মেয়ে ও ছেলে শিশু ধর্ষণের বিচার একই আইনে by উদিসা ইসলাম
ধর্ষকের
ছোবল থেকে কেবল মেয়ে শিশু নয়, ছেলে শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। সম্প্রতি
দেশে ছেলে শিশু ধর্ষণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। আগে এ ধরনের অপরাধ স্থানীয়ভাবে
সালিশের মাধ্যমে সমাধান হলেও এখন তা আদালত পর্যন্ত গড়াচ্ছে। আইনজীবীরা
বলছেন, মেয়ে শিশু বা ছেলে শিশু ধর্ষণের বিচার আলাদা কোনও আইনে নয়, বরং
‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ’ আইনেই এই ধরনের অপরাধের বিচার হবে। আর
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, ছেলে শিশু ধর্ষণের শিকার হলে কোন আইনে প্রতিকার
মিলবে, সেটি আরও প্রচার হওয়া জরুরি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে,
ছেলে বা মেয়ে—যেই ধর্ষণের শিকার হোক, ধর্ষণকে ধর্ষণই বলা উচিত। ‘বলাৎকার’
বা অন্য কোনও প্রতিশব্দ এই ধরনের অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে নেতিবাচক
প্রভাব ফেলে।
বাংলা ট্রিবিউনের নিজস্ব জরিপ বলছে, চলতি (২০১৯) বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ১০টি ছেলে শিশু ধর্ষণের ঘটনা পত্রিকায় এসেছে। ২০১৮ সালে ধর্ষণের শিকার ছেলে শিশুর সংখ্যা ছিল ১৩। জরিপের ফলে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের শিকার হচ্ছে অনূর্ধ্ব ১৬ বছর বয়সী শিশুরা।
ছেলে শিশুদের ধর্ষণ মামলা মেয়ে শিশু ধর্ষণের বিচারের মতো একই প্রক্রিয়ায় হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল বারী বলেন, ‘ছেলে শিশু হোক, মেয়ে শিশু হোক, ধর্ষণের মামলা এখন ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০’ অনুযায়ী হয়। এর সব কয়টি ধাপ অন্য যেকোনও ধর্ষণের মামলার মতোই। যেহেতু ছেলে শিশুদের ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ করা হয় না এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি স্থানীয় সালিশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়, তাই মামলার প্রক্রিয়া সম্পর্কে অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা নেই। কিন্তু এখন অন্য কোনও আইনে মামলার সুযোগ নেই।’
জানতে চাইলে আইনজীবী শাহেদুর রহমান বলেন, ‘আগে দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী মামলা পরিচালনা হতো। যখন নির্যাতন, ধর্ষণ বিষয়ে বিশেষায়িত আইনই হলো, তখন আর আগের সেই আইন কার্যকর হবে না।’
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় বলা আছে, ‘যদি কোনও পুরুষ কোনও নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহা হইলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।’
এদিকে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞায় বলা আছে, ‘যদি কোনও পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত (১৬ বছরের) অধিক বয়সের কোনও নারীর সহিত তাহার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তাহার সম্মতি আদায় করিয়া অথবা (ষোল বছরের) কম বয়সের কোনও নারীর সহিত তাহার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহা হইলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে। এই আইনে শিশু বলতে মেয়ে বা ছেলেশিশু উভয়কেই বোঝাবে।’
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় গতবছর নভেম্বরে এক মাদ্রাসাছাত্রকে (১২) ধর্ষণের অভিযোগে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, ‘ওই মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। শুরুতে আসামি পলাতক ছিল, পরে আদালতের নির্দেশে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
ছেলে শিশু ধর্ষণের শিকার হলে কোন আইনে মামলা হয়—এমন প্রশ্নের জবাবে জয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, ‘মামলা হবে একই আইনে। সেটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আইন। শিশুর মধ্যে মেয়ে ও ছেলে উভয় শিশুই পড়ে। আগে এসব অপরাধে ৩৭৭ ধারায় মামলা হতো। কিন্তু হাইকোর্টের একটি নির্দেশনা আছে, যেখানে বলা হয়েছে, ছেলে-মেয়ে যাই হোক, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আইনে মামলা হতে হবে। সেটিই মেনে চলা হচ্ছে।’
মামলার তদন্ত কাজের অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গ টেনে জয়কৃষ্ণ বর্মন আরও বলেন, ‘ছেলে শিশুর ধর্ষণকে বলাৎকার বলার চল আছে। তবে, সেটি বলা আইনগতভাবে উচিত নয়। বলাৎকার না বলে শিশু ধর্ষণ বললে আইন ও সমাজ উভয়ের কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে। ছেলেদের ধর্ষণ প্রতিরোধ করার জন্য ধর্ষণ শব্দটা উচ্চারিত হলে এই ধরনের অপরাধীরা ভয় পাবে।’
এসব ক্ষেত্রে প্রতিকার কোন আইনে হবে, সে বিষয়ে প্রচারের দরকার আছে বলে মনে করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকারকর্মী নূর খান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ধর্ষণ শব্দটির সঙ্গে নারীর শিকার হওয়ার বিষয়টি আমাদের মস্তিষ্কে আটকে গেছে। ফলে ছেলে শিশু যখন এ ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়, তখন সেটিকে কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে, তা তার পরিবার বা সমাজ নির্ধারণ করতে পারে না।’ এই দোটানা বন্ধ করতে সঠিক প্রচার ও পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে সবার স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি বলেও তিনি মনে করেন।
বাংলা ট্রিবিউনের নিজস্ব জরিপ বলছে, চলতি (২০১৯) বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ১০টি ছেলে শিশু ধর্ষণের ঘটনা পত্রিকায় এসেছে। ২০১৮ সালে ধর্ষণের শিকার ছেলে শিশুর সংখ্যা ছিল ১৩। জরিপের ফলে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের শিকার হচ্ছে অনূর্ধ্ব ১৬ বছর বয়সী শিশুরা।
ছেলে শিশুদের ধর্ষণ মামলা মেয়ে শিশু ধর্ষণের বিচারের মতো একই প্রক্রিয়ায় হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল বারী বলেন, ‘ছেলে শিশু হোক, মেয়ে শিশু হোক, ধর্ষণের মামলা এখন ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০’ অনুযায়ী হয়। এর সব কয়টি ধাপ অন্য যেকোনও ধর্ষণের মামলার মতোই। যেহেতু ছেলে শিশুদের ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ করা হয় না এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি স্থানীয় সালিশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়, তাই মামলার প্রক্রিয়া সম্পর্কে অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা নেই। কিন্তু এখন অন্য কোনও আইনে মামলার সুযোগ নেই।’
জানতে চাইলে আইনজীবী শাহেদুর রহমান বলেন, ‘আগে দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী মামলা পরিচালনা হতো। যখন নির্যাতন, ধর্ষণ বিষয়ে বিশেষায়িত আইনই হলো, তখন আর আগের সেই আইন কার্যকর হবে না।’
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় বলা আছে, ‘যদি কোনও পুরুষ কোনও নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহা হইলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।’
এদিকে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞায় বলা আছে, ‘যদি কোনও পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত (১৬ বছরের) অধিক বয়সের কোনও নারীর সহিত তাহার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তাহার সম্মতি আদায় করিয়া অথবা (ষোল বছরের) কম বয়সের কোনও নারীর সহিত তাহার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহা হইলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে। এই আইনে শিশু বলতে মেয়ে বা ছেলেশিশু উভয়কেই বোঝাবে।’
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় গতবছর নভেম্বরে এক মাদ্রাসাছাত্রকে (১২) ধর্ষণের অভিযোগে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, ‘ওই মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। শুরুতে আসামি পলাতক ছিল, পরে আদালতের নির্দেশে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
ছেলে শিশু ধর্ষণের শিকার হলে কোন আইনে মামলা হয়—এমন প্রশ্নের জবাবে জয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, ‘মামলা হবে একই আইনে। সেটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আইন। শিশুর মধ্যে মেয়ে ও ছেলে উভয় শিশুই পড়ে। আগে এসব অপরাধে ৩৭৭ ধারায় মামলা হতো। কিন্তু হাইকোর্টের একটি নির্দেশনা আছে, যেখানে বলা হয়েছে, ছেলে-মেয়ে যাই হোক, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আইনে মামলা হতে হবে। সেটিই মেনে চলা হচ্ছে।’
মামলার তদন্ত কাজের অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গ টেনে জয়কৃষ্ণ বর্মন আরও বলেন, ‘ছেলে শিশুর ধর্ষণকে বলাৎকার বলার চল আছে। তবে, সেটি বলা আইনগতভাবে উচিত নয়। বলাৎকার না বলে শিশু ধর্ষণ বললে আইন ও সমাজ উভয়ের কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে। ছেলেদের ধর্ষণ প্রতিরোধ করার জন্য ধর্ষণ শব্দটা উচ্চারিত হলে এই ধরনের অপরাধীরা ভয় পাবে।’
এসব ক্ষেত্রে প্রতিকার কোন আইনে হবে, সে বিষয়ে প্রচারের দরকার আছে বলে মনে করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকারকর্মী নূর খান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ধর্ষণ শব্দটির সঙ্গে নারীর শিকার হওয়ার বিষয়টি আমাদের মস্তিষ্কে আটকে গেছে। ফলে ছেলে শিশু যখন এ ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়, তখন সেটিকে কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে, তা তার পরিবার বা সমাজ নির্ধারণ করতে পারে না।’ এই দোটানা বন্ধ করতে সঠিক প্রচার ও পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে সবার স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি বলেও তিনি মনে করেন।
No comments