মানবপাচার আইন: নিষ্পত্তির হার খুবই কম, মামলা লড়তে অনীহা বাদীর by জিয়া চৌধুরী
মিশরে
যাওয়ার প্রলোভনে পড়ে ২০১২ সালে দালাল চক্রের কাছে সর্বস্ব হারান নওগাঁর
বাবু। পাচারের শিকার হন আরো তিনজন। পরে ওই বছরের মে মাসে ঢাকা মহানগর
গোয়েন্দা পুলিশের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দেশের ইতিহাসে প্রথম মানব পাচার
প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়। ২০১২ সালের ৭ই মে নওগাঁ জেলা ও
দায়রা জজ আদালতে মামলার পর সাত বছর পেরিয়ে গেলেও নিষ্পত্তি হয়নি মামলাটির।
দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করে বিচার না পাওয়ায় এখন আর মামলার কোন খোঁজ রাখছেন
না বাদী। মানবপাচার আইনের প্রথম মামলার প্রধান ও দ্বিতীয় আসামি শুরুর দিকে
একবার গ্রেপ্তার হলেও এখন জামিনে রয়েছেন। মামলার নিষ্পত্তিতে তেমন কোন
অগ্রগতি নেই বলে আদালত সূত্রেও জানা গেছে। মানব পাচারের শিকার হয়ে বেশিরভাগ
মানুষ আর মামলার বিড়ম্বনায় যেতে চান না।
আবার মামলা করার পর বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় অনেক ক্ষেত্রে বাদীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। কোন কোন ক্ষেত্রে পাচারকারীদের সঙ্গে পাচারের শিকার ব্যক্তিদের আপস-মীমাংসাও হয়। ২০১২ সালে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন প্রণয়নের পর থেকে এই আইনে দায়ের হওয়া মামলার নিষ্পত্তির হার খুবই কম। বিচার না হওয়ায় গ্রেপ্তারের কিছু দিন পর জামিনে বের হয়ে আবারো পাচার কাজে জড়িয়ে পড়ে আসামিরা। দেশের বেশ কয়েকটি জেলার মানবপাচার আইনের মামলা পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মানব পাচার আইন কার্যকরের পর থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত সারা দেশে ৫ হাজার ৭১৬টি মামলা হয়েছে বলে পুলিশ সদর দপ্তরের মানব পাচার মনিটিরিং সেল সূত্রে জানা গেছে। যদিও চলতি বছরের মে মাস নাগাদ মামলার সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, এর মধ্যে মাত্র ২৪৭টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। আদালত স্থানান্তর করা হয়েছে ১ হাজার ৩৭৫টি মামলার। এখনো বিচারাধানীন আছে প্রায় ৪ হাজার ৯৪টি মামলা। পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিচার কাজ ঝুলে আছে ১৫৫টি মামলায়। আর অন্তত সাতটি মামলায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে বিচার কাজ স্থগিত রেখেছে বিচারিক আদালত। মামলা পরিচালনার জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন না হওয়া, আসামিদের ধরতে পুলিশের অনীহা, চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে না পারা, সাক্ষীরা হাজির না হওয়াসহ নানা জটিলতায় মানবপাচার আইনের মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এর মধ্যে, মামলা করার পর অনেক দিন ধরে মামলা লড়তে গিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন বাদীরা। মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করা অন্তত দশ জন বাদীর সঙ্গে কথোপকথনে জানা গেছে তারা এখন আর মামলার খোঁজ-খবর রাখছেন না। শুরুর দিকে পাচারকারীদের বিচার চাইলেও আসামিরা জামিনে বের হয়ে হুমকি-ধামকি দিলে অনেকে আর আদালতপাড়ায় যাওয়ার সাহস পান না। মানব পাচার আইনে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৬৫৩টি মামলা হয়েছে ঢাকা জেলায়। দুঃখজনকভাবে এত সব মামলার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ৫টি। ৮৪৩টি মামলায় আদালত স্থানান্তর করা হয়েছে, বিচারধীন আছে ৮০৫টি মামলা। ঢাকা জেলায় দায়ের হওয়া মানব পাচার আইনের মামলাগুলোর মধ্যে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৭৬। ঢাকা জেলার পর যশোরে মামলা দায়েরের হয়েছে সবচেয়ে বেশি। যশোর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মোট ৬১৩টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ১৮টি মামলা। আদালত বদল হয়েছে ২০৭টি মামলার, বিচারাধাীন আছে ৩৭৮টি মামলা। পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে ঝুলে আছে ৩৬টি মামলা। মামলার সংখ্যার দিক থেকে যশোরের পরই আছে কক্সবাজার জেলা। সমুদ্র উপকূলের এই জেলায় মামলা হয়েছে মোট ৩৯৬টি, এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে একটির। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান মানবজমিনকে বলেন, পাচারের শিকার হওয়া অনেক ব্যক্তি মামলা করতে না চাইলে সংখ্যার হিসেবে মামলা কম নয়। মানবপাচার আইনটি চমৎকার একটি আইন। তদন্ত, শাস্তিসহ বেশ কিছু বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া আছে। তবে আইন অনুযায়ী দেশের সাতটি বিভাগে মানব পাচারের মামলার বিচারের জন্য আলাদা সাতটি ট্রাইবুন্যাল গঠনের কথা থাকলেও সাত বছরেও কোন ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়নি। এছাড়া, মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ার বেশ কিছু দিন কারাগারে থাকার পর জামিনে বের হয়ে যায় আসামিরা। পাচারের শিকার ব্যক্তিরা এমনিতে আর্থিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে হেয় হয়। উল্টো পাচারাকারীরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে পাচারের শিকার ব্যক্তিরা মামলা লড়তে চায় না, আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। শরিফুল হাসান বলেন, সাত বিভাগীয় শহরে সম্ভব না হলেও যেসব এলাকায় মামলার সংখ্যা বেশি সেখানে ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য আমরা মানবাধিকার কমিশনের মাধ্যমে অনুরোধ করেছিলাম। এছাড়া, ন্যাশনাল প্ল্যান অব অ্যাকশন অনুযায়ী মানব পাচার বিষয়ে কার্যকরী উদ্যোগ না নেয়ায় বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। দ্রুত মানব পাচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করার জোর দাবি জানান ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার প্রোগ্রাম অফিসার অ্যাডভোকেট সালমা সুলতানা মানবজমিনকে বলেন, বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেকে আদালত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। অনেক মামলায় দুই, তিন বছর পর সাক্ষীদের তলব করলে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। একই সঙ্গে অনেক সময় পুলিশও মানব পাচার মামলার আসামিদের ধরতে অনীহা দেখায়। এমন প্রেক্ষাপটে পাচারের শিকার হওয়া ব্যক্তি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর আবার সামাজিকভাবে নিরাপত্তাহীনতায়ও ভোগেন। এক পর্যায়ে তারা মামলা চালাতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাচারকারীদের সঙ্গে আপস করে ফেলেন। তবে, পাচারকারীদের দ্রুত বিচার না করা ও সাজা না হওয়ায় মামলায় তেমন কোন ফল আসছে না বলেও জানান এই মানবাধিকার কর্মী।
আবার মামলা করার পর বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় অনেক ক্ষেত্রে বাদীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। কোন কোন ক্ষেত্রে পাচারকারীদের সঙ্গে পাচারের শিকার ব্যক্তিদের আপস-মীমাংসাও হয়। ২০১২ সালে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন প্রণয়নের পর থেকে এই আইনে দায়ের হওয়া মামলার নিষ্পত্তির হার খুবই কম। বিচার না হওয়ায় গ্রেপ্তারের কিছু দিন পর জামিনে বের হয়ে আবারো পাচার কাজে জড়িয়ে পড়ে আসামিরা। দেশের বেশ কয়েকটি জেলার মানবপাচার আইনের মামলা পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মানব পাচার আইন কার্যকরের পর থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত সারা দেশে ৫ হাজার ৭১৬টি মামলা হয়েছে বলে পুলিশ সদর দপ্তরের মানব পাচার মনিটিরিং সেল সূত্রে জানা গেছে। যদিও চলতি বছরের মে মাস নাগাদ মামলার সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, এর মধ্যে মাত্র ২৪৭টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। আদালত স্থানান্তর করা হয়েছে ১ হাজার ৩৭৫টি মামলার। এখনো বিচারাধানীন আছে প্রায় ৪ হাজার ৯৪টি মামলা। পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিচার কাজ ঝুলে আছে ১৫৫টি মামলায়। আর অন্তত সাতটি মামলায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে বিচার কাজ স্থগিত রেখেছে বিচারিক আদালত। মামলা পরিচালনার জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন না হওয়া, আসামিদের ধরতে পুলিশের অনীহা, চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে না পারা, সাক্ষীরা হাজির না হওয়াসহ নানা জটিলতায় মানবপাচার আইনের মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এর মধ্যে, মামলা করার পর অনেক দিন ধরে মামলা লড়তে গিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন বাদীরা। মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করা অন্তত দশ জন বাদীর সঙ্গে কথোপকথনে জানা গেছে তারা এখন আর মামলার খোঁজ-খবর রাখছেন না। শুরুর দিকে পাচারকারীদের বিচার চাইলেও আসামিরা জামিনে বের হয়ে হুমকি-ধামকি দিলে অনেকে আর আদালতপাড়ায় যাওয়ার সাহস পান না। মানব পাচার আইনে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৬৫৩টি মামলা হয়েছে ঢাকা জেলায়। দুঃখজনকভাবে এত সব মামলার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ৫টি। ৮৪৩টি মামলায় আদালত স্থানান্তর করা হয়েছে, বিচারধীন আছে ৮০৫টি মামলা। ঢাকা জেলায় দায়ের হওয়া মানব পাচার আইনের মামলাগুলোর মধ্যে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৭৬। ঢাকা জেলার পর যশোরে মামলা দায়েরের হয়েছে সবচেয়ে বেশি। যশোর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মোট ৬১৩টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ১৮টি মামলা। আদালত বদল হয়েছে ২০৭টি মামলার, বিচারাধাীন আছে ৩৭৮টি মামলা। পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে ঝুলে আছে ৩৬টি মামলা। মামলার সংখ্যার দিক থেকে যশোরের পরই আছে কক্সবাজার জেলা। সমুদ্র উপকূলের এই জেলায় মামলা হয়েছে মোট ৩৯৬টি, এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে একটির। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান মানবজমিনকে বলেন, পাচারের শিকার হওয়া অনেক ব্যক্তি মামলা করতে না চাইলে সংখ্যার হিসেবে মামলা কম নয়। মানবপাচার আইনটি চমৎকার একটি আইন। তদন্ত, শাস্তিসহ বেশ কিছু বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া আছে। তবে আইন অনুযায়ী দেশের সাতটি বিভাগে মানব পাচারের মামলার বিচারের জন্য আলাদা সাতটি ট্রাইবুন্যাল গঠনের কথা থাকলেও সাত বছরেও কোন ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়নি। এছাড়া, মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ার বেশ কিছু দিন কারাগারে থাকার পর জামিনে বের হয়ে যায় আসামিরা। পাচারের শিকার ব্যক্তিরা এমনিতে আর্থিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে হেয় হয়। উল্টো পাচারাকারীরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে পাচারের শিকার ব্যক্তিরা মামলা লড়তে চায় না, আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। শরিফুল হাসান বলেন, সাত বিভাগীয় শহরে সম্ভব না হলেও যেসব এলাকায় মামলার সংখ্যা বেশি সেখানে ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য আমরা মানবাধিকার কমিশনের মাধ্যমে অনুরোধ করেছিলাম। এছাড়া, ন্যাশনাল প্ল্যান অব অ্যাকশন অনুযায়ী মানব পাচার বিষয়ে কার্যকরী উদ্যোগ না নেয়ায় বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। দ্রুত মানব পাচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করার জোর দাবি জানান ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার প্রোগ্রাম অফিসার অ্যাডভোকেট সালমা সুলতানা মানবজমিনকে বলেন, বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেকে আদালত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। অনেক মামলায় দুই, তিন বছর পর সাক্ষীদের তলব করলে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। একই সঙ্গে অনেক সময় পুলিশও মানব পাচার মামলার আসামিদের ধরতে অনীহা দেখায়। এমন প্রেক্ষাপটে পাচারের শিকার হওয়া ব্যক্তি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর আবার সামাজিকভাবে নিরাপত্তাহীনতায়ও ভোগেন। এক পর্যায়ে তারা মামলা চালাতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাচারকারীদের সঙ্গে আপস করে ফেলেন। তবে, পাচারকারীদের দ্রুত বিচার না করা ও সাজা না হওয়ায় মামলায় তেমন কোন ফল আসছে না বলেও জানান এই মানবাধিকার কর্মী।
No comments