আবার রাজনৈতিক সহিংসতা-জাতি জবাব চাইবে কার কাছে

দেশবাসী আবারও সহিংস রাজনীতির মুখে পড়ল। বাংলাদেশের গণতন্ত্র আর যা-ই হোক, এখনো যে সহিষ্ণু হয়ে উঠতে পারেনি, সেটাই আরো একবার দেশবাসী অবলোকন করল রবিবার। গত ৯ জানুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে রোডমার্চ শেষে চট্টগ্রামে এক সমাবেশ থেকে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সারা দেশে ১২ জানুয়ারি গণমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। সবকিছু ঠিকই ছিল।


কিন্তু অনেক পরে সরকারে নেতৃত্ব দানকারী দল আওয়ামী লীগ একই দিনে রাজধানীতে জনসভা করার ঘোষণা দিলে ঢাকা মহানগর পুলিশ সংঘর্ষ-সহিংসতার আশঙ্কায় রবিবার ভোর ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত সব ধরনের মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ঢাকা ছাড়াও বিভাগীয় শহর এবং জেলাগুলোতে বিরোধী দলের এই কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বরিশাল এবং রংপুর ছাড়া অন্যান্য বিভাগীয় শহরেও পুলিশ একই নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু জেলা শহরগুলোতে এই নিষেধাজ্ঞা না থাকায় বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা রবিবার কর্মসূচি পালন করতে গেলে বেশ কয়েকটি জেলায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে চাঁদপুরে দুজন এবং লক্ষ্মীপুরে দুজন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মাদারীপুর, বাগেরহাট, কুড়িগ্রাম, কিশোরগঞ্জ ও টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলায় সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। কোথাও কোথাও পুলিশ আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
বিরোধী দল সরকার পতনের আন্দোলন করবে, সরকারের কাছ থেকে নানা রকম দাবি আদায়ে আন্দোলন-সমাবেশ করবে, এটা গণতন্ত্রের একটি মৌলিক প্রক্রিয়া। সেই সমাবেশ-আন্দোলনকে যখন পেশিশক্তি দিয়ে ব্যাহত করার চেষ্টা চালানো হয়, তখন তাকে আর যা-ই হোক, গণতান্ত্রিক আচরণ বলার কোনো অবকাশ নেই। বিএনপি হঠাৎ করে কর্মসূচি দেয়নি। প্রায় এক মাস আগে ঘোষিত কর্মসূচি পালনের দিনই আওয়ামী লীগের সমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়াটা শুধু গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শনই নয়, এটা কার্যত পেশিশক্তি প্রদর্শনের মানসিকতারই পরিচায়ক। বিএনপির গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ায় চাঁদপুরে একজন রিকশাচালক ও একজন যুবক এবং লক্ষ্মীপুরে একজন নিহত হয়েছেন পুলিশের গুলিতে। এখন আওয়ামী লীগকেই জিজ্ঞেস করতে হয়, এই মৃত্যুর জবাব দেবে কে? এই মৃত্যুর জন্য কাকে দায়ী করা যেতে পারে? কোন প্রয়োজনে আওয়ামী লীগ প্রায় এক মাস আগে ডাকা কর্মসূচির দিন তাদের কর্মসূচি ঘোষণা করল? লক্ষণীয়, রবিবার নিষেধাজ্ঞার কারণে বিএনপি তাদের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে এক দিন পিছিয়ে দিলে আওয়ামী লীগও তাদের কর্মসূচি এক দিন পিছিয়ে দিয়েছে। এই আচরণকে দেশের মানুষ বিরোধী দলের সঙ্গে সরকারে থাকা দলের গায়ে পড়ে সংঘর্ষ বাধানোর মানসিকতা ও প্রবণতা বলে মনে করবে।
রবিবারের ঘটনায় পুলিশের আরো দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল বলেও মানুষ মনে করে। সরকারি দলের পক্ষ হয়ে এভাবে মানুষের বুকে গুলি চালাতে থাকলে পুলিশের জবাবদিহিতা বলতে কিছুই থাকবে না। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা এ দেশের জনগণের একটি শক্তিশালী অংশ। তাঁদের বুকে গুলি চালানোর মতো মধ্যযুগীয় মানসিকতা পুলিশকে ত্যাগ করতে হবে। সরকারকে মনে রাখতে হবে, পুলিশের এই আচরণ সরাসরি তাদের ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ সদস্য কেন এভাবে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করল, সেই ব্যাপারে শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি।

No comments

Powered by Blogger.