অপরাধ বাড়ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে by এম তৌহিদ
>>অহরহ ঘটছে চুরি ছিনতাই ; উদ্ধার হয়েছে গলা ও রগকাটা যুবক ; নিরাপত্তাহীনতা ও উদ্বেগে সবাই<<
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ দিন দিন বাড়ছে। এমনকি উদ্ধার করা হয়েছে গলা এবং পায়ের রগকাটা যুবক। এত কিছুর পরও প্রক্টরিয়াল টিম পালন করছে আয়েসি ডিউটি। ক্যাম্পাসের মোড়ে মোড়ে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তেমন কাজে আসছে না। ফলে চরম নিরাপত্তাহীনতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই।
গতকাল সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই কয়েকজন ছাত্রের দ্বারা ছিনতাইয়ের শিকার হন দুইজন। ছিনিয়ে নেয়া হয় তাদের টাকা ও মোবাইল। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন ছাত্র আরিফ এবং আসাদকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশ। বাকিরা পালিয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো এক ছাত্রসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে ভুক্তভোগী আলামীন শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ছিনতাইয়ের চেষ্টা চলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সামনে। প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থী জানান, সাদা রঙের একটি প্রাইভেট কার থেকে তিনজন রোকেয়া হলের সামনে গুরুদুয়ারা মন্দিরের উল্টো দিকে নেমে রিকশাযাত্রীকে অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। তারপর দ্রুত দু’জন পালিয়ে যায়। তবে একজনকে আটক করেন শিক্ষার্থীরা। দুর্বৃত্তকে ধরতে গিয়ে আহত হন এস এম হলের এক ছাত্র। আটককৃতকে শাহবাগ থানা পুলিশে তুলে দেন শিক্ষার্থীরা।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে এস এম হলের ছাত্র রায়হান রনি তার ফেসবুকে লিখেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস যেন হয়ে উঠেছে বহিরাগত দুর্বৃত্তদের নিরাপদ টার্গেট। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে খুবই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নিরাপত্তা রাকারী বাহিনীকে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের অনুরোধ জানাচ্ছি।’
২৯ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে অপরাজেয় বাংলার পাশ থেকে আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে গলা ও পায়ের রগকাটা অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানেও আঘাতের চিহ্ন ছিল। একটি ডেভেলপার গ্রুপের হিসাবরক আলমগীর যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী বাজারের পাশে একটি বাসায় সপরিবারে ভাড়া থাকেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হয়ে তিনি আর ফিরে আসেননি। বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তার সন্ধান পাননি স্বজনের। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গুরুতর অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনার পর ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও। বিভিন্নভাবে তারা ভীতির কথা প্রকাশ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ছাত্র মামুন নয়া দিগন্তকে বলেন, ক্যাম্পাসে শুধু রাতে নয়, এখন দিনের বেলায়ও হাঁটতে ভয় করে। ক্যাম্পাসের প্রতিটি পয়েন্টে ছিনতাই হচ্ছে। আগে দিনে রাতে যখন তখন বের হতাম। এ ধরনের ঘটনা দেখার পর এখন রাতে দূরে থাক দিনের বেলায়ও বের হতে ভয় হয়।
গত ২০ অক্টোবর শিবিরকর্মী অভিযোগে ৮ ছাত্রকে বেধড়ক পিটিয়ে পুলিশে দেয় ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলে এ ঘটনা ঘটে। গত ১৬ অক্টোবর ক্যাম্পাসে ছিনতাইয়ের শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক। ওই দিন সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় অস্ত্র ঠেকিয়ে দুই হাজার টাকা নিয়ে যায় বলে সাংবাদিকদের জানান গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক ড. সুধাংশু শেখর রায়। দোয়েল চত্বর থেকে রিকশায় উঠেছিলেন তিনি। এ ছাড়া গত মার্চে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক ইমরানুল হক ল্যাপটপের ব্যাগসহ জগন্নাথ হলের সামনে থেকে ছিনতাইয়ের শিকার হন। ওই ব্যাগে একটি দামি মোবাইলও ছিল। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসসংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ফজলুল হক মুসলিম হলের তিন ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মঞ্জু মোল্লা বাদি হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা করেন। আটককৃতরা হলেনÑ মামুন, তানজিম এবং মো: আরিফ।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রসহ দু‘জনকে আটক করা হয়। রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে তাদের আটক করে শাহবাগ থানা পুলিশে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তারা হলেনÑ বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হলের মোস্তাফিজুর রহমান এবং ভর্তি ইচ্ছুক ছাত্র শামীম মোর্শেদ।
গত ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের এক সাংবাদিকের রুমের তালা ও লকার ভেঙে ল্যাপটপ, কাপড়চোপড়সহ বিভিন্ন সামগ্রী চুরি করে ছাত্রলীগের কয়েক কর্মী। রুমটি একটি বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনে কর্মরত সাংবাদিক মাসুদ রানার নামে বরাদ্দ করেছিল হল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় ছয় ছাত্রলীগ কর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর মিষ্টি খাওয়ার টাকা না দেয়ায় ইউজিসির হেকেপ প্রকল্পের এক কর্মচারী মো: তফুর আলীকে অপহরণ করে জহুরুল হক হলের ২০২ নম্বর রুমে আটকে রাখার অভিযোগ পাওয়া যায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদের নেতৃত্বে ঘণ্টাব্যাপী তল্লাশি চালিয়েও তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠের পাশ থেকে ওই কর্মচারীকে উদ্ধার করে পুলিশ।
একই দিন রাজধানীর রমনা কালীমন্দিরসংলগ্ন শ্রী শ্রী পালিমাল আনন্দময় আশ্রয় কেন্দ্রের কয়েক ছাত্রকে মারধর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের ছাত্ররা। মোবাইল চুরির জেরে তুচ্ছ ঘটনায় তাদের মারধর করা হয় বলে ভুক্তভোগী ছাত্ররা অভিযোগ করেন। এতে আহত হন আশ্রয় কেন্দ্রের পাঁচ ছাত্র।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রী বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুললে তাকে বিভাগীয় অফিসে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। ভুক্তভোগী ছাত্রীর অভিযোগ, ওই শিক্ষক তাকে বাসায় ডেকে নিয়ে পরীক্ষার খাতায় বেশি নম্বর দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে হয়রানি করেছেন। পরে ওই শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
গত ৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলায় এক সাংবাদিক আহত হন। রাতে চারুকলায় ঢুকতে গিয়ে আরিফুর রহমান নামে ওই সাংবাদিক হামলার শিকার হন। গত ২১ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সাইফুল ইসলাম সুজনের একটি ব্যাগে থাকা ল্যাপটপসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে মোটরসাইকেলে এসে ছিনতাইকারীরা তার ব্যাগটি নিয়ে চলে যায়।
গত ১৩ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নিজ রুম থেকে ল্যাপটপ চুরি হয়ে যায় দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শিমুলের। ৪ জুন অফিস থেকে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের সামনে রিকশা থেকে ল্যাপটপ ছিনিয়ে নিয়ে যায় অর্থসূচক ডটকমের সিনিয়র রিপোর্টার গিয়াস উদ্দিনের।
যেসব পয়েন্টে ঘটছে ছিনতাই : খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব পয়েন্টেই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে, স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্য এলাকা, ফুলার রোড, টিএসসি মোড়, দোয়েল চত্বর। এ ছাড়া চারুকলার সামনের সড়ক, জগন্নাথ হলের সামনের মোড় এবং শিববাড়ী মোড় থেকে টিএসসি রোড, শহীদ মিনার এলাকায়ও প্রায়ই ছোটখাটো অপরাধ সংঘটন নিত্যনৈমিত্তক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রক্টরিয়াল সিকিউরিটি টিমের আয়েসি ডিউটি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রক্টরিয়াল টিমের সার্বক্ষণিক ডিউটি দেয়ার কথা। কিন্তু তাদের দায়িত্ব পালন বাদ দিয়ে প্রায়ই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে আড্ডারত অবস্থায় দেখা যায় বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট কয়েকটি এলাকায় দীর্ঘক্ষণ ধরে অলস আড্ডায় মেতে থাকেন তারা। তাদের দায়িত্ব পালনে যে গাড়িটি রয়েছে সেটি অত্যন্ত জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়া বিশাল ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো পর্যাপ্ত জনবলও তাদের নেই। তবে এগুলো শিগগিরই সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য : বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ নয়া দিগন্তকে বলেন, ক্যাম্পাস নিরাপদ রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থাই নেয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি প্রক্টরিয়াল সিকিউরিটি টিম সার্বক্ষণিক টহল দিচ্ছে। এ ছাড়া টিমের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এসব নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
গতকাল সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই কয়েকজন ছাত্রের দ্বারা ছিনতাইয়ের শিকার হন দুইজন। ছিনিয়ে নেয়া হয় তাদের টাকা ও মোবাইল। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন ছাত্র আরিফ এবং আসাদকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশ। বাকিরা পালিয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো এক ছাত্রসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে ভুক্তভোগী আলামীন শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ছিনতাইয়ের চেষ্টা চলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সামনে। প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থী জানান, সাদা রঙের একটি প্রাইভেট কার থেকে তিনজন রোকেয়া হলের সামনে গুরুদুয়ারা মন্দিরের উল্টো দিকে নেমে রিকশাযাত্রীকে অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। তারপর দ্রুত দু’জন পালিয়ে যায়। তবে একজনকে আটক করেন শিক্ষার্থীরা। দুর্বৃত্তকে ধরতে গিয়ে আহত হন এস এম হলের এক ছাত্র। আটককৃতকে শাহবাগ থানা পুলিশে তুলে দেন শিক্ষার্থীরা।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে এস এম হলের ছাত্র রায়হান রনি তার ফেসবুকে লিখেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস যেন হয়ে উঠেছে বহিরাগত দুর্বৃত্তদের নিরাপদ টার্গেট। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে খুবই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নিরাপত্তা রাকারী বাহিনীকে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের অনুরোধ জানাচ্ছি।’
২৯ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে অপরাজেয় বাংলার পাশ থেকে আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে গলা ও পায়ের রগকাটা অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানেও আঘাতের চিহ্ন ছিল। একটি ডেভেলপার গ্রুপের হিসাবরক আলমগীর যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী বাজারের পাশে একটি বাসায় সপরিবারে ভাড়া থাকেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হয়ে তিনি আর ফিরে আসেননি। বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তার সন্ধান পাননি স্বজনের। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গুরুতর অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনার পর ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও। বিভিন্নভাবে তারা ভীতির কথা প্রকাশ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ছাত্র মামুন নয়া দিগন্তকে বলেন, ক্যাম্পাসে শুধু রাতে নয়, এখন দিনের বেলায়ও হাঁটতে ভয় করে। ক্যাম্পাসের প্রতিটি পয়েন্টে ছিনতাই হচ্ছে। আগে দিনে রাতে যখন তখন বের হতাম। এ ধরনের ঘটনা দেখার পর এখন রাতে দূরে থাক দিনের বেলায়ও বের হতে ভয় হয়।
গত ২০ অক্টোবর শিবিরকর্মী অভিযোগে ৮ ছাত্রকে বেধড়ক পিটিয়ে পুলিশে দেয় ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলে এ ঘটনা ঘটে। গত ১৬ অক্টোবর ক্যাম্পাসে ছিনতাইয়ের শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক। ওই দিন সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় অস্ত্র ঠেকিয়ে দুই হাজার টাকা নিয়ে যায় বলে সাংবাদিকদের জানান গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক ড. সুধাংশু শেখর রায়। দোয়েল চত্বর থেকে রিকশায় উঠেছিলেন তিনি। এ ছাড়া গত মার্চে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক ইমরানুল হক ল্যাপটপের ব্যাগসহ জগন্নাথ হলের সামনে থেকে ছিনতাইয়ের শিকার হন। ওই ব্যাগে একটি দামি মোবাইলও ছিল। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসসংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ফজলুল হক মুসলিম হলের তিন ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মঞ্জু মোল্লা বাদি হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা করেন। আটককৃতরা হলেনÑ মামুন, তানজিম এবং মো: আরিফ।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রসহ দু‘জনকে আটক করা হয়। রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে তাদের আটক করে শাহবাগ থানা পুলিশে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তারা হলেনÑ বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হলের মোস্তাফিজুর রহমান এবং ভর্তি ইচ্ছুক ছাত্র শামীম মোর্শেদ।
গত ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের এক সাংবাদিকের রুমের তালা ও লকার ভেঙে ল্যাপটপ, কাপড়চোপড়সহ বিভিন্ন সামগ্রী চুরি করে ছাত্রলীগের কয়েক কর্মী। রুমটি একটি বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনে কর্মরত সাংবাদিক মাসুদ রানার নামে বরাদ্দ করেছিল হল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় ছয় ছাত্রলীগ কর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর মিষ্টি খাওয়ার টাকা না দেয়ায় ইউজিসির হেকেপ প্রকল্পের এক কর্মচারী মো: তফুর আলীকে অপহরণ করে জহুরুল হক হলের ২০২ নম্বর রুমে আটকে রাখার অভিযোগ পাওয়া যায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদের নেতৃত্বে ঘণ্টাব্যাপী তল্লাশি চালিয়েও তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠের পাশ থেকে ওই কর্মচারীকে উদ্ধার করে পুলিশ।
একই দিন রাজধানীর রমনা কালীমন্দিরসংলগ্ন শ্রী শ্রী পালিমাল আনন্দময় আশ্রয় কেন্দ্রের কয়েক ছাত্রকে মারধর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের ছাত্ররা। মোবাইল চুরির জেরে তুচ্ছ ঘটনায় তাদের মারধর করা হয় বলে ভুক্তভোগী ছাত্ররা অভিযোগ করেন। এতে আহত হন আশ্রয় কেন্দ্রের পাঁচ ছাত্র।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রী বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুললে তাকে বিভাগীয় অফিসে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। ভুক্তভোগী ছাত্রীর অভিযোগ, ওই শিক্ষক তাকে বাসায় ডেকে নিয়ে পরীক্ষার খাতায় বেশি নম্বর দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে হয়রানি করেছেন। পরে ওই শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
গত ৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলায় এক সাংবাদিক আহত হন। রাতে চারুকলায় ঢুকতে গিয়ে আরিফুর রহমান নামে ওই সাংবাদিক হামলার শিকার হন। গত ২১ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সাইফুল ইসলাম সুজনের একটি ব্যাগে থাকা ল্যাপটপসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে মোটরসাইকেলে এসে ছিনতাইকারীরা তার ব্যাগটি নিয়ে চলে যায়।
গত ১৩ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নিজ রুম থেকে ল্যাপটপ চুরি হয়ে যায় দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শিমুলের। ৪ জুন অফিস থেকে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের সামনে রিকশা থেকে ল্যাপটপ ছিনিয়ে নিয়ে যায় অর্থসূচক ডটকমের সিনিয়র রিপোর্টার গিয়াস উদ্দিনের।
যেসব পয়েন্টে ঘটছে ছিনতাই : খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব পয়েন্টেই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে, স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্য এলাকা, ফুলার রোড, টিএসসি মোড়, দোয়েল চত্বর। এ ছাড়া চারুকলার সামনের সড়ক, জগন্নাথ হলের সামনের মোড় এবং শিববাড়ী মোড় থেকে টিএসসি রোড, শহীদ মিনার এলাকায়ও প্রায়ই ছোটখাটো অপরাধ সংঘটন নিত্যনৈমিত্তক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রক্টরিয়াল সিকিউরিটি টিমের আয়েসি ডিউটি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রক্টরিয়াল টিমের সার্বক্ষণিক ডিউটি দেয়ার কথা। কিন্তু তাদের দায়িত্ব পালন বাদ দিয়ে প্রায়ই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে আড্ডারত অবস্থায় দেখা যায় বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট কয়েকটি এলাকায় দীর্ঘক্ষণ ধরে অলস আড্ডায় মেতে থাকেন তারা। তাদের দায়িত্ব পালনে যে গাড়িটি রয়েছে সেটি অত্যন্ত জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়া বিশাল ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো পর্যাপ্ত জনবলও তাদের নেই। তবে এগুলো শিগগিরই সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য : বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ নয়া দিগন্তকে বলেন, ক্যাম্পাস নিরাপদ রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থাই নেয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি প্রক্টরিয়াল সিকিউরিটি টিম সার্বক্ষণিক টহল দিচ্ছে। এ ছাড়া টিমের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এসব নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
No comments