চাল রপ্তানির কথা বলে বাজেটে আমদানির পরিকল্পনা
চলতি
বছর দেশে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। অতিরিক্ত ধান-চাল সংগ্রহের
লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে সরকার। ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে চাল
রপ্তানির পরিকল্পনার কথাও বলা হচ্ছে। কিন্তু আগামী অর্থবছরের জন্য
প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারিভাবে চাল আমদানি বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল সংগ্রহ হ্রাস করে লক্ষ্যমাত্রা
নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ
ধরনের প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে। অথচ বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি
নিরুৎসাহিত করতে গত মাসে এ খাতে শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে চাল
উদ্বৃত্ত আছে।
চাল উৎপাদনে রেকর্ডের পূর্বাভাস
দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। দেশের বাইরে চাল রপ্তানির চিন্তা করছে সরকার। এ অবস্থায় ধানের বাম্পার ফলন সত্ত্বেও বিপুল পরিমাণ চাল আমদানির পরিকল্পনা কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা। এতে কৃষকের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে বলে মনে করেন তারা।
অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য সরকারিভাবে চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ টন। যদিও চলতি অর্থবছর (২০১৮-১৯) চাল আমদানির সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মাত্র ৫০ হাজার টন। এতে আগামী অর্থবছর চাল আমদানি বাড়বে দেড় লাখ টন বা ৩০০ শতাংশ।
ওদিকে চলতি অর্থবছর দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার বা উৎস থেকে সরকারের চাল সংগ্রহের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২১ লাখ ৩১ হাজার টন। আবার আগামী অর্থবছরের জন্য তা সামান্য কমিয়ে ২১ লাখ ২০ হাজার টন নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ১১ হাজার টন চাল সংগ্রহ কমানো হবে। অথচ কৃষকের সুবিধার্থে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি অনুৎসাহিত করতে এ খাতে শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে।
বাজেট প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছর চাল আমদানিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯৩ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছর এ খাতে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৮২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ চাল আমদানিতে ব্যয় বাড়বে ৬৩৫ কোটি টাকা বা প্রায় ৩২৯ শতাংশ। এদিকে আগামী অর্থবছর দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল সংগ্রহে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ২৪ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছর এ খাতে ব্যয় ধরা আছে ৮ হাজার ১০৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল সংগ্রহে ব্যয় হ্রাস পাবে।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে দুই দফা বন্যার কারণে বোরো ও আমন ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। ওই পরিস্থিতিতে প্রায় ১০ লাখ টনের মতো চাল আমদানি করেছিল সরকার। ফলে গত অর্থবছর সরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি বেড়ে গিয়েছিল। ওই সময় বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির ওপরও শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছিল। পাশাপাশি এলসি খোলার ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা দেয়া হয়েছিল। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ায় গত বছর নভেম্বরে চাল আমদানিতে ২৮ শতাংশ শুল্ক পুনর্বহাল করে সরকার। এতে চাল আমদানি কমলেও বন্ধ হয়নি।
আবার চলতি অর্থবছর ধানের বাম্পার ফলনের পরও বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি অব্যাহত ছিল। এতে কৃষকরা বঞ্চিত হন। ফলে গত ২২শে মে সরকার চাল আমদানিতে শুল্ক আরো বৃদ্ধি করে। এক্ষেত্রে রেগুলেটরি ডিউটি (নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক) ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। আর আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ ও অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশ বহাল রাখা হয়েছে। ফলে সব ধরনের চাল আমদানিতে ৩৩ শতাংশের জায়গায় শুল্ককর ৫৫ শতাংশ করা হয়েছে।
সূত্রমতে, ২০১৭ সালের বন্যায় ফসলহানির পর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল চালের ঘাটতি হবে ১০ লাখ টন। কিন্তু গত দুই বছরে দেশে প্রায় ৬০ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, সরকারি-বেসরকারিভাবে চলতি অর্থবছর ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ২ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে। আমদানির অপেক্ষায় রয়েছে আরো ৩ লাখ ৮০ হাজার টন চাল।
বাড়তি উৎপাদন ও আমদানির চাল বাজারে চাপ তৈরি করায় অনেকটাই কমে যায় ধানের দাম। এতে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় বিপদে পড়েন কৃষক। এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ কর্মসূচিও পালিত হয়েছে। এজন্য সরকারিভাবে চলতি অর্থবছর আরো আড়াই লাখ টন বোরো ধান অতিরিক্ত সংগ্রহের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
সরকারি-বেসরকারি হিসাব বলছে, দেশে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত রয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ১০-১২ টন চাল রপ্তানির বিষয়টি বিবেচনাও করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারিভাবে কেন চাল আমদানি বৃদ্ধি করা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দেশে চাল উদ্বৃত্ত আছে। সরকার রপ্তানির চিন্তা-ভাবনা করছে। এ অবস্থায় বাড়তি আমদানির প্রয়োজন আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন হতে পারে। তবে সরকার পূনঃবিবেচনা করতে পারে বলে তিনি মনে করেন। এ ধরনের সিদ্ধান্ত কৃষকদের নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি কৃষিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আবার নেতিবাচ হিসেবে দেখারও সুযোগ নেই। কারণ সরকার দেশের প্রয়োজনে যে কোনো সময় চাল আমদানি করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলেও আগামী অর্থবছরের জন্য গম আমদানির লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কমানো হয়েছে। এক্ষেত্রে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ টন গম সরকারিভাবে আমদানির প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও চলতি অর্থবছরে গমের সংশোধিত আমদানি লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৫ লাখ টন। এছাড়া গমের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। আগামী অর্থবছর অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে গম সংগ্রহ করা হবে ১ লাখ ৯৫ হাজার টন। যদিও চলতি অর্থবছর অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে গমের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার টন।
চাল উৎপাদনে রেকর্ডের পূর্বাভাস
দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। দেশের বাইরে চাল রপ্তানির চিন্তা করছে সরকার। এ অবস্থায় ধানের বাম্পার ফলন সত্ত্বেও বিপুল পরিমাণ চাল আমদানির পরিকল্পনা কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা। এতে কৃষকের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে বলে মনে করেন তারা।
অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য সরকারিভাবে চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ টন। যদিও চলতি অর্থবছর (২০১৮-১৯) চাল আমদানির সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মাত্র ৫০ হাজার টন। এতে আগামী অর্থবছর চাল আমদানি বাড়বে দেড় লাখ টন বা ৩০০ শতাংশ।
ওদিকে চলতি অর্থবছর দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার বা উৎস থেকে সরকারের চাল সংগ্রহের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২১ লাখ ৩১ হাজার টন। আবার আগামী অর্থবছরের জন্য তা সামান্য কমিয়ে ২১ লাখ ২০ হাজার টন নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ১১ হাজার টন চাল সংগ্রহ কমানো হবে। অথচ কৃষকের সুবিধার্থে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি অনুৎসাহিত করতে এ খাতে শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে।
বাজেট প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছর চাল আমদানিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯৩ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছর এ খাতে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৮২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ চাল আমদানিতে ব্যয় বাড়বে ৬৩৫ কোটি টাকা বা প্রায় ৩২৯ শতাংশ। এদিকে আগামী অর্থবছর দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল সংগ্রহে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ২৪ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছর এ খাতে ব্যয় ধরা আছে ৮ হাজার ১০৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল সংগ্রহে ব্যয় হ্রাস পাবে।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে দুই দফা বন্যার কারণে বোরো ও আমন ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। ওই পরিস্থিতিতে প্রায় ১০ লাখ টনের মতো চাল আমদানি করেছিল সরকার। ফলে গত অর্থবছর সরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি বেড়ে গিয়েছিল। ওই সময় বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির ওপরও শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছিল। পাশাপাশি এলসি খোলার ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা দেয়া হয়েছিল। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ায় গত বছর নভেম্বরে চাল আমদানিতে ২৮ শতাংশ শুল্ক পুনর্বহাল করে সরকার। এতে চাল আমদানি কমলেও বন্ধ হয়নি।
আবার চলতি অর্থবছর ধানের বাম্পার ফলনের পরও বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি অব্যাহত ছিল। এতে কৃষকরা বঞ্চিত হন। ফলে গত ২২শে মে সরকার চাল আমদানিতে শুল্ক আরো বৃদ্ধি করে। এক্ষেত্রে রেগুলেটরি ডিউটি (নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক) ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। আর আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ ও অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশ বহাল রাখা হয়েছে। ফলে সব ধরনের চাল আমদানিতে ৩৩ শতাংশের জায়গায় শুল্ককর ৫৫ শতাংশ করা হয়েছে।
সূত্রমতে, ২০১৭ সালের বন্যায় ফসলহানির পর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল চালের ঘাটতি হবে ১০ লাখ টন। কিন্তু গত দুই বছরে দেশে প্রায় ৬০ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, সরকারি-বেসরকারিভাবে চলতি অর্থবছর ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ২ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে। আমদানির অপেক্ষায় রয়েছে আরো ৩ লাখ ৮০ হাজার টন চাল।
বাড়তি উৎপাদন ও আমদানির চাল বাজারে চাপ তৈরি করায় অনেকটাই কমে যায় ধানের দাম। এতে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় বিপদে পড়েন কৃষক। এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ কর্মসূচিও পালিত হয়েছে। এজন্য সরকারিভাবে চলতি অর্থবছর আরো আড়াই লাখ টন বোরো ধান অতিরিক্ত সংগ্রহের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
সরকারি-বেসরকারি হিসাব বলছে, দেশে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত রয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ১০-১২ টন চাল রপ্তানির বিষয়টি বিবেচনাও করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারিভাবে কেন চাল আমদানি বৃদ্ধি করা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দেশে চাল উদ্বৃত্ত আছে। সরকার রপ্তানির চিন্তা-ভাবনা করছে। এ অবস্থায় বাড়তি আমদানির প্রয়োজন আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন হতে পারে। তবে সরকার পূনঃবিবেচনা করতে পারে বলে তিনি মনে করেন। এ ধরনের সিদ্ধান্ত কৃষকদের নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি কৃষিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আবার নেতিবাচ হিসেবে দেখারও সুযোগ নেই। কারণ সরকার দেশের প্রয়োজনে যে কোনো সময় চাল আমদানি করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলেও আগামী অর্থবছরের জন্য গম আমদানির লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কমানো হয়েছে। এক্ষেত্রে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ টন গম সরকারিভাবে আমদানির প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও চলতি অর্থবছরে গমের সংশোধিত আমদানি লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৫ লাখ টন। এছাড়া গমের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। আগামী অর্থবছর অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে গম সংগ্রহ করা হবে ১ লাখ ৯৫ হাজার টন। যদিও চলতি অর্থবছর অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে গমের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার টন।
No comments