন থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় গান্ধীজিকে। এ ছাড়া শেতাঙ্গদের দ্বারা অশ্বেতাঙ্গদের বিভিন্নভাবে অত্যাচার ও নির্যাতন দারুণভাবে নাড়া দেয় গান্ধীকে। মানুষের অধিকার রক্ষার আন্দোলন করতে গিয়ে মহাত্মা গান্ধী নতুন মাত্রা যোগ করেন_ 'অহিংসা'। এ অহিংসার মাধ্যমে তিনি সহিংসতা মোকাবেলার পরীক্ষা শুরু করেন ১৯০৬ সালে ১১ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে সত্যগ্রহ আন্দোলনের মাধ্যমে। পরে তা গোটা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে 'ভারত ছাড়' আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি ছিল এ 'অহিংসা'।
ব্রিটিশ শাসনামলের শেষ দিকে কলকাতার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঢেউ আছড়ে পড়ে পূর্ববাংলার নোয়াখালীতেও। ১৯৪৬ সালে ১০ থেকে ২৩ অক্টোবর তখনকার বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার রামগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে এ দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। ভ্রাতৃঘাতী সেই দাঙ্গা নিরসনে ১৯৪৬ সালের ৭ নভেম্বর রেলযোগে নোয়াখালীর চৌমুহনীতে নামেন গান্ধীজি। পরে ৭৭ বছর বয়সে অসুস্থ শরীর নিয়ে গ্রামে গ্রামে হেঁটে হেঁটে শোনান শান্তির অভয় বাণী। এক পর্যায়ে ১৯৪৭ সালের ২৯ জানুয়ারি বর্তমান সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ গ্রামে পেঁৗছেন গান্ধীজি। জয়াগে অবস্থানকালেই বিহারের দাঙ্গার খবরে বিচলিত হয়ে সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্তে নোয়াখালী ত্যাগ করেন তিনি।
শান্তিপূর্ণ, অহিংস ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়তে সাতটি সামাজিক পাপ_ নীতিহীন রাজনীতি, চরিত্রহীন শিক্ষা, মানবতাহীন বিজ্ঞান, নৈতিকতাহীন বাণিজ্য, শ্রমহীন সম্পদ, বিবেকবর্জিত আনন্দ এবং ত্যাগহীন অর্চনা পরিহার করার আহ্বান জানিয়েছিলেন গান্ধীজি। বর্তমানে গান্ধীজির ভারতসহ গোটা বিশ্বে চলছে অস্থিরতা। বাংলাদেশও বাদ যায়নি সে অস্থিরতা থেকে। এ অস্থিরতার মূলে আছে সামাজিক পাপ। সম্পদ গড়ার অসম প্রতিযোগিতা আর বিপরীতে চরম দারিদ্র্য, বিশ্ববাণিজ্যের কশাঘাতে বাংলাদেশসহ দরিদ্র দেশগুলোর কোটি কোটি মানুষের হাহাকার, সর্বগ্রাসী ভোগবাদ, দেশে দেশে রাষ্ট্রক্ষমতায় আরোহণের জন্য অর্থ আর অস্ত্রের কাছে গণতান্ত্রিক রাজনীতির আত্মসমর্পণ, সাধারণের শিক্ষা অর্জনের সুযোগ বাণিজ্যের শিকলে বন্দি করার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা, বীজসহ প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ক্রমাগত অশুভ চেষ্টা এবং অসংখ্য সামাজিক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। অধিকার নিয়ে কথা বললেই কণ্ঠরোধ করা তো আমাদের দেশেই ঘটছে হরহামেশা, ধনতন্ত্রের হাতে আজ শৃঙ্খলিত মানবতা। ক্ষেত্রবিশেষে এসব ঘটছে আবার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়! বর্তমানে কাঙ্ক্ষিত সমতাভিত্তিক অহিংস সমাজ প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন গান্ধীজি কর্তৃক চিহ্নিত সেই সামাজিক পাপ পরিহার।
গান্ধীকর্মীরা সেই সাতটি সামাজিক পাপ মোচনের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করছে চার বছর ধরে। গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের উদ্যোগে দেশব্যাপী শান্তির পদযাত্রা, আলোচনা সভা, নাটক ও কুইজ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে জনপরিসরে তুলে ধরা হচ্ছে সামাজিক পাপ মোচনের গুরুত্ব।
গান্ধীজি রাতারাতি মহাত্মা হয়ে ওঠেননি, কর্মের মাধ্যমে হয়ে উঠেছিলেন 'মহাত্মা গান্ধী'। অহিংস সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামাজিক ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা, মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি, সংঘাত এড়ানো এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করা, চরকা শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে খাদি বস্ত্রের ব্যবহার বাড়ানো, দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা, মানবাধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো, কৃষি ও শিক্ষার বিকাশ প্রভৃতি ছিল গান্ধীর ধ্যান-জ্ঞান।
জনকল্যাণে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মহাত্মা গান্ধী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরলেও তাকে জীবন দিতে হয়নি। লাঞ্ছিত হয়েছেন। কিন্তু দমে যাননি। নিজ দেশেই তাকে প্রাণ দিতে হয় দুর্বৃত্তের হাতে। ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি দিলি্লর এক প্রার্থনা সভায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে নাথুরাম গডসের হিংসার অনলে প্রাণ বিসর্জন দেন মহাত্মা গান্ধী। মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি গান্ধীজির প্রতি।
No comments