ভেজালের জাল-জীবন রক্ষায় নিতে হবে কঠোর ব্যবস্থা

কী খাচ্ছি? শুধু রাজধানী ঢাকায়ই নয়, সারা দেশের মানুষের কাছে এটা এখন একটি বড় প্রশ্ন। শুধু খাদ্যপণ্য নয়, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, এমনকি স্যালাইনও বাদ পড়ছে না। ভেজাল হচ্ছে শিশুখাদ্য। নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে ভেজাল ও নকল পণ্য। সেই পণ্য চলে আসছে বাজারে। আসল পণ্যের হুবহু নকল সিল-মনোগ্রাম, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন না নিয়ে নকল অনুমোদনপত্র ছাপা হয়ে যাচ্ছে প্যাকেটের গায়ে। নকলের দাপটে এখন আসল পণ্য চেনাই দায় হয়ে পড়েছে।

বাজারে সয়লাব হয়ে গেছে এসব নকল পণ্য। রোজার সুযোগ নিয়ে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী নকল পণ্য বাজারে ছাড়ছে। এতে প্রতারিত হচ্ছে ভোক্তা। বাড়ছে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি। ওদিকে কোটি কোটি টাকা চলে যাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীদের পকেটে।
একশ্রেণীর ব্যবসায়ী সারা বছর ধরেই নকল পণ্যের ব্যবসা করে থাকে। রোজার সময় এলেই জমজমাট হয় এই ব্যবসায়ীদের নকল পণ্যের ব্যবসা। বাজারে ফ্রুট জুস, চিপ্স্, ছোটদের মন রক্ষাকারী বিভিন্ন ধরনের যে শরবত পাওয়া যায়, তার অধিকাংশই নকল বলে জানা গেছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত খবরে বলা হয়েছে, সেমাই, জুস, শরবত, ফল, ভোজ্য তেল, মসলা, মুড়ি ও ইফতারের বিভিন্ন মুখরোচক উপাদান, জিলাপিসহ সব খাবারেই মেশানো হচ্ছে ভেজাল। প্রকাশিত খবরে আরো বলা হয়েছে, জীবন রক্ষাকারী খাবার স্যালাইন ও জনপ্রিয় নারিকেল তেল 'প্যারাসুট'ও নকল তৈরি করা হচ্ছে। এমনকি খেজুরেও ফরমালিন দেওয়া হচ্ছে বলে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন না নিয়েই জীবন রক্ষকারী নকল খাবার স্যালাইন উৎপাদন করা হচ্ছে। নামিদামি কম্পানির মোড়ক নকল করে ভেজাল স্যালাইন বাজারজাত করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। অস্বাস্থ্যকর-নোংরা পরিবেশে কোনো ধরনের ল্যাবরেটরি ও রসায়নবিদ ছাড়াই স্যালাইনের মতো অতি জরুরি একটি 'ওষুধ' তৈরি করে বাজারজাত করা হচ্ছে। মাছের পাশাপাশি দুধেও দেওয়া হচ্ছে ফরমালিন। শাকসবজিতে মেশানো হচ্ছে ক্ষতিকর রাসায়নিক। ফলে মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত কার্বাইড। নামিদামি সব প্রসাধন কম্পানির পণ্য নকল হচ্ছে। কাউন ও কাঠের গুঁড়া মিশিয়ে মসলা তৈরি করা হয়। ঘাসের গুঁড়ার সঙ্গে রং মিশিয়ে নামিদামি ব্র্যান্ডের মসলা তৈরি করে একটি চক্র। ছোলা ও মুড়ি সাদা করতে মেশানো হয় হাইড্রোজ। ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করলেও থেমে নেই এসব ভেজাল পণ্য উৎপাদনকারীদের অপতৎপরতা।
আমাদের বাজার থেকে ভেজাল পণ্য একেবারে তুলে দিতে হবে। বিএসটিআইকে এ ব্যাপারে নিতে হবে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা। বাজারে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান জোরদার করতে হবে। ভেজালকারীদের সামান্য জেল-জরিমানায় কাজ হবে না। যারা জনস্বাস্থ্যকে ঠেলে দিতে পারে হুমকির দিকে, তাদের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নকল বা ভেজাল ওষুধ ও খাদ্যপণ্যের কারখানা একেবারে গুঁড়িয়ে দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.